somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যবিত্তের রাষ্ট্র ভাবনা

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

​​আরবান মিডল ক্লাসকে যাপিত জীবনের অর্থনৈতিক মানদন্ডে নিন্ম, মধ্য, উচ্চ এই তিনটি এবং মানসিকতায় নিন্ম ও উচ্চ এই শ্রেনী সমূহে ভাগ করে কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনে বিস্তৃত মধ্যবিত্তের ভূমিকা এবং অংশগ্রহণ এর স্কোপ সমূহ এই সময়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গনে বিস্তারিত আলোচনা দরকার।

উচ্চ মধ্যবিত্ত দুর্নীতি সহায়ক বর্তমান লুটেরা কাঠামোকে মেনে নিয়েছে, এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ বিত্ত আমাদের অনৈতিক এস্টাব্লিশ্মেন্ট এর ভিত্তি হয়ে গেছে, রাষ্ট্র চিন্তায় তার অংশগ্রহণ শুধুই ব্যক্তি সম্পদ সৃষ্টি কেন্দ্রিক, তাই এই ধারা যতই লোভনীয় কিংবা আধুনিক হোক না কেন, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনে তার কোন কার্জকরিতা নেই। উচ্চ মধ্যবিত্ত নিজেরা নিদারুণ ভাবে সংকীর্ন ভোগবাদী ব্যক্তি স্বার্থ চিন্তায় এবং হাসিলে নিমগ্ন। ভয়ের কথা হচ্ছে আমাদের অতি দুর্নীতি সহায়ক পরিবেশে এই শ্রেণী দ্রুত বিকাশমান। বহু দুর্নীতিবাজ কিংবা দুর্নিতি মনা মধ্যবিত্ত এই ট্রাঞ্জিশনে শুধুই একটি বা কয়েকটি সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছে।

নিন্ম বিত্ত এবং নিন্ম মধ্য বিত্ত রুটি রুজির/অস্তিত্বের ধান্ধায় লড়ছে কিংবা সন্তান সন্ততির ভরণপোষণ ধান্ধায় অথবা একটু শিক্ষিত করার প্রয়াসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা খাটুনি করে। চরম বৈরি রাজনৈতিক ইনভায়রনমেন্ট এ হামলা - মামলা- জেল ভিত্তিক পুলিশি কাঠামোর নির্যাতনের ভয়ে এই মুহুর্তে কল্যাণ রাষ্ট্র চিন্তায় নিবেদিত হয়ে রাষ্ট্র উদ্ধারের আন্দোলনে আশা করা অন্যায়, যদিও শিশু শ্রমিক সহ প্রায় ২০-৪০ লক্ষ কর্মহীন মানুষ (সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের সফট হার্ড কিংবা নিরপেক্ষ) সামান্য টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক শ্রম দিতে মুখিয়ে থাকে কিন্তু যদিও পরিস্থিতি অনুকূলে নয়।

কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে সাধারন মধ্যবিত্ত (অর্থবিত্ত, সামর্থ্য এবং মানসিকতায়/আর্বান, সাব আর্বান কিংবা রুরাল/সংখ্যায় শহুরে সাধারন মধ্যবিত্ত অগ্রগণ্য) শ্রেনীর অংশগ্রহণ কেমন হওয়া দরকার সেটা ডিফাইন করা জরুরী। সাধারন মধ্যবিত্ত রাষ্ট্র চিন্তা না করলে কোন রাষ্ট্র কল্যাণের দিকে আগায় না। পেশাজীবী, কৃষিজীবী, শ্রমজীবী এবং সাধারণ মধ্যবিত্তকেই রাষ্ট্র পরিবর্তনের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। এই সাধারণ সমাজটিই রাষ্ট্রকে এথিক্যাল এবং স্ট্রাকচারাল দিক থেকে ধারণ করে। জ্ঞান এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লক্ষের বেলায়ও এরাই রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজিক আচরণকে ওউন করে। সহজ কথা একটি রাষ্ট্রে নৈতিকতার চর্চা এবং ইন্সটিটুশনাল শাসনের উপস্থিতির গভীরতা কতটা তা তাঁর মধ্যবিত্তের মানসিকতা এবং আচরণে প্রতিফলিত। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বর্তমান বাংলাদেশের দুরবিত্তায়িত,লূটেরা, চাঁদাবাজি নির্ভর রাজনীতি এবং দুর্নিতি ঘুষ তদবির ভিত্তিক প্রশাসন আমাদের মধ্যবিত্তেরই মানসিক এবং চর্চার দর্পণ।


বাংলাদেশের কোন সরকারি এবং বিরোধী দলই বর্তমান কিংবা বিগত সময়ে কখনই একটি কার্জকর কল্যান ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের স্বপ্ন এই সাধারন মধ্যবিত্তকে দিতে পারেনি, পারেনি ক্ষমতা বলয়ের হীন এবং প্রতারণামূলক (আর্থিক, নিরাপত্তা বিষয়ক) কাজের জবাব কিংবা বিকল্প সমাধানের প্রস্তাব। কারণ তাদের সুপ্ত (যদিও কাজে কর্মে অতি প্রকাশিত) দুরবিত্তায়িত রাজনীতি। ক্ষমতায় গিয়ে নৈতিকতার চর্চা এবং ইন্সটিটুশনাল শাসনের উপস্থিতির আনয়নের উপকরণ সমূহ বাস্তবায়ন কখনই ভিশনে ছিল না বা আজো নেই। তাই পরিবেশ, খাদ্য ভেজাল, বন ধ্বংস, দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি কিংবা নগরের অসহনীয় জ্যাম, সেতু লুটপাট আয়োজন, শেয়ার বাজার লুটপাট, ব্যাংক লূটপাট ইত্যাদি লেগে থাকা বিষয়ের কোনটার ব্যাপারেই সাধারন মধ্যবিত্তকে আস্বস্ত করার মত কাঠামো গত সমাধান কিংবা নাগরিকের আর্থিক এবং সামাজিক সুরক্ষা দেবার মত ইন্সটিটুশন তৈরির কথা কখনই সরকার বিরোধী কেউ বলে না।

দুর্বিনীত দলীয় ক্ষমতার একচ্ছত্র প্রভাবে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠান গুলোতে ঘুষ, অনিয়ম আর দুর্নীতিকে নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার যে কলঙ্কের দায় রাজনৈতিক দলগুলোর সেটা মেনে নিয়ে ভুল স্বীকার করেনি কখনই। সেখান থেকে বেরিয়ে কিভাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে নিবেদিত একটি সরকার এবং কল্যাণ মুখী রাষ্ট্র কাঠামো বানানো যায় সেসব নিয়ে ভাববেনি কখনই।


বরং বারংবার শুধুমাত্র জোর খাটিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চর্চা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন করে যাচ্ছে যার প্রায় সব কাজই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এর দৃষ্টিকোণ থেকে অযৌক্তিক এবং অনাগরিক বান্ধব। ফলে ক্ষমতায় থাকা এবং সাময়িক তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প করে অর্থ লোপাটেই রাষ্ট্রের সকল মনোযোগ নিবিষ্ট, এই উন্নয়ন গুলোর অধিকাংশই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নয় ফলে এগুলো টেকসই উন্নয়ন হয়ে উঠে না। আরো গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হোল এই লুটপাট শুধু রাজনৈতিক নয়, প্রশাসনিকও। অথচ রাষ্ট্রের সকল মনোযোগ নিবিষ্ট হবার কথা মান্সম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরি, মান সম্পন্ন আবাসন যা স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাকে বিকশিত করবে, অবকাঠামোগত উতকর্শ যা আগামীর প্রজন্মের জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে নৈতিক করবে।

সুতরাং মোদ্দাকথা কথা হচ্ছে রাজনীতি এবং প্রশাসন এখানে ব্যক্তি লুণ্ঠনের নিমিত্তে সমান্তরাল হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা, নির্বাহী এবং বিচার ব্যবস্থাগুলো একই গোত্র ভুক্ত হয়ে একে অন্যের দুর্বিত্তায়নের সহযোগী হয়ে উঠেছে। এখানে গণতন্ত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক,​ তাও খুব অবাক করা বিষয় রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মততপরতা শুধুই ক্ষমতায় থাকা দলের স্বার্থের ধারক।ক্ষমতাসীন দলের একটি সমর্থক শক্তি উঠেছে আমাদের নির্বাচন কমিশন । ফলে নাগরিকের কাছে নির্বাচনী অঙ্গীকারের দায়বদ্ধতার মৌলিক বিষয়টি একেবারেই হারিয়ে গেছে। একদিকে নৈতিকতা এবং ইন্সটিটুশনাল শাসন নেই, অন্যদিকে সত্যিকারের গনতান্ত্রিক আন্দোলন নেই।তাই এই ব্যবস্থা সাধারন মধ্যবিত্ত এবং রাষ্ট্রের ভাগ্য পরিবর্তনের অনুকূলে​ নয়, একেবারেই!

এখানে পরিষ্কার যে, ​আওয়ামীলীগ​,​বিএনপি​, বাম, ডান কেউই বিদেশী প্রভু, নিজ নিজ দলের লুটপাটপারী আমলা-ব্যবসায়ী-রাজনীতিক​-উচ্চ বিত্ত সমর্থক এই চতুষ্পদ কে বিরাগভাজন করে কল্যাণময়ী এবং দুর্নীতি প্রতিরোধী রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসবে না। এটাই বটম লাইন।​​

এটাও পরিষ্কার যে, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে উঠে রাষ্ট্র এর কল্যাণ যাত্রার অংশগ্রহণে চরম নির্লিপ্ত। এর উত্তরণ জরুরী। আমরা বুঝি বা না বুঝি মধ্যবিত্তের নাগরিক আন্দোলন​ শুরুর কারণ "ওয়েল ডিফাইন্ড"​, কিন্তু সেটা শুরুর একটা মহেন্দ্রখন এর অপেক্ষায় সবাই।

মধ্যবিত্তের নাগরিক আন্দোলনের এর কৌশল এবং পার্টিসিপেশন কেমন হওয়া উচিত? সমাজ এবং রাষ্ট্রের বুদ্ধিবিত্তিক পরিসরে এই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরী মনে করি।


বিস্তৃত মধ্যবিত্ত জেগে উঠু্‌ক,
প্রশাসন এবং রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরুক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!



ব্লগ, ব্লগার ও সমকালীন রাজনীতি। ব্লগার নেক্সাস এর পোষ্টে উৎসাহিত হয়ে!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×