somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুর জন্য উপহারঃ হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ

১৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজনই বন্ধু আছে আমার । যেমনটি লোকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড। বরাতের দোষ দিই। রূপকথার সাত সমুদ্দুর তের নদীর মতোই দুরের মানুষ সে। কাল-সময়ের কূট খেলায় আমাদের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। মন তবু হাল ছাড়েনি। বন্ধুটিকে দেখার জন্য, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য,আড্ডা দেয়ার জন্য , একসঙ্গে হাসার জন্য ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকার তীব্র তিয়াসায় প্রাণ পোড়ে।

গত বছরের মাঝামাঝি নানা ইঙ্গিতে অস্পষ্ট আভাসে আশা পেলাম এই বছরের প্রথম দিকে তার সঙ্গে দেখা হতে পারে ! মিষ্টি আচ্ছন্নতায় আমার দিনগুলো - রাতগুলো বদলে গেল। বন্ধুর সঙ্গে কিভাবে সময় কাটবে,কি কথা বলবো,কি করলে বন্ধুর মুখ হাসিতে ভরে উঠবে এমনি নানা দৃশ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ মনের পর্দায় খেলা করে যাচ্ছিল। কিন্তু বন্ধুকে একটা কিছু উপহার দিব না ? উপহারের কথা চিন্তায় আসতেই তরুন বয়সে পড়া একটা বইয়ের কথা মনে এলো ! প্রিয় কবি জয় গোস্বামীর লেখা একটা বই । হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ। জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতা থেকে নেয়া নামটা। বইটির কথা মনে পরতেই অনেক কথা মনে পড়ে। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নমাখা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। যখন কবিতার কোন উপমা এঁটো মনে হতো না। অনির্দিষ্ট অভিমানে গোলাপও ছিল দুঃষ্প্রাপ্য ফুল । শীতের সকালে শিশিরে নরোম রোদের বিচ্ছুরণ ছিল অতি উজ্জ্বল ও চেনা।

এমন একটা সময় নিশ্চয়ই সবার থাকে। হারায়ও নিশ্চয়ই। শুধু আমার বন্ধুটির ছাড়া। উল্টো তার কাছে আমারও সব কিছু জমা। যা হারিয়েছি, তাও।

বইটি সংস্করণ বোধহয় শেষ হয়ে গিয়েছিল। আরেক বার মনে হলো জয় মনোমালিন্য করে দেশ পত্রিকা ছেড়ে দেয়ায় হয়তো আনন্দ তার বইয়ের আর সংস্করণ করে না। ঘুরতে যাচ্ছে শুনে দুজন বন্ধুকে অনুরোধ করেছিলাম কলেজস্ট্রীটে গেলে বইটা পেলে যদি নিয়ে আসে। আমি টাকা দিয়ে দেব। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একদিন আজিজ মার্কেটে দিনভর বইটা খুঁজলাম। নির্দিষ্ট সেলফ ছাড়াও অন্য সব জায়গায়ও। যদি ভুল করে অন্য কোথাও থেকে থাকে ! সাগর পাবলিসার্সের দোতলায় গুদামে উঠে একদিন খুঁজলাম। বন্ধু অনন্তর সেলফে বইটা দেখেছিলাম। কিন্তু ও নিজেকে মেরে ফেলেছে। নইলে ওর কাছে চাইলে বইটা আমাকে দিয়ে দিত।

ঢাকার বইয়ের দোকানগুলোতে অনেক বই বিক্রি হয় মনে হচ্ছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ও চলতি সব বই। পুরান বই খুব কম। কিছু আছে প্রবন্ধ ইত্যাদি। বিক্রি কম বলে মনে হয় দোকানগুলোতেই পরে থেকে পুরান হয়েছে। দোকান করার সময় ভুল করে এনেছিল,এখন আর আনে না। বড় কয়েকটি দোকানে অবশ্য দেখেছি উল্টো চিত্র। সব খটোমটো বইয়ের কাটতি। আঁতেলদের মধ্যে বোধ হয় এসব দোকানের নাম রটে গেছে।

প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল আমাদের জেলা শহরের লাইব্রেরীগুলোতে বইটা থাকবে। বিশেষত প্যারাডাইস বুক ডিপোতে। বইটা কোন তাকে আছে তাও অনুমান করে রেখেছি। গত বছরের পঁনের ডিসেম্বর ডাকাতের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছেন বুড়ো বাবা। তাকে ঢাকা আনছিলাম চিকিৎসার জন্য। বাংলা স্কুল মোড়ে প্যারাডাইসের সামনে দিয়ে আসার সময় গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলাম। সোজা আগে অনুমান করা তাকটির সামনে। ছোটবেলা থেকে এই দোকানের সব মুখস্থ আমার। দু একদিন ক্যাশে বসিয়ে ওরা বাইরে কাজে যেত । ঠিকমতো অংক করতে না পারার আগে থেকে। কমিশন কুড়ি পার্সেন্ট। কিন্তু বনের রাজা টারজান বইটার দামই যে কুড়ি টাকা। বাবুল ভাইর ছোট ভাই আর আমি অনেকক্ষণ মিলে হিসেব করে সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম এই বইটার জন্য কোন টাকা লাগবে না। বিনে পয়সায় বইটা পেয়েছিলাম। আরেকটু বড় হয়ে ধারে বই পেতাম বৈশাখি মেলায় স্টল দেয়ার জন্য।

ভালো করে তাকালে সম্বিত ফেরে। একি ! সব সেলফ ভর্তি নোট বই। তখন বাবুল ভাইয়ের বাবা বসা দোকানে। আমাকে চিনতে পারেননি। প্রায় চৌদ্ধ বছর পর গেলাম দোকানটিতে। তাকে বললাম, দোকানতো নোট বই দিয়ে ভরে ফেলেছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, কি লাগবে? কিছু না বলে বের হয়ে আসি। মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়।

যখনই সময় হয় , বা বন্ধুটির জন্য মন বেশি আনচান করলে আমি বইটা খুঁজতে বের হই। যে সব দোকানে কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছি, ওরা ঢুকতে দেখলেই হেসে বলে এখনো আসেনি। ওদের চোখে হাস্যকর হয়ে যাচ্ছি মনে হওয়ায় কিছু না কিছু কিনতে হয়। অন্য বই বাছাইয়ের ভাব করে তন্নতন্ন করে খুঁজি বইটা কোথাও লুকিয়ে আছে কি না।

প্রথমবার বইটি কিনে ছিলাম বরিশালের বুক ভিলা থেকে। ৯৪ সালে। সে বছরই বইটি বের হয়েছিল । একাত্তর পৃষ্টা লেখার ছোট একটি বই। নাম পরিচ্ছদটি মাত্র ৩২ পৃষ্টার। এই অধ্যায়টির জন্যই বইটি প্রথম পাঠে ভালো লেগেছে। তবে প্রথমে ভালো লেগেছিল প্রচ্ছদ দেখে। প্রবীর সেনের আঁকা আমার চোখে অদ্ভুত রকম সুন্দর প্রচ্ছদের বইটি দেখে আর কিছু না চিন্তা করে, বাইশ টাকা দিয়ে । প্রেম নিয়ে লেখকের চিন্তা । নাম-গদ্যটির বিষয়। অন্য তিনটি গদ্যও ভীষণ সুখপাঠ্য।

গত শনিবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আজ বিকালে বই খুঁজতে যাবো ভেবে মন উৎসব মুখর করে তুললাম। বইটা খোঁজা মানে শুধু বন্ধুকে ভেবে তার সঙ্গেই সময় কাটানো। কখনো যদিও মনে আসে বইটা ওর পড়াও থাকতে পারে। তখন পাল্টা যুক্তি দেই তাকে কেমন পছন্দ করি লেখাটার সঙ্গে তার মিল অদ্ভুত। সে এটা বুঝবে।

তক্ষশীলা থেকে শুরু করলাম। আশ্চর্য ! প্রথমায় ঢুকেই ডান দিকের তাকে বইটা । ছোঁ মেরে বইটা নিয়ে টাকা পরিশোধ করে বের হয়ে এলাম। এখন নব্বুই টাকা ।

বন্ধুর সঙ্গে কবে যোগাযোগ হবে জানি না। বিশ্বাস আছে , হবে। তবে তার জন্য উপহারটি পরম যত্নে রাখা আছে। মাঝে মাঝে প্রচ্ছদটি দেখি। এতো সুন্দর ! যাতে নতুন থাকে, এজন্য অল্প খুলে পাতার ঘ্রাণ নেই। এক দুলাইন পড়ি। একটা লাইন আছে , ‘হাওয়ার মুখে ফুল গাছের মতো লুটোপুটি খাচ্ছিল... '। বইটার প্রতি লাইন আমার বন্ধুর নামে চোখের সামনে দৃশ্যায়িত হয়ে সকাল সাঁজে ঘুরে ঘুরে যায়। মনে হয় বন্ধুর সাথে গল্প করছি। এই লেখাটা যতক্ষণ লেখলাম,মন ভেজা বেড়ালের মতো শান্ত হয়ে হাসি হাসি মুখে টেবিলের কোনে বসেছিল। কখনো আরামে চোখ বুজে আসছিল !



লেখা : ১৮ - ১৯/০৫/১০ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:৩৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×