নিকেশ কালো আঁধারের তাড়ায় সন্ধ্যারানীর বিদায় কালে দূর্বা ঘাসের মেঠো পথে হালকা হালকা শিশির জমতে শুরু করেছে ততক্ষণে । হাঁটুভাঙ্গা জল আর কাদা ভেঙ্গে লাঙ্গলটানা অবশ শরীর নিয়ে গোয়াল ঘরে বাঁধা গরুগুলো চোখ বুজে আপনমনে জাবর কাটছে । কেরোসিনের হারিকেন বাতিগুলো টিপ টিপ করে জ্বলছে বহু দূরের খরের চালার ছোট্ট কুটীরগুলোতে । উঠোনের সামান্য দূরে অবহেলায় বেড়ে উঠা ঝোপ জঙ্গলের মাঝ থেকে দু’ একটা ঝিঁ ঝিঁ পোকা থেকে থেকে ডেকে উঠছে । শান্ত, নীরব আর নিশ্চল যেন সারা পত্র পল্লবের জগত । হাট করে ফেরা সবজির দোকানীর সাইকেলের বেল টুং টুং করে বেজে উঠলে কান খাড়া হয়ে যায় অপেক্ষায় থাকা গ্রাম্য বঁধুর । টুকরো মেঘবালিকা চাঁদকে আড়াল করতে হুড়োহুড়ি লাগালেও আবছা আবছা আলোয় চাঁদের হাসি যেন আরও বেশী মিঠে লাগে । মিঠে মিঠে হয়ে উঠে বুড়ো দাদা-দাদীর পান চিবানো মুখে বহু আগের রাজা রানীর গপ্প সপ্প । ভাত আর চচ্চরির হাড়ি পাতিলগুলো ঘরের গিন্নির হাত ধরে ঘরের কোণায় ঠাই পায় অতি স্নেহ যত্নে। মোড়ের দোকানে দোকানে বুড়োরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে – “ কী দেখলাম আর কী হল ! ’’ জোয়ানরা এপাশে ওপাশে জটলা পেকে কমদামী বিড়ি ফুঁকে রুজি রোজগারের হাল চাল ঠাউরায় । একাল অকাল মিলে যেন সব জগাখিচুরির আবির্ভাব । ওদিকে জেলে পারার উঠোন থেকে জালের আঁশটে গন্ধ মৌ মৌ করে রাত অবধি । আমায় টানে, ফিসফিসিয়ে বলে কানে কানে, সখা, বারান্দায় চেয়ারখানি পাতা আছে, বড়ই পাতার শরীর বেয়ে নিংরানো শিশির বিন্দুগুলি টিনের চালে টুপ টুপ কী অপূর্ব সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করছে! এভাবে কতক্ষণ বিরহ মেনে নেয়া যায় ? গন্ধরাজের যাদুকরী ঘ্রাণ তো মস্তিস্ক বিকৃত করে ফেলার উপক্রম করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩