somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরোধী দল হিসেবে সঠিক ভূমিকা পালনে বিএনপি পুরোপুরি ব্যর্থ!

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাবেক ছাত্র নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং হেভিওয়েট পারসন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে বলেছেন, ‘বর্তমানে বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে সঠিক ভূমিকা পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ। দলটি আজকে প্রবল হতাশ এবং চিন্তিত।বিএনপি বরাবর ভাবেই ভারত বিরোধী,এখন বিএনপি ভারতের ওপর হতাশ। এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বাচনে কে জেতেন, তিনি তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন। জনগণের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। তবে শেখ হাসিনার শক্তির উৎস এ দেশের জনগণ।’ ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে আমরা কী দেখতে পাই?

একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারছে না। নানান সমস্যায় জর্জরিত। সরকারের বাড়াবাড়িতে আজ এই অবস্থা, বিরোধী দলের ভূমিকা কী? উত্তরে বলা যায় - সরকারের ভুলত্রুটিগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা, সরকারের কর্মকাণ্ড সমূহের সমালোচনা করা। সরকারের গৃহীত কোনো নীতি বা কর্মসূচিকে জনগণের স্বার্থবিরোধী মনে করলে তার বিরোধিতা করা এবং বিকল্প প্রস্তাব দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা। প্রয়োজনে আন্দোলনে যাওয়া। মিছিল - মিটিং করা। কিন্তু এই ভূমিকা কি বিএনপিকে পালন করতে দেওয়া হচ্ছে? সরকারের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরার সবচেয়ে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হলো জাতীয় সংসদ। বিএনপি বর্তমানে সংসদে নেই। রওশন এরশাদ নামমাত্র বিরোধী দল। সরকার একাই সংসদ পরিচালনা করছে। এরশাদ তার প্রাপ্য অধিকার না পেয়ে খুব ক্ষুব্ধ, লজ্জা ও হতাশায় দিন পার করছেন। সে ক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের মাধ্যমেই তাদের বক্তব্য তুলে ধরার কথা। কিন্তু বিএনপি তো চাইলেই সভা-সমাবেশ করতে পারছে না। সরকার ব্যাপক বাধা প্রদান করছে। পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করছে। মানব বন্ধনও করতে দেয়া হচ্ছেনা। সরকার সমাবেশের অনুমতি দিলেও নানা শত শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যা পূরণ করা বেশ কঠিন। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য কোনো শর্ত নেই। সরকারের নতুন নতুন সংঘ গুলো নিজ ইচ্ছা মাফিক কাজ করছে। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ-মিটিং করছে কিন্তু কোন নিয়ম মানা হচ্ছেনা।

সরকারের মতে, বিএনপি ভারতের ওপর হতাশ এবং সর্বদাই ভারত বিরোধী, বন্ধু হিসাবে ভারত কে মানতে নারাজ। জামায়াতও তাই। জামায়াত ইসলাম বরাবর ভারতকে শত্রু মনে করে। বিএনপি আমেরিকার নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আগামী নভেম্বারে আমেরিকার জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের সঙ্গে বিএনপির আশা-হতাশার কী সম্পর্ক থাকতে পারে? হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে বিএনপি। আমেরিকায় নির্বাচন হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বর্তমানে ডেমোক্রেট পার্টির রাজনৈতিক অবাস্থান বেশ ভালো। তাঁদের কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগের পক্ষে বা বিপক্ষে তাঁদের অবস্থান ঘোষণা করেননি। বাংলাদেশের রাজনীতি কি এতই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে অন্য কোনো দেশের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর আমাদের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে। আমরা যদি ধরেও নিই যে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন জয়ী হচ্ছেন তাহলে কি তিনি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে বিএনপিকে বসাবেন? অথবা ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে বিএনপির জন্য ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে? বাংলাদেশের নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, সেটি বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে, অন্য কেউ নয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের কংগ্রেসের একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ভারতের বিগত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হেরেছে এবং ক্ষমতায় এসেছে তার প্রতিপক্ষ বিজেপি। তাই বলে কি বিজেপির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে? মোটেই না। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অনুযায়ী বিএনপি যদি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দেশের জনগণের দিকে না তাকিয়ে মার্কিন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, আওয়ামী লীগ কার দিকে তাকিয়ে আছে? জনগণ কি তাদের চায়? জনগণই ওদের ভরসা? সে রকম কোনো লক্ষণ আমরা বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখিনি। বিগত স্থানীয় সরকার তথা ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট বলতে যা বোঝায়, তার কোনো চিহ্নই এই নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখতে পাইনি। যে যেখানে পেরেছেন গায়ের জোরে জিতেছেন। এর ফলে ইউপি নির্বাচনী হাঙ্গামায় নিহত প্রায় দেড় শ মানুষের মধ্যে ৭১ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। ২০১৪ সালের আগে অনুষ্ঠিত যেকোনো স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা জোর গলায় বলতেন, তাঁদের আমলে প্রতিটি স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হলে মানুষের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষীণতর একটি আশা জাগতে পারত।

যদি আকাশ-পাতাল কিছু ওলট-পালট না হয়ে গেলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলেই সবার ধারণা। কিন্তু সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী ভোটের জন্য সমতল মাঠ পাবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপে সব গুড়েবালি । গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, যাতে তাঁরা দলীয় শৃঙ্খলা মেনে কাজ করেন। তবে এই ক্ষমা সাময়িক। ভবিষ্যতে শৃঙ্খলাবিরোধী কিছু করলে আর ক্ষমা করা হবে না। সন্ত্রাসের কারণে জনগণ ভোট দিতে পারল না, তার প্রতিকার কি আছে? সেই জনগণ কখনোই তাদের ক্ষমা করবে না। দল বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীদের আবার দলে ফিরিয়ে নিয়েছে । আওয়ামী লীগ বলছেন, তাঁদের প্রকাশ্য কোনো শত্রু নেই। গোপন শত্রুরা যাতে আঘাত হানতে না পারে, সে জন্য দলীয় কর্মীদের সজাগ থাকতে বলেছেন। কিন্তু খাদিজারা কাদের আঘাতে রক্তাক্ত হন? বিশ্বজিত, মিল্কি সহ ইব্রাহিম,আবু বকর কেমন করে খুন হন? শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে কেমন করে লাঞ্ছিত হন? কুষ্টিয়ায় মায়ের পেটের শিশু কাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়? শিক্ষাঙ্গনে অন্তর্দলীয় কোন্দলে কীভাবে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী নিহত হলেন? কাদের হাতে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের নোমানী প্রকাশ দিবালকে খুন হন? কি করে একজন রাজনৈতিক নেতাকে বাড়ি হতে একজনকে বের করে দেয়? হিসাব নিকাশ অনেক।

আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছে, ২৩ তারিখ জাতীয় কাউন্সিলে এ নিয়ে কথা হয়েছে। নতুন সম্পাদক হিসাবে ওবাইদুল কাদের কে নির্বাচন করা হয়েছে। সইয়েদ আশরাফ তাঁর দায়িত্ব ছেড়ে দেন,মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে কি হবেনা তা নিয়েও বেশ সন্দেহ আছে। তবে কিছ ইঙ্বিগিত আছে। বিএনপি তার প্রবীণ নেতাদের হারিয়ে বেশ বিপর্যয়ের মাঝে আছে, জামায়াত বর্তমানে বেশ স্তব্ধ। তাদের প্রধান নেতাদের হারিয়ে বেশ দিশেহারা হয়ে আছে, আগের মত আর শক্তি প্রদরশন করতে পারছে না। জোট নিয়েও বেশ সঙ্কটে আছে বিএনপি। তাই, বিএনপি আমেরিকার নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে হতাশা কাটাতে চেষ্টা করছে কি করছে না, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য জনগণের দিকে তাকাচ্ছে কি না?



সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×