somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিবাদ প্রতিবাদ খেলা, ব্লগবিপ্লবী, মডারেশন এবং একটি মামুলি প্রশ্ন

১৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, সামহোয়্যারে যতো প্রতিবাদ হয়, বিপ্লব হয়, যতো চেঁচামেচি হয় - তা কিন্তু খুব বেছে বেছে, মুখ দেখে দেখে, নিজের দলের কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পর সংঘটিত হয়। আপনি যদি বিশেষ গোষ্ঠীর কেউ না হন, আপনি যদি তথাকথিত এলিট শ্রেণীর কেউ না হন - তাহলে আপনি পুরনো হোন না নতুন ব্লগার, আপনি ব্যানড হোন কিংবা আপনার ব্লগ বাতিল হয়ে যাক- কেউ টু শব্দটিও করবে না। আপনাকে নিয়ে কেউ একটি পোস্ট দেবে না, মন্তব্যও না। এর নাম আমরা দিতে পারি '‌এলিটিজম'। এই চর্চা নিঃসন্দেহে এক ধরনের মানসিক বৈকল্যের নামান্তর এবং এতে সাধারণ ব্লগারদের কোনোই স্বার্থ জড়িত নেই।

ওরা কারা?
এবার আপনি একটু নজর বোলান ব্লগের ওপর। দেখতে পাবেন, সংঘবদ্ধ একটি ক্ষুদ্র গ্রুপ সামহোয়্যারে অস্থিরতা তৈরি করতে সবসময়ই তৎপর। কারো পোস্ট মোছা হলে, কেউ ব্যান হলে, জেনারেলের তকমা পরলে, ওয়াচে গেলে- হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। একাধিক নিক নিয়ে তারাই পোস্টে পোস্টে গিয়ে "বিপ্লব বিপ্লব" আবহ তৈরি করে মন্তব্যের পর মন্তব্য করে আসছে। যেন সামহোয়্যারে এখনই বিপ্লব দরকার। যেন ব্লগে বিপ্লব করা না গেলে দেশের অগ্রগতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই ব্লগবিপ্লবীদের অনেকের আবার কোনো লেখাই নেই ব্লগে, আড্ডা-ফাড্ডা টাইপের কিছু হাস্যকর পোস্ট পাওয়া যাবে হয়তো আঁতশী কাচ দিয়ে খুঁজলে, কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন, ব্লগে হাউ-কাউ তৈরিতে এরা বরাবরই আছে অগ্রণী ভূমিকায়। আমি অনেক পরে আবিস্কার করেছি, ওটাই তাদের পেশা, ব্লগে তাদের ওটাই একমাত্র কাজ লেখালেখি নয়, মতবিনিময়ও নয়।

ব্লগে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে যা হয়
পরিমিত মাত্রার নিয়ন্ত্রণ, যেটা এখন সামহোয়্যারে আছে, সেটা না থাকলে ব্লগের চেহারা কী রকম দাঁড়ায় তার সামান্য কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি। এই লিংকের মন্তব্যগুলো শ্রেফ একনজর দেখে আসুন। এইরকম উদাহরণ কমপক্ষে এক হাজার দিতে পারবো আমি। নারী ও ১৮ বছরের নিচে বয়স যাদের, তাদের না দেখতে অনুরোধ করি। ব্লগে নানা ধরনের, নানা শ্রেণীর মানুষ আসেন। এখানে কারো মা যেমন তার রেসিপি দিতে আসেন, কারো বোনও তার অনুভূতির কথা বলতে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক যেমন ব্লগে আছেন, একেবারে স্কুলপড়ুয়াও আছে। তুমুল তরুণ যেমন আছেন, কিশোরও আছেন। কেউ পুরুষ, কেউ নারী, কেউ কিশোর- সব শ্রেণীর লোক ব্লগে আসেন। সুতরাং ইচ্ছে কলেই আমি পারি না অশ্লীল কথামালা ব্লগে তুলে দিতে। বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যা ইচ্ছে তা করতে পারি না। এই বোধটুকু সবার মধ্যেই আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তারপরও আমরা যারা ব্লগার, তাদের অনেক সময় ভুল হয়ে যায়, ভুল হবে। সেটা শোধরাতেও হবে। যেমন সামহোয়্যারের একজন ব্লগারের সঙ্গে আমি একবার অশালীন আচরণ করেছিলাম। দুঃখ প্রকাশ না করলে তাতে কিছুই হয় না। কিন্তু পরে আমার আচরণ আমার নিজের কাছেই খারাপ লেগেছে। আমি ওই ব্লগারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করিনি।

প্রতিবাদের ভাষা!
লক্ষ্য করেছি, যারা আস্তিক, যারা নাস্তিক, যারা মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী, যারা প্রো-রাজাকার- সকলেই চান তাদের নিজেদের পক্ষেই সব সিদ্ধান্ত আসুক। না আসলেই সেটা কর্তৃপক্ষের দোষ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিকে প্রমোট করলে সেটাও নাকি কর্তৃপক্ষের দোষ। আমার তো মনে হয়, এই ব্লগে স্বয়ং ঈশ্বর নেমে এসে মডারেশন প্যানেলের হাল ধরলেও তার পেছনে লাগার মানুষের অভাব হবে না। বাংলাদেশ তো!
তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, সামহোয়্যারে মডারেশনের মান ভালো নয়। ফলে ক্ষোভ তৈরি হয়। এটা খুব স্বাভাবিক। বাদ-প্রতিবাদ হবে, সমালোচনাও হবে। কিন্তু তাই বলে কি মডারেটরের মুখে প্রশ্রাব করতে হবে, নাকি কাউকে 'দেহরক্ষিণী' বলে গালি দিতে হবে? প্রতিবাদের ভাষা কি এরকম হওয়া উচিত?

একটি প্রশ্ন
কয়েকদিন আগের একটি উদাহরণ দেই। গত রাতে রাশেদ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন সামহোয়্যারে, পড়ে দেখি মডারেশনে স্বচ্ছতা নিয়ে সে কী কান্না তার, সে কী হতাশা! রাশেদ কলিকাতা ব্লগের একজন মডারেটর ও ডেভেলপার। সেই কলিকাতা ব্লগ আবার বিশাল মুখ করে সবসময় জানান দেয় যে, তারা বাংলাভাষার নাকি একমাত্র নো-মডারেশনওয়ালা ব্লগ। কয়েকদিন আগে মাত্র লক্ষ করলাম, কলিকাতা ব্লগে আমার যে একাউন্টটি ছিল, যাতে ছিল শতাধিক লেখা, কর্তৃপক্ষ সেই ব্লগটি কোনো কিছু জানান না দিয়েই মুছে দিয়েছে। অস্বাভাবিক হিট কেলেংকারি ধরিয়ে দেওয়ার পর রাশেদ, সুশান্তরা মিলে এই কাণ্ডটি করেছে। তাদের ব্লগ, তারা করতেই পারে। আমারও সেটা নিয়ে হা-হুতাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, নো-মডারেশনের ধ্বজাধারী যে ব্লগে এইরকম চোরের মতো ব্লগ মুছে দেওয়া হয়, সেই ব্লগের মডারেটর এসে সামহোয়্যারে ১২০০ বছর আগের কাহিনী তুলে ধরে কান্নাকাটি করতে পারে কিনা? অমি রহমান পিয়াল ও আইজুদ্দিন সরাসরি কলিকাতা ব্লগের মডারেশন প্যানেলের সঙ্গে যুক্ত। আমার ব্যক্তিগত ব্লগ মোছার ব্যাপারটি তাদের নজরের বাইরে ছিল- এটাও নয়। কিন্তু এর পর তাদের কি সামহোয়্যারে এসে কারো ব্লগ বাতিলের প্রতিবাদ করার নৈতিক অধিকার থাকে? বিচারের ভার ব্লগারদের হাতে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৩৫
১২৪টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×