somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র' থেকে এফবিআই : বাংলাদেশের ভেতরে সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রীয় গুণ্ডামির ধারাবিবরণী

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওহ্ গড! পরশু থেকে যা ভাবছিলাম, সেটাই হল অবশেষে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন শেষমেশ বললেন, উলফার চেয়ারম্যান গ্রেপ্তারের কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। তিনি আজ বললেন, "গ্রেপ্তারের ঘটনাই তো ঘটেনি, হ্যান্ডওভারের প্রশ্ন আসে কীভাবে?"
উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া কক্সবাজারেই গ্রেপ্তার হয়েছেন গত সোমবার। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ছাড়াও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোও সুনির্দিষ্ট দাবি করছিল, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) এর চেয়ারম্যান অরবিন্দ গত সোমবার বাংলাদেশেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরে তাকে ভারতের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমস সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, 'উলফা চেয়ারম্যানকে বুধবার ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। পরে তাকে নয়াদিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই।' উলফা চেয়ারম্যানকেই শুধু নয়, ভারতের আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএলএফটি নেতা বিশ্ব মোহন দেব বর্মাকেও বাংলাদেশ ভারতের কাছে তুলে দিয়েছে বলে হিন্দুস্থান টাইমস জানাচ্ছে।

অনুপ চেটিয়া দিয়ে শুরু
উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া ঢাকায় গ্রেপ্তার হন আজ থেকে ১২ বছর আগে। আটক করা উলফা নেতাদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রম, যাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। তবে ১৯৯৭ সালের সেই গ্রেপ্তারের ঘটনার পরও বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ঘটনা অস্বীকার করে গেছে। পরে ঢাকার আদালতে অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে বিচার হয়েছিল বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে। সেই মামলায় তাকে দেওয়া সাজার মেয়াদও শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। তিনি এখনো কারাগারে বন্দি আছেন। সাজা শেষ হলেও তাকে নিয়ে সামনে কী করবে সরকার, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশে অবস্থানরত উলফা নেতাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ সরকার। মাঝে মাঝেই দেশজুড়ে গোপন অভিযান চললেও শীর্ষ নেতাকে আটকের খবর পাওয়া গত সেপ্টেম্বরে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ উলফার ডেপুটি সামরিক কমান্ডার দেরহাগ্রা সেরেন্যা ওরফে আনন্দ ওরফে অমল দাসকে গ্রেফতার করে। তাকে ঢাকাতেই খুব গোপনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

উত্তরার বাড়িতে মধ্যরাতের অভিযান
ঢাকার উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের একটি সাদামাটা বাড়ি। গত ১ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সন্তর্পণে সেই বাসায় ঢোকে সাদা পোশাকধারী ৭-৮ জনের একটি দল। আধঘন্টা পর ওই দলটি যখন বের হয়, তাদের সঙ্গে আরো দুটি মুখ দেখা যায়। এরা হলেন উলফার দুই উর্ধ্বতন নেতা পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব শশধর চৌধুরী এবং অর্থ বিষয়ক সচিব চিত্রবন হাজারীকা। এই দুই নেতা উলফার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়-আশয় দেখাশোনা করতেন। এদের একজন পরিবারসহ ওই বাড়িতে বসবাসও করতেন। ১ নভেম্বর রাতের ওই ঘটনার কয়েকদিন পর ভারতীয় পুলিশ তাদের সেখানকার আদালতে হাজির করে। ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করলেও কাগজে-কলমে তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব যথারীতি দাবি করেছেন, "বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতরে উলফা নামের সংগঠনের কোনো নেতার গ্রেফতার হওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি।"

ঢাকায় এফবিআইয়ের অভিযান
২০০৬ সালের এমন এক ঘটনার কথা আমরা জানি। ওই বছরের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসের কাছ থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুবক এহসানুল ইসলাম সাদেকীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে ওইদিন ঢাকাতেই এফবিআইয়ের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সরকার প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি এই ঘটনার কথা। তবে সাদেকীর বাবা বারিধারার ওই ঘটনার পর একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছিলেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল সাদেকীর বিরুদ্ধে। তা নিয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভেতর থেকে অন্য দেশের পুলিশী সংস্থা কাউকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে পারে?

উলফা আর আল কায়েদা এক নয়
উলফা ভারতে সশস্ত্র সংগ্রাম করে যাচ্ছে বহুকাল ধরে। তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথা নেই। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উলফার নেতারা এখানে অবস্থানকালে কখনোই কোনো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল না। পুলিশের রেকর্ডেও সেরকম কোনো তথ্য নেই। উলফা আর আল কায়েদার মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য আছে। এ দুটো সংগঠন সমমানের নয়। এ দুটোকে একপাল্লায় মাপা যায় না। কিন্তু যেহেতু ভারত সরকারের কাছে এই নেতারা 'সন্ত্রাসবাদী', এর জের ধরে আসামে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়াতেই তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য তারা বাংলাদেশে সাময়িকভাবে অবস্থান করছিল।

খুব বাজে কিছু উদাহরণ তৈরি হয়ে যাচ্ছে
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই উলফা নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চলতে থাকে। স্পষ্টত ভারতকে খুশি করাই মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকে সামনে রেখে এ অভিযান আরো জোরদার করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ কেন এই নেতাদের অপহরণ করে ভারতের কাছে তুলে দেবে গোপনে, যেখানে ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তিই নেই? তাছাড়া অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কেন নেবে বাংলাদেশ? নাকি ক্ষুধাপীড়িত এই দেশের সরকার সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের হাবিলদার সাজতে চায়?
সরকারও জানে, প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সঙ্গে এই অমানবিক আচরণের সমর্থক খুব বেশি পাওয়া যাবে না। তাই তারা অপহরণ ও হস্তান্তরের ঘটনা গোপন রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সবকিছু বেমালুম অস্বীকার করে যাচ্ছে। ভাবতেই শিউরে উঠছি, একাত্তরে বাংলাদেশ থেকে আশ্রয় নিতে যাওয়া শরণার্থীদের যদি এভাবে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিতো ভারত, কী অবস্থাটাই না হতো! খুব বাজে কিছু উদাহরণ তৈরি করে যাচ্ছে এই সরকার। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকেই হয়তো এর মাশুল গুণতে হবে কোনো এক সময়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:২৯
২৯টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×