somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমার ভুলভাল : হাতির পাল যেখানে আকাশে ওড়ে!

১২ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকাই ছবির এক দৃশ্যে বিছানায় শুয়ে বই পড়ছিলেন চরিত্রাভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা। এমন সময় আতঙ্কিত ভঙ্গিতে তার কন্যা ঢুকল কক্ষে। খালেদা আক্তার এবার বিছানা ছাড়লেন। অতি করুণ মুখ নিয়ে মেয়েকে শুধালেন- 'তোকে নাকি গুণ্ডারা কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল?' বুঝুন অবস্থা! মেয়ে অপহৃত হয়েছে, আর সেই খবর জেনেশুনে আপন মাতা এফডিসির বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছেন! আমাদের ঐতিহ্যবাহী এফডিসির সিনেমায় গরুরা আকাশে ওড়ে, মৎস্যকূল ঘাস খায়- এ কোনো নতুন খবর নয়। পাশের বলিউডে এই চর্চা বিরল নয়। তবে হলিউডও দেখা যাচ্ছে, এই ধারা থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
এমনিতে সব পরিচালকই চান, তার সিনেমায় কোনো খুঁত না থাকুক। এরপরও অনেককিছুই চোখ এড়িয়ে যায় তাদের। কন্টিনিউটির ভুলই সবচেয়ে বেশি। সিনেমায় সব দৃশ্য একবারে ধারণ করা যায় না। সন্ধ্যাবেলায় নেওয়া একটি দৃশ্য পরদিন সকালেও ধারণ করার প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য দৃশ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা খুবই জরুরি। এই যেমন, ম্যাক্স পেইনের দুটি দৃশ্য পাশাপাশি দেখুন - প্রথম দৃশ্যে মৃতদেহ এক ভঙিতে শুয়ে আছে, পরের দৃশ্যেই আবার ভঙ্গি অন্যরকম। মৃতদেহ নিশ্চয়ই নড়াচড়া করে না! সুতরাং শুটিং চলাকালে দৃশ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য ঘরের দেয়াল, আসবাব থেকে শুরু করে নড়াচড়া - সবই অবিকল রাখতে হয়। এটাই কন্টিনিউটি। ভুলভালের মধ্যে অনেক সময় আবার ছবির দৃশ্যে শুটিং দলের ক্রুদের মুখ, শব্দ ধারণ করার মাইক্রোফোন- এসবও এসে যায়। তো, শুরু করা যাক-

রোমান যুগে গ্যাস সিলিন্ডার
রোমান যুগের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছিল গ্ল্যাডিয়েটর। সেই পুরনো যুগের আবহ আনার জন্য ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল সর্বাধুনিক কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি, স্পেশাল ইফেক্ট, বাস্তবানূগ অ্যাকশন দৃশ্য। সবই ঠিক ছিল। গোলমালটা বাঁধে কার্থেজের যুদ্ধের সময়ে, একটি রথ উল্টে গিয়ে দেয়ালে আঘাত হানে, উল্টে যাওয়ার সময় কম্বলের ভেতরে লুকোনো একটি গ্যাস সিলিন্ডার ছবির পরিচালকের দৃষ্টি এড়ালেও দর্শকের চোখে ধুলো দিতে পারেনি। রোমান যুগে আর যাই হোক, গ্যাস অন্তত আবিষ্কৃত হয়নি! গ্ল্যাডিয়েটর ছবিতে সবমিলিয়ে পাওয়া গেছে ১৭৬টি ভুল।
দেখুন এই যে জিন্স পরা ক্রু মেম্বার-


এই ছবিতে ধরা পড়েছে স্বয়ং ক্যামেরাম্যান।


আর এই ছোট্ট ক্লিপটায় দেখুন গ্যাস সিলিন্ডার কেলেঙ্কারি-


ব্রিটিশ রোডে মার্কিন সেনার জগিং
স্ট্যানলি কুবরিক তার যুদ্ধবিরোধী ছবি ফুল মেটাল জ্যাকেটের চিত্রধারণ কাজ করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন লোকেশনে। ছবির একটি দৃশ্যে দেখা যায়, মার্কিন মেরিন সেনারা জগিং করছেন ট্রেনিং ক্যাম্পে। যে সড়কে তারা জগিং করছিলেন, সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল ব্রিটিশ রোড মার্কিং, যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না!


ক্ষতচিহ্নের নড়াচড়া
যে কোনো অ্যাকশন দৃশ্যে কৃত্রিমভাবে আহত হওয়া একেবারেই মামুলি ব্যাপার। ছবির শুটিং চলাকালে দৃশ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে পাত্র-পাত্রীর আহত হওয়ার স্থানটি মনে রাখা খুবই জরুরি। লর্ড অফ দ্য রিংস : দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং ছবির একটি দৃশ্যে ফ্রোডোর মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী দৃশ্যে লক্ষ্য করা যায়, সেই ক্ষতচিহ্নের অবস্থান ও আকার পরিবর্তন হয়ে গেছে। ক্ষতচিহ্ন আকারে বড়ো তো হয়েছেই, সেটা আবার মুখের ডানদিক থেকে বামদিকে চলে এসেছে। ধরে নেওয়া যায়, ব্যাপারটা হয় অলৌকিক, নয়তো মেকআপ বিভাগের কারিশমা! সবমিলিয়ে এই ছবিতে খুব বেশি না, মাত্র ২২৫টি ভুল আবিস্কার করা গেছে!


থ্রি ইডিয়টিক কাণ্ড
বহুল আলোচিত 'থ্রি ইডিয়টস' ছবিতে সন্তান জন্মের সময় পিয়া (কারিনা কাপুর) একটি দৃশ্যে ভিডিও চ্যাটের সময় ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখছিলেন। দৃশ্যটি ছিল তারও ছয় বছর আগের একটি ঘটনা নিয়ে। কিন্তু তখন তো ইউটিউব সাইটটা চালুই হয়নি! আরেকটি দৃশ্যে আমির খান এবং মাধবন এয়ারটেলের ইন্টারনেট ডাটাকার্ড ব্যবহার করছেন, শর্মন জোশী তখন হাসপাতালে। দৃশ্যটি ১০ বছরের আগের একটি ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ১০ বছর আগে এয়ারটেল ওয়্যারলেস ইন্টারনেট কোত্থেকে বাজারে ছাড়লো? তারপর দেখুন, ছবির শুরুর দিকে অভিনেত্রী মোনা সিংয়ের নাম ছিল পুনম, ছবির মাঝামাঝিতে বিনা নোটিশে তার নাম দাঁড়ায় 'মোনা'। সবশেষে তাকে ডাকা হতে থাকে 'মোনা পুশ' নামে।

অলৌকিক গর্ভ
'কৃশ' ছবির একটি দৃশ্যে রোহিত বলছিলেন, গত দু বছর ধরে তিনি টানা অধ্যাপনা করে যাচ্ছেন এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ শেষে তবেই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু রোহিত যদি দু বছর বাড়ি থেকে দূরেই থাকেন, প্রশ্ন এসে যায় তার স্ত্রী গর্ভবতী হলেন কিভাবে? জাদু নাকি!

টাইম মেশিন!
'কাভি খুশি কাভি গাম' ছবির একটি ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্য, সময়কাল ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল। দেখা যায়, অমিতাভ বচ্চন একটি এলসিডি প্লাজমা টেলিভিশন দেখছেন। ওই সময় এলসিডি প্লাজমা আবিষ্কার তো দূরের, নামই শোনেনি কেউ। অপর একটি দৃশ্যে (১৯৯১ সালের ফ্ল্যাশব্যাক) অমিতাভকে একটি নকিয়া ৯০০০ কমিউনিকেটর ব্যবহার করতে দেখা যায়। যদিও নকিয়া ওই মডেলের ফোন রিলিজ হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।

ছোট্ট এই ভিডিওতে একেবারে হাতেনাতে ধরা হয়েছে হিন্দি সিনেমার কিছু ভুল।

হলিউডের যতো ভুলভাল
গত বছরের ছবি অ্যাভাটারে ভুল ছিল ২৪টি। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া অস্কারজয়ী স্লামডগ মিলিওনেয়ারেও ১১টি ভুল আছে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া টাইটানিকে ভুল পাওয়া গেছে ২১৩টি। পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ানে ভুল শনাক্ত করা গেছে ২৪১ টি।

দেখুন, ছবির এই দৃশ্যে ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পারো যখন অধীনস্থদের কিছু একটা নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তখন সাগরে শুটিং দলের একজন সদস্যকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, যার পরনে ছিল টিশার্ট, কাউবয় টুপি আর সানগ্লাস!

ওদিকে সেই ১৯৭৭ সালের ছবি স্টার ওয়ার্সে তো দেখছি ভুলের ছড়াছড়ি


আর সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবির মধ্যে দ্য এক্সপেন্ডেবলসে এখন পর্যন্ত ১০টি ভুল শনাক্ত করা গেছে। হ্যাংওভারে ভুল পাওয়া গেছে ২৬টি। টয় স্টোরিতে তিনটি। ইনসেপশনে ১৯টি। আর ফরেস্ট গাম্পে ৪৯টি-


ম্যাট্রিক্সে ভুল পাওয়া গেছে ১৫২টি। ছবিতে দেখুন শিটের ভেতরে ক্যামেরার মুখটা শেষ পর্যন্ত আর লুকোনো যায়নি।


হ্যারি পটার এন্ড দ্য ফিলোসফারস স্টোনে ২১৭টি ভুল পাওয়া গেছে।
দেখুন পেছন থেকে রনের শার্ট টেনে ধরেছে এক ক্রু।




বিখ্যাত কিছু হলিউডি সিনেমার ভুলভ্রান্তি দেখুন স্বচক্ষে-


ভুলভাল নিয়ে আরো জানতে দেখুন মজার এই ওয়েবসাইটটি। এতে এই পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৯৭৬টি সিনেমার ৮৯ হাজার ৫৯৩টি ভুল ধরা হয়েছে।

সিনেমার ভুল : ব্লগের পাতা থেকে
এক্সকিউজ মি দাদীমা, আপনি এই গুলিবিদ্ধ হাত দিয়ে চোখ মুছবেন না...
সাম্প্রতিক দেখা ছবি-রোবোট -রিভিউ
খুঁত না ধরে হিন্দি সিনেমা দেখতেসি
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:২১
৫২টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
খুব ভালো বন্ধু। কাছের বন্ধু। আমরা একসাথেই স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করেছি। ঢাকা শহরে শাহেদের মতো সহজ সরল ভালো ছেলে আর একটা খুজে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×