somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাই না লিবিয়া তুমি অন্য কারো হও...

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবিসি কিছুক্ষণ আগে জানালো, লিবিয়ার ওপর ফ্রান্সের সামরিক বিমান উড়তে শুরু করেছে। হয়তো আজ রাতেই রাজধানী ত্রিপোলির ওপরে মুহূর্মুহূ বোমা হামলা চলবে। হয়তো ভোর নামতেই বেনগাজি দিয়ে জাতিসংঘ বাহিনীর লেবাসে মার্কিন সেনা ঢুকে যাবে লিবিয়ার ভেতরে। ভূমধ্যসাগর থেকে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষাক্ত বোমা ফেলবে নিরীহ লিবিয়ানদের ওপরে। এর মধ্য দিয়ে ইরাক, আফগানিস্তানের পর আরো একটি সার্বভৌম দেশকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার আয়োজন প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। জাতিসংঘ বরাবরের মতোই পশ্চিমা স্বার্থ ষোল আনা রক্ষা করে পশ্চিমের আসন্ন আগ্রাসনকে আইনগত বৈধতা দিল। অথর্ব আরব লিগ যথারীতি 'জ্বি হুজুরের' ভূমিকায়।

লিবিয়ার ওপর লোভাতুর চোখ
গাদ্দাফির নানা ঘটন-অঘটনের পরও পশ্চিমাদের কাছে লিবিয়া যে কারণে সিরিয়া ছিল না, যে কারণে লিবিয়াকে ইরানের মতো সতীনের চোখে দেখা হতো না, তার মূল কারণ দেশটির প্রধান সম্পদ তেল। এই তেলের কারণেই সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বেশ অনেকবার গোপনে লিবিয়া সফর করেছেন ইতিপূর্বে, নানা ইস্যুতে গাদ্দাফিকে পরামর্শ সরবরাহ করেছেন নিয়মিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের আমলেই লিবিয়ার কাছে বিক্রি করা হয়েছে অস্ত্রের বিশাল চালান। লকারবি বিমান হামলায় অভিযুক্ত লিবীয় নাগরিক মেগরাহিকে যে স্কটল্যান্ড মুক্তি দিতে বাধ্য হল কদিন আগে, তাও ওই ব্রিটেনের অদৃশ্য চাপেই। সেই ব্রিটেন এখন গাদ্দাফির পাশে নেই। গাদ্দাফির কদর তাদের কাছে ফুরিয়েছে।
নিকোলো সারকোজি যতোটা না ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার চেয়েও বেশি সুপারমডেল কার্লা ব্রুনির স্বামী। মেধার দিক থেকেও দুজনেই সমান বলে আমার ধারণা। উইকিলিকস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যতোটা না ক্ষুব্ধ ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখেছি ফ্রান্সের পক্ষ থেকে। ডেকচির চেয়ে ঢাকনা গরম - এই অবস্থা! লিবিয়ার বেলায়ও সেটা দেখলাম। খোদ যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের আগেই তারা লিবিয়ান বিদ্রোহীদের স্বীকৃতি দিয়েছে, অন্য দেশগুলোর ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

একই সুতোয় মার্কিন+আরব লিগ
যুক্তরাষ্ট্র বেশ অনেকদিন কেন যেন দ্বিধায় ভুগছিল লিবিয়া নিয়ে। এমনিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই রুষ্ট ছিল গাদ্দাফির ওপর, তবে মাত্রাটা ছিল মৃদু - নয় শীত, নয় উষ্ণ। যেভাবে তাকে চটানো উচিত, সেভাবে কখনো চটায়নি তারা। এখন বেলা শেষে গাদ্দাফির পতন যেহেতু সময়ের ব্যাপার, ঠিক এমন অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাদ্দাফিকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি। গাদ্দাফি এবং তার সহযোগীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এক সেকেন্ড দেরি করেনি। ওদিকে আরব্য হিজড়াদের সংগঠন আরব লীগ পশ্চিমা প্রভুদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে বরাবরের মতোই। এই আরব লীগ বাহরাইনের বিদ্রোহীদের দমনের জন্য একাট্টা, তারাই আবার লিবিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তার জন্য দুপায়ে খাড়া। বাহরাইনে তাদের ভূমিকা দমনকারীর, লিবিয়ার আবার সেই ভূমিকা সাহায্যকারীর।

পশ্চিমের অস্বাভাবিক অতি উৎসাহ
ফ্রান্স-ব্রিটেনের অতি উৎসাহের নেপথ্যে কী? এই উৎসাহ কেন ফিলিস্তিনের বেলায় নেই, কেন আইভরি কোস্টে নয়, কেন নয় মিয়ানমারে? আইভরি কোস্টে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে মাসের পর মাস একটা ঘরে বন্দি করে রেখেছে প্রতিপক্ষ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী সেখানে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকায়। মাত্র গত পরশুই ৩০ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে লরা বাগবোর অনুগত বাহিনী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই, ফ্রান্স সেখানে বিমান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে না, রণতরী মোতায়েনের চিন্তা মাথাতেই আনে না ব্রিটেন। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যুগের পর যুগ পশ্চিমা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আসছে। কেন সেখানে ফরাসি বিমান উড়ে না? জাতিসংঘ সেখানে কেন কঠোর নয় লিবিয়ার মতো? উত্তর - তেল, তেল এবং তেল!

মন্দের ভালো এক স্বৈরশাসক
বেনগাজিতে কিছু লিবিয়ান এখন যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে, একদা এইরকম বিপ্লব করেই গাদ্দাফি লিবিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিলেন আরেক স্বৈরশাসককে হটিয়ে। ৪৩ বছর ধরে যে লোক একটি দেশের ক্ষমতায় - সেই গাদ্দাফি যে স্বৈরশাসক সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে না। আপাদমস্তক বেদুইন গাদ্দাফির দোষত্রুটি সীমাহীন, অবৈধ সম্পদও তার প্রচুর। তবু তাকে কৃতিত্ব দিতে হয় পশ্চিমের লোভাতুর চোখ এড়িয়ে দেশটাকে অখন্ড রাখার জন্য। লিবিয়ায় অন্তত তিনটি উপজাতি আছে, যারা দেশের ভেতরে যে কোনো পটপরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এই তিন উপজাতিই প্রভাবশালী, আর তা এতোটাই যে লিবিয়ার ভেতরেই যার যার সীমানায় আলাদা আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করে বসতে পারেন। কিন্তু সেটা হয়নি মূলত গাদ্দাফির অনমনীয় কৌশলী ভূমিকার কারণে। বাংলাদেশে ফেরত আসা লিবিয়া প্রবাসীদের অনেকেই বলেছেন, গাদ্দাফি দেশটার অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নতি ঘটিয়েছেন।

যে তন্ত্র মার্কিন-ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষা করে
গণতন্ত্র সর্বোত্তম, তবে আজকাল গণতন্ত্র আর গণতন্ত্র নেই, সংজ্ঞা বদলেছে অনেক আগেই। এখনকার বিশ্বে মার্কিন-ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষা করে যে তন্ত্র, সেটাই গণতন্ত্র। এই বিশেষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-ফ্রান্সের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক দস্যুদল হামলে পড়তে চাইছে লিবিয়ার ওপর। বেনগাজিতে গতকালও লিবিয়ার পতাকার পাশাপাশি ফ্রান্সের পতাকা উড়েছে। যেন সার্বভৌম লিবিয়া ফরাসি কলোনি হতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে দেখলাম, লিবিয়ার ভূমিতে পশ্চিমা সেনা অভিযানের খবরে খোদ বিদ্রোহীদের মধ্যেই অসন্তোষ ছড়িয়ে গেছে। ছড়ালেও লাভ আর নেই। পশ্চিমাদের জন্য আগ্রাসনের ক্ষেত্র ইতিমধ্যে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

যদি পতন ঘটে গাদ্দাফির
যদি গাদ্দাফির পতন ঘটে, তাহলে লিবিয়া খণ্ড-বিখণ্ড হবে - এ নিয়ে নিঃসন্দেহই থাকা যায়। এবং নিশ্চিতভাবেই বিদ্রোহীদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে, তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আগামী দিনে লিবিয়ার চাকা চলবে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নয়তো ব্রিটেনের ইঙ্গিতে। এই অবস্থায়, বিষয়টা যদিও স্পর্শকাতর, কারো কারো চোখে অস্বস্তিকরও ঠেকবে, তবু একজন ডিক্টেটর কর্ণেল মোয়াম্মার গাদ্দাফির প্রতি সমর্থন থাকলো বাংলাভাষী এক ব্লগারের। কারণ চাই না সাড়ে ১৭ লাখ বর্গকিলোমিটারের দেশটি অন্য কারো হোক...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫৮
৫৩টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×