somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ প্রতিযোগিতায় অবশেষে সেই ফলাফল, ভোটের অংক আর চোরের দশদিন

১২ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডয়চে ভেলের তদন্তের জন্য ভোটাভুটির শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। না, তাদের কোনো সাড়া নেই। ডয়চে ভেলে হিট চেয়েছে, সেটা তারা পেয়েছে। সে কারণে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে ভোট জালিয়াতদের পক্ষ নিয়েছে স্পষ্টতই। মাঝখান থেকে, জার্মান এই প্রপাগাণ্ডা মিডিয়া নিজেরাও হয়তো জানে না, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের সুনামের অনেকটাই নিজ হাতে নষ্ট করলো। অথচ এরাই সংবাদে স্বচ্ছতা আবার জবাবদিহিতার কথা বলে গলা ফাটায়। আর অবসরে আধা-মূর্খ ব্লগারদের বিচারক সাজিয়ে ভোটচুরির সবগুলো দরজা খুলে দিয়ে ব্লগারদের ওজন মাপার চেষ্টা করে।

দেখা যাক ভোটের সেই অংকটি
খুব সতর্ক চোখে দেখেছি, এবার ডয়চে ভেলে ব্লগ প্রতিযোগিতার শুরুর দিকে চারটি ভোট পড়লে ১% বাড়তো ভোটের কাঁটা। এভাবে চলল ২৭ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। এর পরপরই সামহোয়্যারে ইমন জুবায়েরের পক্ষে পোস্ট স্টিকি হওয়ার পর তার অবস্থান ১৫% থেকে ২১%-এ গিয়ে দাঁড়ায়। এবং এর ঠিক পর ঘটে বিস্ময়কর সেই ঘটনা। মাত্র একটি রাত শেষে, যখন বাংলাদেশের মানুষের ঘুমোনোর সময়, আরিফ জেবতিকের অবস্থান একলাফে গিয়ে দাঁড়াল ৩০%-এ। পরদিন বিকেল নাগাদ সেটা হয়ে গেল ৩৮%। এরপর অবস্থা দাঁড়াল এমন- ২০টি ভোট পড়ার পরও অন্য ব্লগারদের ভোটের কাঁটা আর ১%ও বাড়ছিল না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, ২০ থেকে ৪০টি ভোট পড়লে যেখানে ১% বাড়ে, সেই পরিস্থিতিতে আরিফ জেবতিকের পয়েন্ট ১% মেনে আসার ৫ মিনিটের মধ্যে আবার বেড়ে যেতো। বাকি অন্য ব্লগারদের বেলায় এই ১% বাড়ানো ছিল প্রায় সারাদিনের চেষ্টা। ডয়চে ভেলে কর্তৃপক্ষ এই এখনো ২৯ ও ৩০ মার্চ আরিফ জেবতিকের ব্লগে পড়া ভোটের প্যাটার্ন ও অন্যান্য লক্ষণ যাচাই করলে সহজেই ধরা যাবে জালিয়াতিটা। কিন্তু সেই সৎসাহস কি আছে তাদের? মনে হয় না।

চোরের দশদিন
আজ প্রকাশিত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফলে বেস্ট জাল ভোট ক্যাটাগরিতে আরিফ জেবতিক এবং বেস্ট অ্যাডাল্ট অ্যাকটিভিজম ক্যাম্পেইন ক্যাটাগরিতে অমি রহমান পিয়ালই জিতেছেন। ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু, যারা আবার একটি ব্লগের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা, সেই একই ব্লগের ইউআরএলে বিস্ময়কর সমান ভোট পেয়ে নির্বাচিত - এটা বিশ্বরেকর্ডই বটে! দুজনেই আবার ডয়চে ভেলের বিচারক রেজওয়ানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই সার্টিফিকেট নিয়ে তারা ঠিক কী করবেন, আমার জানা নেই। এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে শুনেছি, আরিফ জেবতিক সিলেটে ইউপি ইলেকশন করবেন আগামীবার, এই ভোট নাকি তারই ওয়ার্মআপ। ভোটারদের হয়তো বোঝাবেন, 'এটাও একটা নোবেল! তোমাগো পোলা সেটা জিতছে।' পত্রপত্রিকায়ও হয়তো তাদের ভারী ভারী বাণী দেখা যাবে। কিন্তু ব্লগাররা জানে, এই বিজয় এসেছে চুরি করে, নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি করে। এ এমন এক প্রতিযোগিতা, যেখানে দলমতনির্বিশেষে একটা সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও অভ্রের মেহদী হাসান খানরা কখনোই জিতবেন না।

এই জালিয়াতি নিয়ে মাতামাতি অনেকের আবার না-পছন্দ। পর্নো ক্লিপের খোঁজে ব্লগে আসা পাঠক এইসবে খুব বিরক্ত হয়। এমনিতে আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত জাতি আমরা। সবকিছু গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। অনুভূতি ভোঁতা। স্কুলগামী ছাত্রী বখাটের হয়রানির শিকার হয়, দেখেও না দেখার ভান করে দ্রুতপায়ে হাঁটি। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা গার্মেন্টসকর্মী ধর্ষিত হয়ে যায় চোখের সামনেই, চুপ থাকি আমরা, যেন কিছুই ঘটেনি। আদালতে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, আমরা থাকি নিঃসাড়। ভোট জালিয়াতির এই ঘটনায় আমাদের বিকার থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কেবল বিদেশীরা জানলো, বাঙালি ব্লগাররা চোর। বিশ্ব জানলো, বাংলা ব্লগমণ্ডল একটি চোরের আখড়া।

এটা কি ব্লগীয় রাজনীতি?
প্রথমে চেষ্টা করা হল, এই জাল ভোটাভুটি এবং এ নিয়ে কথা বলাকে 'ব্লগীয় রাজনীতি' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। অথচ ব্লগার, পাঠকসংখ্যা, মিথস্ক্রিয়ায় সামহোয়্যারের ধারেকাছে দাঁড়ানোর কোনো ব্লগ আছে কি বাংলায়? তাহলে কার সঙ্গে রাজনীতি, কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা? এই এখনো সামহোয়্যারের প্রথম পাতায় এক্সেস পেতে একজন ব্লগারকে গড়ে কমপক্ষে একমাস অপেক্ষা করতে হয়, লেখালেখির পরীক্ষা দিতে হয়। যদি দৈবাৎ এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া হয়, আমার ধারণা, সামহোয়্যারের সার্ভার ক্র্যাশ করবে দশ মিনিটের মধ্যে। প্রথম আলোর কি দৈনিক দিনকাল কিংবা সংবাদের সঙ্গে মিডিয়া রাজনীতিতে জড়ানোর প্রয়োজন পড়ে? কিংবা বিএনপির সঙ্গে কি বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে?

অভিনন্দন!
দেরিতে হলেও নজিরবিহীন ভোট জোচ্চুরির প্রতিবাদে ইমন জুবায়ের তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন। তাকে অভিনন্দন। যদি ভোট জালিয়াতি না হতো, ফলাফলে ইমন জুবায়েরের অবস্থান হতো অন্যরকম। তারও অনেক আগে ভোট জোচ্চুরির প্রতিবাদে সেরা ইংরেজি ব্লগ বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া সাইট অসোসিও নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল প্রতিযোগিতা থেকে। তাদের সবাইকে অভিনন্দন, জালভোটের এই প্রতিযোগিতায় শামিল না হওয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৩:৪০
৫২টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×