somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

☼ ☀ মুক্তমনা, মুক্তচিন্তা ও তৎসংক্রান্ত প্রহেলিকা এবং প্রেক্ষিত বাংলাদেশে

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুখবন্ধঃ
মুক্তচিন্তা ব্যাপারটা চিরায়ত বিজ্ঞানের কোন অংশ না হলেও দর্শনের একটি অংশ। বাংলাদেশে এই মুক্তচিন্তা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনা চলছে। সাধারণভাবে আমরা চিনি মুক্তমনা তারাই যারা মুক্তচিন্তা ধারণ ও লালন করেন। ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনে স্মরণাতীতকালের মধ্যে মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তা বিষয়টি জনগণের সামনে চলে আসে। যদিও সেই আন্দোলনের মূলে ছিল যুদ্ধাপরাধী ইস্যু। তথাপি ঐ তরুন যুবারা সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক বৈপ্লবিক কিছু করবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। শাহবাগের আন্দোলন যখন তুমুল পর্যায়ে ঠিক তখনই রাজিব হায়দার নামীয় এক তরুণের জীবনলীলা সাঙ করে দেয় একদল ঘাতক।
পরের ঘটনাগুলো পাঠক নিশ্চয়ই অবগত। থাবা বাবা'র ছদ্মনামে লেখা এই ব্লগারের ব্যাপারে কয়েকটি ডান ধারার মিডিয়া তোড়জোড় শুরু করে। পরবর্তী অধ্যায়ে রচিত হয় ডানপন্থী বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতার ও মিডিয়া বন্ধ করা সহ নাটকীয়ভাবে সুপারফ্লপে পড়ে যায় শাহবাগ আন্দোলন। নাস্তিক ব্লগারের আন্দোলন বলে যে প্রচারণা চালানো হয় সেই প্রচারণা সম্পুর্ণভাবেই সফল হয়েছে। মৃত্যু হয়ে গেছে একটি আন্দোলনের। সলিলে একাকার হয়ে গেছে শত স্বপ্ন আর সম্ভাবনার।
সে যাই হোক, বাঙালী সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্যের নবজাগরণের পথে যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাদেরকে রুখে দেয়া হলো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। কথাটি জটিল শোনালেও সচেতন যেকোন পাঠকই আমার এ বাক্যের যথার্থতা নিরুপণ করে ফেলবেন। সেদিকে যাওয়াটা অপ্রাসঙ্গিকই হবে বিধায় আর যাচ্ছি না। আমাদের আলোচনা মুক্তচিন্তা ও এর বাংলাদেশ ইফেক্ট নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকুক।
বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার ধারক হিসেবে কতিপয় তরুণ কিছু ফেসবুক পেজ ও বাংলা ভাষার ব্লগে নিজেদের জ্ঞানগর্ভ চিন্তার উপস্থাপন করে যাচ্ছিল যা কথিত ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এক অভূতপুর্ব ধারা পরিদৃশ্য হয়।
বাংলাদেশের জন্য যেকোনও থিওরী তৈরি করা হলে ধর্ম বিষয়টি কান টানলে মাথা আসার মতোই চলে আসে। যে সকল তরুন চিন্তাবিদ মুক্তভাবে চিন্তা করতে চেয়েছিলেন তাদের ওপর একটি প্রতিক্রিয়ামূলক সাড়া দেখা গেল। ধর্মের নামে অপকর্ম দেখেই হোক ধর্মের ওপর বিরক্ত হয়েই হোক কিংবা ধর্মের উপর বিদ্বেষের কারণেই হোক তাদের লেখায় ও আলোচনায় আপত্তিকর এবং উদ্দ্যেশ্যমুলকভাবে ধর্ম নিয়ে বিশেষত ইসলাম ও সনাতন ধর্ম নিয়ে এক ধরণের অ্যালার্জি দেখা গেল। আলোচনার সুবিধার্থে আমি ধরে নিলাম যে এটা তাদের প্রতিক্রিয়াই (ধর্মের ওপর)।
প্রকৃত বাস্তবতা হলো, এইসব আপত্তিকর শব্দচয়ন জনসাধারণ ও ধর্মীয়ভাবে অনুরাগী সাধারণ মানুষদের ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। যার ফলশ্রুতিতে একটি বিশেষ গোষ্টি সূযোগ নিয়ে ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারদের উপর চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিঃসন্দেহে বলা চলে এইসব খুনী সাধারণ মানুষদের নিকট নিগৃহীত হয়নি এত বড় বড় নৃশংস খুন করার পরও কারণ সিংহভাগ জনগণ এইসব ব্লগারদের ওপর বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত।
মুসলিম জনগণের মধ্যে একধরণের তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া আছে যে, আল্লাহ ও রসূলকে নিয়ে যারা কটুক্তি করবে তাদেরকে হত্যা করায় কোনই দোষ নাই। তারা মুরতাদ। মুরতাদদের হত্যা করতে ইসলামে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এই প্রচারণা জনগণের নিকট ব্লগারদের উপর আক্রমণকে জায়েয করে ফেলেছে।
মূলকথা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো বিচ্যুত হলাম। আশা করি পাঠকবৃন্দ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এ প্রবন্ধে আমি চেষ্টা করব মুক্তমনা ও এর স্বরুপ বের করতে, মুক্তচিন্তা কি ও এর প্রয়োগের জায়গাগুলো কি, মুক্তচিন্তার প্রভাব, নাস্তিক ও মুক্তমনার পার্থক্য, ধর্ম ও মুক্তচিন্তার দ্বন্ধ, বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার অবস্থা প্রভৃতি।

মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তার ডেফিনেশনঃ (Meaning of “freethinker”)
শুনে তব্দা যেতে পারেন, স্বয়ং মুক্তমনা ব্লগে ঘেটেও আমি মুক্তচিন্তা'র কোন সংজ্ঞা পাইনি। এটা আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এখনো বাংলায় নির্ভরযোগ্য কোন ব্যখ্যাও দেয়া নেই। আমাকে শরণাপন্ন হতে হলো বিদেশীদের কাছে যেতে।

(Mariam Webster)
"A person who forms his or her own opinions about important subjects (such as religion and politics) instead of accepting what other people say."
OR
"One who forms opinions on the basis of reason independently of authority; especially : one who doubts or denies religious dogma."

(Cambridge English Dictionary)
"Someone who ​forms ​their own ​opinions and ​beliefs, ​especially about ​religion or ​politics, ​rather than just ​accepting what is ​officially or ​commonly ​believed and ​taught"

(Def. by Leo Tolstoy)
“Freethinkers are those who are willing to use their minds without prejudice and without fearing to understand things that clash with their own customs, privileges, or beliefs. This state of mind is not common, but it is essential for right thinking...”

(Def. by Dan Barker in FFRF)
"A person who forms opinions about religion on the basis of reason, independently of tradition, authority, or established belief. Freethinkers include atheists, agnostics and rationalists."

(মুক্তমনা ব্লগেঃ-)
1. free-think-er n. A person who forms opinions about religion on the basis of reason, independently of tradition, authority, or established belief. Freethinkers include atheists, agnostics and rationalists.

2. freethinker n. One who has rejected authority and dogma, especially in his religious thinking, in favour of rational inquiry and speculation. -The American Heritage Dictionary

“মুক্তমনাদের আস্থা মুক্তবুদ্ধিতে – অন্ধবিশ্বাসে নয়। কোন আপ্তবাক্য বংশ-পরম্পরায় প্রচলিত হয়ে এসেছে বলেই সেটাকে অবলীলায় বিশ্বাস করতে হবে এমন যুক্তি মুক্তমনারা মানেন না। তাঁরা মুক্তমনে প্রতিটি ধারনাকে যাচাই-বাছাই করতে চান। তারা বিজ্ঞানমনস্ক সংশয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি মিথ এবং অতিকথাকে বিশ্লেষণ করার পরে সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
..
নাস্তিক (atheist), অজ্ঞেয়বাদী (agnostic), সংশয়বাদী (skeptic), মানবতাবাদীদের (humanist) সাধারণভাবে ‘মুক্তমনা সদস্য’ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে – ধার্মিকেরা কি তাহলে মুক্তমনা হতে পারেন না? কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তাঁর নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয়।”


নিম্নের তিনটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ধারণা রাখা আবশ্যকঃ--
১. ধার্মিক তথা বিশ্বাসী
২. অবিশ্বাসী তথা নাস্তিক
৩. অজ্ঞেয়বাদী
পাঠকরা প্রথম দুটি বিষয়ে জানলেও তৃতীয় বিকল্পে ভ্যাবাচ্যাকা খেতে পারেন। সেজন্য বিশেষভাবে আমি অজ্ঞেয়বাদ নিয়ে মৌলিক ধারণা দেব।

Routledge Encyclopedia of Philosophy. হইতে-
In the popular sense, an agnostic is someone who neither believes nor disbelieves in God, whereas an atheist disbelieves in God. In the strict sense, however, agnosticism is the view that human reason is incapable of providing sufficient rational grounds to justify either the belief that God exists or the belief that God does not exist. In so far as one holds that our beliefs are rational only if they are sufficiently supported by human reason, the person who accepts the philosophical position of agnosticism will hold that neither the belief that God exists nor the belief that God does not exist is rational. (Routledge Encyclopedia of Philosophy)


OED 3rd ed.(Oxford)
(n) A person who believes that nothing is known or can be known of immaterial things, especially of the existence or nature of God.
In extended use: a person who is not persuaded by or committed to a particular point of view; a sceptic. Also: person of indeterminate ideology or conviction; an equivocator.
(a) Of or relating to the belief that the existence of anything beyond and behind material phenomena is unknown and (as far as can be judged) unknowable. Also: holding this belief.


সহজ করে বললে যেটা হয়ঃ ঐশ্বরিক বা অবস্তুগত বিষয়ে তথা সৃষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা মানুষের অসাধ্য। এইগুলো নিয়ে ভাবা অযৌক্তিক। তারচেয়ে বৈষয়িক চিন্তাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

সংজ্ঞা নিরুপনঃ
বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, কোনো শব্দের অর্থ কেবল আক্ষরিক নয়, বরং অর্থ প্রদানের সময় সমসাময়িক, প্রথা-ভিত্তিক, সামাজিক ধারণার ওপর গুরুত্বারোপ আবশ্যক।
আমরা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত প্রথার ‘ভিতরেই’ থাকি, আমাদের ভাব বিনিময় (communication) গোটা ভাষা ব্যবস্থা (system of language) নির্ধারণ করে।

মুক্ত মানে আমরা জানি। বাঁধন/দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি গরু বা ছাগলকে মুক্ত করে দিলে সেটা একধরণের মুক্তি। মানুষকে জেল/কারাগার/বন্দি অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হলে সেটাকে বলে মুক্তি। আমরা যখন বলি ‘মুক্ত আকাশের পাখি’, তখন ‘মুক্ত’ অবস্থার কথা বুঝি। এখানে মূলত ইচ্ছার স্বাধীনতাই প্রকাশ পায়। আমরা যদি কারাগারের কোন লোকের ব্যাপারে বলি, সে এখন ‘মুক্ত’, তখন বুঝায় যে এখন স্বাধীনতা ভোগ করছে। সে এখন যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করতে পারে।
কিন্তু যে ব্যক্তি কোন কারাগারে আবদ্ধ ছিল না, এবং এখনও নয়, সে যদি বলে যে ‘আমি এখন মুক্ত’ তাহলে নিশ্চিত হতে হবে যে, শব্দটি রূপক(metaphor)।
যেহেতু ‘মুক্ত’ শব্দটি স্বাধীনতা নির্দেশ করে সেহেতু মুক্তমনা চিন্তার স্বাধীনতা বুঝাতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। উপরের সংজ্ঞাগুলোয় দেখা যাচ্ছে, মুক্তচিন্তক বা মুক্তমনা বলতে তাদের বুঝাচ্ছে যারা জীবনবোধ সংক্রান্ত স্বাধীন চিন্তা করে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস, আচার, দর্শন অগ্রাহ্য করেই তাঁরা চিন্তা করে থাকেন। বিশেষত নিজের মতো করে মানবজীবন সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে চিন্তা করেন। এখন মুক্তচিন্তার মানে এই নয় যে একটি গন্ডি পেরিয়ে আরেকটি গন্ডির মধ্যে প্রবেশ করতে হবে।
একটি গন্ডি ধর্ম। যেটা আমাদের চিন্তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। যেমন "খোদা বিষয়ক চিন্তা"। অনেক মুসলিম প্রবীণকে বলতে শুনা যায় যে, আল্লাহ নিয়ে চিন্তা করলে নাস্তিক হওয়া ছাড়া কোনই উপায় নাই। অতএব ধর্মীয় কতিপয় বিধিবিধান রয়েছে, যা মানুষকে একটি শৃংখলার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। জাগতিক বিষয় নিয়ে তাকে ভাবতে তথা চিন্তা করতে বারণ করে। এগুলোই গন্ডি।

এখন মুক্তচিন্তার মানে এই নয় যে, ধর্মীয় চিন্তার গন্ডির বাইরে গিয়ে আরেকটি গন্ডি ইশ্বরহীন নীতিতে আবদ্ধ হয়ে যেতে হবে। তাহলে তো মুক্ত হয়ে চিন্তা করা আর হলো না। আপনি একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নড়ছেন না, সেটা আপনাকে আবদ্ধ করে রাখছে আরেকটি বাঁধায়। অতএব মুক্তভাবে বা ফ্রি-লি চিন্তা করার মানে নিশ্চয়ই হবে সর্বপ্রকার বন্ধন/প্রভাবন/গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হওয়া, সহজ হওয়া, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অর্জন করা। তাহলে-

মুক্তচিন্তা ডেফিনেশন দেয়া যায়ঃ যে-কোন থিওরেম/ঐশী জ্ঞান/উপলদ্ধ জ্ঞান/বাঁধাকে গৌন হিসেব করে প্রয়োজনে অস্বীকার করে সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে কোন তত্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে একান্তভাবে নিজস্ব চিন্তা পদ্বতি দিয়ে বিচার/বিবেচনা/যাচাই/লালন করা।
সহজ করে বললেঃ জ্ঞানার্জনের উদ্দ্যেশ্যে যেকোন মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চিন্তা করাই মুক্তচিন্তা।
মুক্তমনা(Freethinker) একটি বিশেষ্য পদ। আর মুক্তচিন্তা(Freethought) একটি বিশেষণ পদ।

তাহলে মুক্তমনা কারা?
"যে-কোন থিওরেম/ঐশী জ্ঞান/উপলদ্ধ জ্ঞান/চিন্তার বাঁধাকে গৌন হিসেব করে/অস্বীকার করে তথা কোন তত্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে যিনি নিজস্ব চিন্তা পদ্বতি দিয়ে বিচার/বিবেচনা/যাচাই/লালন করতে পারেন তাঁকেই মুক্তমনা বলে।"
সহজে বললে "যিনি মুক্তচিন্তা করেন তিনিই মুক্তমনা"।


চিন্তার বাঁধাঃ
প্রকৃতির স্বরুপ বিবেচনা করলে দেখবেন যে, মানুষ জন্মের পর থেকে সম্পুর্ণতই নির্ভরশীল একটি প্রাণি। তাঁর এ নির্ভরশীলতার জট খুলতে থাকে বড় হবার সাথে সাথে। কিন্তু পৃথিবীর মানুষেরা নিজেদের একগোত্র/পরিবারে একই মত/ধর্ম অনুসরণ করতে দিতে চায় তাঁদের অধঃস্থনদের(জুনিয়রদের)। আর এক্ষেত্রে তাঁকে চিন্তা করার কলা কৌশল না শিখিয়ে গৎবাঁধা পুর্বের মত ও বিঃশ্বাসকে মেনে নিতে বলা হয়।
মানুষের এ প্রবণতার কারণে, নবীন মানুষেরা নিজেদের মতো করে ভাবার স্বাধীনতা হারায়। আত্মস্থ হয়ে পড়ে অন্যের চিন্তাকে মনেপ্রাণে ধারণ করার। বংশানুক্রমে চলে পরিবার ও সমাজ। একই ধর্ম/চিন্তা পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সবাইকে।
একটা সময়ে এমন হয় যে, সে বাপদাদার ধর্ম ও জাগতিক বিঃশ্বাস ভঙ্গ করাকে তাঁদের অমর্যাদা মনে করে। নিজের সম্মানহানি মনে করে। একটা ভ্রান্তির ছলে সে নিজের সবটুকু স্বাতন্ত্র‌ খুইয়ে ফেলে। সঠিক চিন্তার বা আলোর রেখা দেখেও নিজেকে গুটিয়ে রাখে। একটা চাপ তাঁর মষ্তিষ্কে সর্বদাই ভর করে থাকে।
এইরুপ ব্যক্তি যে কেবল দর্শনের পরিবর্তনের ভয় করেন বিষয়টি আসলে তেমন না। বাস্তবিক জীবনে তিনি নিজের সামাজিক চ্যুতির আশংকা করেন। নিজের মত পরিবর্তনের জানাজানির কারণে বৈষয়িক, আর্থিক ক্ষতির শংকাপ্রাপ্ত হন।
এইভাবে আরো অনেক কারণ আছে যা মানুষকে চিন্তার পরিবর্তনে বাঁধা দেয় অথবা চিন্তা করতে বাঁধা দেয়।

মুক্তমনার স্বরুপঃ
মুক্তমনা হবার শর্ত হলো নিজের বা অন্যের বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া। তাই এ কাজটি সবার দ্বারা করা অসম্ভব। মানুষের চিন্তার পদ্ধতিটা সাধারণত তাকে যেকোনও একদিকে ঠেলে দেয়। যা তার কার্যে প্রতিফলিত হয়।
বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেলায়ই দেখুন না, তাঁর অমর সৃষ্টি গীতাঞ্জলী'তে সনাতনী ধর্মের অনেক কিছুই চলে এসেছে। এগুলো তো নিজের বিশ্বাসকে ভালবাসার কারণেই আসছে। নাকি?
মানুষ নিজের বিশ্বাসকে ভালবাসে। ধরে রাখতে চায়। তাই মুক্তমনা হতে গেলে সবার আগে নিজের বিশ্বাসকে একটা জায়গায় ফেলে রাখতে হয়। ছেড়ে আসলে তো আরো ভাল। কথা হচ্ছে আপনার ভাবনাকে যেন বিভ্রান্ত না করে।

যদিও মুক্তমনার শর্ত এমন নয় যে, নিজের দর্শন তথা চিন্তার বিলোপ করে নতুন আদর্শের জন্য ছুটতে হবে। তারপরও বাস্তবিক জীবনে খুব কম মানুষকেই আমি মুক্তমনা হতে দেখেছি। এদের বেশিরভাগই নিজের আবেগ ও ধর্ম/বিশ্বাস/সিদ্বান্তকে প্রাধান্য দিয়ে ফেলেন নিজের অজান্তেই। এমনকি টেরই পান না যে তিনি একটি অনুঘটক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছেন।

মুক্তমনারা বিজ্ঞানমনস্ক। বিজ্ঞানসিদ্ধ যুক্তির ওপর নির্ভর করে তিনি চিন্তা করবেন নাকি দর্শনের আলোকে চিন্তা করবেন নাকি নিজের মৌলিক ভাবনাকে প্রশ্রয় দিবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। তাই বলে মনগড়া কোনকিছু তিনি তৈরি করে উপস্থাপন করবেন আর সবাই তা মেনে নেবেন বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়।
মুক্তমনার প্রবণতা হবে যেকোনও মানব দর্শনের জন্য তাঁকে ধর্মের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। তিনি ধার্মিক নাকি নাস্তিক সেটা মুখ্য নয়। চিন্তার স্বাধীনতা তিনি পাচ্ছেন কি না সেটাই মুখ্য।
মুক্তচিন্তকরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হন না বরং উদার এবং স্পষ্টবাদী। তাঁরা নিজেরা কোন সময়েই উত্তেজিত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে চিন্তুার দূর্বলতা প্রকাশ করে ফেলেন না। আদর্শের বিপরীত কোনকিছু পেলে প্রথমেই সেটা নিয়ে বিশ্লেষণে লেগে পরেন। সেটা খন্ডনের উদ্দ্যেশ্য নয়। তিনি লেগে যান সেটায় জ্ঞানলদ্ধ কোনকিছু আছে কি না সেটা খুঁজতে। যদি কোন যুক্তিপূর্ণ কিছু না পান তবে সেটার অসারতা প্রমাণ করেন নিজের বিশ্লেষণী শক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তার সাহায্যে।

মুক্তচিন্তা, মানবধর্ম, নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মঃ
মুক্তচিন্তা ও নাস্তিক্যবাদের মধ্যে পার্থক্য মূলত এটাই যে, নাস্তিক্যবাদ মানুষকে চিন্তার জগতে ইশ্বরবিহীন নীতি থেকে চিন্তা করতে বলে আর মুক্তচিন্তা একজন মানুষকে যেকোনও তত্ত্ব/দর্শনের জন্য নিজের মতামত থেকে চিন্তা করতে বলে।
একজন নাস্তিক কিংবা একজন আস্তিক মুক্তচিন্তা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁর নিজের বিঃশ্বাসকে গৌন জ্ঞান করতে হবে। ইশ্বর নেই' থেকে যদি একজন নাস্তিক মুক্তচিন্তা করতে শুরু করেন তবে সেটা নিতান্তই মুক্তচিন্তা হতে পারে না বরং সেটা হবে নাস্তিক্যবাদী চিন্তা।
একইভাবে একজন আস্তিক ব্যক্তি যদি ইশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবে নিজের চিন্তাকে বাঁধাগ্রস্থ করেন তবে সেটা কোনভাবেই মুক্তচিন্তা নয়।

মুক্তচিন্তার অধিকারী ব্যক্তি মানবিক বিভেদের চেয়ে মানবীয় ঐক্যের চিন্তা করেন বেশি। কল্যাণমূলক চিন্তার অধিকারী হোন তিনি। যেকোন বিষয়ে মানুষের চাহিদা, চাওয়া, পাওয়াকে প্রাধান্য দেন তবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো অবলম্বন করেন বেশি।
একটি উদাহরণ দিইঃ একজন নারী নিজের অংগ ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করার ব্যাপারটা বস্তুবাদী দৃষ্টিতে বৈধ। কিন্তু অবস্তুগত দৃষ্টিতে গেলে?
পতিতা বিষয়ে ধর্মের মূলকথা হচ্ছে অবৈধ। নাস্তিক্যবাদী লোকদের মতে এটা বৈধ। এখন মুক্তমনা হিসেবে আপনি এক্ষেত্রে মানব সম্প্রদায়ের চাহিদা ও কল্যাণকে মুখ্য ধরে এটার বৈধতা/অবৈধতার সীমানা নিরুপণ করতে পারবেন।

মুক্তমনা কেন হবেন?
মানুষের সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা সামাজিক ব্যবস্থার কারণে সম্ভব নয়। হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়ে একজন মানুষ নিজেকে হিন্দু বলেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি কোন সময়ই নিজেকে সর্বাগ্রে মুসলমান বৈ পরিচয় দেবে না।
চিন্তার এই বাঁধা দুর করতে মুক্তমনা হওয়ার বিকল্প থাকতে পারে মনে হয় না।
মুক্তমনা হবার দরকার হবে ঠিক তখনই যদি আপনি চান কোনও বিষয়ে সত্যতা নিরুপণ করতে। ইশ্বর, সৃষ্টিজগত, ব্যোম, মহাশুন্য, অপরাবাস্তবতা, পরলোক, বিচার, স্বর্গ, নরক, শুন্যতা, অসীমতা, কাল্পনিক বাস্তবতা, পরম অস্তিত্ব, জীবনের লক্ষ্য, অর্থ-ব্যবসা ও বৈষয়িক জীবনের নৈতিকতা, জীবনের সার্থকতা, মানবীয় সম্পর্ক, পরিবার, সমাজ, বন্ধুত্ব সর্বোপরি পরাবাস্তবের সাথে বিশ্লেষণ।
যদি আপনি বর্তমানের বিঃশ্বাস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তবে আপনার মুক্তমনা হবার দরকার নেই। তবে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে সিদ্বান্ত নিতে হলেও আপেক্ষিভাবে কেবল ঐ বিষয়ে নিজেকে মুক্তমনা হিসেবে ভাবতে কোনই অসুবিধে নেই।

প্রহেলিকাঃ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুক্তমনা বিষয়টি কি অবস্থায় আছে সেটা বুঝা যদি জরুরী কিছু মনে করেন তবে আপনাকে কয়েকটি বিকল্পের দিকে নজর রাখতে হবে।
☆ মিডিয়ার ধারাসমুহ(পক্ষ) কি কি
☆ মুক্তমনার দাবিদার কারা?
☆ সামাজিক অবস্থান
☆ নৈতিক চিন্তার উৎস
☆ তাদের লেখার প্রবণতা কোন কোন বিষয়ে?
☆ তাঁদের লেখার লক্ষ্য কী?
☆ তাঁদের উৎস কী?
☆ সভ্যতার সাথে তূলনা করলে তাঁদের অবস্থান কোন জায়গায়?
☆ এ পর্যন্ত তাঁদের সাফল্য কি?
বাংলাদেশে বামধারার মিডিয়া এখন পর্যন্ত ভাল গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পেরেছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মের প্রতি স্পর্শকাতরতা থাকলেও বামধারার মিডিয়ার অগ্রগতি ব্যহত হয়নি। বামধারা সাধারণত মুক্তমনাদের পজেটিভ হিসেবেই উপস্থাপন করে। আর মুক্তমনাদের প্রবণতা হচ্ছে ধর্মের অসারতা ও আধুনিক জীবনে ধর্মের অপ্রয়োজনীয়তাকে তূলে ধরা।

blog.mukto-mona.com এ সহস্র তরুণ তরুণীর লেখা আছে আপনি দেখতে পাবেন। উনারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবী করেন। তবে লেখাগুলোর বেশিরভাগই যুক্তিবাদ, মৌলবাদ, ধর্মের অসংগতি, লেনিন ও এঙ্গেলেসের বস্তুবাদ দর্শনের আলোকে লেখা রাজনৈতিক সমালোচনামূলক লেখা, যুদ্ধাপরাধী ইস্যু,বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে লেখা।
আসুন মুক্তমনা ব্লগে তাঁদের লক্ষ্য ও নৈতিকতা সম্পর্কে জেনে আসিঃ

মুক্তমনা কারা?
‘মুক্তমনা’ শব্দটি ইংরেজি ‘ফ্রি থিঙ্কার’ শব্দটির আভিধানিক বাংলা পরিভাষা।
মুক্তমনাদের আস্থা মুক্তবুদ্ধিতে – অন্ধবিশ্বাসে নয়। কোন আপ্তবাক্য বংশ-পরম্পরায় প্রচলিত হয়ে এসেছে বলেই সেটাকে অবলীলায় বিশ্বাস করতে হবে এমন যুক্তি মুক্তমনারা মানেন না। তাঁরা মুক্তমনে প্রতিটি ধারনাকে যাচাই-বাছাই করতে চান। তারা বিজ্ঞানমনস্ক সংশয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি মিথ এবং অতিকথাকে বিশ্লেষণ করার পরে সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
নাস্তিক (atheist), অজ্ঞেয়বাদী (agnostic), সংশয়বাদী (skeptic), মানবতাবাদীদের (humanist) সাধারণভাবে ‘মুক্তমনা সদস্য’ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে – ধার্মিকেরা কি তাহলে মুক্তমনা হতে পারেন না? কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তাঁর নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা তা না করে নিজের ধর্মটিকেই আরাধ্য মনে করেন, কোন কিছু চিন্তা না করেই নিজের ধর্মগ্রন্থকে ‘ঈশ্বর-প্রেরিত’ বলে ভেবে নেন। স্রেফ ঘটনাচক্রে পৈত্রিক-সূত্রে পাওয়া যে ধর্মটিকে ‘নিজের’ বলে মনে করেন সেটাকেই ঈশ্বরের মনোনীত একমাত্র ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন। আমাদের মতে কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র শোনা কথার ভিত্তিতে বাইবেল, কোরান বা বেদকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে, বা নবী-রসুল-পয়গম্বর-মেসীয়তে বিশ্বাস করে নিজেকে কখনোই ‘ফ্রি থিঙ্কার’ বা মুক্তমনা বলে দাবি করতে পারেন না। মুক্তমনাদের আস্থা তাই বিশ্বাসে নয়, বরং যুক্তিতে।

মুক্তমনার লক্ষ্যঃ
মুক্তমনার মাধ্যমে আমরা – একদল উদ্যমী স্বাপ্নিক- দীর্ঘদিনের একটি অসমাপ্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে পরিচালনা করছি, যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠছে ‘চেতনামুক্তির’ লড়াই – যার মাধ্যমে জনচেতনাকে পার্থিব সমাজমুখী করে তোলা, প্রতিটি শোষণ ও বঞ্চনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সম্ভব। মুক্তমনার পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত তৈরীতে ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক মন-মানসিকতা গঠনের উপর। মুক্তমনা মনে করে বিজ্ঞানমনস্ক মন-মানসিকতা এমনি এমনি গড়ে ওঠে না, গড়ে ওঠে যুক্তির পথ ধরে, নিরন্তর এবং ব্যাপক বিচার-বিতর্কের মাধ্যমে। আজ ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বাস এবং যুক্তির সরাসরি সংঘাতের ভিত্তিতে যে সামাজিক আন্দোলন বিভিন্ন ফোরামগুলোতে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে, মুক্তমনারা মনে করে তা প্রাচীনকালের ব্রাক্ষ্মণ-চার্বাকদের লড়াইয়ের মত বিশ্বাস ও যুক্তির দ্বন্দ্বেরই একটি বর্ধিত, অগ্রসর ও প্রায়োগিক রূপ। এ এক অভিনব সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যেন বাঙালীর এক নবজাগরণ।
..
‘নৈতিকতা’ ব্যাপারটিকে মুক্ত-মনারা কোন গায়েবী-বস্তু বলে মনে করে না। নৈতিকতা বিষয়টি মূলত জৈববিবর্তনীয় পথেই উদ্ভূত। সমাজে চারিদিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, বহু নাস্তিক, ধর্মে-অবিশ্বাসী মানুষজন আছেন যারা অন্য সবার মতই রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে চলেন, এবং ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে কেউ স্নেহময়ী মা অথবা দায়িত্ববান বাবা। অন্য মানুষের দুঃখ দেখে তারাও কাতর হন, দুস্থ মানুষের সেবায় তারাও অন্য সবার মতই এগিয়ে আসেন। কাজেই ধর্ম কোনভাবেই নৈতিকতার একমাত্র দাবিদার হতে পারে না। আসলে সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোন বিশেষ ধর্মের আনুগত্যের উপর মানুষের নৈতিক চরিত্র-গঠন নির্ভর করে না, নির্ভর করে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট আর সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপর। অধিকাংশ আস্তিকই ‘ধর্ম’ এবং ‘নৈতিকতা’কে এক করে ফেলেন। ভাবেন ধর্মে আনুগত্য না থাকলে বা ঈশ্বরের ভয় না থাকলে সমাজ বুঝি উচ্ছন্নে যাবে। কিন্তু ঈশ্বরের ভয় দেখিয়েই যদি মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখা যেত, তা হলে তো রাষ্ট্রে পুলিশ, আইনকানুন, কোর্ট-কাচারি কোন কিছুরই আর প্রয়োজন হত না।
..
নাস্তিক বা মুক্তমনারা কি ধার্মিকদের থেকে কম নৈতিক? এটা নির্ভর করছে ‘নৈতিকতা’ বলতে আসলে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে। যদি বিধাতার প্রতি বা ধর্মীয় আইন কানুনের প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে ‘নৈতিকতা’ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করা হয়, তবে তো মুক্তমনারা অবশ্যই ‘অনৈতিক’। তবে সাধারণভাবে কেউ যখন নৈতিকতার কথা বলেন তিনি মূলত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায়-অন্যায়ের কথাই মূলত বলতে চান। আর সে হিসেবে মুক্তমনারা মোটেও অনৈতিক নন। অন্তত গবেষণায় তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। অধিকাংশ মুক্তমনাই মূলত মানবতাবাদী। অধিকাংশ মুক্তমনা ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করেছেন ধর্মের মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতা উপলব্ধি করেই। তাই চুরি-ডাকাতি-খুন-ধর্ষণের মত সামাজিক অপরাধকে অপরাধ বলেই গণ্য করেন তারা।
- - - - - - - - - - - - - - - - -- - - - - - - - - - - - -
মুক্তমনারা কি ধর্ম বিরোধী?
মুক্ত-মনারা ধর্ম-বিরোধী নয়, বলা যায় অনেক মুক্তমনাই ধর্মের কঠোর সমালোচক। কারণ তাঁরা মনে করেন ধর্ম জিনিসটা পুরোটাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। মুক্তমনারা সর্বদা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আস্থাশীল, আজন্ম লালিত কুসংস্কারে নয়। কুসংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ আসলে নিজের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। তবে মুক্তমনাদের ধর্ম-বিরোধী হওয়ার একটা বড় কারণ হল, ধর্মগুলোর মধ্যে বিরাজমান নিষ্ঠুরতা। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন আয়াত এবং শ্লোকে বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে ঢালাওভাবে, কখনো দেয়া হয়েছে হত্যার নির্দেশ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ধর্ম আসলে জ্বিহাদ, দাসত্ব, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, হোমোফোবিয়া, অ-সহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী নির্যাতন এবং সমঅধিকার হরণের মূল চাবিকাঠি হিসেবে প্রতিটি যুগেই ব্যবহৃত হয়েছে।"


লক্ষ্য করে দেখলে আপনার কাছে মনে হবে মুক্তমনাদের নিয়ে একটা প্রহেলিকা সৃষ্টি হয়েছে। ঐ ব্লগে মুক্তমনা বলতে চিন্তার প্রকারভেদে তিনটি শ্রেণির মানবদলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। নাস্তিক (atheist), অজ্ঞেয়বাদী (agnostic), সংশয়বাদী (skeptic)। অবশ্য এরপরে বলা হয়েছে যে ধর্ম পালন করেও মুক্তমনা হওয়া যায় তবে বেশিরভাগই মুক্তমনার শর্ত পূরণ করতে অক্ষম থাকেন।

অজুহাত হিসেবে-
“প্রশ্ন উঠতে পারে – ধার্মিকেরা কি তাহলে মুক্তমনা হতে পারেন না? কোন ধার্মিক যদি মুক্তমনে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্লেষণ করতে পারেন, তবে তাঁর নিজেকে মুক্তমনা বলতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা তা না করে নিজের ধর্মটিকেই আরাধ্য মনে করেন, কোন কিছু চিন্তা না করেই নিজের ধর্মগ্রন্থকে ‘ঈশ্বর-প্রেরিত’ বলে ভেবে নেন”

এই ব্যাপারটি তাঁরা তুলে ধরেছেন। সন্দেহ নেই যে তাঁদের উত্থাপিত প্রশ্ন যৌক্তিক। তবে যদি কোন বিঃশ্বাসী মুক্তমনে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন তবে? এই সম্ভাবনাকে সম্পুর্ণরুপে কি অস্বীকার করা যায়?
না, যায় না। এছাড়া ঐ তিন শ্রেণির চিন্তকগণ নিজেদের মত নিয়ে সুদৃঢ়ভাবে যদি অটল থাকেন তবে সেটা কি করে মুক্তচিন্তা হয়??
এই প্রহেলিকা তথা ধাঁধার অবসান হওয়া জরুরী। মুক্তচিন্তা মানে যেহেতু চিন্তার স্বাধীনতা অতএব কেবল একটি বা তার অধিক চিন্তাগোষ্টীই যে চিন্তার স্বাধীনতা ভোগ করবে তেমনটি নয়। মুক্তমনা শব্দটিকে কোনও বিশেষ শ্রেণির নিজস্ব মতভুক্ত করা উচিত নয়। তাই কোনও ধার্মিক, নাস্তিক মুক্তমনা টার্মটি নিজেদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন ঠিক তখনই যখন তিনি চিন্তার বিশ্লেষণে প্রভাবিত না হন।
মুক্তমনা ব্লগে মুক্তমনা কারা শিরোনামে যেভাবে দল পাকানো হয়েছে সে অর্থ অগ্রহণীয়। কারণ মুক্ত শব্দটিই সেক্ষেত্রে একটি বৃহৎ মানবগোষ্টির বিপরীতে নিজেদের সীমিত করে বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের কাতারে ফেল দেয়া হয়েছে।

আসলে মুক্তচিন্তা হচ্ছে চিন্তার একটি সার্বজনীন উপায়। যেখানে দল, মত, আদর্শ, ধর্ম, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই-ই এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পারেন।
মুক্তচিন্তকরা উদার এবং স্পষ্টবাদী। তাঁরা কোন সময়েই নিজেদের উত্তেজিত হয়ে চিন্তুকের দূর্বলতা প্রকাশ করে ফেলেন না।

প্রেক্ষাপট বাংলাদেশঃ
মুক্তমনা ব্লগে একশ্রেণির সভ্য ও উদার চিন্তুক শ্রেণির পদচারণা দেখা যায়। তবে ঐ ব্লগ ছাড়াও কতিপয় ব্যক্তিগত ব্লগে ও লেখায় দেখা যায় নিজেদের মুক্তমনা পরিচয় দিয়ে বিশেষত হিন্দু ও ইসলাম ধর্মকে তুলোধুনো করতে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ওখানে ধর্মের ওপর যত রাগ ও বিরক্তি আছে সব যেন উগড়ে ফেলা হচ্ছে অবলীলায়। ধর্মের মূলে কুঠারাঘাত করে মানুষকে ধর্মবিমূখ করাই যেন তাঁদের এক ও অভিন্ন লক্ষ্য। সনাতন ও ইসলামের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর খন্ডাংশ নিয়ে সর্বশক্তি নিয়ে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা নাস্তিক ট্যাগ নেন সন্তুষ্টচিত্তে। উল্লেখ অনুপযোগী ভাষায় শিব, বিষ্ণু, রাম, রাবণ, দুর্গা, অবতার, ভগবান, ইশ্বর, কোরআন, আল্লাহ, রাসূল, ঈমান, নবী নিয়ে কটুক্তি করেন।

অভিযোগ আছে এইসমস্ত মুক্তমনা নামদারীদের অনেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে মাইগ্রেশনের জন্য নিজেদের এইসব কার্যাদি পেশ করেন। আর বিদেশে বসে বসে চিন্তার নামে অকথ্য উপভাষার লালন করেন। এইসব দুর্বৃত্তায়নের জন্য পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে চলেছে এমনও গুজব শোনা যায়।

পরিশেষঃ
মানব জাতির মধ্যে বিশেষত বাঙালিরা পর্যাপ্ত মাত্রায় সহনশীল না। হুজুগে একটা ছুঁতো পেলেই হলো। চিলে কান নিয়েছে কি নেয় নি সেটার তোয়াক্কা না করে দৌড় শুরু করে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রেও দেখা যায় বিচার বিবেচনা না করেই সমর্থন/বিরোধীতা শুরু হয়ে যায়। আমি কেবল ধর্মান্ধদের নিয়ে বলছি যে তা না। প্রগতিশীল দাবীদার গোষ্টীর কাছ থেকেও পরমত সহিষ্ণুতা কি আমরা পাই?

প্রায়ই আমরা ট্যাগিং দেখি। অন্যের মতকে অশ্রদ্ধা করে ইচ্ছেমত গালিবাজি যা অতীতেও আমরা দেখেছি, এখনো দেখছি। যারা নিজেকে নির্দিষ্ট আদর্শের অনুসারী বলতে ভাল লাগে, তাঁরা কি আয়নার সম্মুখে নিজের চৈন্তিক সনশীলতার সূরত দেখেছেন কখনো? আপনার মতের সাথে অমিল/বিরোধ থাকার কারণে যে গালিবাজি করেছেন সেটা নিয়ে কি অনুতপ্ত হয়েছেন কোন সময়?
বস্তুবাদের কিংবা ধর্মের ত্রুটি নিয়ে কথা বলা যেতেই পারে তবে তা নিয়ে যুক্তিযুক্ত আলোচনাটাই শ্রেয়। কেবল অন্যকে কিংবা তার মতকে হেয় করার মাঝে সাফল্য থাকা সম্ভব নয়। একজন চিন্তকের নিজের আদর্শের শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা আত্মঘাতি পদক্ষেপ হলো ট্যাগিংবাজি ও গালিবাজি। আপনি যখন রেগে যাচ্ছেন তখন নিজের অজান্তেই যে হেরে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে কি খবর রাখেন? আপনার লজিকসমূহ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি কিন্তু এর নিরীখেই আর্গুমেন্ট পেশ করবেন। তাই নয় কি?
অন্যের দেয়া লজিক তো লজিকের সাহায্যেই খণ্ডন করতে হবে। যত নিকৃষ্ট ভাষায়ই আক্রমণ করা হোক মাথা ঠাণ্ডা রেখে তার ভদ্রোচিত জবাব দেয়া সর্বোত্তম পন্থা।
যাইহোক, বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে এঁরা যে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করছেন সেটা মোটেও অস্বীকার করা যায় না। চাপাতির সাহায্যে যারা মুক্তমনাদের থামাতে চেয়েছেন তারা প্রকৃতপক্ষে মুক্তচিন্তা‘র পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। তরুণেরা যোগ দিয়েছেন নতূনভাবে, তাঁদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে, অভিজিত দা‘র মতো মুক্তচিন্তকের হননে।
প্রকৃতপক্ষে আদর্শিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কিংবা পেশিশক্তির আক্রমণ বোকামী বৈ কিছু নয়। আদর্শের বিরুদ্ধে গায়ের জোরের সফল হওয়া সম্ভব নয় কারণ এক্ষেত্রে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া নিউক্লয়ার ফিউশনের ন্যায় বহুগুনে ছড়িয়ে পড়ে। আপনার আদর্শের মূলে কেউ যদি কুঠারাঘাত করে আর আপনি আদর্শের সাহায্যে তা প্রতিহত করতে না পারেন তবে বুঝা উচিত যে, আপনার মধ্যে বিভ্রান্তি আছর করেছে। আপনার পথ ভূল। যে গন্তব্য দেখানো হয়েছে সেটায় পৌঁছা এ পথে সম্ভব না। আসলে আদর্শের মোকাবেলায় সুশৃংখল উপায়ে বিশ্ল্বেষিত করেই অন্য আদর্শিক আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়।

পরিশেষে ব্লগার হত্যার যে ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে, তাঁদের উদ্দ্যেশে একটি কথা বলেই এ লেখার ইতি টানতে চাই, হত্যা কখনো জয় হতে পারে না। বরং তা পরাজয়ের রাস্তা প্রশস্ত করে।



⛗ দ্রষ্টব্যঃ
এ প্রবন্ধে ইটালিক ও উদৃতাংশসমুহ ব্যতিত সব মত, আলোচনা, চিন্তা লেখকের নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত এবং চিন্তালদ্ধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পেশ করা হলো। কোন অংশে দ্বিমত থাকলে আলোচনা করতে চাইলে আলোচনা করতে পারেন। লেখকের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে আবজালে(অনলাইনে) কিংবা কাগজে এই প্রবন্ধের কোনও অংশ বা সম্পুর্ণ অংশ নকল করা কপিরাইট আইনানুসারে অপরাধ।

⛗ মূল পোস্টে
⛗ এ সংক্রান্ত আরো নিবন্ধের লিংক, তথ্যসূত্রঃ
⛿ FFRF: The Freedom From Religion Foundation (FFRF) is an American non-profit organization based in Madison, Wisconsin with members from all 50 states.
ম্যারিয়াম ওয়েবস্টার এর ওয়েব লিংকে দেখুন
যুক্তিবাদ , বস্তুবাদ ও মুক্তমনা কি??
মুক্তমনা ব্লগের ওয়েব লিংকে দেখুন
উইকিপিডিয়াঃ মুক্তচিন্তা
উইকিপিডিয়াঃ মুক্তমনা
Cambridge এর ওয়েব লিংকে দেখুন
FFRF এর ওয়েব লিংকে দেখুন
⛿ Routledge Encyclopedia of Philosophy. Taylor & Francis. ( ISBN 978-0-415-07310-3)
⛿ OED Online, 3rd ed. Oxford University Press. September 2012. agnostic.


⛗ আরো লিংকঃ
মুক্তমনা ব্লগ
মুক্তমনা মানে কি- বাঁচতে হলে জানতে হবে!
BBC বাংলা: কি লিখতেন নিহত ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ
মুক্তমনা ও নাস্তিক্যবাদ
মুক্তমনা মানে কি, কারা - porartable.com
মুক্তমনা বিভাগের পোস্ট সমুহ - সচলায়তন
মুক্তমনা বিভাগের পোস্ট সমুহ - salekkhokon.me
মুক্তমনা বিভাগের পোস্ট সমুহ - bdtoday.net
কে-এই-অভিজিৎ-রায়ঃ prothombangladesh.net
প্রাণকাকলি তসলিমা নাসরিন, মুক্তমনা এবং তাদের অনড় প্রতিক্রিয়াশীলতা
A Murshed মুক্তমনা

⛗ মুক্তচিন্তা ও মুক্তমনা বিষয়ক সামুতে প্রকাশিত কিছু পোস্টের লিংকঃ
চাঁদগাজীঃ- 'মুক্তচিন্তা' শব্দটি বাংলাদেশে কি অবস্হায় আছে?
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাইঃ- মুক্তচিন্তা, মুক্ত আলোচনা, সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতা ও কট্টরপন্থি নাস্তিকতা : প্রেক্ষাপট – অভিজিৎ রায়ের হত্যা; আমাদের করণীয়
নিটোল আরন্যকঃ- অভাজনের দর্শনচিন্তা:মুক্তচিন্তা কারে কয়?
নিরন্তর যাত্রাঃ- মুক্তচিন্তার ব্যবচ্ছেদ....
ন্যানো ব্লগার ইমুঃ- "আমি ধর্মভীরু মুক্তমনা, নাস্তিক কিংবা মৌলবাদী নই"
হা...হা...হা.. মুক্তচিন্তা কি? মুক্তচিন্তা শব্দটিকে কি ভুল ভাবে ভুল লোকদের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে?
সব্যসাচী বাঙালিঃ- মুক্তমন, মুক্তচিন্তা ও মানবিক দর্শন
জনৈক কবি২০১১ঃ- মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি - রোগ নাকি আবশ্যকতা ?
কঙ্কনাঃ- মুক্তমনা ও ধর্ম
পিনাকী ভট্টাচার্যঃ- বস্তুবাদ, ভাববাদ, সংশয়বাদ, অজ্ঞেয়বাদ, নাস্তিক্যবাদ, যুক্তিবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ, মুক্তমনাঃ কোনটা কী?

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৯
৮৫টি মন্তব্য ৮৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×