বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ১
বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ২
(৩) পরিবর্তন
ফজরের আজানের সাথে সাথে সশব্দে কুলি করে একটা নিমের দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজা শুরু করেন মির্জা হামিদুর রহমান। আশ পাশের দশ গ্রামের মানুষ তাঁকে মির্জা বাড়ীর বড়কর্তা হিসেবে চেনে। তার পাকা দালানের পাশেই তিনি গড়ে দিয়েছেন এক পাকা মসজিদ।
“এলাকার লোকরা দেখুক, বুঝুক, বুইঝা হাত তালি দেক। হ্যারা ত কখনো গাঁও গেরামে পাকা দালান দ্যাখেই নাই। এরপর থেইকা দেখবো।”
পুরো ইউনিয়নের লোকে জেনে গিয়েছে এই কির্ত্তীর কথা। সবাই বোঝে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেতার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়ে গিয়েছে। এখন প্রচারনা চলছে। মাস্টরের চ্যাংড়া গুলা যতই তিড়িং বিড়িং করে লাফাক, দশ গ্রামের মমিন-মুসলমানদের জন্য কয়টা কাম করসে ঐ মাস্টর? আবার তাকে নসিহৎ করতে এসেছিলো – বলতে এসেছিলো যে মসজিদ না করে একটা পাকা স্কুল করে দিলে ইউনিয়নবাসীর উপকার হতো। হুঁহ্, ঐ বুদ্ধি নিয়ে চললে তো মাস্টারেরই লাভ হতো। আবার তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানো হচ্ছে! মনে মনে ঠিক করলেন তিনি, একবার ইলেকশনটা জিতলে পরে বুঝিয়ে দেবেন কত ধানে কত চাল।
বাসার পাশে মসজিদ, তাও আবার নিজের করা, কাজেই নামাজ না পড়তে গেলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লাগে। অতএব, প্রতিদিন অন্তত ফজর, মাগরিব আর এশার নামাজটা জামাতে গিয়ে পড়তেই হয়। এতে অবশ্য লাভই হয়েছে – কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়। নির্বাচন জিতে কী কী উন্নতি করতে চান তিনি তা আরো বেশি বেশি করে ঝালিয়ে নেয়া যায়।
মসজিদ ঢোকার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি চিন্তা করলেন রশিদ বড় বেশি বখে যাচ্ছে। আসলে জন্ম থেকে এতো জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা পেলে নিজের উন্নতি করার আর মন-মানসিকতা থাকে না এটাও তিনি বোঝেন। কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। আর এই শয়তানের দৌরাত্মে পুরো এলাকা অস্থির। সারাদিন বখাটেপনা করে বেড়ায় ছেলেটা। শাসন যে তিনি করেননা তা নয়, তবে ছেলের মা জাহেদা সারাক্ষণ ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়ে রাখেন। জাহেদা বলেন এই বয়সটাই তো দস্যিপনা করার। বিয়ে দিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। সেই উপলক্ষে আবার পাত্রীও দেখা হচ্ছে। তবে পুরো ব্যাপারটার ওপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছেন না হামিদ মির্জা। সময়টা খুব খারাপ। ব্যবসা ভালো না। গঞ্জে তাঁর গোটা চারেক মিষ্টির দোকান আছে, আরো আছে আবাদি জমি আর গবাদি।
সমস্যা যখন আসে সব দিক থেকেই আসে। গেলো বছর খরা হল, জমিতে ফসলের আবাদে লোকসান হয়েছে। তাঁর দাদনের টাকাই উঠে নি। আর মানুষের হাতে খরচ করার মতো পয়সা না থাকায় তা মিষ্টির দোকানেরও ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো এবারের নির্বাচন। এতদূর এসে তো আর ফিরে যাবার উপায় নেই। এখন নির্বাচনটাতে জিতলে আবার সব কিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। জিততেই হবে, এছাড়া আর কোন পথ নেই।
ভ্রুঁ কুঁচকে এতসব ভাবতে ভাবতে ভেতর থেকে ভেসে এলো ইকামতের আওয়াজ। নামাজের সময় হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




