somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ১

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবর্তন
--------------

(১) প্রত্যয়

কপালের ঘাম মুছে সূর্যের দিকে তাকালো সুরুজ মিয়া। "আজকে মামা বড় গরম দেখাচ্ছ", মনে মনে বললো সে।

মির্জা বাড়ির কামলা সুরুজ মিয়া। সেই ছোট বেলা থেকে এখানে কাজ করছে। এ বাড়ির বড় ব্যবসা হচ্ছে মিস্টির বিপণী। গঞ্জে তিনখানা মিস্টির দোকান আছে তাদের। মির্জার মিস্টি কথা পুরো গঞ্জের লোকের মুখে মুখে ঘোরে। বড়কর্তা হামিদ মির্জা রাশভারী লোক। তার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস আশে পাশের দশগ্রামে কারো নেই।

সেই মির্জা সাহেবের সাথে মুখোমুখি কথা বলতে হবে তার আজকে। গত রাতে এটা নিয়ে বউয়ের সাথে শলা পরামর্শ করতে বসেছিল সে। বউ নসিমন আর একমাত্র ছেলে কাচু কে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। নসিমন ও বলছিল এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে আর এত ভয় পেয়ে লাভ নেই। খুব বেশি হলে আর কী হবে - হয়তো একটু বকঝকা করতে পারে। মির্জা সাহেবের গোস্যাকে ভয় পেয়ে নিজের স্বপ্নটাকে এভাবে জলাঞ্জলি দেয়াটা সমীচীন হবে না বলে নসিমন তার মত ব্যক্ত করে। অবশেষে সুরুজ মিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সন্ধ্যাতেই - হয় এসপার নয় ওসপার।

সূর্যকে পাটে বসিয়ে ঘরে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে নেয় সে। তারপর হাঁটা ধরে বড়বাড়ির দিকে। এসময় মির্জাসাব উঠানের বৈঠকখানায় দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বসে থাকেন। সেলাম ঠুকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সুরুজ মিয়া। মির্জাসাবের সপ্রশ্ন দৃষ্টির সামনে তার পরিকল্পনাটা জানায়।

ব্যাপারটা হল, সারা জীবন কামলা খেটে দু’টো চারটে করে টাকা জমিয়ে আজ সুরুজ মিয়ার হাতে কিছু টাকা জমা হয়েছে, এই দিয়ে সে একটা ব্যবসা শুরু করতে চায়, ফলের রসের ব্যবসা। বড় সাহেবের মিস্টির দোকানে সে দেখেছে গরমের সময় যতটা না মানুষ মুখ মিঠা করতে ঢোকে তার চেয়ে বেশি ঢোকে ফ্যানের তলায় বসে দুই দন্ড জিরিয়ে নিতে। সেই সময় যদি তাদের সামনে বরফ কুচি দেয়া এক গ্লাস ঠান্ডা মৌসুমি ফলের জুস দেয়া যায়, লোকে তা লুফে নেবে। শহর থেকে একটা ব্লেন্ডার কিনতে হবে, আর শুরু করার জন্য কয়েকশ টাকার ফল - অল্প মূলধনে শুরু করা যাবে। আর শুরু করার জন্য মির্জাসাবের মিষ্টিরর দোকানের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? যদিও মির্জা সাহেব নিজেই করতে পারেন তবু এ কাজের জন্য তার তো আলাদা লোক নিতেই হবে, সে ই না হয় থাকবে।
দুরু দুরু বুকে বলে সে তার পরিকল্পনার কথা। জানায় এ ব্যবসায় পরিকল্পিত হিসেবের করার কথা। জানায় আর চাকুরি করবে না। যদি মির্জা সাহেব দয়া করে তাকে কিছু মূলধন দিয়ে ব্যবসাটা শুরু করতে সাহায্য করেন, তার বড় উপকার হতো।

মির্জা সাহেব অপলক নয়নে পুরো কথাটা শুনলেন । তারপর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন, “সুরুজ মিয়া, সাপের পাঁচ পা দেখতাসো?”
হঠাৎ এ আক্রমণে হকচকিয়ে গেলো সুরুজ মিয়া, “জ্বী হুজুর…?”
“বাড়ির চাকর হইয়া এহন শখ হইসে ব্যবসার পার্টনার হবা? তারপর কী? আমগো বাড়ির মাইয়ার লগে পোলার বিয়া দিবা? আমগো ঘরে আইসা উঠবা?”
“হুজুর মাফ কইরেন, কিন্তু…”
“চোপ্‌! বেয়াদপ্‌ কোথাকার! কামলার ঘরের কামলা, যা! বাইরাইয়া যা!”
মাথা নিচু করে সুরুজ মিয়া বেরিয়ে যেতে যেতে শুনলো – “অজাত কুজাত জানি কোনখানকার, ব্যাপারী হইবো! তর ব্যবসা করা ছুটাইতেসি – খাড়া!”

ঘরে ফিরে নসিমনকে সব কথা জানায় সুরুজ মিয়া। শুনে সে কিছুক্ষন চুপ থাকে। তারপর প্রশ্ন করে বকা দেয়া ছাড়া ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা। নেতিবাচক উত্তর পেয়ে আবার কিছুক্ষণের নিরবতা। মুখোমুখি বসে থাকা দু’জনকে দেখে বোঝা দায় যে তাদের মনে কী ঝড় চলছে।

অবশেষে মুখ খোলে নসিমন। সাহস দেয় সুরুজ মিয়াকে। এটাই পৃথিবীর শেষ নয়। বরং এ-ই শুরু। সামন্ততান্ত্রিক নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে অপার সম্ভাবনাময় পৃথিবীকে আপন করে নেয়ার এটাই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। মন দিয়ে শোনে সুরুজ মিয়া। ঘরের কোণে মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে অংক কষতে থাকা কাচুর দিকে তাকায়। “আমগো কাচুরে বড় করতে অইব”, মনে মনে ভাবে সে। তার বাপ কামলা ছিলো, দাদা কামলা ছিলো – কিন্তু এবার বৃত্ত সে ভাঙবেই।

দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে চেয়ে থাকে সুরুজ মিয়া। তার দুচোখে খেলা করে সম্ভাবনার আলো।

(চলবে...)

[বিঃদ্রঃ শুরুটা কেমন হল জানাবেন। আপনার গঠনমূলক সমালোচনা আমাকে ভালো লিখতে উৎসাহ দেবে।


বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ২


বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ৩
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×