somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ প্রতিযোগিতায় কেন ''জার্মান প্রবাসে'' মনোনয়ন পেল? টপিকঃ "ম্যাগাজিন" (পর্ব - ২/৫)

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামুতে প্রকাশিত আগের পর্বের লিংকঃ ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ প্রতিযোগিতায় কেন ''জার্মান প্রবাসে'' মনোনয়ন পেল? টপিকঃ এজেন্সি/দালাল (পর্ব - ১/৫)



বিঃ দ্রঃ নোটিশ এসেছে, অন্য কোন সাইটের লিংক সরাসরি পোস্টে সংযুক্ত না করার জন্য। তাই কোন লিংক এখন থেকে দিব না। কেউ যদি ম্যাগাজিন পড়তে চান, তবে আশা করি খুঁজে নিয়েই পড়তে পারবেন।

হিসেবটা ভুল না হয়ে থাকলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা নিয়মিত প্রকাশিত একমাত্র মাসিক ই-ম্যাগাজিন ‘জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন’। প্রায় দু’বছরেও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই ম্যাগাজিন শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিদিনের সুখদুঃখের গল্পই তুলে ধরেনি, বরং হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশিদের একই সূত্রে নিয়ে এসে তৈরি করেছে এক টুকরো বাংলাদেশ।
.


.
মূলত প্রবাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি কম্যুনিটিকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে এসে এক সূত্রে গাঁথার প্রচেষ্টা থেকেই এই ম্যাগাজিনের পথ চলা শুরু। বিদেশ বিভূঁইয়ে অচেনা পরিবেশ, অদেখা সংস্কৃতি আর দুর্বোধ্য ভাষায় হিমশিম খাওয়া জীবনে এই বাংলা ম্যাগাজিনটি কিছুক্ষণের জন্য হলেও প্রবাসীদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশে। তাই তো, দেশ থেকে সদ্য আসা ছেলেটি যেমন এখানে তুলে ধরেছে প্রিয়জনকে পিছনে ফেলে আসার বেদনাতুর বিদায়ের আখ্যান, তেমনি বহুবছরের প্রবাসী ভাগ করে নিয়েছেন দেশে ফিরে যাওয়ার আকুলতা। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের এই ঘরছাড়া-জীবনে বাংলা এই ম্যাগাজিনটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে লাখো প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণের খোরাক।
.


.
নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ‘উত্তরণে নারী’ শীর্ষক তিনটি বিশেষ সংখ্যায় ম্যাগাজিনটি তুলে ধরেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাহসিকাদের গল্প যারা বিশ্বের দরবারে আজ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁদের কেউ বা শিক্ষার্থী, কেউ বা চাকুরীজীবী, আবার কেউ উদ্যোক্তা। তাঁরা দেখিয়েছেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে ভেঙ্গে না পড়ে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এইতো গতমাসের সংখ্যাটির কথায় ধরুনঃ প্রাগ থেকে মাকিনা আপুর জীবনযুদ্ধের কথা পড়ে আবেগে আপ্লুত হয় নি, এরকম কমই আছেন!

ম্যাগাজিনটির বিশেষত্ব এই যে এখানে যেমন একাধারে প্রখ্যাত ব্লগার/লেখকদের সুচতুর মননশীল লেখা পাবেন, তেমনি পাবেন আটপৌরে মানুষের অনাড়ম্বর আবেগ।

প্রবাস জীবন ফুলেল নয়। নিজের খরচ নিজেই মেটাতে খন্ডকালীন কাজ করেন প্রচুর শিক্ষার্থী। তাঁরা হয়ত দেশে এক গ্লাস পানি ঢেলেও খায় নি। কিন্তু প্রবাসে নিজে নিজেই করতে হয় সবকিছু। সেই টক-মিষ্টি গল্প উঠে আসে জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিনে। এছাড়া, জার্মানির বিভিন্ন জায়গায় ১লা বৈশাখ, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর ইত্যাদি পালনের সময় বিভিন্ন শহরের মাঝে মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে জার্মান প্রবাসে। এসকল অনুষ্ঠানের পূর্ণ বিবরণও তাই দেখা যায় ম্যাগাজিনে।

একই সাথে ম্যাগাজিনটি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়েও সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। নির্ভীক চিত্তে জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন সবসময় সত্যের সমরথন দিয়ে গেছে। নমুনাস্বরূপ, ডিসেম্বর২০১৫ তে প্রকাশিত ‘মুক্তির স্বপন’ সংখ্যায় লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের লেখনীতে যেমন উঠে এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনালের আইনি দিক, তেমনি জার্মানির উল্লাহ খানের লেখায় এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি জনগণের সহমর্মিতা তৈরিতে মিডিয়ার ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির কড়া জবাবও একেবারে দলিল ধরে ধরে উঠে এসেছে এই সংখ্যায়ঃ



এছাড়া, প্রবাস জীবনে সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন মজার অভিজ্ঞতার ঘটনা নিয়েও রয়েছে বেশ কয়েকটি সংখ্যা – যার মধ্যে কালচারাল শক , রন্ধন বিভ্রাটের কথা না বললেই নয়। কথা দিতে পারি, এই সংখ্যাগুলো পড়তে গেলে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে আপনার।



ওহ, বলতে ভুলেই গেছিলাম, গত ফেব্রুয়ারী মাসে ম্যাগাজিনটির ভাষা বিভ্রাট সংখ্যায় বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেছেন ভাষা নিয়ে তাঁদের তিক্ত-মধুর-বিব্রতকর অনুভব। প্রায় ৮টি ভাষা নিয়ে এমন অভিজ্ঞতার গল্প পৃথিবীর আর কোন ম্যাগাজিনে এযাবৎ হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই।



বিদেশী প্রফেসরের বিশুদ্ধ বাংলা বক্তৃতা দানের সেই ভাইরাল ভিডিওটির কথা মনে আছে তো?

............................................................

সেই জার্মান প্রফেসর ডক্টর হান্স হার্ডার জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিনের ২য় বর্ষ পূর্তিতে তাঁর নিজ হাতে সম্পূর্ণ বাংলায় একটি শুভেচ্ছাবানী লিখে পাঠিয়েছেন।



শুধু তাই নয়, আমাদের সাথে নিয়মিত লেখক হিসেবে আমরা সাথে পেয়েছি জার্মান এমব্যাসির প্রাক্তন জলবায়ু উপদেষ্টা সুজিত চৌধুরীকে।
.
মজার ব্যাপার এই যে, ম্যাগাজিনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই শিক্ষার্থী, কিছু চাকরিজীবী। আমাদের ক্লাশ, কাজ, এসাইনমেন্ট, পরীক্ষা, রিসার্চ, থিসিস এসবের ফাঁকে ফাঁকেই সমন্বিতভাবে কাজ করে প্রতিমাসে এটি আমরা প্রকাশ করি। সেক্ষেত্রে আমাদের একাগ্রতা বা দায়বদ্ধতা যতখানি এর চেয়ে অধিক ভূমিকা আপনাদের নিঃস্বার্থ ভালবাসার। দুই বছরের মাথায় আমাদের প্রাপ্তি বলতে পাঠকদের অগাধ ভালবাসা। এখানে বিশেষ করে বলতে হয় মা দিবসের সংখ্যা নিয়ে।আইভোরী কোষ্টের যে বাঙালি মহিলা নার্স যিনি মা দিবসের হৃদয়নিংড়ানো লেখাগুলো পড়ে আমাদের ফোন করে জানান যে সংখ্যাটি পড়ে তিনি অঝরে কেঁদেছেন তখনই আমাদের ক্ষুদ্র এই প্রয়াসের সার্থকতা খুঁজে পাই।


.
বিদেশের মাটিতে বসে দেশের প্রতি আমাদের সকলের দায়বোধ আছে। বাংলাদেশের জন্য গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, নারী-পুরুষের সমতা, প্রগতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতি আমাদের যে অঙ্গীকার, তা পূরণে আমাদের এই প্রয়াস ওজনে আধিক্যে খুবই নগণ্য ও ক্ষুদ্র সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের প্রত্যয় আর উচ্ছাশা সেসব ছাপিয়ে মহিরুহে রুপলাভ করেছে। আমাদের এই কঠিন অথচ অবাস্তব নয় এমন একটি যাত্রায় অহর্নিশ আপনাদের সমর্থন আর ভালবাসাই আমাদের পাথেয়। প্রিয় পাঠক, আপনারা ভাল থাকুন, ভাল থাকুক আমাদের প্রিয় দেশ- বাংলাদেশ।



আগামী পর্বে উচ্চশিক্ষা নিয়ে লেখার আশা রইল। সেই পর্যন্ত ভাল থাকুন। সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। :)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×