প্রিয় সহ ব্লগারবৃন্দ,
.
আপনারা হয়ত ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন ডয়চে ভেলে আয়োজিত ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ প্রতিযোগিতায় "ইউজার্স চয়েস" বাংলা বিভাগে "জার্মান প্রবাসে" মনোনয়ন পেয়েছে। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমরা এই মুহুর্তে জার্মান প্রবাসে কী এবং কেন সেটা নিয়ে কিছু বলার অবকাশ বোধ করছি।
.
অনেকেই হয়ত "জার্মান প্রবাসে" নামটি এই প্রথম শুনেছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি আমাদের রয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষের বেশি সদস্য নিয়ে জার্মান প্রবাসে গ্রুপ! "বাংলাদেশি স্টুডেন্ট এন্ড এলাম্নাই এ্যাসোসিয়েশন ইন জার্মানি" আজ জার্মানির বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ!
.
এই মুহুর্তে জার্মান প্রবাসে আর কী কী করে সেটা বলতে গেলে ২০ থেকে ২৫ পর্ব চলে যাবে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব কয়েকটা টপিক ফোকাসে আনতে। যেমন আজকের টপিকঃ এজেন্সি/দালাল
.
উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যবসা এবং ভাঁওতাবাজি করে টাকা কামিয়ে নেয় এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কম নেই। ভিসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, বিএসবি ইত্যাদি এরকম কিছু দালাল প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের মিথ্যা প্রলোভন এবং তথ্য দিয়ে তাদের আদম পাচার ব্যবসা চলছিল বেশ ভালই। কিন্তু জার্মানিতে সেই আশা দুরাশা করার প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে "জার্মান প্রবাসে"। সেই সাথে আছে ''জার্মান এমব্যাসি ঢাকা''।
.
.
দালাদের ব্যাপারে যুদ্ধের শুরুটা সহজ ছিল না। কিন্তু জার্মান এমব্যাসি ঢাকাকে প্রতি নিয়ত এসকল দালালদের ব্যাপারে জার্মান প্রবাসে অবহিত করতে থাকে। তথ্য এবং উপাত্ত নিয়ে দেখিয়ে দেয় কেন এবং কীভাবে এই জঘন্য ব্যবসা চলছে। ফলে তাঁদের টনক নড়ে এবং এই ব্যাপারে সচেতনতামূলক পোস্টও এমব্যাসি ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেইজে দেখা যায়।
.
শুধু তাই নয়, এজেন্সি/দালাল নিয়ে বাংলা ব্লগের ইতিহাসে খুব সম্ভবত এখন পর্যন্ত একমাত্র সিরিজ ব্লগটাও পাওয়া যাবে "জার্মান প্রবাসে" ওয়েবসাইটে। লিখেছেন আনিসুর রহমান (সামু নিকঃ ক্যপ্রিসিয়াস)! এই সিরিজের প্রতিটি আর্টিকেলে বারে বারে দেখানো হয়েছে এসকল দালালদের ধাপ্পা দেয়ার পদ্ধতিগুলো। মানুষকে নিয়মিত সচেতন করার লক্ষ্যে এই সিরিজের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনন্য!
.
জার্মান প্রবাসের সহব্লগার রাফিউল সাব্বির এর ভাষায়ঃ "২০১৪ সালে আসছিলাম জার্মানিতে। এর আগে কোনোদিন দেশের বাইরে আসা তো দূর, প্লেনেও চড়ি নাই। এই যাত্রা যদি কেউ মনে করে ঢাকা টু বার্লিন ভায়া ইস্তাম্বুল ছিলো, তাহলে ভুল। দীর্ঘ দিবস-রজনী আছে এর পেছনে। রাতের পর রাত কোর্স খোঁজা, যুতমতো কোর্স না পেয়ে হতাশ হওয়া, আবার খোজা, কিভাবে এ্যাপ্লাই করবো, কিভাবে SOP লিখলে ভালো হবে জানার চেষ্টা করা হেন তেন নানা যন্ত্রণা। এই যাত্রা অনেক দীর্ঘ, ক্লান্তিকর।
শুধু আমি না, যারা দেশের বাইরে পড়তে আসেন(ইউরোপ বা আমেরিকা যেখানেই হউক), সবাইকেই কমবেশি এই ক্লান্তিকর সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই সময়গুলাতে কিছু মানুষ লাগে; কাছে, পাশে। আমি বরাবরই এইসব বিষয়ে খুব সৌভাগ্যবান কারণ সবসময়ই খুব ভালো কিছু মানুষকে পাশে পাইছি। জার্মানি আসার ব্যাপারে আমার পাশে একজন না, ছিলো অনেকজন। ছিলো জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপ Bangladeshi Student and Alumni Association in Germany। এই গ্রুপের সমস্ত মেম্বারের কাছ থেকে যে পরিমাণ স্পেসিফিক ইনফরমেশন পাওয়া যায় এটা আপনি ১০ বছর জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে গবেষণা করলেও পাবেন না।
.
.
এখানে সবচেয়ে ভালো লাগে কোন বিষয়টা যদি বলা হয় তাহলে বলবো গ্রুপের এ্যাডমিন থেকে শুরু করে মেম্বাররা যেভাবে দালাল/ফ্রডদের মাধ্যমে বাইরে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে সেটা। আর কিছু না হউক, মানুষকে বুঝাতে পারছে যে ‘জার্মানি আসতে মাম্মা লাগে না, নিজের যোগ্যতা থাকলেই পারবা’। এইটা ভালো লাগার কারণ কি সেটা নিজে বাইরে আসলে বুঝবেন দালালদের হাত ধরে বাইরে আসা লোকজনকে দেখে।"
.
কিন্তু এখনও অনেকটা পথ বাকি। এখনও দালালদের ব্যবসা বন্ধ হয় নি। এখনও শত শত শিক্ষার্থী প্রতারিত হয়। এখনও সবকিছু হারিয়ে বিচার চেয়ে পথে পথে ঘোরে নিঃস্ব পিতা। এগুলো অবিশ্বাস্য মনে হলেও এর প্রতিটা কথা সত্য।
.
আমাদের এই যুদ্ধে সহযোগী হিসেবে তখনও ছিলেন আপনারা, এখনও আছেন আপনারাই।
.
আমাদের সঙ্গী হবেন কি?
.
অপেক্ষায় রইলাম।
.
ভাল থাকবেন সবাই।
.
২য় পর্বের লিংক: ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ প্রতিযোগিতায় কেন ''জার্মান প্রবাসে'' মনোনয়ন পেল? টপিকঃ "ম্যাগাজিন" (পর্ব - ২/৫)
.
৩য় পর্বের লিংক: ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ প্রতিযোগিতায় কেন ''জার্মান প্রবাসে'' মনোনয়ন পেল? টপিকঃ "উচ্চশিক্ষা" (পর্ব - ৩/৫)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৪