গরিবকে নিয়ে ব্যবসা করা বাংলাদেশে খুবই সহজ। গরিবের দেশ, আপনি তাদেরকে খুব সহজে আর্থিক প্রক্রিয়ায় আষ্টেপেৃষ্ঠে বাঁধতে পারবেন। ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণের ১৪ পার্সেন্টে কত পার্সেন্ট হয়, আড়ংয়ের ৫০০ টাকার কাপড়ের পোশাক কীভাবে ৫০০০ টাকা হয়ে যায় সবাই জানেন।
ব্র্যাকের এখন যে ব্যবসাটা তুঙ্গে, সেটার নাম বিকাশ। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী, ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের যেখানে ১০০,০০০ টাকা পাঠাতে ৫০ পয়সার মতো খরচ হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে খরচই হয় না, সেখানে বিকাশের মাধ্যমের টাকা পাঠাতে হাজারে খরচ হয় ২০ টাকা। ১০০,০০০ টাকা পাঠাতে মাত্র ২,০০০ টাকা! ভাবতে পারেন?
স্বীকার করতে কেউ দ্বিধা করবেন না, বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নিয়মিত গ্রাহক গরিব মানুষেরা, যাদের কেউ হয়তো ঢাকায় রিকশা চালায়, পরিবার থাকে নীলফামারীতে। এই ব্যক্তি দুই হাজার পাঠাতে গিয়ে ৪০ টাকা খরচ করছে, যেখানে ৪০ টাকায় সে এক কেজি চাউল কিনতে পারে।
এই ব্যক্তি কিন্তু ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংকে একটি কৃষক অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই টাকা পাঠাতে পারতো সামান্য (৫ টাকার মতো) খরচে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় মোবাইল ব্যাংকিং শুরু হলেও এখন এটি তাদের জন্যই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাংলাদেশে এখন মানি লন্ডারিংয়ের প্রধান হাতিয়ার বিকাশ। চাঁদা বা ঘুষের নিরাপদ মাধ্যম বিকাশ। ব্যাংকে টাকা পাঠাতে গেলে প্রেরকের পরিচয় পত্র বা হিসাব নম্বর প্রধান বাধ্যতামূলক হলেও বিকাশে টাকা পাঠাতে কিন্তু কোনো কিছুই লাগে না।
এক সহকর্মী দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ঘুরে এসে বললেন, সেখানেও বিকাশ আছে। আমি তো পুরা থ! কয় কী? পরে তাকে বুঝালাম, ওখানে ডলার নিয়ে বাংলাদেশের কোনো বিকাশ এজেন্টকে বলা হয় উদ্দিষ্ট মোবাইলে টাকার পাঠিয়ে দিতে। ডলার সে দেশেই রয়ে গেলো, বাংলাদেশ পেলো আন্ডা।
তবে বিকাশের কাছ থেকে একটা জিনিস আপনি শিখতে পারেন : যদি কখনো ব্যবসা করেন, তাহলে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের সাবেক কোনো কর্তাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে রাখবেন, আপনার কোনো সমস্যাই হবে না। উল্লেখ্য, বিকাশের সাথে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক দাসগুপ্ত অসীম কুমার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৩৯