প্রবল ঘূর্ণিতে মাধবীলতার সরল চিত্তে বেষ্টিত
কচিকাঁচা হাড়গোড়
একদা সফেছিলাম এই প্রেমেন্দ্র কুঠিরে,
কোমল শিরদাঁড়ায় হেলে দুলে তোমার উষ্ণ আচঁলে
কেটেছে দুর্ভাবনার কত কালোরাত কত স্বপ্নচরে !
তবু এতটুকু বুঝিনি এই আচঁলের মর্মব্যাথা।
পাঠশালার অবকাশে প্রতিদিন দিনশেষে
প্রবল প্রতীক্ষার একটি প্রহর !
কত দু্ঃসহ ছিলো সেই ছুটির আসর !
প্রকৃতির নির্মল আলিঙ্গনে
মাঠের সবুজ ঘাসের বুকে ক্ষণিকের হৈ চৈ
প্রফুল্লতার ভারে মুখরিত খেলাঘরে জাগ্রত শিহরণ,
শিক্ষালয়ে এ কি মায়ার বন্ধন !
গুরুমহাশয় দিয়ে যায়
অবিরত কল্যাণের অমিয় সুধা,
হৃদয়ের গহীনে তিমিরের ঘনঘটায় জ্বলে উঠে
প্রদীপ্ত মশালের দীপ্ত বারতা।
আঁধার সুড়ঙ্গ পেরিয়ে যেন ভানুর প্রণয়
নির্মল বায়ুর ফুরফুরে পরশে আজ সিক্ত হৃদয়।
আশীর্বাদের নব নব উল্লাসে ভরে ধরিত্রীর উদর
রূপালি নবান্নের আহবান এলো কতদিন পর !
বৈশাখী ঝড় ছিলো
বাতাসে ঘূর্ণি ছিলো
তবু দেখিনি কভু তোমার মলিন বদন,
রোদে তুমি জ্বলেছিলে
বৃষ্টিতে ভিজেছিলে
তবু হেসে খেলে হাসাতে অগণন।
আজ চৈত্রের খরা নেই
আকাশে মেঘ নেই
তবে কেন স্বজল চোখে তোমার ক্লান্ত স্লোগান?
দরখাস্তহীন ছাড়পত্রের বিষাদ এ সুধায়
আজ কেন বেজে উঠে বিদায়ের তান?
আজ বিদায়ের সন্ধিক্ষণে
কাঁদছো কেন হে বন্ধু সকল!
হে আপ্লুত খেলার মাঠ !
কাঁদছো কেন হে প্রিয় শিক্ষাগুরু !
হে ইমারাত !
বিশ্ব চ্যালেঞ্জের দ্বারপ্রান্তে এসে
বিদায়ী অশ্রুর এই মহা উল্লাসে
আশীর্বাদের বিকশিত বন্দনায়
ক্ষমার মিনতি করি শুভকামনায়।
ফিরবোনা পুস্তক হাতে আর কোনোদিন
ফিরবোনা জননী তোমার মুক্ত প্রাঙ্গনের শীতল ছায়ায়,
তবু তোমার চেতনায় গড়বো এ জীবন আলোর পথে
কথা দিলাম আজ, এই বিদায়ী সংবর্ধনায়।
ঘড়ির কাটা, ঘন্টাধ্বনি আর এই আঁচলের টান
যতদূর যাই, তার বাজবে সানাই
হৃদয় মন্দিরের জ্বলন্ত শিখায় যে স্মৃতি চির অনির্বাণ।
হে প্রিয় শিক্ষালয় জননী আমার !
এতদিন পর আজ বুঝলাম,
তোমার বন্দীশালায় আমি স্বাধীন ছিলাম ।