সময় টা বসন্তের মাঝামাঝি ।প্রকৃতি তার নতুন রূপে সজ্জিত । চারিপাশে পাখির কলোরব আর মৃদু হাওয়ার বিচরন । সময় গুলো ভালই কাটছিল লাবন্যর । সারাদিন স্কুল আর বই এর উপর মুখ গুঁজে রাখা ছাড়া বাহিরের সাথে তার তেমন পরিচয় ছিল না । বালিকা থেকে কৈশোরতা হয়তো তাকে আরও শান্ত করে তুলেছিল ।একা থাকতেই তার ভালো লাগে ।সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল তার মা ।পরিবারের ছোট সদস্য বলে দুনিয়ার জটিলতা তাকে ছুতে পারিনি । তার জগত স্কুল আর বাসা পর্যন্তই আবদ্ধ ।সময় গুলো আপন গতিতে কেটে যাচ্ছিল ।
হঠাৎ বিপত্তি আসে ,সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে তার জীবনে । ঘটনার দিন সকাল বেলা সবে মাত্র পড়তে বসেছে, হঠাৎ তার ভাইয়ের আগমন ঘটে । বলে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি ,হসপিটাল যেতে হবে, আম্মু আর নেই ।এই খবর শুনা মাত্র তার আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । গত রাতেও লাবন্যর আপুর সাথে কথা হয়েছিল ,ডাক্তার বলেছিল আম্মুর রোগ ধরা পড়েছে ,আর কোন চিন্তা নেই ,আম্মু কে নিয়েই আমরা বাড়ি ফিরবো ।
কান্না করতে করতে সিড়ি দিয়ে লাবন্য নামতে থাকে , ভাইয়া তার হাতটা ধরে রাখে । সব কিছু তার অবিশ্বাস্য লাগছিল । হাসপাতালে গিয়ে তার বোনের আর্তনাদে সে নিরব হয়ে যায় ।
এভাবে কিছু দিন কেটে গেল ,লাবন্যর খুব মন খারাপ হয় ,এই ভেবে যে ,তাকে রেখেই কেন তার আম্মু চলে গেল ,তাকে কেন নিল না ।
এখন তাকে থাকতে হবে আপু আর আব্বুর সাথে । লাবন্যর আব্বু রাগি মানুষ তবে মনটা নরম । সারাদিন চাকরি নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন ,সন্তানদের সময় দিতে পারেন না ,যার কারনে অনেক দূরত্ব চলে আসে । লাবণ্য বাবাকে খুব ভয় পায় । লাবন্যর আপু হঠাৎ করে রেগে যায় ,তার মন বুঝা দায় । আর দুই বোনের ঝগড়া লেগেই থাকতো । এসব ভেবে লাবন্য দোআ করতে থাকে ,আল্লাহ পিলিজ আমাকে নিয়ে যাও ।
কিছু দিন পরেই তার বদ রাগী আপু সম্পূর্ণ পালটে যায় , সংসারের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেই । রান্না করা পাশাপাশি ভার্সিটিতে ক্লাস করা ,বাবা বোনের তদারকি করা ,সব একা হাতেই করতে থাকে ।
আবার ঝড় নামে । পারিবারিক সমস্যা ,আত্মীয়দের স্বার্থপরতা সব মিলে একাকার ।লাবন্যর পাশে তার বোন ছাড়া কেউ ছিল না । পাখি যেমন ছানাদের আগলে রাখে ঠিক সেই ভাবে আগলে রেখেছিল লাবন্য কে । বোনের হাত ধরেই তার দুনিয়া চেনা হয় ,জগতের মন্দ মানুষ গুলো কে চিনতে পারা শিখা হয় । যখোন চারপাশে ঝামেলা অশান্তি লেগেই ছিল ,সব লাবন্যর বোন একা মোকাবেলা করে উঠে । তখোন লাবন্যর এমন হতো সামান্য ঝগড়া কিংবা জোরে গলার আওয়াজে হার্টবিট বেড়ে যেতো ।
কত রাত যে দুই বোন জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করেছে ,কেউ পাশে ছিল না তখোন ,আত্নীয় রূপী ভয়ানক বিভীষিকা তখোন আসল রূপ তুলে ধরে ।দুই বোনই ছিল সবচেয়ে আপন ।
লাবন্যর জীবনে এখন সবচেয়ে ভালোবাসার আর প্রিয় মানুষ তার আপু । সে সব ছাড়তে রাজি তার মায়াময় বোনের জন্য ।
রাত দিন লাবন্যর একটাই প্রার্থনা , আপুর সব দুঃখ আর অসুখ যেন কেবল তারি হয় ।
কখনো হয়তো লাবন্যর বলা হয়নি ,আপু তোমার জন্য আজও বেঁচে আছি ,তুমি হীনা জীবন আমার চাই না , আমার শুধু তোমাকে চাই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩