somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুঘল রোড ধরে কাশ্মীরের পথে (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ দু'পলকের দিল্লী দর্শন (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

নামের সাথে চৌধুরী জুড়ে দিলেই কেউ চৌধুরী সাহেব হয়ে যায় না, নামের সাথে মিয়া এঁটে দিলেই হওয়া যায় না মিয়ার ব্যাটা। তেমনি নামের পরে এক্সপ্রেস জুড়ে দেয়া আমাদের ‘শালিমার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটাকে ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’ এর সমগোত্রীয় ভেবে বড্ড ভুল করেছি। রাজধানী এক্সপ্রেসে থ্রি-টায়ার ক্লাসে সবকটি আসন পেতে দিলে কোনটাতেই সোজা হয়ে বসা যায় না, কারণ প্রতি পাশে তিনটি করে স্তরে আসন ব্যাবস্থা তিন ফিটেরও কম উচ্চতায়। ভেবেছিলাম শালিমারে টু-টায়ার হওয়াতে আরামে বসে বসে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। সেই আরাম পেলেও বাকী কোন কিছুই রাজধানীর মত পেলাম না। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হয়ে গেল হকারদের আনাগোনা, ষ্টেশনের পর স্টেশনে থেমে যাত্রী উঠানো (যদিও কোন স্ট্যান্ডিং যাত্রী ছিল না), আর সর্বোপরি পরিচ্ছন্নতা তুলনামূলক অনেক কম।

যাই হোক, দুপুরে লাঞ্চের বিকল্প হিসেবে যে জাঙ্কফুড কিনে নিয়ে উঠেছিলাম, তা একেবারেই অখাদ্য বেরুলো। ক্ষুধার কারণে কোনমত পেটে চালান করে দিলাম, অনেকে তাও পারলো না। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে মুক্তার ভাই আপেল আর কমলা নিয়ে উঠেছিল, যাদের মুখে ঐ অখাদ্যগুলো রুচে নাই, সান্ত্বনা হিসেবে এই ফলাদি দিয়ে উদর’কে বুঝ দিলেন। রাতের খাবারের অর্ডার নিতে দুজন লোক এল সন্ধ্যা বেলা, কিন্তু বিপত্তি বাঁধল এখানে। মেন্যুর সব ভেজ আইটেম, জম্মু পুরোপুরি 'ভেজ' এলাকা। বাধ্য হয়ে অর্ডার করা হল রুটি, জিরা রাইস (যদিও বলেছিল প্লেইন রাইস), মাটার পনির, ডালভুনা; সাথে সবজীর আইটেম ছিল কি না তা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। এই খাবারের নাম শুনে মুক্তার ভাই মুখ ভার করে ফেললেন, উনি চিকেন ছাড়া এইসব ভেজ খাবার খাবেন না। কিছুক্ষণ পর এক করিৎকর্মা সার্ভিস বয়ের দেখা মিলল, চিকেন পাওয়া যাবে কিনা বলতেই তার উত্তর ছিল, ‘আরে স্যার জী, সাভ কুছ মিলেগা, বোলো না তুমকো ক্যায়া চাহিয়ে? চিকেন কাবাব, চিকেন টিক্কা, তান্দুরি চিকেন?’ কিন্তু একটু আগে যে বলল ভেজ ছাড়া কিছু নেই...। তখন সে বলল, ফোন করে সামনের একটা স্টেশনে ও নিজের লোক দিয়ে সেখানকার রেস্টুরেন্ট হতে খাবার আনিয়ে দেবে। ট্রেন যখন ঐ স্টেশনে থামবে, তখন সে ওখান থেকে খাবার ট্রেনে তুলে নিবে। আমরা তখন মহাখুশী, তাকে চিকেন কাবাব অথবা গ্রিল চিকেন দেয়ার কথা বললাম, সাথে নানরুটি। ও বলল ফোন করে জানাচ্ছে।

রাত সাড়ে আট বা নয়টা নাগাদ উভয় ধরণের খাবার চলে আসলে সবাই মিলে ডিনার সেরে নিলাম। এরপর এক এক করে সবাই নিজ নিজ বিছানা ঠিক করে ঘুমানোর আয়োজন করল, নীচের দুদিকের দুই বাঙ্কে আমি আর কামাল ভাই। আমাদের কামরাটি একেবারে বগীর প্রথমদিকে হওয়ায় লোকজনের যাতায়াত লেগেই ছিল। যদিও পর্দা টেনে দিয়ে কিছুটা আড়াল হওয়া গেল, তারপরও সাথের ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এদিনও সারা রাত গান শুনে কাঁটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করলাম। আগের রাতের মতই কম্বলে নিজেকে আবৃত করে গান শুনছি, আর মাথার পেছনের জানালার ঘোলাটে কাঁচ দিয়ে আকাশ দেখছি, আকাশে বেশ সুন্দর একখানি চাঁদ, কিন্তু ক্ষণিকের জন্য দেখা দিয়ে লুকিয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের আঁকাবাঁকা গতিপথের সাথে লাজুক চাঁদ তাল মেলাতে পারছিলো না। ;) একের পর এক ষ্টেশন পার হচ্ছিলাম, রাতের স্টেশনে মানুষের সমাগম মন্দ নয়। কয়েক ষ্টেশন পরপর ট্রেন থামছিল, জানালা দিয়ে দেখা লোকজনের মাঝে শিখ ধর্মাবলম্বীদের আধিক্য ধীরে ধীরে বাড়ছিল। একটা বিশাল ষ্টেশনের লাগোয়া গুরুদুয়ারা দেখলাম, রাতের নিয়ন আলোয় শ্বেতশুভ্র গুরুদুয়ারাটা অন্যরকম লাগছিল, ষ্টেশনের কাছে বেশীরভাগ লোকের মাথার পাগড়ি দেখলাম গেরুয়া রঙের। এভাবে ষ্টেশনের পর ষ্টেশন পার হতে হতে কোন ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।

গতকালের মত আজও ঘুম ভাঙল ভ্রমণসাথীদের কথার শব্দে, ঘুম ভেঙ্গে শোয়া অবস্থায়ই আমি আড্ডায় জয়েন করলাম। কিছুক্ষণ পর সার্ভিস বয় এসে বিছানার চাদর আর কম্বলগুলো নিয়ে গেল। আমরাও বিছানা হতে নেমে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম, জম্মু পৌঁছানোর শিডিউল টাইম ভোর পাঁচটা। আমি আর শামিম ভাই সবার শেষে নামলাম, সবাই নেমে গেলে আরেকবার দেখে নিলাম কেউ কোন কিছু ফেলে গেলাম কি না। না, সব ঠিক আছে। স্টেশনে নেমে আমি আর মুক্তার টেলিফোন করার জন্য পিসিও খোঁজ করলাম, আমাদের ড্রাইভারের সাথে কথা বলার জন্য। এখানে বলে রাখি, ভারতে জম্মু-কাশ্মীরে অন্য প্রদেশের কোন সিম কাজ করবে না, এমন কি অল-ইন্ডিয়া সিম হলেও না। আর স্থানীয় না হলে জম্মু-কাশ্মীরের সিম পাওয়া মুশকিল। যাই হোক একটু খোঁজ করতেই পেয়ে গেলাম টেলিফোন করার দোকান, ষ্টেশনের গেটের কাছে। সেখান হতে আমাদের গাড়ীর ড্রাইভার সাহিলকে ফোন করতেই ও বলল, ‘স্যার আপলোগ কাঁহা হো? ষ্টেশন সে তুরান্ত নিকলো, হাওয়া গারাম হ্যাঁয়...’। আমি তার কাশ্মীরি উচ্চারণে হিন্দি পুরো কথা বুঝলেও ‘হাওয়া গারাম হ্যাঁয়’ মানে কি? আমি তো এই ভোরবেলা ঠাণ্ডায় কাঁপছি, আর ও ব্যাটা বলে কি না হাওয়া গারাম হ্যাঁয়! ওকে জিজ্ঞাস করতে জানা গেল, জম্মু’তে সেদিন হরতাল, আগের দিন বেশ কিছু গাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, পরিস্থিতি ভাল না। ভয় পেলাম, বেড়াতে এসে আবার না কোন বিপদে পড়ি। যাই হোক, ও বলল আমরা জম্মু-কাশ্মীর ফোর লেন হাইওয়ে দিয়ে না গিয়ে বিকল্প একটা রুট দিয়ে যাব। একটা জায়গার নাম বলল, ষ্টেশন হতে একটা মিনিবাস টাইপের গাড়ী ভাড়া করে সেটা নিয়ে সেখানে আমাদের দ্রুত চলে আসতে। কিন্তু এটা যে আমাদের জন্য শাপেবর হবে তা কি জানতাম? অনেক সময় বিপদেও ভালো কিছু হয়। কিন্তু অন্য আরেক বিপদ ইতোমধ্যে ঘটে গেছে, টের পেলাম ফোন বুথে বিল দিতে গিয়ে।

জিনসের পেছনের পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগ হাওয়া! আমি চেষ্টা করলাম মনে করতে, ট্রেন থেকে নামার সময় মানিব্যাগ পকেটে ঢুকিয়েছিলাম কি না... রাতে শুয়ে শুয়ে গান শোনার সময় মানিব্যাগ বড়ই যন্ত্রণা দিচ্ছিল, তাই পকেট হতে বের করে চশমা, সানগ্লাস, মোবাইল, সাইডব্যাগ সবকিছুর সাথে বালিশের পাশে রেখেছিলাম। এখন সবকিছুই আছে, মানিব্যাগ ছাড়া। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না কোথায় ফেলে এলাম মানিব্যাগ। বড় চিন্তায় পড়ে গেলাম, মানিব্যাগে আমার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড (তাতে পাঁচশ ডলার এন্ডোর্স করা) আর এনআইডি। এখন এই কার্ড অচল করাতে আমাকে ঢাকায় ফোন করতে হবে, আর ঢাকায় ফোন করা মানে বাসায় সবাই টেনশন করা শুরু করবে। সবেমাত্র যাত্রা শুরু, আরও বারো-তেরো’দিন ভারতে থাকব। ধ্যাত, নিজের উপর খুব রাগ লাগছিল। মানিব্যাগে হাজার দুয়েক বাংলাদেশী মুদ্রা আর সাড়ে পাঁচ হাজার ভারতীয় মুদ্রা ছিল। সেগুলোর জন্য চিন্তা বা মন খারাপ কোন কিছুই হচ্ছিল না। কিন্তু টেনশনে পড়ে গেলাম ক্রেডিট কার্ড আর ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়ে। ঐদিকে ড্রাইভার সাহিল বলেছে, হাওয়া গারাম হ্যাঁয়। সবমিলে আমার ব্রেইন তখন হ্যাং হয়ে গিয়েছিল। সাথের সবাইকে বললাম ঘটনা খুলে, সবাই যার যার ব্যাগ চেক করে দেখল, ভুলে যদি ভরে থাকে। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। শেষে আমি সবাইকে তাড়া দিয়ে বললাম, বাদ দেন, চলেন রওনা দেই, দেরী হলে আরও বড় ঝামেলায় পড়ে যাব শেষে। আমাদের ভ্রমণ বাংলাদেশের নিয়মিত ভ্রমণসাথী মিতা রায় বললেন, ‘আপনি একবার ট্রেনে গিয়ে দেখে আসেন, যদি পড়ে থাকে’। মিতার পীড়াপীড়িতে কামাল ভাইকে নিয়ে ফের ষ্টেশনে ঢুকলাম গার্ডকে বলে।

কিন্তু প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখি ট্রেন নেই সেখানে! কি করি? ষ্টেশনে তখন সদ্য পৌঁছান ট্রেনগুলো’র বিছানার চাদর, বালিশের কাভার এগুলো ধৌতের জন্য স্তূপ করে জায়গায় জায়গায় রাখা। সেগুলোকে ঘিরে ছোট ছোট জটলা, সেখানে কয়েকজনকে ঘটনা খুলে বললাম, সবাই বলে পুলিশে কমপ্লেইন করতে। একে বিদেশ বিভূঁইয়ে, তার উপর জম্মুতে এমন সময়ে, সিদ্ধান্ত নিলাম মানিব্যাগ খোঁজা বাদ দেই। এমন ভাবনার মাঝে শেষ যে দলের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের মাঝে নেতা গোছের একজন সদয় হলেন, আমাদের দুজনকে সাথে নিয়ে গিয়ে একটা ছেলেকে বললেন, ‘ইন লোগ কো শালিমার পে লে যা, বাটুয়া খো গায়া’। সেই ছেলের সাথে পাথুরে রেললাইন দিয়ে মিনিট দশেক হেঁটে এগিয়ে গিয়ে দেখা পাই আমাদের ট্রেনের। বগীর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, দরজা সজোরে বেশ কয়েকবার ধাক্কানোর পর ভেতর থেকে সার্ভিস বয়, যে চাদর-কম্বল নিয়েছিল, দরজা খুলল। আমরা আমাদের কামরায় গিয়ে আমার বিছানা, তার নীচে খুজে দেখলাম, সব ফাঁকা। আমাদের সাথে যাওয়া ছেলেটি অন্যান্য কামরা দেখে এল, কোথাও নেই। হঠাৎ কি মনে করে আমার সাথে যাওয়া ছেলেটি আমাদের কামরার নীচের দুটো সিট যা ফোল্ড করে রাখা ছিল, তা খুলে দেখল। আমার বিছানার বিপরীত দিকে যেটায় কামাল ভাই ঘুমিয়েছিল সেই বিছানায় ফোল্ডের মাঝে আমার মানিব্যাগ পাওয়া গেল। মানিব্যাগে ভারতীয় রুপী ছাড়া আর সবকিছুই পাওয়া গেল। আমি তৎক্ষণাৎ বুঝলাম ঘটনা কি ঘটেছে। আমার বিছানা হতে চাদর টান দিয়ে নেয়ার সময় চাদরের সাথে 'বালিশের পাশে থাকা মানিব্যাগ' চলে যায় ঐ সার্ভিস বয়ের হাতে। সে মানিব্যাগ খুলে বুঝতে পারে এটি ভিনদেশী কারো মানিব্যাগ, আর সেতো আমাদের বেশ কয়েকবার দেখেছে, নিশ্চয়ই বুঝেছে আমরা ভিনদেশী পর্যটক, কমপ্লেইন হবে কিংম্বা খুঁজতে আসবে। রুপী সরিয়ে ফেলে মানিব্যাগ আমাদের কামরায় রেখে দিয়েছে, কিন্তু ভুল করেছে একটাই, অন্য বিছানায় ফেলে রেখেছে। যাই হোক আমি তখন মহাখুশী, হাজার পাঁচেক রুপী গেছে দুঃখ নাই, ক্রেডিট কার্ড আর এনআইডি ফেরত পেয়েছি এটাই বড় কথা।

আমি আর কামাল ভাই দলের কাছে ফিরে এলে আমরা সবাই মিলে একটা মিনিবাস ভাড়া করে রওনা দিলাম সাহিলের গাড়ী’র উদ্দেশ্যে। ১৩ সিটের টেম্পু ট্র্যাভেলার নিয়ে সাহিল অপেক্ষমান। মিনিট দশেকের মধ্যে ফাঁকা শহরের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম। বছর ত্রিশ-পয়ত্রিশের কাশ্মীরী যুবক সাহিল’কে প্রথম দর্শনেই ভালো লাগলো। হাস্যমুখ, মিশুক এবং রসিক ড্রাইভার; পুরো ট্যুরে ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তার সাথে তার গাড়ীতে আমরা রওনা হলাম বিকল্প পথে কাশ্পামীরের উদ্দেশ্যে।

এই বিকল্প পথের আরেক নাম ‘মুঘল রোড’, মুঘল আমলে নির্মিত এই পথ দিয়ে তৎকালে জম্মু’র সাথে বৃহত্তর কাশ্মীরের যোগাযোগ রক্ষা হত। ভারতের ‘পুনচ (Poonch)’ জেলার ‘বাফলিয়াজ’ এর সাথে কাশ্মীরের ‘রাজৌরি’ এবং ‘সোফিয়ান’ জেলার সংযোগ সড়ক এটি। ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ ‘পীর পাঞ্জাল’ মাউনটেন রেঞ্জ দিয়ে চলে গেছে, সর্বোচ্চ উচ্চতা ১১,৫০০ ফিট (৩,৫০৫ মিটার)। সাধারনত জম্মু ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে গেলে এই পথের দূরত্ব হয়ে যায় ৫৮৮ কিলোমিটার যা এই বিকল্প পথে ১২৬ কিলোমিটার মাত্র। পথ কম হলেও ভয়ঙ্কর বিপদজনক, কিন্তু চরম এডভেঞ্চারাস। এই পথে গেছে বাফলিয়াজ (Buffliaz), বেহরামগাল্লা (Behramgalla), চান্দিমার (Chandimarh), পোশানা (Poshana), ছাত্তাপানি (Chattapani), পীর কি গালি (Peer Ki Gali), আলিয়াবাদ (Aliabad), জাজনার (Zaznar), ডুবজা(Dubjan), হিরপোহরা (Heerpora) হয়ে সোফিয়ান পর্যন্ত। ষোড়শ শতকে নির্মিত এই রাস্তা বাদশাহ আকবর ব্যাবহার করতেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর রাজৌরি’র সন্নিকটে কোন স্থানে মারা যান। স্মৃতিবহুল এই রাস্তা দিয়ে বিশেষ প্রয়োজন অথবা বাধ্য না হলে গাড়ী চলাচল করে না। দুর্ঘটনাপ্রবণ এই রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালানো খুব বিপদজনক, কিন্তু ভ্রমণ চরম উপভোগ্য। শুনেছি এই রাস্তা দিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলাচলের জন্য বিশেষ অনুমতি লাগে। এই রাস্তার শেষের কিছু অংশের চরম গঠনগত মিল রয়েছে লেহ-লাদাখের সাথে। হুট করে আপনার মনে হবে পথ ভুলে লাদাখে চলে এসেছেন।

আগেরদিন কুতুবমিনার ভ্রমণ শেষে আমার ক্যামেরার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে, মেমোরি কার্ড এরর দেখায়, যে কার্ডই দেই না কেন। ফলে ক্যামেরা বিকল, সাথে আমার মানিব্যাগ হারানো, এসব মিলে আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম ছবি না তুলে। অবশ্য লাভ হয়েছে, মন ভরে এই ভয়াল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছি। খাড়া পাহাড়ের বুক চিড়ে তৈরি এই রাস্তা কখনো খাড়া উঠে গেছে, কখনো গেছে নেমে। কখনো আমাদের নীচের চারিধার মেঘের তলদেশে, কখনো আমরা চারপাশে পাহাড় বেষ্টিত। আসলে আমার সংগ্রহে এই যাত্রার খুব বেশী ছবি নাই। যেটুকু আছে তা শেয়ার করছি সাথে কিছু নেট থেকে সংগ্রহ করে। মহান আল্লাহতায়ালাকে ধন্যবাদ এই রাস্তায় ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। কারণ, আমরা চাইলেও এই বিকল্প রাস্তা সহজে ভ্রমণ করতে পারতাম না। গরু জবাইকে কেন্দ্র করে জম্মুতে সৃষ্ট ধর্মীয় কোন্দলে ডাকা হরতাল তথা ‘বন্‌ধ’ এর কল্যাণে আমরা এই সারাজীবন মনে রাখার মত ভ্রমণ আনন্দ লাভ করতে পেরেছিলাম। তাই আগেই বলেছি, এই হরতাল ছিল আমাদের জন্য শাপেবর। (চলবে)

পরের পর্বঃ অবশেষে পৌঁছলুম পাহেলগাও!!! (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)













































































এই পর্বের ছবি:
বোকা মানুষ বলতে চায়
মিতা রায়
মুক্তার হোসেন
নেট থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৩
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×