somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবিকৃত

১৪ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-স্যার আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন?
-অবশ্যই। রোগীকে না দেখে এইমুহূর্তে আমার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব নয়।
-তার (রোগীর) অবস্থা খুবই শোচনীয়। আপনি দয়া করে আমার কথাগুলি অনুধাবন করার চেষ্টা করুন স্যার। আমি ইশ্বরের দিব্যি করে বলছি, সে ছিল একজন সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। এমনকি তার পূর্বপুরুষদের মাঝেও এমন আচরণের কোন প্রমাণ নেই।
-দেখুন, মিঃ মিহির। এইসব চিকিৎসার প্রয়োজনে অবশ্যই রোগীর সাক্ষাত একান্ত প্রয়োজন।
-আপনি ভাবুন, একজন লোক যে কিনা সবে মাত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং বৌ যথেষ্ট রূপবতী ও গুনবতী। বৌটি অন্তঃসত্ত্বাও হয়েছে কিছুকাল পূর্বে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই সে মা হতে চলেছে। এই মুহূর্তে লোকটি নিজেকে একটি গুইসাপ ভাবা শুরু করলো। এটার কি ব্যাখা হতে পারে?
শেষোক্ত বাক্যটি মিঃ মিহির নিজেকেই শুধোলেন যেন। একমিনিটের তিনভাগের একভাগেরও কম সময় বাদে তিনি আবার শুরু করলেন।
-সে যেদিন থেকে ভাবা শুরু করলো সে একটা গুইসাপ, তার আচরণও পাল্টে গেল। যেন সে সত্যিকারের একটি গুইসাপ।
-কি রকম?
ডঃ বদলেয়ার চৌধুরী এই পর্যায়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করলেন মিঃ মিহিরের বক্তব্যের বিপরীতে।
-সে একটু পর পর থুথু ছিটানো শুরু করলো। যেমনটা করে থাকে একটি গুইসাপ। ঠিক এইভাবে...
বলেই মিঃ মিহির একদলা ছিটিয়ে দিল ডঃ চৌধুরীর মুখে।
হতবিহ্বল চিত্তে ডঃ চৌধুরী কিছুক্ষণ মিহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোন রকম উষ্মা প্রকাশ করলেন না তিনি। শান্ত স্বরে বললেন,
-আপনার বন্ধুর ঠিকানাটা রেখে যান। আমি অবশ্যই গিয়ে দেখা করে আসবো খুব শীঘ্রই।
মিঃ মিহির একটি সাদা কাগজে ঠিকানাটি লিখে ধীরপায়ে বেড়িয়ে গেল। বন্ধুর চিন্তা বেশ কাতর করে তুলেছে তাকে।

মিঃ মিহির চলে যাবার দুই সপ্তাহের মধ্যেও ডঃ চৌধুরী নিজেকে ব্যস্ততা থেকে মুক্ত করতে পারলেন না। তিন সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার একদিন পূর্বে তিনি মিঃ মিহিরের দেওয়া ঠিকানায় পৌছলেন। মফস্বল এলাকা। গাড়ি থেকে নেমে তাকে পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে আধঘন্টার মত। স্থুলকায় স্বাস্থ্যের বদৌলতে বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি।

এক গ্লাস ঠান্ডা পানি তার দিকে বাড়িয়ে ধরে সামনে দন্ডায়মান হলো যে নারী ডাঃ চৌধুরী বুঝতে পারলেন এ মিহিরের বন্ধুপত্নী ব্যতীত দ্বিতীয় কেউ নয়।
-আপনি ডাঃ বদলেয়ার চৌধুরী?
রমনীটি জিজ্ঞেস করলো। তার চোখে মুখে বিষন্নতার ছায়া ঘুরছিল যেন।
-একটু দেরি হয়ে গেল আসতে।
ডঃ চৌধুরী কিছুটা কৈফিয়তের স্বরে বলে উঠলেন। একটু থেমে জিজ্ঞেস করলেন,
-আপনার স্বামী কোথায়?
-অস্থির হবেননা। একটু বিশ্রাম নিন। কয়েক মিনিট বিরতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমি।

রমনীটি ডঃ চৌধুরীকে বাড়ির পেছন দিকটায় নিয়ে চললেন। তার সারা অবয়বটি যেন আকাট মৌনতায় পরিপূর্ণ। বাড়ির পেছন দিকে বেশ বড় একটা পুকুর। শেওলায় ঘেরা। পুকুরের চারপাশে মাঝারি ধরনের ঝোপঝাড় দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকহাত দূরত্ব বজায় রেখে। রমনীটি হাতের আঙ্গুল তুলে ধরলেন ঐরকম একটি ঝোপের দিকে। প্রথমদিকে ডঃ চৌধুরী কিছুই দেখতে পেলেন না। পরে দেখলেন, তার দিকে ঝলঝলে চোখে তাঁকিয়ে রয়েছে একটি বেশ বড়সড় গুইসাপ। সাপটির মুখটা দেখতে মিঃ মিহিরের অবিকৃত।

ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×