উশখুশকু চুলধারী লোকটির সাথে পরিচয় হয়েছিল একটি ফ্যাসফ্যাসে দুপুরে। আমি সেদিন জাল নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল পদ্মার তীরে। দেখলাম দুটো চিংড়ি মাছ হাতে করে নগ্ন বালুতে পা রেখে তিনি আমাকে ইশারায় ডাকছেন। আমি এগুতেই শুনতে পেলাম,
-তুমি কি এগুলো খুঁজছো?
-বাহ! এগুলো বেশ বড়। কিভাবে পেলেন?
-পেলাম! এ দুটো তোমার। এই নাও।
বলেই আমার হাড়িতে গুঁজে দিলেন মাছ দুটো।
-কে আপনি? আর আমাকে মাছগুলোই বা কেন দিচ্ছেন?
-আমাকে চিনতে পারছো না?
-না।
-আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । এইবার চিনলে?
-না।
-তোমার সাহস দেখে বলিহারি যাই ছোকরা। তুমি বিশ্ব কবিকে চিনতে পারছো না?
-বললাম তো, পারছিনা।
-তাহলে মাছ দুটো ফেরত দাও।
বলেই তিনি মাছ দুটো ঝটপট তুলে নিয়ে চলে গেলেন। আর সেই সঙ্গে আকাশ থেকে কে যেন দুইবার গম্ভীর স্বরে উচ্চারণ করলো,
-বেকুব! বেকুব!
পরেরদিন আবার দেখতে পেলাম লোকটিকে। দুটো চিংড়ি হাতে আমাকে ডাকছেন তিনি।
-তুমি কি এইগুলো খুঁজছো?
আমি এগিয়ে যেতেই গতকালের মত জিজ্ঞেস করলেন। তারপর আমার হাড়িতে মাছগুলো গুঁজে দিয়ে বললেন,
-আমাকে চিনতে পারছো?
-হ্যাঁ। আপনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বকবি।
এ কথা শুনে তিনি গতকালের ন্যায় মাছ দুটো ঝটপট তুলে নিয়ে চলে গেলেন। আর সাথে সাথে আকাশ থেকে শোনা গেল,
-বেকুব! বেকুব!
তৃতীয় দিনও লোকটিকে দেখতে পেলাম আমি। আজকে লোকটির হাতে কোন মাছ নেই। আছে চারটে কবিতা।
-তুমি কি এগুলো খুঁজছো?
বলেই কবিতাগুলো আমার হাড়িতে গুঁজে দিলেন। সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন,
-আমাকে চিনতে পারছো?
-হ্যাঁ। আপনি তো আমি। আর আমিই তো রবীন্দ্রনাথ, নজরুল।
একথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলেন তিনি এবং কোথায় যেন মিলিয়ে গেলেন সহসা। আর আকাশ থেকেও আজ কেউ গম্ভীর স্বরে ডেকে উঠলো না।
-বেকুব! বেকুব!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬