somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরীচিকা সময়

০৪ ঠা মে, ২০০৮ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

###

এ মুহুর্তে ওর খুব ছোট্ট গোলগাল মুখটা আমার দু'হাতে’ আলতো করে তুলে একদম মুগ্ধ হয়ে যাই! কী নিষ্পাপ সুন্দর! ও হচ্ছে আমার পুতুল। আমার চোখগুলোই ছোট্ট করে ওর মুখে লাগানো, ছোট্ট একটু একটা নাক আর আপেল-লাল নরম এইটুক একটা ঠোঁট! ঠোঁটটা একটু বেঁকে গেলেই ভয় পেয়ে যাই আমি! আমার মেয়েটা ভয় পাচ্ছে না তো! নাকি ভয়ের স্বপ্ন দেখলো! ওকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে নিয়ে ফিসফিস করে বলি, "মা! তুমি খালি বলো কে আমার পুতুলটাকে ভয় দেখালো! কার এত্তোবড় সাহস!" আর সাথে সাথেই যেন আমার ছোট্ট অংশটা বেশ আস্বস্ত হয়! লাল টমেটোর মতো ঠোঁটটা দিয়ে অপার্থিব একটা হাসি দিয়ে মিশে থাকে আমার সাথে! আমার চারপাশ ঝলমল করতে থাকে! অসহ্য ভাললাগায় আচ্ছন্ন হই আমি। আমার পুতুলটার সাথে ক্রমাগত খেলে যাই আমি। ওর সিল্ক-নরম চুল আর গোলগাল গালটাতে নাক ডুবিয়ে দেই আমি... কেমন একটা মায়াময় গন্ধে আশপাশ-টা ভরে যায়! ছোট্ট হাতটা আমার আঙ্গুল পেলেই মুঠো করে ধরে ফেলে, আমি সেই ছোট্ট মুঠোটা আরেকটা হাত দিয়ে ঢেকে রাখি! আমার পৃথিবী যেন দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়! একপাশে আমার নিজের ছোট্ট অংশটা আর আরেকপাশে সবকিছু। নাঃ ! ভুল বললাম ! আমার আগের পৃথিবীটা মুছেই গেলো পুরোপুরি, আর নতুন পৃথিবী-র সবটুকু জুড়ে থাকলো একটা মাত্র প্রাণের অস্তিত্ব ! আমার মেয়ে !!!

কয়েকমাস আগের সময়টাও সামনে আসে আমার বায়োস্কোপের মতো। আলট্রাসনোগ্রাম এর পর কি শিহরিত হয়ে ফিরলাম আমি আর রেহান ! আমি খুব কৃতিত্বের সাথে বলতাম,"আমার মেয়ে!" পেছন থেকে রেহান আমার কাঁধে মাথা রেখে ধমকে উঠতো," তুমি এত স্বার্থপর!" তাও বেশ গর্ব নিয়ে বলতাম,"ইস্‌! হলাম স্বার্থপর! তাও ও আমার মেয়ে।" রেহান আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে থাকতো! নিজেকে আশেপাশের সব্বার থেকে আলাদা মনে হতো। একটু নড়া-চড়া টের পেলেই আমি-রেহান একদম বাচ্চাদের মতো লাফা-লাফি শুরু করে দিতাম! রেহান তো সেটা নিয়ে পারলে একটা গল্প-ই লিখে ফেলে!

স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে হেঁটেছি আমি আর রেহান; আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপে খুশি ছল্‌কে উঠতো! সব দুঃখ-কষ্ট বিন্দুর চেয়েও ছোট লাগতো। আমাদের পৃথিবীটা স্বর্গীয় আনন্দে ভরে গিয়েছিল। আমি রেহানের হাত ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দকে আমন্ত্রণ করেছিলাম।

###

আনিলা এখনো অচেতন। না জানি কি ভাবছে মেয়েটা! হ্য়তো খুঁজে বেড়াচ্ছে তার হারিয়ে যাওয়া পুতুলটা! রেহান দু'হাতে চুল খামচে কেবিনের বাইরে বসে আছে। মেয়েটার মৃত্যুর খবরটা তাকে অনুভূতিশূণ্য এক জড়পদার্থ করে দিয়েছে। ডেলিভারীর আগেই মারা যায় ওদের মেয়েটা... " ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডেথ"-এমনটাই বললো ডাক্তার কেমন ভাবলেশহীন কন্ঠে! আনিলা সেই তখন থেকে অচেতন। মাঝখানে একবার ঘুমের ঘোরে যেন বলে উঠেছিল..."রেহান! দেখো দেখো! আমাদের মেয়েটা!!!" রেহান বেশ চম্‌কে তাকিয়েছিল...আনিলা এই প্রথম "আমাদের" মেয়েটা বললো! পঞ্চাশোর্ধ অভিজ্ঞ ডাক্তার রেহানকে ডেকে কাঁধে হাত রেখে বললো, "মেয়েটার ডীপ হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। ও যেন মৃত্যুর খবরটা না পায় জ্ঞান হলে। খবরটা নেয়ার মতো মানসিক শক্তি ওর নেই।"

রেহানের সমস্ত শরীর জমে গিয়েছে। যেকোন চরম কষ্টের মুহুর্তে সবাই যা করে তাই করলো রেহান। বিড়বিড় করে ওপর দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে অপ্রকৃতস্থের মতো, " স্রষ্টা! আমি জানি এটা দুঃস্বপ্ন! সময়টাকে মিথ্যা করে দাও, এক্ষুণি মিথ্যা করে দাও।"

ঠিক এ সময়টায় সৃষ্টিকর্তা পুরো ব্যপারটা ঠিক যেন কোন একটা মর্মান্তিক নাটকের দৃশ্যের মতোই উপভোগ করছিলেন। তিনি রেহানের আর্তনাদের উত্তরে গম্ভীর হয়ে বললেন," স্বপ্ন সবসময় হয় মিথ্যা বা অলীক। সেজন্যই স্বপ্ন এতো সুন্দর, এত আকাঙ্ক্ষিত। দুঃস্বপ্ন বলে আসলে কিছুই নেই। সত্য বা বাস্তব-ই আসলে দুঃস্বপ্ন। তোমরা, মানুষেরা বাস্তব থেকে সান্তনা পাবার জন্য এর একটা নাম দিয়েছো - "দুঃস্বপ্ন"। এখনকার সময়টাই দেখো; আনিলা এখনো স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে ... আর তুমি দেখছো "দুঃস্বপ্ন" !!! "
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:১৪
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×