"পারদের মতো গল্গলে ভার, রগছেড়া গন্গনে ব্যথা আর শত্রুদের পর্দাহীন নির্লজ্জ বিধ্বংসী চোখে পড়ে যাওয়ার ভয় নিয়ে টাল-মাটাল পায়ে হাঁটছি... অনেকগুলো অসহায় ভ্রুণ আমার ভেতরে পরম আশ্রয়ে ঘুমিয়ে আছে... তাদের দুলে ওঠা, খেলা, হাসি, কথা, খুনশুটি বা কান্না... প্রতিটা শিহরন পাচ্ছি আমি... আবার কেমন হালকা কেঁপে-ও উঠছি তাতে! ওদের ঘুম ভাঙিয়ে গাঢ় যত্নছোঁয়ায় নিজের থেকে মুক্তি দিতে হবে; ভারভার-কাঁপাকাঁপা-থরথর-শিরশির... তাও নিজেকে টেনে নিয়ে আরেকটু গাঢ় অন্ধকারে জড়াই... যেখানে মিশে থাকতে পারবো, গোপন থাকতে পারবো ... আমার ভেতরের "আমি"-গুলোকে বাঁচাতে পারবো! এই নোংরা-তরল-ঘিনঘিনে অন্ধকারটা আমার এই চরম সময়ে সবচে' বড় অবলম্বন হয়ে দাড়িয়েছে... যেখানে আমার শরীরের বেশ বলিষ্ঠ আটটা খুঁটিও নির্ভরতার প্রতিজ্ঞা করতে পারে নি!
... হঠাৎ তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়... প্রবল নাড়া পেয়ে অস্তিত্বচ্যুত হই... আছড়ে পড়ি... তীব্র রগছেড়া ব্যথায় সারা শরীরে নীল সংকেত দেখি ...এতদিনের সতর্কতার শক্ত মলাটে মোড়া বৃত্তাকার অংশটা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে... আর তার সাথে সাথে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়লো অনেকগুলো "আমি" !!!"
ঘরটাতে হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠায় আর গৃহ পরিচারিকার অসতর্ক আঘাতে ছিটকে পড়া ভারসাম্যহীন মা-মাকড়শা তার ভ্রুণগুলোকে শেষতক রক্ষা করে, নিরাপদে মুক্তি দিয়ে প্রচন্ড ব্যথায়-আতংকে বাচ্চাগুলোর দিকে তাকায় ... আহ! ঠিকমতোই এসেছে সবগুলো তাহলে! আর ওদিকে তার জন্ম দেয়া নতুন প্রানগুলো আপাতত নিজেদের রক্ষার্থে আত্মগোপনের আশ্রয় খোঁজায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। একটু পর ঘরটা খালি হলে মা'র কাছে যায় তারা। একে একে এগোয়। প্রায় শ'খানেক বাচ্চা মাকড়শা। প্রচন্ড ক্ষুধা তাদের ভেতর। একে একে কামড় বসায় তারা মায়ের শরীরে। মা মাকড়শা গুঙিয়ে-ছটফট করতে করতে একে একে হারায় তার আটটা পা। হাত। মাথা। পেট। বুক...
এর দু'তিন মিনিট পরেই ঘরে ঝাড়ু নিয়ে আবার ঢোকে কাজের মেয়েটা। একটু আগেই বিশা-আ-আ-ল কুৎসিত এক মাকরশা হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে ছিল। কী আশ্চর্য! কোথায় গেলো মাকরশাটা!
[এডিটেড]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:০৩