somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ : উত্তর-দক্ষিণের বিরল রূপ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি যে কখনো নর্থ-সাউথ নিয়ে ব্লগে লিখবো ভাবি নি। প্রথমতঃ এতোটাই বিরক্ত আমি এখানের অনিয়ম বা ঝামেলাগুলো নিয়ে যে এটা নিয়ে লেখার রুচি হয় নি; দ্বিতীয়তঃ লেখার জন্য কোন বিষয় খুঁজে পাই নি। গত দু'বছরের নর্থ-সাউথ জীবনটা খুব ঝামেলা, একঘেঁয়েমি আর ক্ষোভে কেটেছে। পড়া-শোনার বাইরে খাওয়া-দাওয়া করে বেড়িয়েছি। এখানে কোন ক্যাম্পাস জীবন নেই, বেড়ানোর জায়গা নেই... প্রথম ক'টা সেমেস্টার খাওয়ার দোকানগুলো মুখস্থ করে বেড়িয়েছি, পরের দিকটায় একটা সময় বাঁধাধরা একটা রুটিনে চলে আসলো জীবন। স্টার-এসপিজি-জিএমকিউ-বিটিএ (নর্থ-সাউথের চারটা বিল্ডিং) ... ১০-১২ তলা বেয়ে ওঠা-নামাতেই জীবন-সংকোচন হয়ে গেল। আজকে প্রথমবারের মতো নর্থ-সাউথ নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করছে।

আজকে দুপুরের খাবার শেষে ফিরছি, ভার্সিটির বেশ দূর থেকেই অনেক অনেক কন্ঠের মিল-মিশ চিৎকার শুনতে পেলাম... ক্রোধ মেশানো উত্তেজিত মিছিলের মতো চিৎকার! আমি অসম্ভব অবাক!!! আমাদের ছেলে-মেয়েরা মিছিল-মিটিং বা প্রতিবাদের ব্যপারে খুব-ই ভীত, এসব তারা এড়িয়ে চলে সবসময়। এখানের পারিপার্শ্বিকতাটা ইনডিভিজ্যুয়ালিস্টিক হবার কারনে জোটবদ্ধতা নেই তেমন। যে যে যার যার মতো থাকে, কেউ কারো কোনকিছুতে নাক গলায় না তেমন। একটু এগিয়ে দেখলাম একটা বিল্ডিং এর নিচে বিশাল বৃত্তাকার জটলা। 'শয়ে 'শয়ে ছেলেরা সব উন্মত্ত হয়ে চিৎকার করছে... "মানি না। মানবো না। "

এবার ঘটনাটা বিস্তারিতে টেনে নিয়ে যাই... আমাদের প্রতি কোর্স ফী ১২,০০০ থেকে ১৬,৫০০ করে দেয়া হয়েছে। তাতে চারটা কোর্স নিলেও প্রতি সেমেস্টারে সবমিলিয়ে আসবে ৭১,৫০০ টাকা। আর যারা ল্যাবসহ চারটা নেবে তাদের প্রায় ৭৩,০০০ টাকা। একটা সেমেস্টারে (বছরে তিনটা সেমেস্টার) প্রায় এক লাখ টাকা !!! নোটিসটা স্টার টাওয়ারে দেখে ছেলেদের প্রথমে বিশ্বাস হয়না! আমরা সাধারনত প্রতি সেমেস্টারে চারটা কোর্স আর আনুষাঙ্গিক সব খরচ মিলিয়ে দেই ৫৩,৫০০ টাকা; তারপর-ও আমাদের ল্যাবে পর্যাপ্ত কম্পিউটার নেই, কম্ম্পিউটার থাকলেও মাউস-কীবোর্ড অবশ্যই নষ্ট, প্রিন্টারে পর্যাপ্ত কালি-কাগজ নেই, মাল্টিমিডিয়া নষ্ট, লিফ্ট কোনোমতে চলে, কোর্স এ্যাডভাইজিং সিস্টেম জঘন্য, কোর্স নেই, লেকচারার নেই... এমন কতকিছু!!! তারপর-ও আমরা "নর্থ-সাউথ"-এর মহা মূল্যবান সীল-কবজ পাবার জন্য চুপচাপ সব সহ্য করে নেই। এতোকিছুর পর-ও নির্লজ্জ্ব ডীন- বোর্ড মেম্বারদের লোভ দেখে ঘেন্না আর রাগে আজকে আমাদের বেশ সুশীল-পুতুপুতু ট্যাগ পাওয়া ছেলে বা মেয়েগুলো গর্জে উঠেছিল। আর হ্যা! সেটা একটা দেখার মতো ব্যপার ছিল অবশ্যই!

আমরা দু'টা বিল্ডিং-এর এন্ট্রান্স-এক্সিট বন্ধ করে দিয়েছিলাম, ক্লাসগুলো ক্যানসেল হয়ে গিয়েছিল। বিরল প্রতিবাদী ঝড় গিয়েছে কয়েকটা ঘন্টা। এক এ্যামেরিকান অবাক হয়ে বলেছিল, "you people are truly crazy, man! you are shouting and loosing energy for only some 100 dollars! your country is poor... truly poor!" আমি বল্লাম, "you first world people are snatching our money, so we are poor n' you are rich. try to convert the currency value... our parents are service-holders of a third world country. Our govt used to pay them TAKA, not DOLLAR. how come they will afford that big amount ?!" এ্যামেরিকান আমাকে "wild n' uncultured hobo" বলে চলে গেল। আমি আবারো মিছিলে যোগ দিলাম। পাশের ভাইয়া বললো, "হারামজাদার গাড়ি ভেঙে ফ্রন্ট কাঁচটা চোখে ঢুকায় দিতে পারতাম! শালার আ... ডলার শিখাতে আসে। আমার মতো বাপ মরে যেতো, নিজের টিউশন ফী দিতে হতো... then that F****** A****** could realize the difference! heh!" হঠাৎ আমাদের একটা বিল্ডিং থেকে ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি হওয়া একজন স্যার মাইক নিয়ে সবাইকে থামতে বললেন...



স্যার বললেন, "শান্ত হও, কিছুক্ষণের মধ্যই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।" এর প্রায় এক ঘন্টা পর জানানো হলো তাদের সিদ্ধান্ত । নোটিসটা ছিল এমন :



এটা দেখে ভাইয়ারা আন্দাজ করলো এবার অথোরিটি বাড়ালে সেটা ফ্রেশার বা নতুনদের জন্য হবে। সেটাও কারো ভাল লাগছিলো না। তবে ব্যপারটা চূড়ান্ত না হওয়ায় আপাতত আন্দোলনের জয়টাই মূখ্য হয়ে উঠলো!



আমার নর্থ-সাউথ জীবনের অসম্ভব প্রিয় কিছু মুখের একটা মুখ... আমাদের জয়ে ওর আনন্দ ছিল সবচে' বেশি! নোটিস গায়ে লাগিয়ে লাফিয়ে বেড়িয়েছে আমাদের আগে আগে প্রজাপতির মতো!!!

এখানে ওর কথা বলেছিলাম...

দাবী মেনে নেয়ার পর হলো আরেক মজা! আমাদের ছেলে-মেয়েদের জোশ তখনো অটুট! তারা জয়ের আনন্দে আনন্দ মিছিল করা শুরু করলো! একটু পর আমাদের এক মিস্‌ নেমে এসে এক ছেলেকে বললেন, "বাবা! যা একটা মাইক আর একটা রিকশা নিয়ে আয়।" রিকশা আর মাইক আসলে আমাদের মিস্‌ (যাকে আমরা বাংলা খুব কম-ই বলতে শুনেছি) শুরু করলেন কথা... "তোমরা আজকে দেখিয়ে দিলা যে তোমাদের রক্ত-ও গরম, আগুন আছে। আজকে তোমাদের ব্যপারে ধারনা পাল্টে গেছে। আমরা এখন সেলেব্রেট করবো। পালা গাইবো আমি একটা..। তোরা সব আমাকে গোল করে দাড়া।"

আমাদের বিস্ময়ের বাকি ছিল না!!! মিস্‌ বেশ সুর করে বলতে লাগলেন... আর আমরা তাকে ঘিরে রাখলাম কঠিন বলয়ের মধ্য...

"শুনেন শুনেন ভাইসকল
শুনেন আমার বোন...
শুনেন আপনারা এবার
শুনেন দিয়া মন...
উত্তর-দক্ষিণ কথা আজকে করিব বর্ণন...
সবাই মিলে করলাম আমরা কতো মাতামাতি
সবকিছুর পর মনে রেখো আমরা সেই বাঙালি জাতি
সেই বাঙালি জাতি..হ্যা হ্যা সেই বাঙালি জাতি !!!"

হঠাৎ করে প্রায় তিন বছর পর এই জায়গাটাকে, সন্ধ্যাটাকে বা আশে-পাশের নিখাঁদ আনন্দে ঝলমল মানুষগুলোকে খুব আপন মনে হলো! আসলে আমরা সবাই মুখোশ পরে ছিলাম এতোদিন... চরম সময়ে সব্বাই সবার পাশে দাড়িয়েছি...স্তর-ধর্মভেদে মিশে-মিলে গিয়ে গলায় গলা মিলিয়ে বলেছি...

"সবকিছুর পর মনে রেখো আমরা সেই বাঙালি জাতি!!!"



সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:০৪
৭১টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×