somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

THE P A U S E .

১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্লাস ফোরে আমাদের র‌্যাপিড রিডার ক্লাস হতো। সেখানে এক ধবধবে সাদা ব্রিটিশ তরুনি আমাদের এক একটা গল্প শোনাতো। ওর হাতে কখনো বই দেখি নি। লিটারেচারের স্টুডেন্ট হিসেবে সব গল্পগুলো ওর একেবারে গড়গড়ে মুখস্থ ছিল। বেশ কঠিন বাঁকাচোড়া উপন্যাসগুলো একদম রূপকথার মতো বলে যেত ও। সাদা শার্ট-গাঢ় নীল স্কার্টের সোনালী চুলের খুব শীর্ণকায় সেই মেয়েটাকে আমি ভুলতে পারি নি এখনো। আমাদের ছোট ছোট মনে রূপকথার আদলে সে ভরে দিয়েছিল সেক্সপিয়র-কিটস্‌ বা প্যাপিলনের মতো গল্পগুলো। আমরা তার ভিন্ন অবয়বের জন্য নাকি অদ্ভুতভাবে গল্প বলার জন্যই তার মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা বনে গিয়েছিলাম।

পাঠকেরা যদি পোস্ট শিরোনামের সাথে কথার কোন মিল না খুঁজে পান তাহলে দুঃখিত। টপিকের বাইরে কথা বলতে বলতে ওটা আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বিরক্ত পাঠকদের এখন-ই পড়া থামিয়ে দেয়া উচিৎ নাহলে বিরক্তি বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

আমাদের সেই "ম্যাম" আমাদের বছর শেষের এক ক্লাসে এসে এক ঝুড়ি চিরকুট রেখে একজন একজন-কে ডেকে তার স্টোরি রাইটিং টপিক নিতে বললেন। আমার টুকরো কাগজটা খুলে দেখি ওতে আস্ত আস্ত হরফে দাবিয়ে লেখা, "THE P A U S E ." অনেকে ম্যামের কাছে গিয়ে টপিক বদলে নিলেও আমার লজ্জা লাগলো দেখে গেলাম না। বরং বসে বসে একটা আধা-খেঁচড়া গল্প লিখে ফেললাম যেটা তখন আমার মাত্রাতিরিক্ত সায়েন্স ফিকশন গেলার ফল।

গল্পের শুরু এক বাঙালি জিনিয়াস সায়েন্টিস্ট বুড়োকে নিয়ে। বুড়োর বয়স প্রায় ৫০-৬০। সে একা একা ল্যাব-এ কাজ করে, তার সাথে থাকে তার এ্যসিস্ট্যান্ট এক রোবট। বুড়ো হওয়ার সাথে সাথে তার শারীরিক বা মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। সে সবকিছুর চাপে অতিষ্ট হয়ে সবকিছু থেকে একটা pause পাওয়ার এক অষুধ আবিষ্কার করে ফেলে। ওটা ইনজেক্ট করে টাইম সেট করে দিলে ততোদিন সে ঘুমিয়ে থাকবে। ঘুমটা তাকে বাইরের পৃথিবীর ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিবে। বোকা বুড়োটা ওটার এ্যান্টিডোট -ও বানালো যেটা রোবটটা ইনজেক্ট করে দিলে সে জেগে উঠতে পারবে। কিন্তু ঐ এ্যান্টিডোটটায় একটা ভুল এলিমেন্ট চলে যাওয়ায় ওটা পয়জনে বদলে গেলো। এভাবে বুড়ো মরে গেল শেষে আর একটা perfect pause তাকে খুঁজে নিল।

ম্যাম সেই গল্প আর ক্লাসের আরেক ছেলের গল্প নিয়ে মহা হৈচৈ ফেলে দিলেন। ওটা আমাদের ইয়ারলি স্কুল ম্যাগ-এও চলে গেল। গল্পটা দুমড়ে-মুচড়ে আমার ভেতরে রয়ে গেল আর সেই শ্বেত-তরুনীও সময়ের ভাঁজে কোথাও হারিয়ে গেলেন।


আজকে প্রায় ১০ বছর পর আমার নিজের সেই বোকা বুড়োটার মতো একটা pause solution খুঁজে বের করতে ইচ্ছা করছে। আশেপাশের প্রতিটা মানুষ বা পারিপার্শ্বিকতা থেকে একটা বিরতি নিতে ইচ্ছা করছে। আমি ঐ সময়েই কিভাবে যেন জীবন থেকে এই রেহাই পাওয়াটা আঁচ করেছিলাম। সময় কি তখনো আমাকে যন্ত্রণা দিতো? তখনের সময় বা দিনযাপন ছিল সহজ-উচ্ছল। তাহলে ঐ বোধ কেন আসলো ভেতরে ?! এসব জানি না আমি নিজেও। তবে আমি বুঝি যে আমি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছি। মাঝে মাঝে বেঁচে থাকা থেকে রেহাই পেতে ইচ্ছা করে ঐ perfect pause-এর মতো। প্রতিটা বিষয় থেকেই মন উঠে গেছে। কোন একটা টাইমপাসিং অবজেক্টের ভেতরে কিছু খুঁজে পাই না। তারপর-ও আশাহত হওয়া বিষয়টা মানুষের ভেতরে নেই বোধহয়। জেনেটিক্যাল ঐ ডিসওর্ডার নিয়ে আমি তাও একটু আলোর খোঁজে এক নিরেট ব্ল্যাকহোলের মধ্য চোখ রাখি আর প্রতিবার-ই থরথরাই।


এক জার্মান ধর্মপ্রচারক নান-কে চিনতাম। তাকে আমার খুব পবিত্র লাগতো দেখলেই! সে একদিন তার এক অলস অনুসারিকে বুঝানোর সময় বলছিলেন, "sleep is the sister of death. don't you know my child ?" আমি আজকে মৃত্যুর সেই বোনকে খুব ভালবেসে আলিঙ্গন করতে চাই, একটা pause এর খোঁজে...

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৪
৪৮টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×