মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়।
রাজাকারদের আগমন দেখে গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু নারী পালিয়ে যান।
কিন্তু মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী লক্ষী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর ও রাজাকাররা তাকে ধর্ষণ করেন,
বিকেলে ঘরে এলে স্ত্রী মধুসূদনকে বলে-
"তোমাকে যে সাঈদী মুসলমান করেছিল সে এসেছিল। আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এর বেশি আমি বলতে পারছি না।
আমার চিন্তা করো না, তুমি পালাও . . . "
মধুসূদন গরীব হলেও নিজের স্ত্রী শেফালীকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন, স্বাধীনতার পর শেফালী ঘরামীর একটা কন্যা সন্তান হয়
মেয়েটার নাম দেয়া হয় "সন্ধ্যা"
মধুসূদন সব মেনে নেন, নিজের সন্তানের মত ভালবাসা দিয়ে যান "সন্ধ্যা" কে,
কিন্তু এই সমাজ তাকে আর তার পরিবারকে মেনে নেয়না। ক্রমাগত লাঞ্চনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাদের।
সমাজ লক্ষীকে দেয় বেশ্যা উপাধি,
বের করে দিতে চায় গ্রাম থেকে
বাধ্য হয়ে লক্ষী তার ভাইয়ের সাথে নবজাতক সন্ধ্যাকে নিয়ে ভারত চলে যান নিভৃতে।
অনেক চেষ্টা করেও মধুসূদনের সাথে তার পরিবারের আর কখনো দেখা হয়নি।
বাকি জীবনটা আজো একাই রয়েছেন মধুসূদন . .
একাত্তরে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, অন্তত নয় জনকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ,
লুটপাট, ভাঙচুর এবং একশ থেকে দেড়শ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করে সাঈদী
যাকে একাত্তরে তার এলাকার লোকজন ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে চিনতো।
একাত্তরে নিজে ধর্মান্তরিত হয়েও স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেননি অশীতিপর মধুসূদন ঘরামী,।
সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী ভারতে চলে যাওয়ার পর একা দেশে রয়ে গেছেন আশি পেরুনো এই বৃদ্ধ।
এখনও তিনি প্রচণ্ড ভালবাসেন তার স্ত্রীকে,
আজ তার প্রতি একটু সম্মান জানাই, হাত ধরে ক্ষমা চাই, আমাদের ক্ষমা করুণ
আমি জানি,
আমি পারব না আপনার জীবনের ৪২ টি বছর ফিরিয়ে দিতে
আমি পারব না আপনার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনে দিতে
আমি পারব না আপনার সন্তান কে খুঁজে আনতে
আপনার ওপর যে নির্মমতা চালানো হয়েছে আমি তাও অনুধাবন পর্যন্ত করতে পারব না,
তবু অশীতিপর মধুসূদন ঘরামী, শেফালী ঘরামী লক্ষী কিংবা সন্ধ্যা ঘরামী জেনে রেখ তোমাদের ওপর পাশবিকতা চালিয়েছিল যে
"দেলোয়ার হোসেন সাঈদী", আমরা এই বাংলায় তার মৃত্যুর পয়গাম এনে দিলাম, জেনে রেখ এই বাংলায় . . .
শেষ করব হুমায়ুন আজাদ স্যারের কবিতা দিয়ে
অভিশাপ দিচ্ছি -
আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ
দিয়েছিলো সেঁটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুতেছিলো আমাদেরই আপনজনের লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত,
যারা গনহত্যা
করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক
পশু সেই সব পশুদের।
ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের
সারিবদ্ধ দাঁড়
করিয়ে নিমিষে ঝা ঝা বুলেটের বৃষ্টি
ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না।
হত্যাকে উতসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে
ক্যাম্পাসে বাজারে
বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভতস গন্ধ দিয়েছে
ছড়িয়ে,
আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না
কামনা।
আমাকে করেছে বাধ্য যারা
আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত
সিড়ি ভেন্গে যেতে আসতে
নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে
অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেইখানে দজ্জালদের। —