ফয়সাল আরেফিন দীপন নামে একজন প্রকাশক খুন হলেন। তিনি কোনমনা সে প্রশ্ন করার আগে আমাদের ভাবতে হবে তিনি খুন হয়ে গেলেন এবং সেটি বিচার বর্হিঃভুত হত্যা। একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কিন্তু দীপনের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি এবং বাংলাদেশের খাতায় সম্ভবত অজ্ঞাত আততয়ীর হাতে খুনের তালিকায় নতুন করে নাম লেখালেন দীপন। যার খুনের রহস্য কিংবা বিচার কখনো হয়ত জানতে পারবে না এ দেশের মানুষ। সময়ের সাথে সাথে দীপনের হত্যা মানুষ ভুলে যাবে এবং অন্য কোন দীপনের ঘটনা হয়ত নতুন আলোচনায় স্থান পাবে। আমরা সাধারন আম জনতা দুদিন চিল্লাপাল্লার পর থেমে যাব কিন্তু একের পর এক অঘটন কি থামবে কখন? এর উত্তর হয়ত এখনই বলে দেয়া যায়, না, থামবে না কারন ইতিপূর্বে কোন ঘটনার সুরহা হয়নি, ভবিষ্যতে হবে সে আশাও ক্ষীন। সম্ভবত সেটা আচ করে দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান না। এবং এ ও বলেছেন কেবল আইনের বিচারে একের পর এক হামলা বা হত্যার সমাধান হবে না। এ সংকট থেকে বাঁচতে আদর্শগত, রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।
তার এই চিন্তা নতুন করে ভাবনার অনেক রসদ হয়ত যোগাবে চিন্তাশীলদের কারন ছেলের লাশ কাধে কোন বাবা এতটা গভীর এবং তাৎপর্যপূর্ন চিন্তা করতে পারেন তা সম্ভবত তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন। ছেলে হত্যার বিচার চান না এমন পিতা এর আগে আমরা দেখিনি ভবিষ্যতে দেখবো কিনা তাও জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি বিচারহীনতার যে সংস্কৃতিতে দেশ চলছে তাতে অদুর ভবিষ্যতে হয়ত বিচার না চাওয়া পিতার সংখ্যা বেড়ে যাবে।
দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের কিছু কথা কোর্ট করা প্রয়োজন যেমন " এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন আর যারা ধর্ম নিরপক্ষতার কথা বলছেন তাদের দুই পক্ষকেই সংশোধন হতে হবে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হলেই সমস্যার সমাধান হবে।"
বাংলাদেশ এখন স্পষ্টত দুভাগে বিভক্ত সেটা সত্য আর এই দুপক্ষের বিভক্তি এতটা দাকুমড়া সম্পর্কে এসে পৌছেছে যে সেখান থেকে উত্তরন ঘটানো অসম্ভব। কারন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বর্তমান সরকার এই বিভেদ রেখা এতটা স্পষ্টভাবে টেনে দিয়েছে সেটা আর কখনো মুছবে কিনা সন্দেহ।স্বাধীনতা নিয়ে ৭১ এ ঘটনায় যারা বিরোধীতা করেছে তারা স্পষ্টত অপরাধী কিন্তু তার রাজনৈতিক ফায়দা উঠাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা মানে স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে গোটা দেশে যে হিংসার বারুদ জ্বেলে দিয়েছে সেই আগুন ধর্ম নিরপেক্ষতার বাতাশে গোটা দেশটাকে অস্থির করে তুলেছে এবং ভবিষ্যতে হয়ত আরো তুলতে পারে। মিঃ হক সম্ভবত সে দিকটাকে বেশি প্রধান্য দিয়েছেন। বলতে গেলে এটার একটি রাজনৈতিক সমাধান জরুরী কারন রাজনৈতিক বিভেদের জের ধরে গোটা দেশে ঢুকে পড়ছে অস্থিরতা। এর সমাধান ও খুজতে হবে রাজনীতিতে সেটা এখন স্পষ্ট।
দিপনের বাবা যে মহৎ চিন্তায় গোটাদেশের দিপনদের নির্বঘ্নে বেচে থাকার চিন্তা করে বিচার চান নি তার ঠিক উল্টো চিন্তা করে মিডিয়াতে সবসময় স্বরব থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ব্লগারদেরকে যারা হত্যা করছেন নিহত দীপনের বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক হয়তো তাদেরই অনুসারী। এ কারণেই তিনি পুত্র হত্যার বিচার চাননি। মিঃ হানিফের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে এর আগেও ব্লগার হত্যা হয়েছে। রাজিবকে আপনার নেত্রী দ্বিতীয় মুক্তি যুদ্ধের প্রথম শহীদ উপাধি ও দিয়েছেন, প্রকাশ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে অভিজিৎ খুন হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরে প্রায় চারজন ব্লগার খুন হয়েছেন তাদের হত্যার কোন কুল কিনারা কি বের করতে পেরেছে শৃঙ্খলা বাহিনী? এখন পর্যন্ত সে সব মামলার অগ্রগতি কি? পাঠক এতসব ঘটনা দেখছে জানছে বুঝছে। দিপনের বাবা তো সবটা দেখছে জানছে এপর ও তিনি বিচার চাইবেন বা আসা করবেন কি ভাবে? তার এই বিচার না চাওয়াটা যে বিচার বা আইনের প্রতি চরম হতাশা সেটা কি মিঃ হানিফ বুঝেন না?
আমরা চাই প্রত্যেকটা হত্যার সুষ্ঠ বিচার হোক। প্রত্যেকটা মানুষের বেচে থাকার অধিকার আছে।এ অধিকার তাকে স্রষ্টা দিয়েছেন। মানুষ কেন কেড়ে নেবে? যারা মুক্তমনার মানে ধর্ম নিয়ে বিদ্বেশ ছড়াচ্ছে এবং যারা ধর্ম রক্ষার নামে হত্যার মত জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে তাদের সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ দেখতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১১