এই মুহূর্তে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন কোন শিল্প নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ওষুধ শিল্পের কথা উল্লেখ করতে হবে। অসংখ্য উদ্যমী মানুষের মেধা, মনন আর পরিশ্রমের সমন্বয়ে তিলতিল করে গড়ে ওঠা এই সেক্টর বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম প্রতিষ্ঠিত হাই-টেক সেক্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। ২০০০ সালে ওষুধ প্রশাসনে নিবন্ধনকৃত কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২১০টি, যাদের মধ্যে ১৭৩টি ওষুধের উৎপাদনে নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে ৩০০টিরও বেশি কোম্পানি সক্রিয়ভাবে ওষুধের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোতে বর্তমানে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইঞ্জেকশন, সিরাপ, সাসপেনশন, ইনহেলার ইত্যাদি ডোজেজ ফর্মে ৫৬০০টিরও বেশি ওষুধের ব্র্যান্ড উৎপাদিত হয়; যা দিয়ে দেশের বর্তমান ওষুধের চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগই পূরণ কর সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৩% ওষুধ যার মধ্যে হরমোন, ইনসুলিন, ভ্যাকসিন, অ্যান্টি-ক্যান্সার ড্রাগ ইত্যাদি রয়েছে সেগুলো আমরা এখনো আমদানি করছি। অনেকে স্বল্পমাত্রায় উৎপাদন ও বিপণনে অংশ নিচ্ছে। এই ধারা চললে ওষুধ উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের খুব বেশিদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে না। ওষুধ শিল্পের সাফল্যের উপাখ্যান একদিনে রচিত হয়নি। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন আসে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘জাতীয় ওষুধ নীতি-১৯৮২’ প্রণয়নের পর। আজকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প যে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে তার ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল ১৯৮২ সালেই। এই একটি নীতিই পুরো বদলে দিয়েছে আমাদের ওষুধ শিল্পকে। World Bank-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে খরচের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশি ওষুধের সুনাম যে কেবল দেশেই রয়েছে তা-ই নয়, বিদেশেও বাংলাদেশি ওষুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান রপ্তানি আমাদেরকে সেই চিত্রই দেখাচ্ছে। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৬.১%। এসবই আমাদের অগ্রযাত্রা নির্দেশ করে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের জন্য আরও একটি সুসংবাদ নিয়ে এসেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাম্প্রতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনেই ঘোষণা এসেছে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো পেটেন্ট ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ছাড় পাবে। ২০০১ সালের দোহা ঘোষণা অনুযায়ী এই ছাড় ২০১৬ সালেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর কে না জানে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশেরই সবচেয়ে বেশি। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া বেশ কিছু কোম্পানি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রেগুলেটরি কমিটির স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের আশা নিকট ভবিষ্যতে আরও অনেক কোম্পানিই তাঁদের গুণগত মানকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। আর এভাবেই আমাদের জাতীয় জীবনের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হবে আরও একটি রঙিন পালক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭