somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবেশ নিষেধ

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- অই মিয়া, আপনে লাইনের বাইরে থিকা ঢুকলেন ক্যান? পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল।

আধঘন্টা ধরে শুভ্র লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যেই এদিক সেদিক থেকে লাইনে লোক ঢুকে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো প্রতিবাদ করছে, কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। লাইন ভাঙ্গার আনন্দে ঢুকে যাওয়া মুখগুলোতে তৃপ্তিসূচক হাসি দেখা যাচ্ছে।

শুভ্রদের লাইনের পাশে আরেকটি লাইন, সেটি অবশ্য রোগীদের। বাংলাদেশে যে এতো মানুষ অসুস্থ, সেটা শুভ্র ভারতীয় দূতাবাসের কাছে না এলে টের পেত না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে সম্ভবত আজকাল গাঁজা-চরস চাষ হচ্ছে, নাহলে এতো মানুষ বিদেশ যায় কেন? ওর ইচ্ছে হল দুয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে, ভাই এদেশের হাসপাতালে কোন চিকিৎসাটা হচ্ছে না যেটার জন্য ভারতে যেতে হবে? ভদ্রতার কারনে জিজ্ঞেস করা হল না। শুভ্র অফিসের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে আছে, বেতন কম হলেও চাকরি জিনিসটার সাথে ভদ্রতার একটা যোগসূত্র আছে।

-আমাদের ডাকতে আরও দেরি হবে নাকি? কাছে দাঁড়ানো আনসার সদস্যকে জিজ্ঞেস করল শুভ্র। আনসার বাহিনী মূলত ক্ষমতাহীন হলেও বিভিন্ন জায়গায় গরু পাহারা দেয়া, লাইন ঠিক রাখা- এসব কাজে আনসারদের ব্যাপক দক্ষতা দেখা যায়। বিদেশী দূতাবাসের সামনে দাঁড়ানোর কারনে আলোচ্য আনসারটির আচরণে এক ধরনের আভিজাত্য দেখা যাচ্ছে। সে এমন একটা ভাব করল, যেন কিছুই শুনতে পায়নি। শুভ্র গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,'কি রে ভাই, কানে সমস্যা নাকি? আরও দেরি হলে বলেন, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব?'

এবার উত্তর পাওয়া গেল, 'আরও দেরি হইব, ভিতরে স্যারেরা লানছ করতাছে।'

ভেতরে 'লানছ' চলছে, আর বাইরে দাঁড়িয়ে জনগণ লাঞ্ছিত হচ্ছে। শুভ্র লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। কিছু খাওয়া দরকার।

গুলশান মেইন রোডে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা রেস্টুরেন্ট পাওয়া গেল। ভেতরে ঢুকে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর শুভ্র আবিষ্কার করল, দূতাবাসের মতো এখানেও সে অবহেলিত। কেউ তার টেবিলে এগিয়ে আসছে না। ঘটনা কি?

আশেপাশে তাকিয়ে বোঝা গেল, এখানে 'সেলফ-সার্ভিস', খাবার নিজেকেই গিয়ে অর্ডার করতে হবে, নিয়ে আসতে হবে। শুভ্র কাউন্টারে এগিয়ে গেল। কাউন্টারে রাখা মেন্যুর দিকে তাকিয়ে শুভ্র মনে মনে হিসেব করল, পানি কিংবা কোল্ড ড্রিঙ্ক ছাড়া সবই তার আয়ত্তের বাইরে। সুন্দরী ওয়েটার হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল,'মে আই হেল্প ইউ স্যার?'

শুভ্র বলতে চাইল, 'অবশ্যই হেল্প করতে পারেন। ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো সওয়াবের কাজ, আমাকে খাইয়ে দো'জাহানের অশেষ নেকী হাসিল করতে পারেন।' এখানেও ভদ্রতাজনিত কারনে কিছু বলা গেল না। মনে মনে 'ভদ্রতা' নামক বস্তুটিকে গালাগাল দিতে দিতে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে এলো সে।

হাঁটতে হাঁটতে আরেকটু সামনে একটা চায়ের দোকান পাওয়া গেল। সেখান থেকে কলা-রুটি কিনে খেতে লাগলো শুভ্র। দোকানের পাশে কয়েকটা বেঞ্চ পাতানো। দূরের বেঞ্চে একটা মোটাসোটা ছেলে বসে আছে, তার সামনে একটি ক্ষীণকায় মেয়ে দাঁড়িয়ে তাকে কি যেন বলছে। ছেলেটা চুপচাপ শুনছে। ছেলেটির নিরুত্তর দশা দেখে মেয়েটি রেগে যাচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। বিকেলের রোদ গাছের ফাঁক দিয়ে ওদের গায়ে ঢলে ঢলে পড়ছে। শহরের ব্যস্ত জীবন ওদের স্পর্শ করছে না। ওদের ভুবনটা যেন পৃথিবীর মধ্যেও আরেকটি পৃথিবী। শুভ্র সেই পৃথিবী দূর থেকে দেখতে পারে, কিন্তু সেখানে ওর প্রবেশাধিকার নেই।

যেমনটি নেই দূতাবাসের বাইরে অভুক্ত দাঁড়ানো মানুষের।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×