আশরাফুল মানে ১৬কোটি
বাঙ্গালিরআশারফুল,
আশরাফুল মানে সবচেয়ে কমবয়েসী টেস্ট
সেঞ্চুরিয়ান, ফর্মের তুঙ্গে থাকা বিশ্বসেরা
বোলার মুরালিধারান এর জাদুকরি ঘূর্ণিবল
অবলীলায় মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া
অকুতোভয় ব্যাটসম্যান। আশরাফুল মানে
প্রথমবারের মত ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত
দৈত্য বধের বুনো উল্লাস । যে আশরাফুলে ভর
করে ক্রিকেট পাগল বাঙ্গালী জয়ের স্বাদ
পেতে শুরু করেছিল, এখন সেই আশরাফুল মানে
ম্যাচ ফিক্সিং, ক্রিকেটের কলঙ্ক ও দীর্ঘ
নির্বাসন ।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আশরাফুল যা
দিয়েছেন তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ
নেই । সত্যি বলতে এদেশের ক্রিকেটে নতুন
যুগের শুরুটা হয়েছিল অসম্ভব প্রতিভাবান ওই
খেলোয়ারটির হাত ধরে। দুচারটা সস্তা
প্রশংসাপূর্ণ লাইন বা গুরুগম্ভীর বিশেষনে
আশরাফুলকে বোঝানো যাবেনা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অপর নামইতো
আশরাফুল!
বাংলাদেশপ্রিমিয়ার লীগ ( বিপিএল) এ
ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে খেলতে গিয়ে
ম্যাচ ফিক্সিং কেলেংকারিতে ফেঁসে
গেলেন আমাদের আশারফুল । খেলা পাতানো
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটা অপরাধ,
এই অপরাধকারী শুধু খেলাটির গায়েই
কলংকের দাগ বসায় না বরং সে যে দেশের
নাগরিক সেই দেশ ও জাতিকে অপমান করে ।
আমাদের আশরাফুলও তাই করেছেন । এ পাপ
ক্ষমার অযোগ্য । তার সর্বোচ্চ শাস্তি (৮
বছরের নিষেধাজ্ঞা ও ১০ লাখ টাকা
জরিমানা) তে আমরা বাঙ্গালীরা খুশি !
জাতীয় বীর হলো জাতীয় পাপী । উপযুক্ত
শাস্তি হলো, জাতি ও কলঙ্কমুক্ত হলো !
বাংলাদেশ একটা অদ্ভুত দেশ। অপার
সম্ভাবনার এই দেশে অপরাধ, পাপ, কলঙ্ক ও
শাস্তির সংজ্ঞা একেকজনের কাছে
একেকরকম । একই নিয়ম, একই আইন অথচ
প্রয়োগের ক্ষেত্রভেদে নিয়ম উল্টে যায়,
আইন
ভেঙ্গে যায়, ব্যক্তি ইচ্ছায় ক্ষনিকের
প্রয়োজনে সৃষ্ট নতুন নিয়ম-আইন কাগজে
কলমে
কোনো পাপ বা অপরাধ করে কিনা তা জানার
আগেই ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গঁজানো
নতুন হাজারো ইস্যুর উত্থানে সন্দেহজনক
অপরাধটি হয়ে যায় অতীত ।
আর আমরা মানুষ এতে এমনই অভ্যস্ত হয়ে গেছি
যেন নিজের করা অপরাধটি অপরাধ না,
নিজের কৃতকর্মটি পাপ হলেও অন্যের তুলনায়
নিতান্তই ছোট পাপ !
আশরাফুল অপরাধ করেছেন, আমরা অবশ্যই এর
উপযুক্ত শাস্তি চাই । কিন্তু শাস্তিটা কি
উপযুক্ত হয়েছে? না, হয়নি । সবধরনের ক্রিকেট
থেকে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা ও দশ লাখ
টাকা জরিমানা আর যাই হোক, এ অপরাধের
উপযুক্ত শাস্তি হয়নি মোটেও ।
কেনো, বলছি-
১। পাতানো ম্যাচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ
ছিলনা, এটা ছিলো ঘরোয়া লিগের ম্যাচ ।
২। মামলা হওয়ার সাথে সাথে আশরাফুল সব
অপরাধ স্বীকার করেছেন ।
৩। গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে দেশ ও জাতির কাছে
ক্ষমা চেয়েছেন।
এই কারণগুলো তার শাস্তি আরেকটু কমিয়ে
আনার জন্য যথেষ্ট ছিলনা?
এদেশে কয়টা অপরাধী অপরাধ স্বীকার করে
দেশ ও মানুষের কাছে ক্ষমা চায়?
হ্যা, এদেশের ক্রিকেটে কোনো ফিক্সিং
থাকবেনা, আশরাফুল কে শাস্তি দিয়ে তার
দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হল । ভালো কথা, কিন্তু
সেই সাথে এদেশের ক্রিকেটে ফিক্সিংটাকে
উসকে দেয়া হলোনা কি? পাশাপাশি
বিতর্কিত হলো বিপিএল । সেটাকে আরো বড়
করতে গিয়ে বিতর্কিত হল আমাদের ক্রিকেটই।
না, দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ
পাচ্ছিনা। তবে বিসিবি’র কর্মকর্তাদের
অবস্থাও যদি আমার মত হয় তাহলে আমাদের
ক্রিকেটের ভবিষ্যত ঠিক কোথায় গিয়ে
দাঁড়াবে, তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারে!
আশরাফুলের জন্য দুঃখ হচ্ছে । সবটুকু আলো
কেড়ে নিয়ে যে অদম্য লড়াকু প্লেয়ারটির
উত্থান হয়েছিল, তার পতনটাও হলো খসে
যাওয়া তারকার মতো।
স্যরি আশরাফুল, আমরা কিছুই করতে পারছিনা
। চেয়ে চেয়ে দেখা আর একবুক দীর্ঘশ্বাস
ছেড়ে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই
আমাদের । তবে কৈশোর
ও যৌবনের প্রথম ভাগে তোমার ব্যাটের ঝড়কে
ভালবেসেছিলাম, স্মৃতিতে সবসময়ই তুমি
থাকবে আমাদের “আশার ফুল” হয়ে- প্রাপ্তি
এটুকুই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১১