ICU এর সামনে মেয়েটি বসে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা পড়তেছে । যথা সম্ভব মেয়েটির কাছের কোন লোক গুরতর অবস্থায় ICU এর ভিতরে আছে । পরনে তার স্কিন টাউজার এবং স্কিন টি-শার্ট যার জন্য খুব সহজেই বুঝা যায় তার শরীরের কাঠামো কেমন ? আমরা দুই বন্ধু হেটে যাচ্ছিলাম তার সামনে দিয়েই । মেয়েটির এমন অবস্থা দেখে আমার বন্ধুটি আমাকে জিজ্ঞেস করল মেয়েটি সম্বন্ধে আমারা মতামত কি ? খুব সহজেই বুঝলাম মেয়েটি মুসলীম ঘরের মেয়ে কারন সেই কুরআন পড়তে ছিল । আমার বন্ধুর প্রশ্ন হচ্ছে এমন পরিবেশে মেয়েটি কুরআন পড়ে আদৌ তার কোন লাভ হবে কিনা ? সত্য কথা বলতে শুধু মেয়েটিই নয় আমাদের দেশ , আমাদের সমাজই এমন । মেয়েটি বিপদে পড়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতেছে তার বানী পড়ার মাধ্যমে । কিন্তু আল্লাহ সাহায্য পাওয়ার জন্য যে কিছু শর্ত আছে তা মেয়েটি সহ আমাদের মধ্যে মুসলীম নামধারী বেশীর ভাগই বেমালুম । বেশীর ভাগ মুসলীমই জানে না, যে কোন আমল কবুলের শর্ত কি কি ? আপনারা আজ জেনে নিন আমল কবুলের শর্ত তিনটি (১) ঈমান, (২) একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে জন্য, (৩) রাসূলের সুন্নাহ অনুস্বরনের মাধ্যমে । এই তিন জিনিসের কোন একটা যদি আপনার আমলে না থাকে তাহলে আপনি যতই ভাল কাজ করেন তা পরকালে কোন কাজে আসবে না । এবার আসেন মেয়েটির দিকে , ধরে নিলাম মেয়েটির ঈমান আছে এমনকি সই আল্লাহর উদ্দেশ্যেই পড়তেছে কিন্তু সেই সুন্নাহ অনুস্বরন করেনি । কারন রাসূলের সুন্নাহ মতে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে এই ঘোষনা যে প্রত্যেক নারীর জন্য পর্দা করা ফরজ আর রাসূলের সুন্নাহ মতে কুরআন পড়া নফল । মেয়েটি ফরজ ত্যাগ করে নফল পালন করতেছে তাই সেই সওয়াবতো পাবেই না বরং গুনাহগার হবে । আজকে একটা বিষয় জেনে নিন , আমাদের রাসূলের আগে হেরেম শরীফকে তাওয়াফ করত উলঙ্গ হয়ে । রাসূল আগমনের পর তিনি যখন একই অবস্থা দেখলেন দেখলেন তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমরা উলঙ্গ হয়ে আল্লাহ ঘর তাওয়াফ করছ কেন ? তখন তারা উত্তর দিল এটা যেন তেন ঘর নয় এটা পরাক্রমশালী আল্লাহর প্রবিত্র ঘর তাই আমাদের জামা কাপড় প্রবিত্র কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে এই জন্যই সন্দেহকে দূর করতেই উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা । এমনকি ঐ সময়ে তারা আল্লাহ ঘরকে কেমন সম্মান করত তাকি জানেন ? যখন তাদের সময় কাবা ঘর সংস্কার করার জন্য সবাই একমত হল তখন সবাইকে বলল টাকা পয়সা দেওয়ার জন্য শর্ত একটাই বৈধ টাকা দিতে হবে । তখন সবাই তাদের বৈধ টাকা আল্লাহর ঘরের জন্য দান করল কিন্তু হিসেব করে দেখল, যে টাকা উঠেছে তাতে কাজ শেষ করা যাবে না । কিন্তু এরপরও তারা সুদ, ঘুষের টাকা কাবা নির্মানে ব্যয় করে নাই যার জন্য কাবার একটা অংশ তারা শেষ করতে পারে নাই যা আজও তেমনি পড়ে আছে । এই অংশটা হাতীমের কাছেই লহ্ম্য করলে দেখবেন । অাজ আমাদের সমাজে সুদ ঘুষের টাকাই বেশির ভাগ মসজিদে দান করতেছে এবং মারহাবা বলে নিচ্ছে। মক্কার মানুষগুলোর এত অগাধ বিশ্বাস নিয়ে যারা আল্লাহকে খুশি করার চেষ্টা করেছিল তারা কি পেরেছে খুশি করতে ? না তারা পারেনি এমনকি তারা মুষরেক অবস্থায় মরল । কারন তারা সুন্নাহ মানেনি । আজকেও যারা আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্যের জন্য বিভিন্ন পন্থা অনুস্বরন করতেছে, মিলাদ , মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন খতম , যে কোন পীরের মুরীদ হওয়া, মাযারে যাওয়া , ঊরশ করা ,শবে রবাত পালন, ঈদে মিলাদুন্নবী উৎযাপনের মত আরো অসংখ্য কাজ করতেছে যাকি না সুন্নাহতে নেই অথচ এই কাজগুলো সওয়াবের কাজ মনে করেই সমাজে করে থাকে তাই তাদের আমলও মরিচীকার মত হবে । আরো স্পষ্ট এই যে যারা কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠার নামে বা যে কোন কারনে দ্বীন কায়েমের আন্দোলনের নামে সংগ্রামে লিপ্ত আছে তারা ও বেশীর ভাগই সুন্নাহ না অনুস্বরন করার কারনে তাদের ত্যাগের ও কোন বিনিময় পরকালে পাবে না যদিও দুনিয়াতে কোটি লোক তাকে শহীদ বলে থাকে । মনে রাখবেন রাসূলের সুন্নাহর ভিতরে হরতাল নেই বরং এটা কুফফারদের সুন্নাহ যা শিবে আবু তালেবের ঘটনা থেকে বুজা যায় । রাসূলের সুন্নাতে গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র নেই । রাসূলের সুন্নাতে জিহাদকে বাদ দিয়ে কোন দাওয়াত নেই । আপনি যদি বিদয়াত, শিরক, কুফুরীকে সওয়াবের কাজ মনে করে বা দুনিয়ার স্বার্থ হাছীলের জন্য করে থাকলে পরকালে অবশ্যই হতাশ হবেন যখন বলা হবে আপনি জাহান্নামী । বড় বড় দাড়ি, রং বেরংয়ের টুপি, বিভিন্ন ধরনের জুব্বা কোন কাজে আসবে না । তাই আসুন কুরআন সুন্নাহকে জানার চেষ্টা করি এবং সেই অনুপাতে নিজে আনুগত্যশীল হতে চেষ্টা করি তাহলেই সম্ভব হিদায়াত পাওয়া । আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সত্য বুঝার তওফিক দান করেন । আমীন
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৯