somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলাহ অর্থ জানে না এরপরেও সে নাকি মুসলীম ?? হুমায়ুন কবির (সুমন)

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ইলাহঃ ইলাহ হলেন আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা। প্রত্যেক ঐ জিনিস যাকে তাঁর পরিবর্তে মা‘বূদ (উপাস্য) হিসাবে গ্রহণ করা হবে, তবে ওটা উক্ত গ্রহণকারীর নিকট -ইলাহ হয়ে যাবে।
বহুবচনঃ آلِهَةٌ আলিহাহ্। الْآلِهَةُ ‘আলিহাহ্’ হলোঃ اَلْأَصْنَامُ ‘আছনাম’ তথা মূর্তি, তারা এর দ্বারা এজন্যই নামকরণ করেছে যে, তাদের বিশ্বাস নিশ্চয় ইবাদত করা তাদের অধিকার।
اَلْإِلَاهَةُ وَاْلأُلُوْهِيَّةُ وَالْأُلُوْهَةُ হলোঃ اَلْعِبَادَةُ ইবাদাত করা…..।
اَللَّه -এর মূল হচ্ছে إِلاَهٌ -ইলাহ; فِعَالٌ -‘ফিয়াল’ -এর ওযনে। মাফঊল (কর্ম) -এর অর্থ দেবে। কেননা তিনি مَألُوْهٌ ‘মা‘লূহ’ অর্থাৎ مَعْبُوْدٌ -মা‘বূদ….।
এবং বারী সুবহানাহু -এর নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এটা أَلِهَ يَألَهُ থেকে নেয়া হয়েছে; যখন সে দিশেহারা হয়ে যায়। কেননা নিশ্চয়, জ্ঞান তাঁর বড়ত্ব সম্পর্কে হতবুদ্ধি হয়ে যায়। এবং أَلِهَ يَألَهُ أَلَهًا -অর্থাৎ تَحَيَّرَ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। এর মূল হলোঃ وَلِهَ يَوْلَهُ وَلَهًا -وَقَدْ أَلِهْتُ عَلٰى فُلاَنٍ অর্থাৎ اِشْتَدَّ جَزَعِىْ عَلَيْهِ তার উপর আমর উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে। যেমন, وَلِهْتُ বলা হয়েছে এটা أَلِهَ يَأْلَهُ إِلٰى كَذَا থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ لَجَأَ إِلَيْهِ তার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। কেননা তিনি সুবহানাহু আশ্রয়স্থল, যেখানে প্রত্যেক বিষয়ে আশ্রয় নেয়া হয়…….।

اَلتَأَلُّهُ হলোঃ اَلقَّنَسُّكُ -ধার্মিক হওয়া এবং اَلتَّعَبُّدُ -ইবাদত করা। আর اَلتَّأْلِيْهُ -হলোঃ اَلتَّعْبِيْدُ – দাসে পরিণত করা। (লিসানুল আরাব, ১৩/৪৬৭)
ইবনে রজব (রঃ) বলেছেনঃ ইলাহ হলো, তিনি যার অনুসরণ করা হয়। আর তার অবাধ্য হয় নাÑ তাঁর প্রতি ভক্তির কারণে, সম্মান প্রদর্শন করে, ভালবেসে, ভয় করে, আশা রেখে, তাওয়াক্কুল করে, তাঁর কাছে প্রার্থনা করার দরূণ এবং তাঁর নিকট দুয়া করার জন্যে। আর এর কোনটিই আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা ব্যতীত অন্যের জন্য শোভনীয় নয়। অতএব, যে ব্যক্তি এই সকল বিষয়ে যা প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে থেকে হয়ে থাকে- কোন মাখলূককে শরীক করল, তবে এটা তার لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -এর নিষ্ঠার সাথে স্বীকৃতি প্রদানে ছিদ্র করে দিল। এবং এর মধ্যে মাখলূকের দাসত্ব প্রবেশ করল, যে পরিমান ওটা থেকে ছিল। (কুররাতু উয়ূনিল মুওয়াহ্হিদীন, ২৫ পৃঃ)

এর থেকে জানা যাচ্ছে যে, নিশ্চয় মা‘বুদ হলোঃ- যদিও ইবাদতের কোন একটি অংশে হয়ে থাকে- স্বীয় ইবাদত কারীর দিক দিয়ে ইলাহ ও উপাস্য। যে ব্যক্তি আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা ব্যতীত অন্যের ইবাদতে প্রবেশ করবে; এমন বিষয়ে যে গুলোকে প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করা হয়, তবে অবশ্যই সে ব্যক্তি উক্ত অন্যের জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি প্রদান করল এবং তাকে আল্লাহর সাথে, কিংবা আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করল।

এমনি ভাবে তথা কথিত গুরুত্বহীন ইলাহ গুলো আমাদের কাছে নগ্ন হয়ে পড়বে যারা বন্দাদেরকে স্বীয় দ্বীন বিষয়ে পরীক্ষায় ফেলেছে এবং নিজেদেরকে ইলাহদের ন্যায় দেশ ও বান্দাদের উপর ফরয করে দিয়েছে যে, তাদের ইবাদত করা এবং আনুগত্য করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্বের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের জানা আবশ্যক, যাতে মাখলূকের কাউকে শরীক করা বৈধ নয়। এরপর আমরা দেখতে পাব কত ইলাহ রয়েছে যারা বর্তমান যুগে নিজেদের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য সমূহের দাবীদার। অতঃপর কি রূপে তারা লোকদেরকে বেড় লাগাচ্ছে যেন তারা তাদের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য গুলোকে স্বীকার করে নেয় এবং নিশ্চয় এটা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তাদের অধিকার রয়েছে!!

আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ

প্রথমতঃ প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্য হতে নিশ্চয় বিধান দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। অতএব, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই অধিকারে থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِينَ
হুকুমের মালিক আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নয়, তিনি সত্য ও বাস্তবানুগ কথা বর্ণনা করেন, তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আন‘আম, ৫৭ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ
আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না। (সূরা ইউসূফ, ৪০ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ أَلاَ لَهُ الْحُكْمُ وَهُوَ أَسْرَعُ الْحَاسِبِينَ
শুনে রাখ, ফয়সালা তারই, এবং তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।
(সূরা আন‘আম, ৬২ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহ্ফ, ২৬ নং আয়াত)
এছাড়া অনেক আয়াত রয়েছে যা উক্ত অর্থের উপর প্রমাণ করছে।
ফলে মাখলূকের মধ্য হতে যে কেউ-আর বর্তমান যুগে এদের সংখ্যা অনেক- উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের জন্য দাবী করবে- বিধান দেয়ার বৈশিষ্ট্য, যা আল্লাহ তায়ালার জন্য উৎসর্গীত, তবে সে নিজের জন্য প্রভুত্বের দাবী করল। আর যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নেবে, তবে সে তার জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি দিল এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাকে রব হিসাবে গ্রহণ করল।

দ্বিতীয়তঃ আইন রচনা করা, হালাল করা, হারাম করা, সুন্দর করা এবং নিকৃষ্ট করা -এর বৈশিষ্ট্য।
এগুলোকে প্রভুত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করা হয়; এক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একক ক্ষমতার অধিকারী। ফলে মাখলূকের মধ্য হতে যে কেউ -আর বর্তমান যুগে এদের সংখ্যা অনেক- উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের অধিকার বলে দাবী করবেÑ আইন রচনা করা, হালাল করা ও হারাম করার বৈশিষ্ট্য, তবে সে প্রভুত্বের দাবী করল এবং নিজের পক্ষ হতে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করল। আর যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য স্বীকার করে নেবে, কিংবা উক্ত বৈশিষ্ট্যে সে তার অনুসরণ করবে, তবে নিশ্চয় সে তার জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি দিল! উক্ত কর্মে তার জন্য সন্তুষ্ট হলো এবং আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তাকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করে নিল।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُواْ إِلاَّ لِيَعْبُدُواْ إِلَهًا وَاحِدًا لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম ও ধর্ম -যাজকদেরকে রব (প্রভূ) বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক ইলাহের ইবাদত করবে যিনি ব্যতীত ইলাহ হওয়ার যোগ্য কেউই নেই, তিনি তাদের অংশীস্থির করা হতে পবিত্র। (সূরা তাওবাহ, ৩১ নং আয়াত)

ইতিপূর্বে আয়াতের তাফসীর বর্ণনা করা হয়েছে এবং রুবুবিয়াহ্ ও উলূহিয়াহ্ এর উদ্দেশ্য যাকে আলেম ও ধর্ম-যাজকগণ নিজেদের অধিকার বলে দাবী করত, এ প্রসঙ্গে আলেমগণের মন্তব্য ও তাফসীর উল্লেখ করেছি। এমনি ভাবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে কোন প্রমাণ না থাকলেও তাদের থেকে হালাল করণ ও হারাম করণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে এবং শুধুমাত্র তাদের জন্য উক্ত অধিকারের স্বীকৃতি দেয়ার কারণে এবং উক্ত বিষয়ে তাদেরকে অনুসরণ করার কারণে তাদের উদ্দেশ্যে অনুসরণ করার মাধ্যমে ইবাদত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ
তাদের কি এমন কতকগুলো দেবতা আছে যারা তাদের জন্যে বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা, ২১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلاَلاً قُلْ آللّهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللّهِ تَفْتَرُونَ
তুমি বল- আচ্ছা বলতো, আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা কিছু রিয্ক পাঠিয়েছেন, অতঃপর তোমরা ওর কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল সাব্যস্ত করে নিলে; তুমি জিজ্ঞেস কর- আল্লাহ কি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছো? (সূরা ইউনুস, ৫৯ নং আয়াত)
এবং আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلاَلٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُواْ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ لاَ يُفْلِحُونَ
তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তারা সফলকাম হবে না। (সূরা নাহ্ল, ১১৬ নং আয়াত)
বর্ণিত আছে, বানু তামীম গোত্রের একজন বেদুঈন নাবী (সাঃ) কে বললঃ নিশ্চয় আমার প্রশংসা সুন্দর এবং আমার নিন্দা দোষণীয়! তিনি তাকে বললেনঃ ওটা আল্লাহ।
(আর ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়া, ২৮/১৬৪)
অথ্যাৎ, এটা তোমার বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্য থেকে নয় এবং সকল মানুষের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য থেকেও নয়; যদিও তারা একটি মাঠে একত্রিত হয়। এটা তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য থেকে হয়ে থাকে। কেননা তার কাছে যে জিনিসকে ভাল ও সুন্দর বলে হুকুম লাগানো হয়, কখনো ওটা আল্লাহর নিকট দোষণীয় ও অসুন্দর হয়ে থাকে।
পক্ষান্তরে তার কাছে যে জিনিসকে দোষণয় বলে হুকুম লাগানো হয়, ওটা কখনো আল্লাহর নিকট সুন্দর ও প্রশংসনীয় হয়ে থাকে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তেই বিভিন্ন জিনিসের উপর হুকুম লাগানো হয়; তার কোন মাখলূকের উদ্দেশ্যে নয়।

তৃতীয়তঃ প্রভুত্বের বৈশিষ্টসমূহের মধ্য হতে তদ্রƒপভাবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে কেউ পশ্চাতে নিক্ষেপ করতে পারবে না, কিংবা তার সামনে কোন মন্তব্য করা কিংবা কোন ভিন্ন বুঝ প্রদান করা, অথবা এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অতএব, নির্দেশ প্রদানের অধিকার একমাত্র তাঁরই; আর আমাদের রসূলের দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রচার করা এবং আমাদের উপর ওয়াজিব হলোঃ সন্তুষ্ট থাকা এবং মেনে নেয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ إِنَّ اللّهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيدُ
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা করেন, নির্দেশ দেন। (সূরা মায়েদাহ্ ১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ وَاللّهُ يَحْكُمُ لاَ مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন। (সূরা রা‘দ, ৪১ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের নির্দেশ করলে কোন ঈমানদার নর ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন ক্ষমতা নেই। (সূরা আহযাব, ৩৬ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না।
(সূরা হুজুরাত, ১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمُ
মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম, তারাই সফলকাম। (সূরা নূর, ৫১ নং আয়াত)
এছাড়া অনেক আয়াত রয়েছে যা উক্ত অর্থের উপর প্রমাণ করে।
ফলে নিশ্চয় যে ব্যক্তি নিজের জন্য উক্ত অধিকার দাবী করে বলবেঃ আমি যা ইচ্ছা বিধান প্রদান করব, এটাকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। উক্ত বিষয় সম্পর্কে আমার সামনে বক্তব্য পেশ করা কিংবা বুঝ প্রদান করা, অথবা প্রশ্ন উত্থাপন করা হতে আমি উর্ধ্বে তবে সে ব্যক্তি প্রভুত্বের দাবী করল এবং সে নিজের পক্ষ হতে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিল; আর তার উপমা হলো ফিরাউনের ন্যায় যখন সে বলেছিলঃ
مَا أُرِيكُمْ إِلَّا مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلَّا سَبِيلَ الرَّشَادِ
আমি যা বুঝি, তোমাদেরকে তাই বোঝাই, আর আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথই দেখাই। (সূরা মু‘মিন, ২৯ নং আয়াত)
তদ্রƒপভাবে যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য স্বীকার করে নেবে, তবে নিঃসন্দেহে সে তার জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি প্রদান করল এবং তাকে আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে ইলাহ ও মাবূদ নির্ধারণ করে নিল।

চতুর্থতঃ প্রভুত্বের বৈশিষ্টসমূহের মধ্যে যে বিষয়ে তিনি একক ও অদ্বিতীয় তা হলোঃ তাঁকে তায়ালা তাঁর কৃত কর্মের দরূণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না; তিনি ছাড়া প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে!
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ
তিনি যা করেন, তৎসম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা আম্বিয়া, ২৩ নং আয়াত)
ফলে, যে কেউ নিজের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের অধিকার দাবী করবে, এ ভাবে বলবেঃ তার কৃতকর্মের দরুন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না, সে জিজ্ঞাসাবাদের উধের্ব। তবে সে নিজের জন্য প্রভুত্বের দাবী করল এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ ও সদৃশ করে নিল।
আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
কোন কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।
(সূরা শূরা, ১১ নং আয়াত)
তদ্রƒপভাবে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার, করে নেবে, তবে সে তার জন্য প্রভুত্বের প্রতি সন্তুষ্ট থাকল এবং সে উক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত ভিন্ন মা‘বূদ হয়ে গেল এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হলো।
পঞ্চমতঃ তাঁর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য হতে একটি হলোঃ নিশ্চয় সত্তাগতভাবে তাঁকে ভালবাসা হবেঃ তিনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে তাঁর ওয়াস্তে ওটাকে ভালবাসা হবে। ইতিপূর্বে উক্ত বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
ফলে নিশ্চয় যে কোন মাখলূক নিজের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের অধিকার দাবী করবে; তার অধিকার হচ্ছে সত্তাগতভাবে তাকে ভালবাসা ওয়াজিব। এভাবে যে, এটাকে কেন্দ্র করেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা হবে এবং শত্রুতা করা হবে, তবে নিশ্চয় সে প্রভুত্বের দাবী করল এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমকক্ষ ও সাদৃশ নির্ধারণ করে নিল। এবং যে কোন মাখলূক, যে তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নেবে, তবে নিশ্চয় সে তাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করল এবং আল্লাহ ব্যতীত তাকে মা‘বূদ হওয়ার প্রতি সন্তুষ্ট থাকল।

ষষ্ঠতঃ তদ্রƒপভবে তার একটি বৈশিষ্ট্য হলোঃ নিশ্চয় সত্তাগতভাবে তাকে অনুসরণ করা হবে। তিনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে, তাঁর জন্য এবং তাঁকে কেন্দ্র করেই তার আনুগত্য করা হবে। এ জন্য যে ¯্রষ্টার অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য করার অধিকার নেই।
ইতিপূর্বে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সত্তাগতভাবে তার অনুসরণ করার দাবী করবে, তবে সে নিশ্চয় এমন একটি বৈশিষ্ট্যের দাবী করল, যা এক আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে গণ্য। আর যে কেউ তার জন্য এটা স্বীকার করে নেবে, তবে নিশ্চয় সে উক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তে প্রভুত্ব ও সমকক্ষ -এর স্বীকৃতি প্রদান করল।
সপ্তমতঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি বৈশিষ্ট্য হলোঃ নিশ্চয় তিনি পরম উপকারকারী ও অনিষ্টকারী। তার একক হাতেই উপকার ও ক্ষতি করার অধিকার বিদ্যমান। তিনিই আশ্রয় দেন, তার বিরুদ্ধে কাউকে আশ্রয় দেয়া হয় না।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ تَدْعُ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ ﴿١٠٦﴾
وَإِن يَمْسَسْكَ اللّهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ يُصَيبُ بِهِ مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿١٠٧﴾
আর আল্লাহকে ছেড়ে এমন বস্তুর বন্দেগী করো না, যা না তোমার কোন উপকার করতে পারে, না কোন ক্ষতি করতে পারে, বস্তুতঃ যদি এইরূপ কর তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। * যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ছাড়া কেউ তা মোচনকারী নেই, আর যদি তিনি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ ও শান্তি পৌঁছাতে চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন অপসারণকারী নেই; তিনি স্বীয় অনুগ্রহ নিজের বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান দান করেন; এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।
(সূরা ইউনূস ১০৬-১০৭ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ قُلْ أَنَدْعُو مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُنَا وَلاَ يَضُرُّنَا
হে মুহাম্মাদ (সাঃ) তুমি বলে দাও -আমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুর ইবাদত করবো, যারা আমাদের কোন উপকার করতে পারবে না এবং আমাদের কোন ক্ষতিও করতে পারবে না? (সূরা আনয়াম, ৭১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللّهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদত করে যারা তাদের কোন উপকারও করতে পারে না এবং তাদের কোন অপকার ও করতে পারে না, আর তারা বলে- এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী; তুমি বলে দাও- তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আসমানে, আর না যমীনে? তিনি পবিত্র ও তাদের মুশরিকী কার্যকলাপ হতে অনেক উর্দ্ধে। (সূরা ইউনুস, ১৮ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاء لاَ يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا قُلْ
বলঃ তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছো আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে, যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়?। (সূরা রাদ্দ, ১৬ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ
(হে মুহাম্মদ সাঃ)! তুমি ঘোষণা করে দাও- আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, মঙ্গল-অমঙ্গল ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই।
(সূরা আ’রাফ, ১৮৮ নং আয়াত)
এছাড়া এর প্রমাণস্বরূপ অনেক আয়াত বিদ্যমান রয়েছে।
হাদীসে রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি নাবী (সাঃ) এর পেছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে বালক! আমি কি তোমাকে দান করব না? আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দেব না যার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন? তুমি আল্লাহ তায়ালাকে হিফাযত কর, তবে আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করবেন। তুমি আল্লাহকে হিফাযত কর, তবে তুমি তাকে তোমার সামনে পেয়ে যাবে। যখন তুমি কিছু চাবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করো। জেনে রাখ, যদি সকল মাখলূক তোমাকে কোন কিছু করতে চায়, অথচ আল্লাহ তায়ালা তা তোমার জন্য ইচ্ছা করেননি, তবে তারা উক্ত বিষয়ে সক্ষম হবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয় ধৈর্য্যরে সাথে সাহায্য এসে থাকে। এবং নিশ্চয় দুঃখের সাথে আনন্দ রয়েছে এবং নিশ্চয় কষ্টের সাথে আরাম রয়েছে।
(ইবনে আছিম ‘গ্রস্থে এটা বর্ণনা করেছেন। শাইখ নাছির তাখরীজের মধ্যে এটাকে সহীহ বলেছেন)

সুতরাং যে কোন ব্যক্তি, কোন একটি মাখলূকের দিকে মুখ ফেরাবে – সে কোন ফেরেশতা হোক, কিংবা কোন নাবী হোক, কিংবা কোন ওয়ালী হোক, অথবা কোন নেককার ব্যক্তি হোক, কিংবা অন্য যে কেউ হোক না কোন- দুয়া, ফরিয়াদ, কিংবা চাওয়া ও তাওয়াক্কুল করার ক্ষেত্রে তার কাছে কল্যাণ আনয়ন এবং অনিষ্ট প্রতিহত করার আশা করবে, তবে অবশ্যই সে কাফির ও মুশরিক এবং আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যের জন্য তার দাসত্ব বাস্তবেরূপ নিলো। উক্ত মুশরিককে যদি আপনি তার গাইরুল্লাহর ইবাদত ও প্রার্থনা করা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন, তবে নিশ্চয় সে ইতিপূর্বে আরবের মুশরিকগণ নাবী (সাঃ) কে যেরূপ উত্তর দিয়েছিল ঠিক ঐরূপ উত্তর প্রদান করবেঃ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى
আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে, আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। (সূরা যুমার, ৩ নং আয়াত)
وَيَقُولُونَ هَؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ
-আর তারা বলে -এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।
(সূরা ইউনূস, ১৮ নং আয়াত)
ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফেরেশতা ও নাবীদেরকে মধ্যস্থতা নির্ধারণ করে তাদেরকে আহ্বান করবে, তাদের উপর তাওয়াক্কুল করবে, কল্যাণ আনয়ন এবং অকল্যাণ প্রতিহত করার জন্য তাদের নিকট প্রার্থনা করবে যেমন গুণাহ মাফ করা, অন্তরকে হিদায়াত করা, কর্ষ্ট দূর করা এবং অভাব -অনটন দূর করার জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করা, তবে সে মুসলিমদের ইজমা অনুসারে কাফির।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُواْ الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
আর তিনি আদেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতাগণ ও নবীগণকে রবরূপে গ্রহণ কর; তোমরা মুসলিম হবার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর আদেশ করবেন?
(সূরা আলে ইমরান, ৮০ নং আয়াত)
অতএব, তিনি সুবহানাহু স্পষ্ট করে দিলেন যে, নিশ্চয় ফেরেশতা ও নাবীদেরকে রব (প্রতিপালক) হিসাবে গ্রহণ করা কুফরী। (আল-ফাতাওয়া, ১/১২৪)

পূর্বের আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
আমাদের বক্তব্য হলোঃ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী রয়েছে, মাখলূকের কারো জন্য তাতে শরীক করা বৈধ নেই।
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
কোন কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।
(সূরা শূরা, ১১ নং আয়াত)
নিশ্চয় তিনি প্রকৃত পক্ষে ইলাহ ও মা’বূদ। একমাত্র তারই দিকে ইবাদতের সকল প্রকার ও ক্ষেত্র ফেরানো ওয়াজিব।
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لاَ شَرِيكَ لَهُ
তুমি বলে দাও- আমার ছলাত, আমার সকল ইবাদত, আমরা জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্যে। (সূরা আন‘আম, ১৬২ নং আয়াত)
সুতরাং যে কোন মাখলূক- তার বৈশিষ্ট ও মর্যাদা যেরূপই হোক না কেন -যে এমন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী দাবী করল, যা এক আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর মধ্যে গণ্য, তবে নিশ্চয় সে প্রভুত্বের দাবী করল এবং এক আল্লাহ তায়ালার জন্য তার বৈশিষ্টাবলীর মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে শরীক নির্ধারণ করল।
তদ্রƒপভাবে নিশ্চয় যে কোন ব্যক্তি উক্ত প্রভুত্বে দাবীদার ব্যক্তির স্বীয় দাবীর প্রতি স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং তাতে তার অনুসরণ করবে, তবে অবশ্যই সে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তার প্রতি ইলাহ ও মা‘বূদ হওয়াতে সন্তুষ্ট হলো।


ইলাহঃ ইলাহ হলেন আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা। প্রত্যেক ঐ জিনিস যাকে তাঁর পরিবর্তে মা‘বূদ (উপাস্য) হিসাবে গ্রহণ করা হবে, তবে ওটা উক্ত গ্রহণকারীর নিকট -ইলাহ হয়ে যাবে।
বহুবচনঃ آلِهَةٌ আলিহাহ্। الْآلِهَةُ ‘আলিহাহ্’ হলোঃ اَلْأَصْنَامُ ‘আছনাম’ তথা মূর্তি, তারা এর দ্বারা এজন্যই নামকরণ করেছে যে, তাদের বিশ্বাস নিশ্চয় ইবাদত করা তাদের অধিকার।
اَلْإِلَاهَةُ وَاْلأُلُوْهِيَّةُ وَالْأُلُوْهَةُ হলোঃ اَلْعِبَادَةُ ইবাদাত করা…..।
اَللَّه -এর মূল হচ্ছে إِلاَهٌ -ইলাহ; فِعَالٌ -‘ফিয়াল’ -এর ওযনে। মাফঊল (কর্ম) -এর অর্থ দেবে। কেননা তিনি مَألُوْهٌ ‘মা‘লূহ’ অর্থাৎ مَعْبُوْدٌ -মা‘বূদ….।
এবং বারী সুবহানাহু -এর নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এটা أَلِهَ يَألَهُ থেকে নেয়া হয়েছে; যখন সে দিশেহারা হয়ে যায়। কেননা নিশ্চয়, জ্ঞান তাঁর বড়ত্ব সম্পর্কে হতবুদ্ধি হয়ে যায়। এবং أَلِهَ يَألَهُ أَلَهًا -অর্থাৎ تَحَيَّرَ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। এর মূল হলোঃ وَلِهَ يَوْلَهُ وَلَهًا -وَقَدْ أَلِهْتُ عَلٰى فُلاَنٍ অর্থাৎ اِشْتَدَّ جَزَعِىْ عَلَيْهِ তার উপর আমর উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে। যেমন, وَلِهْتُ বলা হয়েছে এটা أَلِهَ يَأْلَهُ إِلٰى كَذَا থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ لَجَأَ إِلَيْهِ তার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। কেননা তিনি সুবহানাহু আশ্রয়স্থল, যেখানে প্রত্যেক বিষয়ে আশ্রয় নেয়া হয়…….।

اَلتَأَلُّهُ হলোঃ اَلقَّنَسُّكُ -ধার্মিক হওয়া এবং اَلتَّعَبُّدُ -ইবাদত করা। আর اَلتَّأْلِيْهُ -হলোঃ اَلتَّعْبِيْدُ – দাসে পরিণত করা। (লিসানুল আরাব, ১৩/৪৬৭)
ইবনে রজব (রঃ) বলেছেনঃ ইলাহ হলো, তিনি যার অনুসরণ করা হয়। আর তার অবাধ্য হয় নাÑ তাঁর প্রতি ভক্তির কারণে, সম্মান প্রদর্শন করে, ভালবেসে, ভয় করে, আশা রেখে, তাওয়াক্কুল করে, তাঁর কাছে প্রার্থনা করার দরূণ এবং তাঁর নিকট দুয়া করার জন্যে। আর এর কোনটিই আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা ব্যতীত অন্যের জন্য শোভনীয় নয়। অতএব, যে ব্যক্তি এই সকল বিষয়ে যা প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে থেকে হয়ে থাকে- কোন মাখলূককে শরীক করল, তবে এটা তার لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -এর নিষ্ঠার সাথে স্বীকৃতি প্রদানে ছিদ্র করে দিল। এবং এর মধ্যে মাখলূকের দাসত্ব প্রবেশ করল, যে পরিমান ওটা থেকে ছিল। (কুররাতু উয়ূনিল মুওয়াহ্হিদীন, ২৫ পৃঃ)

এর থেকে জানা যাচ্ছে যে, নিশ্চয় মা‘বুদ হলোঃ- যদিও ইবাদতের কোন একটি অংশে হয়ে থাকে- স্বীয় ইবাদত কারীর দিক দিয়ে ইলাহ ও উপাস্য। যে ব্যক্তি আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা ব্যতীত অন্যের ইবাদতে প্রবেশ করবে; এমন বিষয়ে যে গুলোকে প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করা হয়, তবে অবশ্যই সে ব্যক্তি উক্ত অন্যের জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি প্রদান করল এবং তাকে আল্লাহর সাথে, কিংবা আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করল।

এমনি ভাবে তথা কথিত গুরুত্বহীন ইলাহ গুলো আমাদের কাছে নগ্ন হয়ে পড়বে যারা বন্দাদেরকে স্বীয় দ্বীন বিষয়ে পরীক্ষায় ফেলেছে এবং নিজেদেরকে ইলাহদের ন্যায় দেশ ও বান্দাদের উপর ফরয করে দিয়েছে যে, তাদের ইবাদত করা এবং আনুগত্য করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্বের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের জানা আবশ্যক, যাতে মাখলূকের কাউকে শরীক করা বৈধ নয়। এরপর আমরা দেখতে পাব কত ইলাহ রয়েছে যারা বর্তমান যুগে নিজেদের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য সমূহের দাবীদার। অতঃপর কি রূপে তারা লোকদেরকে বেড় লাগাচ্ছে যেন তারা তাদের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য গুলোকে স্বীকার করে নেয় এবং নিশ্চয় এটা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তাদের অধিকার রয়েছে!!

আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ

প্রথমতঃ প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্য হতে নিশ্চয় বিধান দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। অতএব, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই অধিকারে থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِينَ
হুকুমের মালিক আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নয়, তিনি সত্য ও বাস্তবানুগ কথা বর্ণনা করেন, তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সূরা আন‘আম, ৫৭ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ
আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না। (সূরা ইউসূফ, ৪০ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ أَلاَ لَهُ الْحُكْمُ وَهُوَ أَسْرَعُ الْحَاسِبِينَ
শুনে রাখ, ফয়সালা তারই, এবং তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।
(সূরা আন‘আম, ৬২ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহ্ফ, ২৬ নং আয়াত)
এছাড়া অনেক আয়াত রয়েছে যা উক্ত অর্থের উপর প্রমাণ করছে।
ফলে মাখলূকের মধ্য হতে যে কেউ-আর বর্তমান যুগে এদের সংখ্যা অনেক- উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের জন্য দাবী করবে- বিধান দেয়ার বৈশিষ্ট্য, যা আল্লাহ তায়ালার জন্য উৎসর্গীত, তবে সে নিজের জন্য প্রভুত্বের দাবী করল। আর যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নেবে, তবে সে তার জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি দিল এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাকে রব হিসাবে গ্রহণ করল।

দ্বিতীয়তঃ আইন রচনা করা, হালাল করা, হারাম করা, সুন্দর করা এবং নিকৃষ্ট করা -এর বৈশিষ্ট্য।
এগুলোকে প্রভুত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করা হয়; এক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একক ক্ষমতার অধিকারী। ফলে মাখলূকের মধ্য হতে যে কেউ -আর বর্তমান যুগে এদের সংখ্যা অনেক- উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের অধিকার বলে দাবী করবেÑ আইন রচনা করা, হালাল করা ও হারাম করার বৈশিষ্ট্য, তবে সে প্রভুত্বের দাবী করল এবং নিজের পক্ষ হতে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করল। আর যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য স্বীকার করে নেবে, কিংবা উক্ত বৈশিষ্ট্যে সে তার অনুসরণ করবে, তবে নিশ্চয় সে তার জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি দিল! উক্ত কর্মে তার জন্য সন্তুষ্ট হলো এবং আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তাকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করে নিল।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُواْ إِلاَّ لِيَعْبُدُواْ إِلَهًا وَاحِدًا لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম ও ধর্ম -যাজকদেরকে রব (প্রভূ) বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক ইলাহের ইবাদত করবে যিনি ব্যতীত ইলাহ হওয়ার যোগ্য কেউই নেই, তিনি তাদের অংশীস্থির করা হতে পবিত্র। (সূরা তাওবাহ, ৩১ নং আয়াত)

ইতিপূর্বে আয়াতের তাফসীর বর্ণনা করা হয়েছে এবং রুবুবিয়াহ্ ও উলূহিয়াহ্ এর উদ্দেশ্য যাকে আলেম ও ধর্ম-যাজকগণ নিজেদের অধিকার বলে দাবী করত, এ প্রসঙ্গে আলেমগণের মন্তব্য ও তাফসীর উল্লেখ করেছি। এমনি ভাবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে কোন প্রমাণ না থাকলেও তাদের থেকে হালাল করণ ও হারাম করণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে এবং শুধুমাত্র তাদের জন্য উক্ত অধিকারের স্বীকৃতি দেয়ার কারণে এবং উক্ত বিষয়ে তাদেরকে অনুসরণ করার কারণে তাদের উদ্দেশ্যে অনুসরণ করার মাধ্যমে ইবাদত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ
তাদের কি এমন কতকগুলো দেবতা আছে যারা তাদের জন্যে বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা, ২১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلاَلاً قُلْ آللّهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللّهِ تَفْتَرُونَ
তুমি বল- আচ্ছা বলতো, আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা কিছু রিয্ক পাঠিয়েছেন, অতঃপর তোমরা ওর কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল সাব্যস্ত করে নিলে; তুমি জিজ্ঞেস কর- আল্লাহ কি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছো? (সূরা ইউনুস, ৫৯ নং আয়াত)
এবং আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلاَلٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُواْ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ لاَ يُفْلِحُونَ
তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তারা সফলকাম হবে না। (সূরা নাহ্ল, ১১৬ নং আয়াত)
বর্ণিত আছে, বানু তামীম গোত্রের একজন বেদুঈন নাবী (সাঃ) কে বললঃ নিশ্চয় আমার প্রশংসা সুন্দর এবং আমার নিন্দা দোষণীয়! তিনি তাকে বললেনঃ ওটা আল্লাহ।
(আর ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়া, ২৮/১৬৪)
অথ্যাৎ, এটা তোমার বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্য থেকে নয় এবং সকল মানুষের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য থেকেও নয়; যদিও তারা একটি মাঠে একত্রিত হয়। এটা তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য থেকে হয়ে থাকে। কেননা তার কাছে যে জিনিসকে ভাল ও সুন্দর বলে হুকুম লাগানো হয়, কখনো ওটা আল্লাহর নিকট দোষণীয় ও অসুন্দর হয়ে থাকে।
পক্ষান্তরে তার কাছে যে জিনিসকে দোষণয় বলে হুকুম লাগানো হয়, ওটা কখনো আল্লাহর নিকট সুন্দর ও প্রশংসনীয় হয়ে থাকে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তেই বিভিন্ন জিনিসের উপর হুকুম লাগানো হয়; তার কোন মাখলূকের উদ্দেশ্যে নয়।

তৃতীয়তঃ প্রভুত্বের বৈশিষ্টসমূহের মধ্য হতে তদ্রƒপভাবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে কেউ পশ্চাতে নিক্ষেপ করতে পারবে না, কিংবা তার সামনে কোন মন্তব্য করা কিংবা কোন ভিন্ন বুঝ প্রদান করা, অথবা এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অতএব, নির্দেশ প্রদানের অধিকার একমাত্র তাঁরই; আর আমাদের রসূলের দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রচার করা এবং আমাদের উপর ওয়াজিব হলোঃ সন্তুষ্ট থাকা এবং মেনে নেয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ إِنَّ اللّهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيدُ
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা করেন, নির্দেশ দেন। (সূরা মায়েদাহ্ ১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ وَاللّهُ يَحْكُمُ لاَ مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন। (সূরা রা‘দ, ৪১ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের নির্দেশ করলে কোন ঈমানদার নর ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন ক্ষমতা নেই। (সূরা আহযাব, ৩৬ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না।
(সূরা হুজুরাত, ১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمُ
মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম, তারাই সফলকাম। (সূরা নূর, ৫১ নং আয়াত)
এছাড়া অনেক আয়াত রয়েছে যা উক্ত অর্থের উপর প্রমাণ করে।
ফলে নিশ্চয় যে ব্যক্তি নিজের জন্য উক্ত অধিকার দাবী করে বলবেঃ আমি যা ইচ্ছা বিধান প্রদান করব, এটাকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। উক্ত বিষয় সম্পর্কে আমার সামনে বক্তব্য পেশ করা কিংবা বুঝ প্রদান করা, অথবা প্রশ্ন উত্থাপন করা হতে আমি উর্ধ্বে তবে সে ব্যক্তি প্রভুত্বের দাবী করল এবং সে নিজের পক্ষ হতে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিল; আর তার উপমা হলো ফিরাউনের ন্যায় যখন সে বলেছিলঃ
مَا أُرِيكُمْ إِلَّا مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلَّا سَبِيلَ الرَّشَادِ
আমি যা বুঝি, তোমাদেরকে তাই বোঝাই, আর আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথই দেখাই। (সূরা মু‘মিন, ২৯ নং আয়াত)
তদ্রƒপভাবে যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্য স্বীকার করে নেবে, তবে নিঃসন্দেহে সে তার জন্য প্রভুত্বের স্বীকৃতি প্রদান করল এবং তাকে আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে ইলাহ ও মাবূদ নির্ধারণ করে নিল।

চতুর্থতঃ প্রভুত্বের বৈশিষ্টসমূহের মধ্যে যে বিষয়ে তিনি একক ও অদ্বিতীয় তা হলোঃ তাঁকে তায়ালা তাঁর কৃত কর্মের দরূণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না; তিনি ছাড়া প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে!
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ
তিনি যা করেন, তৎসম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা আম্বিয়া, ২৩ নং আয়াত)
ফলে, যে কেউ নিজের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের অধিকার দাবী করবে, এ ভাবে বলবেঃ তার কৃতকর্মের দরুন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না, সে জিজ্ঞাসাবাদের উধের্ব। তবে সে নিজের জন্য প্রভুত্বের দাবী করল এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ ও সদৃশ করে নিল।
আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
কোন কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।
(সূরা শূরা, ১১ নং আয়াত)
তদ্রƒপভাবে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার, করে নেবে, তবে সে তার জন্য প্রভুত্বের প্রতি সন্তুষ্ট থাকল এবং সে উক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত ভিন্ন মা‘বূদ হয়ে গেল এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হলো।
পঞ্চমতঃ তাঁর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য হতে একটি হলোঃ নিশ্চয় সত্তাগতভাবে তাঁকে ভালবাসা হবেঃ তিনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে তাঁর ওয়াস্তে ওটাকে ভালবাসা হবে। ইতিপূর্বে উক্ত বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
ফলে নিশ্চয় যে কোন মাখলূক নিজের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে নিজের অধিকার দাবী করবে; তার অধিকার হচ্ছে সত্তাগতভাবে তাকে ভালবাসা ওয়াজিব। এভাবে যে, এটাকে কেন্দ্র করেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা হবে এবং শত্রুতা করা হবে, তবে নিশ্চয় সে প্রভুত্বের দাবী করল এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমকক্ষ ও সাদৃশ নির্ধারণ করে নিল। এবং যে কোন মাখলূক, যে তার জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নেবে, তবে নিশ্চয় সে তাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করল এবং আল্লাহ ব্যতীত তাকে মা‘বূদ হওয়ার প্রতি সন্তুষ্ট থাকল।

ষষ্ঠতঃ তদ্রƒপভবে তার একটি বৈশিষ্ট্য হলোঃ নিশ্চয় সত্তাগতভাবে তাকে অনুসরণ করা হবে। তিনি ব্যতীত যা কিছু রয়েছে, তাঁর জন্য এবং তাঁকে কেন্দ্র করেই তার আনুগত্য করা হবে। এ জন্য যে ¯্রষ্টার অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য করার অধিকার নেই।
ইতিপূর্বে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সত্তাগতভাবে তার অনুসরণ করার দাবী করবে, তবে সে নিশ্চয় এমন একটি বৈশিষ্ট্যের দাবী করল, যা এক আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে গণ্য। আর যে কেউ তার জন্য এটা স্বীকার করে নেবে, তবে নিশ্চয় সে উক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তে প্রভুত্ব ও সমকক্ষ -এর স্বীকৃতি প্রদান করল।
সপ্তমতঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি বৈশিষ্ট্য হলোঃ নিশ্চয় তিনি পরম উপকারকারী ও অনিষ্টকারী। তার একক হাতেই উপকার ও ক্ষতি করার অধিকার বিদ্যমান। তিনিই আশ্রয় দেন, তার বিরুদ্ধে কাউকে আশ্রয় দেয়া হয় না।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ تَدْعُ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ ﴿١٠٦﴾
وَإِن يَمْسَسْكَ اللّهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ يُصَيبُ بِهِ مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿١٠٧﴾
আর আল্লাহকে ছেড়ে এমন বস্তুর বন্দেগী করো না, যা না তোমার কোন উপকার করতে পারে, না কোন ক্ষতি করতে পারে, বস্তুতঃ যদি এইরূপ কর তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। * যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ছাড়া কেউ তা মোচনকারী নেই, আর যদি তিনি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ ও শান্তি পৌঁছাতে চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন অপসারণকারী নেই; তিনি স্বীয় অনুগ্রহ নিজের বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান দান করেন; এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।
(সূরা ইউনূস ১০৬-১০৭ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ قُلْ أَنَدْعُو مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُنَا وَلاَ يَضُرُّنَا
হে মুহাম্মাদ (সাঃ) তুমি বলে দাও -আমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুর ইবাদত করবো, যারা আমাদের কোন উপকার করতে পারবে না এবং আমাদের কোন ক্ষতিও করতে পারবে না? (সূরা আনয়াম, ৭১ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللّهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদত করে যারা তাদের কোন উপকারও করতে পারে না এবং তাদের কোন অপকার ও করতে পারে না, আর তারা বলে- এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী; তুমি বলে দাও- তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আসমানে, আর না যমীনে? তিনি পবিত্র ও তাদের মুশরিকী কার্যকলাপ হতে অনেক উর্দ্ধে। (সূরা ইউনুস, ১৮ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاء لاَ يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا قُلْ
বলঃ তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছো আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে, যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়?। (সূরা রাদ্দ, ১৬ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ
(হে মুহাম্মদ সাঃ)! তুমি ঘোষণা করে দাও- আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, মঙ্গল-অমঙ্গল ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই।
(সূরা আ’রাফ, ১৮৮ নং আয়াত)
এছাড়া এর প্রমাণস্বরূপ অনেক আয়াত বিদ্যমান রয়েছে।
হাদীসে রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি নাবী (সাঃ) এর পেছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে বালক! আমি কি তোমাকে দান করব না? আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দেব না যার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন? তুমি আল্লাহ তায়ালাকে হিফাযত কর, তবে আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করবেন। তুমি আল্লাহকে হিফাযত কর, তবে তুমি তাকে তোমার সামনে পেয়ে যাবে। যখন তুমি কিছু চাবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করো। জেনে রাখ, যদি সকল মাখলূক তোমাকে কোন কিছু করতে চায়, অথচ আল্লাহ তায়ালা তা তোমার জন্য ইচ্ছা করেননি, তবে তারা উক্ত বিষয়ে সক্ষম হবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয় ধৈর্য্যরে সাথে সাহায্য এসে থাকে। এবং নিশ্চয় দুঃখের সাথে আনন্দ রয়েছে এবং নিশ্চয় কষ্টের সাথে আরাম রয়েছে।
(ইবনে আছিম ‘গ্রস্থে এটা বর্ণনা করেছেন। শাইখ নাছির তাখরীজের মধ্যে এটাকে সহীহ বলেছেন)

সুতরাং যে কোন ব্যক্তি, কোন একটি মাখলূকের দিকে মুখ ফেরাবে – সে কোন ফেরেশতা হোক, কিংবা কোন নাবী হোক, কিংবা কোন ওয়ালী হোক, অথবা কোন নেককার ব্যক্তি হোক, কিংবা অন্য যে কেউ হোক না কোন- দুয়া, ফরিয়াদ, কিংবা চাওয়া ও তাওয়াক্কুল করার ক্ষেত্রে তার কাছে কল্যাণ আনয়ন এবং অনিষ্ট প্রতিহত করার আশা করবে, তবে অবশ্যই সে কাফির ও মুশরিক এবং আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যের জন্য তার দাসত্ব বাস্তবেরূপ নিলো। উক্ত মুশরিককে যদি আপনি তার গাইরুল্লাহর ইবাদত ও প্রার্থনা করা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন, তবে নিশ্চয় সে ইতিপূর্বে আরবের মুশরিকগণ নাবী (সাঃ) কে যেরূপ উত্তর দিয়েছিল ঠিক ঐরূপ উত্তর প্রদান করবেঃ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى
আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে, আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। (সূরা যুমার, ৩ নং আয়াত)
وَيَقُولُونَ هَؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ
-আর তারা বলে -এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।
(সূরা ইউনূস, ১৮ নং আয়াত)
ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফেরেশতা ও নাবীদেরকে মধ্যস্থতা নির্ধারণ করে তাদেরকে আহ্বান করবে, তাদের উপর তাওয়াক্কুল করবে, কল্যাণ আনয়ন এবং অকল্যাণ প্রতিহত করার জন্য তাদের নিকট প্রার্থনা করবে যেমন গুণাহ মাফ করা, অন্তরকে হিদায়াত করা, কর্ষ্ট দূর করা এবং অভাব -অনটন দূর করার জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করা, তবে সে মুসলিমদের ইজমা অনুসারে কাফির।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُواْ الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
আর তিনি আদেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতাগণ ও নবীগণকে রবরূপে গ্রহণ কর; তোমরা মুসলিম হবার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর আদেশ করবেন?
(সূরা আলে ইমরান, ৮০ নং আয়াত)
অতএব, তিনি সুবহানাহু স্পষ্ট করে দিলেন যে, নিশ্চয় ফেরেশতা ও নাবীদেরকে রব (প্রতিপালক) হিসাবে গ্রহণ করা কুফরী। (আল-ফাতাওয়া, ১/১২৪)

পূর্বের আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
আমাদের বক্তব্য হলোঃ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী রয়েছে, মাখলূকের কারো জন্য তাতে শরীক করা বৈধ নেই।
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
কোন কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।
(সূরা শূরা, ১১ নং আয়াত)
নিশ্চয় তিনি প্রকৃত পক্ষে ইলাহ ও মা’বূদ। একমাত্র তারই দিকে ইবাদতের সকল প্রকার ও ক্ষেত্র ফেরানো ওয়াজিব।
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لاَ شَرِيكَ لَهُ
তুমি বলে দাও- আমার ছলাত, আমার সকল ইবাদত, আমরা জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্যে। (সূরা আন‘আম, ১৬২ নং আয়াত)
সুতরাং যে কোন মাখলূক- তার বৈশিষ্ট ও মর্যাদা যেরূপই হোক না কেন -যে এমন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী দাবী করল, যা এক আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর মধ্যে গণ্য, তবে নিশ্চয় সে প্রভুত্বের দাবী করল এবং এক আল্লাহ তায়ালার জন্য তার বৈশিষ্টাবলীর মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে শরীক নির্ধারণ করল।
তদ্রƒপভাবে নিশ্চয় যে কোন ব্যক্তি উক্ত প্রভুত্বে দাবীদার ব্যক্তির স্বীয় দাবীর প্রতি স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং তাতে তার অনুসরণ করবে, তবে অবশ্যই সে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তার প্রতি ইলাহ ও মা‘বূদ হওয়াতে সন্তুষ্ট হলো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫১
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×