somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্কেটিং এর জগতে আধিপত্য বিস্তারের একটি সিক্রেট ফর্মুলা - বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে।

২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যেকোনো পেশা হতে মার্কেটিং এর পেশা একটু বেশি বিপজ্জনক। তবে এই সেক্টরটাকে ভালোবেসে ফেলতে পারলে প্রতিটা সেকেন্ডেই আপনি কিছু শিখতে পারবেন। সাথে রয়েছে বিনোদন জগতের এক বিশাল খনি। আপনি যদি থৃলার বই বা মুভি পছন্দ করেন অথবা এডভেঞ্চার প্রিয় হন তাহলে বলা যায় এই পেশাটা আপনার জন্য পারফেক্ট। আপনার মনের খোরাক পূরণ করার জন্য এই পেশাটাই যথেষ্ট। তবে একথা অকপটেই স্বীকার করতে হবে যে এই পেশাটা সবচেয়ে বড় একটা চ্যালেঞ্জিংপূর্ণ একটি পেশা।

কেন চ্যালেঞ্জিং?

মার্কেটে যখন একটা প্রোডাক্ট লঞ্চ করে তখন সেটাকে প্রতিটি ভোক্তার কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়ার গুঢ়দায়িত্ব পালন করে মার্কেটিংয়ে কাজ করা ব্যাক্তিরা। একজন নতুন গ্রাহকের কাছে প্রোডাক্ট সেল করাটা যতটানা কষ্টকর তার থেকেও অধিক সহজ পুরাতন গ্রাহকের কাছে প্রোডাক্টটি আর একবার সেল করা।

আচ্ছা তার মানে কি প্রোডাক্ট ভালো মানের হতে হয়না?

হ্যাঁ ভালো মানের হতে হয়। আর সেই ভালো মানের প্রোডাক্ট এর গুণাগুণ প্রতিটি ভোক্তার কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করেও অনেক সময় তাদের আস্থা অর্জন করা যায়না। ইতঃমধ্যে তারা যে সেবাটা গ্রহণ করতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে সেটার দিকেই আবার হাত বাড়ায়।

নতুন পলিসির সেবার সাথে অনেক সময় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনা অনেক ব্যবহারকারী। তাছাড়া কোম্পানি নিজের টাকা খরচ করে মার্কেটিং করার জন্য যতনা লোকবল আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে তার থেকেও বেশি মানুষ নিজের খেয়ে নিজের পরে কোম্পানির সেই সেবার প্রসারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছে।

প্রথমে মার্কেটিং করার যে বিষয়টা (প্রোডাক্ট এর ভালো গুণাবলী) উল্লেখ করলাম সেটা বহির্বিশ্বে চলে। আর দ্বিতীয় পদ্ধতির যে ফ্রি মার্কেটিং করার কথাটা উল্লেখ করলাম সেটা চলে বাংলাদেশে। ভাবুনতো বাংলাদেশে এমনটা কেন হয়?

সবার বিপরীতে দৌড়ে জয়ী হওয়া অথবা কাউকে দৌড়াতে না দেওয়া।
উভয়ক্ষেত্রেই তুমি ফার্স্ট।


বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে এই দ্বিতীয় প্রকারের প্রতিযোগীতাই বেশি হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হয় স্বজনপ্রীতি ও প্রাথমিক অবস্থায় বিশাল মূলধন ব্যয় করে বিজ্ঞাপন দেওয়া। স্বজনপ্রীতিপরায়ণ মানুষরা বিনা টাকাতেই মার্কেটিং করে তবে সেটা নিজেদের প্রোডাক্ট এর ভালো গুণ প্রচারের মাধ্যমে নয়, অন্য প্রোডাক্ট এর খারাপ বৈশিষ্ট্যাবলী প্রচারের মাধ্যমে। ফলে মানুষ মন্দের ভালো এই পদ্ধতিটাই অনুসরণ করে। মানুষ মাত্রই সৌন্দর্যের পূজারী। সুতরাং বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য মানুষকে বিমোহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। ফলস্বরূপ মানুষ ঐ সেবাটা গ্রহণ করতেই উদ্ভুদ্ধ হয়।

স্বজনপ্রীতি আর বিজ্ঞাপনের করালগ্রাসে একটা সময় ঐ প্রোডাক্ট ব্যবহার করাটা মানুষের মধ্যে একটা ট্রেন্ড হয়ে দ্বারায়, যেটা থেকে বাঙালিরা সহজে বের হতে পারেনা

ফলস্বরূপ - দিনশেষে একটা ভালো প্রোডাক্ট কখনো সফলতার মুখ দেখেনা। কারণ বাঙালিরা ভালো প্রোডাক্ট খায়না তারা ট্রেন্ড খায়। পরিশেষে সেই প্রোডাক্টটাকে জনমানুষের কাছে ট্রেন্ড হিসেবে উপস্থাপন করার পিছনে কোম্পানির যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, কোম্পানি সেই পরিমাণ লোকসান কাটিয়ে উঠে সাথে কিছুটা লভ্যাংশ নিজের করে পেতে চায় বলে সেও আর প্রোডাক্টের ভালো গুণাগুণ বজায় রাখতে পারেনা।

প্রোডাক্ট এর গুণাগুণ ঠিক রেখে দামটা বাড়িয়ে নিলেইতো হয়!

যদি বেশি দাম দিয়ে প্রোডাক্ট নিতে হয় তবেতো আমি বিদেশী প্রোডাক্টই নিতে পাড়ি, কি দরকার এতো দাম দিয়ে দেশি প্রোডাক্ট নেওয়ার। দামি প্রোডাক্ট মানেই বিদেশী প্রোডাক্ট, এটাও আমাদের মাঝে একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের কিছু কোম্পানির এমন কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্নেও ব্যবহার করতে পারবেনা অথবা এটা ভাবতেও পারবেনা যে এতো ভালো মানের প্রোডাক্ট এতো স্বাদের খাবার দেশেই উৎপন্ন হতে পারে (আমি কেন সেইসব কোম্পানির নাম বলব বা তার সেবার উল্লেখ করব, আমার কেউতো সেই কোম্পানিতে চাকরী করেনা যাতে আমার পরোক্ষ স্বার্থ থাকবে। নিজের দেশের ভালো কিছুর প্রচার না করাও আমাদের একটা ট্রেন্ড। নিজের ভাই মহাশয়, এই জ্বালা কি প্রাণে সয়।) বিদেশে যেসব দিব্যি জৌলসপূর্ণ পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দামের দৃষ্টিকোণ থেকে। অথচ বহির্বিশ্বের কোন প্রোডাক্ট তার দেশের মানুষ ব্যবহার করলেই কেবলমাত্র সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেই পণ্যের রপ্তানিকরণে।

বাংলাদেশের মানুষ হয় ট্রেন্ড খায় আর না হয় বিদেশী পণ্য খায়। দেশের ভালোপণ্য তাদের শত্রু। এই চিন্তাধারা হতে আমরা যতদিন না বের হতে পারব ততদিন পর্যন্ত বিদেশী সেবাকে অথবা দেশেরই কোন নামধারী প্রোডাক্টকে (যার আদতে সেবা দেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই) আরো প্রোমোট করার জন্য মার্কেটিং এর কাজটা নিলে খুব লাক্সারি জীবন অতিবাহিত করা যাবে আর না হয় এমন সম্মানী পেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেললে সাথে দেশাত্নক মনোভাব থাকলে দিনশেষে দু'মুঠু ভাত জোগাড় করাটাও কষ্টকর হয়ে যাবে।

আত্নকথনঃ মার্কেটিং এর কাজ করলে মানুষের ইগো কমে যায়, তোমার বলা এই কথাটা অনেক ভালো লেগেছে। দুই-তিন দিন চিন্তা করে দেখলাম কথার সত্যতা কতটুকু? কোন এঙ্গেল থেকেই নেগেটিভ মনে হলোনা। সাথে এটাও ভেবে পেলামঃ
যেই চিন্তাধারায় ইগো থাকতে পারে সেই মস্তিষ্কে জ্ঞান থাকতে পারেনা।
জীবনের কোন একটা পর্যায়ে মার্কেটিং এর কাজ করব তবে সেটা যদি ছাত্রাবস্থাতেই করতে পাড়ি তবে শিক্ষার মর্মটাও যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারব। জীবনটাও খুব সুন্দর করে সাঁজাতে পারব।

সবশেষে একটা কথা বলবঃ
ধৈর্য বাড়াতে চাও তো ছাগল পালন কর,
আর ইগো কমাতে চাও তবে মার্কেটিং এর কাজ করো।


উৎসর্গঃ আমার প্রথম কোন লেখা কাউকে উৎসর্গ করলাম। জাকির খান, তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×