বহুকাল আগে একটা লেখা পড়েছিলাম, সেই লেখায় লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা হচ্ছে, জীবনকে নিজের মত করে ছুয়ে দেখতে হয়। নিজের জীবন অন্নের ভিতর দিয়ে উপভোগ করা যায় না।
২০ তারিখে আমাদের ইস্ট-ওয়েস্ট ভার্সিটির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ছোট বাচ্চাদের আর্ট প্রতিযোগিতা ছিল। ছোট বাচ্চা যেখানে, আমি সেখানে। প্রোগ্রামের একজন ভলান্টিয়ার হয়েছিলাম, শুধু এই কারনে, বাচ্চা গুলার আর্ট করা কাছে থেকে দেখবো বলে। দেখলাম এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।
সব বাবা মা, যে যে ভাবে পারছে আমাদের চোখ ফাকি দিয়ে বাচ্চাকে বলার চেষ্টা করছে, এই বাবু এই ভাবে আর্ট কর, ওই ভাবে আর্ট কর। কিছু কিছু বাচ্চা কোথায় কি রঙ দিবে, দেবার আগে তাঁর আব্বা বা আম্মার মুখের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। পাছে আবার কিছু ভুল না হয়ে যায়। বাবা-মায়ের চোখের ইশারায় তারা চলছে। মন অনেক খারাপ হয়ে গেলো। আমি বার বার হ্যান্ড মাইকে সবাইকে বললাম, আপনারা প্লীজ সরে জান। ছোট বাচ্চা, আপানাদের ভয় পাচ্ছে। তাদের নিজেদের মত করে আঁকতে দিন।
আনেক বাবা মা ই আমার কথা শুনেছে। আবার অনেকেই শূনে নাই। হবে ৫০%-৫০%। ছবি আকার প্রায় শেষে এক বাচ্চা আমাকে বলল, আঙ্কেল ( ) হিসু পাইছে। আমি বললাম, চল আমার সাথে। ওকে নিয়ে ফিরে এসে দেখি অনেকেই আর্ট জমা দিচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি বসে গেলো আর্ট করতে। একটু পরে স্যার বলল, সময় শেষ। আমি খাতা তুলতে গেলাম বাচ্চাটার কাছে। তখন শুরু হল আসল ঘটনা।
ওর আম্মা দৌড়ে আসলো। আমাকে বলল বাবা ও তো বাথরুমে গেছিল, ওকে একটু সময় দেও বাবা। আমি বললাম ঠিক আছে। তখন কিছু বাচ্চার আব্বা-আম্মা বলতে লাগলো, না না সময় তো দেয়া যাবে না। উনি ও নাছোড় বান্দা।
এই বাবু, চোখ টা দে না রে বাবা। (বাচ্চা নির্বাক)
প্রায় কান্নার সুরে, দে না রে বাবা...।। (বাচ্চা নির্বাক)
পাশ থেকে অনেকি বলতে লাগলো। নিয়ে নেন। নিয়ে নেন। আমি অবাক হয়ে আশপাশের মানুষ গুলোর দিকে আর ওর আম্মার দিকে তাকালাম। আর আফসোস করে বললাম, কি নির্মম পৃথিবী।
অনুষ্ঠানের মাঝে, এক পিচ্চিকে দেখি একটার পর একটা রঙ নিচ্ছে আর মনের আনন্দে সেই আর্ট করছে। আমি ওর কাছে গেলাম, বললাম, আব্বা কি করছেন আপনি? বলেই ওই আব্বার দিকে চোখ গেলো। উনি হেঁসে উঠলেন। আমি বললাম, আঁকুক ওর মন যা চায়। উনি বললেন, সেটাই। হুট করে বাচ্চাটা বলে উঠল,আমার শেষ। আমি বললাম, আব্বা আপনি কি আর্ট করেছেন? ও বলল, কাকু এই দেখো প্লেন! বলে সে একটা কালো রঙ এর জটলা দেখাল। আমি বললাম, তোমার প্লেনে মানুষ আছে? ও বলল হুম। আমি হেঁসে উঠে চলে আসলাম।
এমন স্বাধীন আর্টিস্টের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তবে সকল স্বাধীন আর্টিস্টের পক্ষ থেকে ৫ম পুরষ্কার জিতেছে, আমার এই ছোট্ট আব্বা। ওর নাম জানি না। কালকে জেনে নিবো।
বাচ্চাদের নিজেদের মত করে বেড়ে উঠতে দিন। আর যাই করুন, ওদের স্বাধীন ভাবে উড়ে বেড়ানোর ডানা টা কেটে দিবেন না প্লীজ। ইন্সা আল্লাহ্, ওরা বিফল হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫