somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা কবিতার দায়মুক্তি -২

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা কবিতার দায়মুক্তি-১
Click This Link

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, বেশিরভাগ সমালোচকের মতে বীরাঙ্গনা কাব্যটি মাইকেলের শ্রেষ্ঠ কাব্য । যাই হোক, মাইকেলের পৌরাণিক ও প্রথাগত বদ্ধমূল সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাকে বলা যেতে পারে কবিতার বিষয়বস্তু সংক্রান্ত দায়মুক্তি প্রচেষ্টা । এটা ছাড়াও মাইকেল কবিতার শরীরগত তথা আঙ্গিক নিয়াও একটি বৈপ্লবিক প্রচেষ্টার শুরু করেন । অমিত্রাক্ষর ছন্দ । যা শেষ পর্যন্ত বাংলা উত্তরাধুনিক কবিদের মূলধারায় পরিণত হয়েছে ।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ বা অন্ত্যমিল নিয়া মাথাব্যাথাহীনতা আমার মনে হয় বাংলা কবিতার শরীরগত দুইটি বিশ্বযুদ্ধজাতীয় ব্যাপারের মধ্যে প্রথমটি যার দ্বিতীয়টি গদ্য কবিতার আবির্ভাব । মাইকেল নিজে যদিও শেষ পর্যন্ত অনেক কবিতাই লিখেছেন মিত্রাক্ষরে, কিন্তু অত্যন্ত সার্থকভাবে শুরু করেছিলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দের ধারাটি । তার মেঘনাদবধ মহাকাব্যটি পুরোটাই অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা । তার আগ পর্যন্ত কবিতায় অন্ত্যমিলকে দেখা হত অনেকটা কবিতার একমাত্র বৈশিষ্ট্যরুপে । গদ্য-পদ্যের পার্থক্যকারী চিহ্ন হিসাবে । প্রতি দুইপদে অন্ত্যমিল রাখতে গিয়ে দেখা যায় সবসময় যথোপযুক্ত শব্দের জায়গায় মিলযুক্ত একটি অস্পষ্ট বা কম স্পষ্ট শব্দ ব্যাবহার করতে হয় । অনেক ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুও পরিবর্তন করে ফেলতে হয় । যা বলেতে চাওয়া, যে ভাব প্রকাশ করতে চাওয়া তাকে নিয়মের জালে বেঁধে অন্য কথা বলিয়ে নেয়ার মত ।

শরীর এবং বিষয়বস্তু নিয়া এমন বিপ্লবী মাইকেলও কিভাবে সনেট লেখাতে এত আগ্রহী ছিলেন এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ধরে না । বাংলা কবিতার এখন পর্যন্ত বিকাশে উত্তরাধুনিক গদ্যকবিতা যদি হয় শরীরগত ভাবে দায়মুক্তির চূড়ান্ত অবস্থা তাইলে নির্ঘাত অন্ত্যমিলযুক্ত সনেটই হবে শরীরগত দায়বদ্ধতার চূড়ান্ত অবস্থা । চৌদ্দ মাত্রার চৌদ্দ পঙতি, আট পঙতির অষ্টকে মূলভাব প্রকাশ, ছয় পঙতির ষষ্টকে ভাবের পরিণতি , এত এত নিয়মের মধ্যে ভাব যে কিভাবে আসে সেটা এক বিস্ময় । হতে পারে এটা মানুষের উৎকর্ষের একটি চূড়ান্ত রুপও প্রকাশ করে । শত প্রতিকুলতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েও মানুষ যে তার শ্রেষ্ঠত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে তার একটা প্রমাণ মনে হয় সনেট । মাইকেলের সনেটগুলা বিস্ময়কর । আমার কাছে তার সনেট লেখাটাও বিস্ময়কর ।

মাইকেলের পর বাংলা কবিতার বৃহত্তম বটগাছটি যেকোনোভাবেই রবীন্দ্রনাথ ।

পাঠক হিসাবে আমার ব্যাক্তিগত বিশ্লেষণ এটা, সেইটা স্বীকার করে নিয়া বলি বাংলা কবিতার দায়মুক্তির ইতিহাস বা বিকাশের ইতিহাসেও আমি নিজে দুইজন জায়ান্টকে অন্তর্ভুক্ত করি না । রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল । এটা পাঠকের স্বাধীনতা । আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হলে হয়ত এই মনোভাব নিয়া পরীক্ষায় ফেইল করতে হত । সৌভাগ্যক্রমে আমি তা না । অতএব অল্প কথায় তাদের অন্তর্ভুক্ত না করার কারণটা বলে নিই । অল্প কথায় কারণ আমার লেখার মূল বিষয়ের সাথে এদের তেমন কোনো সম্পর্ক নাই ।

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন প্রচুর । কিন্তু তার পূর্বসুরী বিশ/পঁচিশজন কবির কবিতাসমগ্র নিয়া বসলে রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভাবের মোটামুটি পুরোটাই পাওয়া যাবে বলে মনে হয় । এছাড়া তার সুরটি একটু বিলাপপ্রতিম, ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার মত, যা বাংলা কবিতার জন্মেরও আগের পুঁথিগুলার সাথে সমতুল্য । নজরুল দেশপ্রমিকদের আবেগে সুড়সুড়ি দেওয়া ছাড়া কবিতা নিয়া তেমন কিছু একমপ্লিশ করতে পারেন নাই ।

আবারও বলি রবীন্দ্র নজরুল নিয়া এই বিশ্লেষণ একান্তই পাঠক হিসাবে আমার ব্যাক্তিগত মতামত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×