somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(বোবা কালা অন্ধ অচেতন প্রাকৃতিক নির্বাচন ) জীবজগতের বিবর্তন সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণা -২

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন প্রাকৃতিক নির্বাচন

শাহানশাহ এ ব্লগিকত হযরতে মাওলানা আল্লামা হয়রানপুরীর খুব মহব্বতের একটি ফ্রেজ হৈলো, এই বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন প্রাকৃতিক নির্বাচন । এর মাধ্যমে নাকি প্রকৃতিতে দৃশ্যমান লাখ লাখ জটিল প্রজাতির উদ্ভব সম্ভব না ।

এই আবালীয় কুযুক্তিটি দুই ধাপে ভুল । প্রথম ধাপ হৈলো, প্রাকৃতিক নির্বাচন বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন না । এটি যথেষ্ঠ পরিমাণ স্মার্ট এবং বৈচিত্রপূর্ণ একটি শক্তি । এই শক্তির উৎস হৈলো বিশাল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্রপূর্ণ আবহাওয়া, জলবায়ূ এবং পরিবেশ । পৃথিবীতে অনেক ধরণের পরিবেশ । উদাহরণ দেয়া যায় , লবণাক্ত পানির অঞ্চল, স্বাদু পানির অঞ্চল, পাহাড়ী অঞ্চল, সমতল অঞ্চল, মরু অঞ্চল এন্ড সো অন এন্ড সো ফোর্থ ।

এখন প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্বের মূল কথা হৈলো, একটা পরিবেশে যত রকমের ইচ্ছা তত রকমের জীব আসতে পারে, কিন্তু আসলেই থাইকা গেলাম এমন হৈবে না । ঐ জায়গার নির্দিষ্ট পরিবেশে যারা টিকতে পারবে তারাই থাকবে, বাকিরা হয় অন্য জায়গায় সরে যাইতে হবে অথবা খোদা হাফেজ । এইজন্য দিনে দশকেজি পানি খাইতে হয় এইরকম জীব মরুভূমিতে টিকতে পারে না । আবার লবণ পানি খাইলেই ডায়রিয়া শুরু হৈয়া যায় এরকম জীব সাগরে টিকতে পারেনা ।

প্রাকৃতিক নির্বাচন কেবল এই পরিবেশ দিয়াই চলে না । এর আরো অনেকগুলা নিয়ম আছে । খুব সহজ কিন্তু খুবই স্ট্রিক্ট (ভালো বাংলা পাইলাম না) কিছু নিয়ম । যেমন, শক্তির নিত্যতা, পদার্থের নিত্যতা । যেমন তোমার যত লাগবো তত খাবারের সাপ্লাই আমি দিতে পারবো না । বরং আমার এখানে যত খাবার আছে ততটুক খাইয়া যে কয়জন টিকতে পারো ঐ কজন থাকো, বাকিরা গো টু হেল । কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া এত দ্রুত বংশবিস্তার করে যে, তাদের যদি ঠিকঠাকমত বিস্তার করতে দেয়া হয়, তাইলে মাত্র ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৃথিবীর ওজনের চাইতে তাদের ওজন বেশি হয়ে যাবে । কিন্তু তারা পৃথিবী দখল কৈরা নিতে পারে না কেনো ? কারণ হৈলো, পৃথিবীর সমপরিমাণ ওজন খাওন পৃথিবীতে নাই । একটা গ্লাসের মধ্যে রাখলে ঐ গ্লাসে যতক্ষণ পর্যন্ত খাওন আছে ততক্ষণ পর্যন্তই তাগো বিস্তার এর পরে মরা শুরু ।

এইরকম কঠিন নিয়ম যে জিনিস মানতে পারে তারে বোবা কালা অন্ধ অচেতন কয় কোন হালায় ।

এই আবালীয় কুযুক্তিটির দ্বিতীয় ধাপ আরো বেশি আবালীয় । সেটা হৈলো, বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন হৈলেও, ঐরকম শক্তির পক্ষে বৈচিত্র তৈরী করা অসম্ভব কিছু না । এইরকম শক্তি প্রকৃতিতে অনেক আছে । সহজ একটারেই ধরি । মহাকর্ষ । কোন প্যাঁচ-গোচ নাই । খালি যেকোন দুইটা পদার্থ একটা আরেকটারে নিজের দিকে টানবে । আর কিছু নাই । এইবার দেখি এই বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন মহাকর্ষ, কিরকম অদ্ভূত সব বৈচিত্রের জন্ম দেয় । কিছু ঘটনা দেখা যাক, যেগুলা কেবলমাত্র এই বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন মহাকর্ষ দিয়াই ব্যাখ্যা করা যায় ।


সূর্য কেন জ্বলে ? হাইড্রোজেনের এই কুন্ডলিটা মহাকর্ষের চাপে নিজের উপরে নিজেই পড়তে আছে । ভিতরের দিকের হাইড্রোজের উপরে বাইরের দিকের হাইড্রোজেন চাপে । এক্কেবারে কেন্দ্রে যেই হাইড্রোজেন পরমাণুটা আছে তার উপ্রে গোটা সূর্যের চাপে । এইভাবে বাইরের দিকে যাইতে যাইতে চাপ কম, ভিতরের দিকে যাইতে যাইতে চাপ বেশি । ভিতরের দিকে বেশি চাপে, একটা হাইড্রোজেন পরমাণু আরেকটার সাথে ঘষা খায় বেশি । এই ঘষায় ঘষায় গরম হৈতে হৈতে তাপমাত্রা যখন এমন পর্যায়ে পৌঁছাইলো যে দুইটা হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস এক হৈয়া একটা হিলিয়াম নিউক্লিয়াস হয় । এই বিক্রিয়ায় ব্যাপক পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, আইনিস্টাইন বুড়ার সমীকরণ অনুসারে (সেইটা অন্যদিনের গল্প) । এই শক্তি আবার বাইরের দিকের মহাকর্ষের চাপ ঠেকায় । মহাকর্ষের চাপ কৈমা গেলে হাইড্রোজেন+হাইড্রোজেন= হিলিয়াম বিক্রিয়ার হার কমে । কমলে কি হয় ? শক্তি কমে । শক্তি কমলে কি হয় ? শক্তি কমলে বাইরের দিক থাইকা মহাকর্ষ আবার চাপে । চাপলে আবার শুরু থাইকা এই ঘটনা ঘটে । এই নিরন্তর দড়ি টানাটানির কারণে গোটা সৌরজগতের আলো আর পৃথিবীর সব জীবের শক্তি দেয় এবং যদ্দিন হাইড্রোজেন থাকবে , তদ্দিন দিতে থাকবে সূর্য ।


ষড়ঋতুর বাংলা, চার ঋতুর জাপান, আরো নানান রঙবেরঙের ঋতু এইগুলা কেনো পৃথিবীতে হয় ? কারণ অনেক কোটি বছর আগে মহাকর্ষের টানে ভালুবাইসা পৃথিবীতে ধাক্কা খাইছিলো একটা বিশাল গোল্লা । সেই গোল্লা পরে চাঁদ হৈলেও, ধাক্কায় পৃথিবীরে একটু তেছরা কৈরা দিয়া গেছে । মোটামুটি ২৩ ডিগ্রি । এর ফলে কি হৈছে ? এর ফলে পৃথিবীর উত্তর ভাগ আর দক্ষিণ ভাগ এক সরলরেখায় নাই, সূর্যের সাথে তুলনায় । আবার সূর্যের চাইরপাশে পৃথিবী ঘুরতে আছে, বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন মহাকর্ষের প্রভাবে । ফলে, তেরছা পৃথিবীর উত্তরভাগ একসময় সূর্যের দিকে হেইলা থাকে, একসময় দক্ষিণভাগ, আবার একসময় দুইটাই সমান দূরে থাকে । এইজন্য গরম আসে শরৎ আসে শীত আসে বসন্ত আসে । কমলা শাড়ি পইড়া ললনারা মেলায় যায় ।


চান্দের খাড়া নিচে পৃথিবীর যে অংশটা থাকে সেটারে বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন মহাকর্ষ বল টানে বেশি । পৃথীবি আবার শক্ত জিনিস । বৃহস্পতি, শনি ইউরেনাস নেপচুনের মত গ্যাসীয় না । এইজন্য টানলেই আবার তার ভালুবাসায় পৃথিবী ঐ অংশটা চান্দে চৈলা যাইতে পারে না । এইজন্য গোটা পৃথীবিই ডিমের মত লম্ফা হৈয়া যায় । মাটি শক্ত জিনিস , ফুইল্যা উঠতে পারেনা বেশি । কিন্তু সাগর মহাসাগরের পানি নরম জিনিস বৈলা মাটির চাইতে পানি লাফ দেয় বেশি । এই জন্য ঠিক যেই জায়গার উপরে চাঁদ এবং এবং ঠিক তার উল্টা দিকে (ডিমের অবস্থা কল্পনা করা যাক) সাগরে জোয়ার হয়, অন্য দুই দিকে ভাটা হয় । এই জোয়ার ভাটার সেকেন্ডারি ইফেক্টে ঘটে আরো অনেক অদ্ভুত সুন্দর ঘটনা, যেইগুলার মূলে সেই বোবা কালা অন্ধ অচেতন মহাকর্ষ বল ।

এইভাবে উদাহরণ দিতে থাকলে আরো হাজারখান দেয়া যায় কেবল আমাগো এই ছোট্র সৌরজগতের মধ্যেই, অনেক অদ্ভুত ঘটনা । অনেক জটিল ঘটনা । যেমন চান্দ নিজে একবার যতদিনে নিজের চাইরপাশে ঘুরে ঠিক ততদিনেই পৃথিবীর চাইরপাশেও ঘুরে । ঠিক একই রকমের ঘটনার আরো জটিল একটু কারণে, বুধ গ্রহে ২ বছরে হয় এক দিন । আমাদের যেখানে ৩৬৫ দিনে এক বছর । সেইসব অন্য দিনের কথা । আর সৌরজগতের বাইরে গেলে পাওয়া যাবে এইরকম লাখ লাখ ঘটনা । সবি কিন্তু এই বোবা কালা অন্ধ এবং অচেতন মহাকর্ষ বলের জন্য ।

এতখানি পড়ার পরে পোস্টের মূল বিষয় ভুইলা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে দেইখা, সংক্ষেপে

২ : প্রাকৃতিক নির্বাচন মোটেও বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন কোন শক্তি না । বরং এর অনেকগুলা রুপ এবং অনেক নিয়ম আছে । পরবিশের বৈচিত্র, খাদ্য এবং অন্যান্য উপকরণের সীমাবদ্ধতা এই দুইটার কথা ব্যাখ্যা করলাম । এগুলা ছাড়াও অন্য জীবের সাথে মিথস্ক্রিয়া, পরিবেশকে নিজের হাতে পরিবর্তন করতে পারার মত শক্তিশালী জীবের আবির্ভাব এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলা মিলিয়ে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে বরং একটি বুদ্ধিমান সিস্টেম বলা যায় ।

২ : এমনকি প্রাকৃতিক নির্বাচন বোবা কালা অন্ধ ও অচেতন হৈলেও, এইরকম অন্য অনেক শক্তিই অসামান্য পরিমাণের বৈচিত্র তৈরী করেছে মহাবিশ্বে । মহাকর্ষ তার মধ্যে একটি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪১
৩৩টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×