জন্ম থেকে কোন মানুষই খারাপ থাকে না । একটা মানুষকে খারাপ বানায় তার সমাজ, তার আশপাশের নোংরা পরিবেশ । আফসোসের বিষয় হলো , আমরা সেই নোংরা পরিবেশ কিংবা সমাজকে শাস্তি দিতে পারি না ।
প্রায়ই দেখা যায় এলাকার কোন ভাল একটা ছেলেকে ক্ষমতাধররা মিলে খারাপ বানিয়ে দিচ্ছে । তারাই আবার কোন খারাপ একটা ছেলের প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে আছে । ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হয়ে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে । দূর্বলেরা তা মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে আর সবলেরা দেখেও না দেখার ভান করছে ।
একটা ছেলের ঘটনা বলি, ছেলেটার নাম মাছুম । খারাপ কিংবা অসত্ সঙ্গ কী জিনিস সেটা সে বুঝত না । বোঝার চেষ্টা কিংবা প্রয়োজনও মনে করেনি কখনো । একেবারে লাজুক প্রকৃতির ছেলে ছিল মাছুম ।
ঘটনাক্রমে এলাকায় একদিন ডাকাতি হলো শেষ রাতের দিকে । মাছুম সেদিন একটু আগে ভাগেই ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে রওনা দিল । কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কী ! আসল ডাকাতের পরিবর্তে সব আপদ-বিপদ এসে পড়ল মাছুম নামের ছেলেটার ওপর !
ছেলেটাকে বেধে রেখে পরদিন সকালে বিচার ডাকা হলো । এলাকার বিত্তবান ক্ষমতাধর লোকেরা ছেলেটার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনল । বিত্তবানদের মিথ্যা অভিযোগ সত্য প্রমান করে তাদেরকে খুশি করার জন্য তথাকথিত বিচারকেরা উঠে পড়ে লাগল । একটা সময় ছেলেটার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে স্বীকার করতে বাধ্য করা হলো যে, 'সেও ডাকাত দলের সাথে জড়িত ছিল'
ভাল হয়ে চলার সকল আকাঙ্ক্ষা কৈশরেই ছেলেটার চিন্তা-চেতনা থেকে মুছে দেওয়া হলো । কলুষিত সমাজ রাতারাতি একটা ভাল ছেলেকে খারাপে পরিণত করল !মাছুম বুঝতে পারল, এ সমাজ টাকা-পয়সা, ক্ষমতার দাপটের কারণে অসহায়, দুর্বল ভাল মানুষের কথা কানেও নেয় না ! সেদিনের পর থেকে মাছুম আর কখনো তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি ।
মাথা নিঁচু করে যে ছেলেটা চলাফেরা করত সেই ছেলেটা আজ শার্টের তিন চারটা বোতাম খুলে বুক ফুলিয়ে অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ায় । এরকম হাজার মাছুমের জীবন আজ অশিক্ষিত, কুলাঙ্গার, অমানুষগুলোর দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ।
ক্ষমতার প্রভাবে খারাপ মানুষগুলো অন্য আরেকজনকে কত সহজে খারাপ বানিয়ে ফেলছে ! আর সমাজে নামধারী ভাল মানুষগুলো তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে । ভালরা যতদিন না মুখ খুলবে সমাজ ততদিন পর্যন্ত অধঃপতনের দিকে যেতেই থাকবে । সোনার ছেলেগুলো কয়লায় পরিণত হতে থাকবে । এ অধঃপতনের শেষ নেই...!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১