উৎসর্গ: বিচার মানি তালগাছ আমার এবং
চানাচুর কে।
(১)
খিলখিল হাসি দেখেই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলাম। রেষ্টুরেন্টে সবাই মেপে মেপে কথা বলে, মেপে মেপে হাসে এবং মার্জিত ভাবে খায়। কিন্তু মেয়েটির কোন বালাই নেই। বান্ধবীর কথা শুনে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। শুধু আমি না, অন্যেরাও তার দিকে তাকাচ্ছে ওর তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।
এই মেয়েটি এখন আমার বউ ওর নাম ইরা। এখন আর ওর খিল খিল হাসি নেই। সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে। আমাদের প্রথম বাচ্চা হাওয়ার দুদিন পরে বাচ্চাটা মারা গেল। ডাক্তার বলেছিল বাচ্চা একদম ফিট। কিন্তু এর পরেও কিভাবে কি হলো বুঝলাম না। ফুটফুটে আর
ধবধবে সাদা দেহ কিন্তু গলার দিকে লালচে ছিল লাশের। ইরা কান্নাকাটি জুড়ে দিলে আমি ডক্টর কল দেই। ডক্টর স্বাভাবিক মৃত্যু বলে। গলার লালচে ভাবটাও স্বাভাবিক। মরা লাশের নীল, লাল, ফ্যাকাসে, কালো এসব হওয়া নাকি স্বাভাবিক।
এর পর থেকে ইরা আর হাসে না। বাড়ি থেকে কোথাও বের হয়না। আমি অফিস করে এসে সারাদিন ওকে নিয়েই থাকি। ওর পছন্দের খাবার নিয়ে আসি মাঝে মাঝে। আমার সাথে কথাটথাও খুব একটা বলে না।
অথচ বিয়ের সময় রাত দুইটা অবদি ও বকবক করেই যেত। এর বিরুদ্ধে নালিশ ওর বিরুদ্ধে নালিস। আমি ব্যাপারটা খুব ইনজয় করতাম।
কিন্তু এখন সব শূন্যতা। আমি এ নিয়ে ওকে কিছু বলিনা। প্রথম বাচ্চা মারা গেছে ধকলটা সহ্য হচ্ছে না হয়তো।
(২)
আমাদের ২য় বাচ্চা হবে। এবারও ছেলে হবে আর চেকাপ করে জান গেল সব ঠিকঠাক। ইরা যদিও এখন কথা কম বলে কিন্তু চোখে মুখে এখন একটু আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। রোজ আয়নার সামনে একটু বেশি সময় নিয়ে সাজে আজকাল।
আমরা হসপিটালে, ইরার পেইন উঠেছে। আমি বড্ড ছটফট করছি কি হয় না হয়। রাত ঠিক ২:৩৭ মিনিটে জানতে পারলাম আমি বাবা হয়েছি আর ওরা ঠিক আছে। আমি কেবিনে ঢুকে বাচ্চার দিকে না তাকিয়ে ইরার দিকে তাকালাম। বড্ড হাসি-খুশি দেখাচ্ছে ওকে। বাচ্চার পা থেকে মাথা পর্যন্ত অদ্ভুত ভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রাত তিনটার দিকে এম্বুলেন্স করে আমরা বাসার দিকে আসছিলাম। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল। সারারাতের ধকলে। আমি আমার বাচ্চাটাকে চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম এম্বুলেন্সেই।
(৩)
বাসায় এসে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। এত্ত ঘুম পাচ্ছে। ইরা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ওলে বাবুতা, বাবু আমাল,,,, এরকম বাচ্চাদের মত বলে যাচ্ছে। আমি অদ্ভুত ভাবে ইরার দিকে তাকিয়ে আছি। মোবাইল দিয়ে বাচ্চাটার একটা ছবি তুললাম। ফেসবুকে সবাইকে জানাব বলে। কিন্তু না পোষ্ট করিনি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
সকালে ইরার কান্না শুনে ঘুম ভেংগে গেল। এই বাচ্চাটাও মারা গেছে। সারা দেহ ফ্যাকাসে সাদা গলার দিকটা কিছুটা লালচে এবং নীলচে। আমার চোখে কোন পানি নেই। আমি ইরার মত কান্নাকাটি করতে পারছি না। বুকে শক্ত একটা পাথরের মত অনুভব করছিলাম। উফ আমিকি পাগল হয়ে গেলাম?
পরদিন সন্ধ্যায় দেখলাম ইরা আয়নার সামনে সাজুগুজু করছে। সন্তান হারানোর বেদনা একদম নেই। অদ্ভুত ভাবে ইরার মুখটা জ্বলজ্বল করছে। এত রুপবতী লাগছে বলার মত না। এবং খেয়াল করলাম ওর চুল কাধ পর্যন্ত ছিল সেটাও কোমর পর্যন্ত চলে এসেছে। তবে কি ও অমরত্ব লাভ করে ফেলেছে? যেমনটা ওর ডায়রিতে লেখা ছিল?
ও আপনাদের তো বলাই হয়নি। আমাদের ২য় সন্তান হওয়ার সময় হাসপাতালের বেডে ওর ডায়রি গোপনে আমি পড়ে ফেলেছিলাম। সেখানে বলিদান আর অমরত্ব লাভের ব্যাপারটায় সুন্দর করে লেখা ছিল। ইরা যুগ যুগ বেঁচে থাক। এমন রুপবতী বউ ভাগ্য কজনার আছে?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩