somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প (পর্ব ৭)

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এরপর খুব অদ্ভুতরকমভাবেই পুলক আর রীতার মধ্যে খুব সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠল। আপাতত সম্পর্কটিকে বন্ধুত্ব বলতে পারি। রীতা ক্লাস করে বাসায় এসে অপেক্ষা করে কখন পুলক আসবে আর তারা ফেসবুক এ চ্যাট করবে। ফেসবুক এ চ্যাট ছাড়া তারা ফোনেও কথা বলে। বলা বাহুল্য যে পুলক কে আবার নতুন করে রীতাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে হয়েছিল ফেসবুক এ। দুইজনই তাঁদের বাসায় বলে দিয়েছে যে আপাতত তারা বিয়েতে আগ্রহী নয়। পুলকের মা এতে কিছুটা রাগ করেছে। রীতার বাবা সবসময়য়ই মেয়ের সিদ্ধান্তকে মূল্য দিয়েছে। কিন্তু রীতার মাও বেশ রাগ করেছে। দুই পরিবারের কোন পক্ষই জানে না যে পাত্র-পাত্রির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

রীতা আর পুলকের মধ্যে আপাতত অভ্যস্ততার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। পুলকের এখন আর তেমন একা আর দুঃখী লাগে না। সে অফিস করে। বাসায় এসে ফোনে বা ফেসবুক এ রীতার সাথে গল্প হয়। এখন সে রীতাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে। রীতা কিন্তু তাকে ‘আপনি’ ই বলে। এই ‘তুমি বলা’ অন্তরঙ্গতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পাওয়া অধিকার।

এরমধ্যে রীতা জেনে গেছে যে পুলকের কোন বান্ধবী নেই। এতে সে মনে মনে কিছুটা খুশি। তারপরও সে বাসায় ইতিবাচক কিছু জানায়নি। তার কারণ সে এত জলদি বিয়ে করে ফেলতে চায় না। আর এখন সময়টা তার খুবই ভালো যাচ্ছে। পুলক নামের এই পাগল কিসিম লোকটার সাথের এই সম্পর্কটা সে আরো কিছুদিন এইভাবে উপভোগ করতে চায়। এই লোকটা খুব সহজে রেগে যায়। প্রথমদিকে তো সে বুঝতেই পারতো না যে লোকটা কখন কোন কারণে রেগে যাচ্ছে। যেমন একবার কথায় কথায় সে পুলককে ‘বেকুব’ বলেছিল। এমন সিরিয়াস কিছু না। ঠাট্টা করে। সেই জন্য এই লোক তার সাথে দুই দিন ঠিকমত কথা বলেনি। অনেক কষ্টে সে এই রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছিল। এখন সে মোটামুটি বুঝতে পারে কোন কথায় কখন তার মুড এক্কেবারে আকাশ কালো করা হয়ে যাচ্ছে। লক্ষণ বুঝা সহজ। গলার স্বর পরিবর্তন হয়। কথাবার্তা দুই-এক শব্দে শেষ করার প্রবণতা দেখা দেয়। এই তো!!

রীতা মাঝে মাঝে পুলকের কথা তার দুএকটা বান্ধবীকে বলে।
রেহানা নামে তার এক বান্ধবী বলল- বাবারে বাবা! এত দেমাগ!! এত দেমাগ তুই পাত্তা দেস কিভাবে? সুজনকে তো আমি আঙ্গুলের উপর রাখি। বসতে বললে বসে, উঠতে বললে উঠে।
কিন্তু এরকম অঙ্গুলিহেলনে চলা ছেলে রীতার পছন্দ না। ছেলে মানুষের কিছুটা আত্মসম্মান, কিছুটা পৌরুষময় রাগ থাকাটা তাকে আকর্ষণ করে।

যদিও পুলক আর রীতা আপাতদৃষ্টিতে প্রেমিক প্রেমিকা নয়। কিন্তু তারপরো রীতা অন্য কোন ছেলের কথা বললে পুলক নতুন প্রেমিকের মতই ফুঁসে ওঠে। একটা কথোপকথন এর বর্ণনা দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

-জানেন!! আজকে না দারুণ একটা ঘটনা ঘটেছে।
-কি ঘটনা? আজকেও তোমার কোন বান্ধবী আছাড় খেয়ে পড়ে গেছে!!! হাহাহা!!
-আরে না! রোজ রোজ কি মানুষ আছাড় খায় নাকি!! ওইদিন বৃষ্টি ছিল দেখে উপমা টাল সামলাতে পারেনি।
-যাই বলো!! তাই বলে ওইরকম একটা দশাসই শরীর নিয়ে স্যার এর গায়ের উপর পড়ে যাওয়া। হাহাহাহাহাহা।
-হাহা ভেরী ফানি।
-বল কি দারুণ ঘটনা ঘটেছে।
-আজকে এত সুন্দর একটা ছেলে বাইক নিয়ে ইউনিভার্সিটি তে আসছিল!! আমরা তো একেকজন দেখে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম।
-(গলা চড়ে গেলো)তোমাদের কাজই তো এই। রাস্তায় যাকে তাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যাও। তোমাদের কোন রুচিবোধ নেই। তোমার সাথে তো আসলে আমার কথা বলাই উচিৎ না।
-(হাসি চেপে)কেন? আমি আবার কী করলাম?
-(গলার স্বর চড়া)কিছু না। এখন আর কথা বলব না।
-না আমার কথা তো শেষ হয়নি। কথা শেষ না হলে ফোন রাখতে পারবেন না।
-(জোর করে গলা স্বাভাবিক করে) ওকে!! শেষ কর।
-ছেলেটা যখন কাছে এসে বাইক পার্ক করলো। তখন দেখলাম যে ছেলেটা আসলে বেশী সুন্দর না।
-(নরম স্বরে) হুম!!
ফোনের অপর প্রান্তে থাকা রীতার তখন খুব এই বোকা পাগল লোকটাকে খুব ছুঁতে ইচ্ছা হলো।

পুলক যে ভিতরে ভিতরে রীতার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে এটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। কিন্তু এটা সে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার অন্যতম কারণ হলো যে সে যেরকম ঠিক সেভাবেই তাকে রীতা গ্রহণ করতে পারছে। এটা খুব কম ক্ষেত্রেই পুলকের জীবনে ঘটেছে। স্বাভাবিক কথা বার্তাতেই মানুষকে ভড়কে দেওয়ার একটা প্রবণতা তার থাকে। এতে অনেকেই তাকে ভুল বোঝে। যেমন একবার ফেসবুক এ একটা মেয়ে তাকে তার মায়ের শরীরের কথা জিজ্ঞেস করলো।
-আপনার মা কেমন আছেন?
-বেচে আছে। এখনো মরে নাই।
এরপর থেকে ওই মেয়ে আর তার সাথে কথা বলে না। পুলকও বলে না। এটা পুলকের এক ধরনের টেস্ট। কিন্তু রীতাকে সে এই টেস্ট করেছে। রীতা কখনোই তাকে জাজ করে না। যেমন ওইদিনই কথা হচ্ছিল।

পুলক বলল
-মায়ের শরীরটা ভালো না।
-কি হয়েছে আন্টির?
-হাটু ব্যথা। শরীর নাড়াচাড়া করতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে কোন দিন পট করে মরে যাবে। বয়স তো ষাট হয়ে গেলো।
-আপনি যে এরকমভাবে কথা বলেন মানুষ আপনাকে ভুল বুঝবে।
-কি রকমভাবে বলি!!
-মায়ের কথা কেউ এইভাবে বলে?
-আমি বলি।
-আপনি সবাইকে দেখান যে আপনি খুবই কঠিন। কিছুই আপনাকে স্পর্শ করে না। কিন্তু এটা তো সত্যি না।
পুলক ভিতরে ভিতরে চমকে ওঠে। এভাবে তো কেউ তাকে বোঝেনি। পুলকের মা পুলককে চেনে। ছেলে ঠাট্টার স্বরে অনেক কথা বলে। আবেগ দেখানো একদম পছন্দ করে না। পুলক কখনো মাকে জন্মদিন উইশ করে না। কিন্তু জন্মদিনের জন্য ঠিকই কিছু না কিছু কিনে আনে। ভাব করে এমন যে এমনেই কোন কারণ ছাড়াই দিচ্ছে।

কিন্তু রীতা তো এসব জানে না। তাও কিভাবে সে এসব বুঝতে পারে।

একটা অদৃশ্য হাত যে সে রীতার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে তা সে ক্ষণে ক্ষণেই টের পাচ্ছে।

(চলতে পারে)
আগের পর্বের লিঙ্ক
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ৩:৪১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×