সংঘটিত যে কোন ঘটনার রিপোর্ট কারও পক্ষে, কারও বিপক্ষে যায়। এটাই স্বাভাবিক। একজন পেশাদার সাংবাদিকের প্রধান কাজই হলো সত্য অন্বেষণ। আর এই সত্য তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ কিংবা প্রচারিত হলে একদল খুশি হলে আরেকদল অখুশি হয়। অর্থাৎ রিপোর্ট যার পক্ষে যায় সে খুশি হয়, আবার রিপোর্ট যাদের বিপক্ষে যায়, নাখোশ হয় তারা। বিশেষ করে দুর্নীতি, সন্ত্রাস কিংবা অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কখনই একজন দায়িত্বশীল পেশাদার সৎ সাংবাদিকের বন্ধু হয় না। রিপোর্টিংয়ের কারণে যারা নাখোশ হয় তারা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে এক হাত দেখে নেয়ার অপেক্ষায় থাকে। দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী চক্র ও মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পরিবেশন আমার জীবনে অন্ধকার ডেকে এনেছে। মানবাধিকার লংঘন ও দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ-প্রচার করার জন্যই আমাকে মিথ্যা অভিযোগে নির্যাতিত হতে হয়েছে। সাজানো কল্পিত অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করে আমার শিশুপুত্র, স্ত্রী এবং ভাড়া বাড়ির মালিক ও তার ছেলের সম্মুখে আমাকে নির্যাতন করা হয়। একজন সাংবাদিক-মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় এলিট ফোর্স যে অন্যায় আচরণ করেছে তা কোন দাগী অপরাধীর ক্ষেত্রে করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। দীর্ঘ ২৮ দিন করাভোগের পর স¤প্রতি আমি জেল থেকে বেরিয়েছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি।
রাষ্ট্র, দেশ, সমাজ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি কখনও কখনও সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটিভিস্টের কাজ করেছি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে সংঘটিত সকল গ্রেনেড বোমা হামলা ও মৌলবাদী অপতৎপরতার প্রতিবাদে রাজশাহীতে আমি একাই কাফনের কাপড় পরে মৌন র্যালি করেছিলাম। এই কর্মসূচীর রিপোর্ট ইংরেজী দৈনিক দি ডেইলি স্টার এ ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট ‘এ ইউনিক প্রোটেস্ট’ এবং দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় একই দিনে ‘জাগাও বিবেক, বাঁচাও দেশ রাজশাহীতে এক সাংবাদিকের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতেও একক কর্মসূচি পালন করেছি। ২০০৪ সালে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে যখন জঙ্গি হত্যা-নির্যাতন শুরু হয় তখন আমিই প্রথম জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ও শায়খ আবদুর রহমানদের হত্যা-নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ২০০৪ সালের ৩০ মে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি জিডি (নং ১৫৮৭, তারিখ-৩০/০৫/২০০৪) এবং বাগমারা থানায় আরেকটি জিডি (নং ১৬৪৭, তারিখ-৩০/০৫/২০০৪) করি। কিন্তু সেই জিডির কোন তদন্ত হয়নি আজও।
১৯৯৭ সালের ২৬ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ অধ্যাপক আবদুল খালেকসহ তিনজন শিক্ষক এর বাসভবনে ব্যাপক তান্ডবলীলা চালিয়েছিল। আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং দৈনিক সংবাদ এর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করি। ছাত্রশিবির ক্যাডাররা সেদিন আমার কক্ষে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর করে এবং আমাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায়। (সূত্র : ১৯৯৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিটিভির রাত ৮টার খবরের পরে প্রচারিত বিশেষ অনুষ্ঠান, একই সালের ২৭ এপ্রিলের দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক সংবাদসহ প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক)।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ তথা ইসলামী বিপ্লব সংক্রান্ত নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের প্রকাশিত বহুল আলোচিত রিপোর্ট তৈরী করার জন্য আমেরিকান সাংবাদিক এলিজা গ্রিসওল্ড রাজশাহীতে আসেন। এসময় আমি তাকে জঙ্গি অধ্যুষিত বাগমারা এলাকায় সরেজমিনে যেতে সহায়তা করি। (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ, ২০০৫ সালের ৬ মার্চ)। র্যাবের ব্রাশফায়ারে রাজশাহীর দূর্গাপুরে ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব বাবু নিহত হন। এ ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইটস-বিআইএইচআর এর পক্ষ থেকে তথ্যানুসন্ধান চালানো হয়। সেই তথ্যানুসন্ধান দলের নেতৃত্বে ছিলাম আমি নিজে। (সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ও দৈনিক ভোরের কাগজ, ৯ ডিসেম্বর, ২০০৬)।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সশস্ত্র ক্যাডার-সন্ত্রাসী বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন, লুটতরাজ ও নারী লাঞ্ছনার ঘটনাসমূহের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করি। যা দৈনিক সংবাদ’ এ প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে ক্ষমতাসীন জোটের ক্যাডাররা আমাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালায় একাধিকবার। বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে রাজশাহীতে বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষা এবং সকল প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমার ভূমিকা কি ছিল তা রাজশাহীর মানুষ জানেন। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সাধনপুরে বিএনপিদলীয় তৎকালীন সাংসদ নাদিম মোস্তফার নির্দেশে বিএনপি ক্যাডাররা আমার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ২০০৩ সালেও দুর্বৃত্তরা আমাকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে পাকি ভাই (তবে স্বঘোষিত বাংলা ভাই) আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
সিএসবি নিউজ এর স¤প্রচার বন্ধ হবার পর গত অক্টোবরে মাহফুজুল আলম লোটন তার ভাইপো এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এর প্ররোচণাতে আমার নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলা দায়ের করেন। তারা আমাকে র্যাবকে দিয়ে গ্রেফতার ও নির্যাতন করিয়ে হয়রানি করেছেন এবং ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রেখেছেন। আমি রাজশাহীর দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেট পরিচালনায় দুর্নীতির অভিযোগের রিপোর্ট পরিবেশন করেছি। এই কারণে জনাব লিটন ও জনাব লোটন আমাকে হয়রানি করছেন আমার নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করে র্যাবকে দিয়ে গ্রেফতার ও নির্যাতন করিয়ে। আমি দীর্ঘ ২৮ দিন কারাভোগের পর গত ১৯ নভেম্বর, ২০০৭ জামিনে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু জনাব লিটন ও জনাব লোটনের ষড়যন্ত্র এখনও বন্ধ হয়নি। আমার বিরুদ্ধে এই দুই ব্যক্তি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য ষড়যন্ত্র করে চলেছেন।
চরম অন্যায় আর অবিচারের শিকার একজন নির্যাতিত সংবাদকর্মী আমি। বাংলাদেশের একজন সংবাদ ও মানবাধিকারকর্মীকে কথিত চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনা সা¤প্রতিককালে বিরল। পেশাগত কারণে সুগভীর ষড়যন্ত্র আর একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়েছে আমাকে। এবং এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে।
পেশাগত কারণে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ-সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এই দলভুক্তরা আমাকে বেকায়দায় ফেলার উছিলা খুঁজতে থাকে। ২০০৭ সালের জুন মাসের শুরুতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু সিএসবি নিউজ’র স¤প্রচার বন্ধ হয়ে যাবার পর এই ষড়যন্ত্রের ডালপালা গজাতে থাকে। এর সাথে রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ বাহিনীর একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত রাগও যুক্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে আমার নামে ঠিকাদার জনাব লোটন একটি মামলা করেন। যে মামলায় আমি উচ্চতর আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন লাভ করি গত ১৬ অক্টোবর, ২০০৭। কিন্তু তারপরও আমাকে গত ২৩ অক্টোবর, ২০০৭ দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয়। এখন পর্যন্ত আমার নামে মিথ্যা অভিযোগে চাঁদাবাজির তিনটি মামলা চাপানো হয়েছে। দুর্নীতি, খুনি-ধর্ষক আর মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পরিবেশন করার কারণে আমার জীবন আজ চরম হুমকির সম্মুখিন। আমার নামে চাঁদাবাজির সিরিজ মামলার গভীরের কারণঃ দুর্নীতি আর মানবাধিকার লংঘনের রিপোর্ট পরিবেশন।
রাজশাহীর বহুল আলোচিত একটি এস্টেট ‘দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেট’। এই এস্টেট পরিচালনায় দুর্নীতির অভিযোগ রাজশাহীর কারও অজানা নয়। এনিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও হয়েছে। ‘সংবাদ’ এ ২০০২ সালের ৯ এপ্রিল ‘রাজশাহীর দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেট ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়োগ করা হয়েছে নতুন মোতাওয়াল্ল¬ী’ ও ২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেট রাজশাহীতে নয়া মুতাওয়াল্ল¬ীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ’ শীর্ষক দু’টি খবর প্রকাশিত হয়। যা ছিল আমার পরিবেশিত। সিএসবি নিউজ’ এ গত ২৫ এপ্রিল উত্তরাঞ্চলে ওয়াকফ্ এস্টেটগুলো বেহাত হয়ে যাচ্ছে শিরোনামে আমার পরিবেশিত একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। যাতে ওঠে আসে রাজশাহীর দেলোয়ার হোসেন
ওয়াকফ্ এস্টেট পরিচালনায় দুর্নীতির অভিযোগ। এছাড়া সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ এ ২০০৩ সালের ৩০ জুন সংখ্যায় রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি গতি পাচ্ছে না শীর্ষক শিরোনামে, দৈনিক সংবাদ এ ২০০৪ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন স্থগিত বিএনপি-যুবদল ক্যাডারদের সহায়তায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর এক গ্র“পের হামলা কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও জেলা সাধারণ সম্পাদকসহ ২০জন লাঞ্ছিত, একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কোন্দলে বিপর্যস্ত রাজশাহী আওয়ামী লীগ, ২০০৫ সালের ১৯ মে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগকে পারিবারিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে শীর্ষক প্রতিবেদনগুলো আমার নামে প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে জনাব লিটন আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। গত বছরের ১১ জানুয়ারির পটপরিবর্তনের পর দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। এই জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে দুই চাচা-ভাতিজা ও একজন প্রভাবশালী র্যাব কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতাওয়াল্ল¬ী আবদুস সামাদের পুত্র মাহফুজুল আলম লোটনকে বাদী করে পরিকল্পিতভাবে আমার নামে চাঁদাবাজির সাজানো অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। জনাব লোটনের পিতা আবদুস সামাদ দুর্নীতির দায়ে দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতাওয়াল্ল¬ীর পদ থেকে অপসারিত হয়েছিলেন।
জনাব লোটন ২০০১ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং পেশায় একজন ঠিকাদার। এর আগে ২০০০ সালের ৪ মার্চ ‘সংবাদ’ এ ‘ঘটনাস্থল রাজশাহী সন্ত্রাসীদের ভয়ে দু’টি পরিবার ঘর থেকে বেরুতে পারছে না। মামলা হয়েছে পুলিশ চুপচাপ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। এই রিপোর্টটি ছিল আমার পরিবেশিত। এরই প্রেক্ষিতে জনাব লোটন আমাকে শায়েস্তা করতে আমার ওপর সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেন। কিন্তু তার ক্যাডাররা ভুল করে আমার পরিবর্তে দৈনিক যুগান্তরের তৎকালীন প্রতিনিধি জনাব উত্তম কুমার দাসকে আহত করে। এ ঘটনার পর আমি বোয়ালিয়া থানায় জিডি করি (জিডি নং-৩১০, তারিখ-০৭/০৩/২০০০)। জনাব লোটন প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তিনি রাজপাড়া থানার মামলা নম্বর-১০, তারিখ-৭/১০/২০০৭, ধারা-৪৬৬/৪৬৮/৪৭১/৪০৬ দ.বি. এর চার নম্বর আসামি।
রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় গত ২০ জুন, ২০০৭ জনাব লোটনের দাখিল করা এজাহার পুলিশ জিডি হিসেবে রেকর্ড করে (জিডি নং-১১৬০, তারিখ-২০/৬/২০০৭)। এর দীর্ঘ প্রায় চার মাস পর গত ২ অক্টোবর একই থানায় জিডির হুবহু একটি কপি এজাহার হিসেবে দাখিল করা হয়। যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ (মামলা নং-২, তারিখ-২/১০/২০০৭, ধারা-৩৮৫/৩৮৬ দ.বি.)। এই মামলায় গত ১৬ অক্টোবর আমি উচ্চতর আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন আগাম জামিন লাভ করি। ২৩ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার পর সিভিল পোশাকধারী র্যাব সদস্যরা আমাকে গ্রেফতার করে আমার উপশহরস্থ ভাড়া বাসা হতে।
আমাকে গ্রেফতারের আগে আমার নামে পুঠিয়া থানায় দ্বিতীয় চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। মামলা নম্বর- ১৩, তারিখ-২৩/১০/২০০৭, ধারা-৩৮৫/৩৮৭/৫০৬ দ.বি.। এই মামলার বাদী স্থানীয় বিএনপি সমর্থক আবদুল জলিল। ২০০২ সালের ১৯ এপ্রিল তার ছেলে ছাত্রদল ক্যাডার হারুন কিশোরী শিউলি ধর্ষণের ঘটনায় জনতার হাতে আটক হয়েছিলেন। এই ধর্ষণ মামলা আপোস করার জন্য বাদি আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল হালিমকে চাপ দেয়া হয়। কিন্তু মামলা আপোস করতে ব্যর্থ হয়ে জিলাপির ভেতরে বিষ মিশিয়ে খাওয়ায়ে হালিমকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই চাঁদাবাজি মামলার বাদী জনাব জলিল পুঠিয়ার চাঞ্চল্যকর শিউলি ধর্ষণ মামলার বাদীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি (পুঠিয়া থানার মামলা নং-৭, তারিখ-৯/৫/২০০৫, জিআর নং-৯৯/২০০৫, অভিযোগপত্র নং-১৩৬, তারিখ-১২/৮/২০০৫, ধারা-৩০২/৩৪ দ.বি.)। ২০০২ সালের ১৯ এপ্রিল সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনা এবং আবদুল হালিম হত্যাকান্ড নিয়ে ‘সংবাদ’ এ বহু খবর পরিবেশন করেছি আমি।
পুঠিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ও পুঠিয়া পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আবদুল লতিফ বিশ্বাস আমার নামে চাঁদাবাজির তৃতীয় মামলাটি করেন গত ২৫ নভেম্বর। পুঠিয়া থানার মামলা নম্বর- ২৮, তারিখ-২৫/১১/২০০৭, ধারা-৩৮৫/৫০৬ দ.বি.। এই মামলার বাদী একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা প্রচেষ্টা, ভাংচুর ও চাঁদাবাজি মামলার অন্যতম প্রধান আসামি। জনাব লতিফের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানার মামলা নম্বর-৩, তারিখ- ২/৭/২০০৭ (জিআর-১৫২/২০০৭) ধারা-১৪৭/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮৫/৪২৭/১১৪ দ.বি.। পুঠিয়ায় তাড়ির ভাটি উদ্বোধনের অভিযোগে জনাব লতিফের বিরুদ্ধে আমার পরিবেশিত একটি রিপোর্ট ‘সংবাদ’ এ প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৩ আগস্ট। এরই প্রেক্ষিতে জনাব লতিফের রাজনৈতিক সহচর মমতাজুল আলম আমার ও ‘সংবাদ’ এর সম্মানিত সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব বজলুর রহমান এর নামে একটি মানহানি মামলা করেছিলেন। যে মামলায় আমরা আদালতের মাধ্যমে খালাস পেয়েছি।
গ্রেফতারের পর আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তা উল্লে¬খ করতে চাই। আমি, আমার সহধর্মিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারহানা শারমিন এবং আমাদের ৪ মাসের (গ্রেফতারের সময়কার বয়স) শিশুপুত্র ফিমান ফারনাদ এই তিনজন বসবাস করি রাজশাহী মহানগরীর ৫৫/২ উপশহরের ভাড়া বাসায়। গত ২৩ অক্টোবর, ২০০৭ দিবাগত রাতের ঘটনা। আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত আনুমানিক দেড়টায় কলিংবেল বেজে ওঠে। বিরামহীনভাবে কলিংবেল বাজায় আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি ও আমার স্ত্রী ঘরের দরজা খুলে বেলকুনীতে বেরিয়ে আসি। এসময় আমার কোলেই ছিল শিশুপুত্র ফারনাদ। র্যাব সদস্যরা বাড়ি ঘিরে ফেলে। তিনতলা থেকে বাড়ির মালিক জনাব আবুল কাশেম ও তার পুত্র লিখন নীচে নেমে আসেন। সিভিল পোশাকধারী ১০/১২ জন সশস্ত্র লোক আমাদের বাসার বেলকুনীর দরজার কাছে আসেন। তারা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে আমার বাসা তল্লাশী করবেন বলে দরজা খুলতে বলেন। আমি উনাদের উদ্দেশে বলি, আপনাদের পরিচয় নিশ্চিত না হলে আমি দরজা খুলবো না। তখন তারা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি দরজা খুল, নইলে তোর খুব অসুবিধা হবে।’ তারা আমাকে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ বলে গালমন্দ করতে থাকেন। আমি বোয়ালিয়া মডেল থানায় মোবাইল করি। থানার ডিউটি অফিসার আমাকে জানান, ‘থানা থেকে আমাদের কোন লোক যায়নি আপনার বাসায়। কে বা কোন বাহিনী গেছে তা আমাদের জানা নেই।’ এক পর্যায়ে সশস্ত্র লোকেরা বেলকুনীর গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। তারা নিজেদেরকে র্যাবের লোক বলে পরিচয় দেন।
বাড়ির মালিকের ছেলে লিখন সশস্ত্র লোকদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাকে প্রহার করতে থাকেন। তখন আমি তাদের কাছে হাতজোড় করে অনুনয় করে বলতে থাকি, আপনারা উনাকে মারছেন কেন ? আপনারা কোন অন্যায় আচরণ করবেন না। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি। আপনারা বাসা তল্ল¬াশী করুন। কিন্তু আমার প্রতি কোন অবিচার করবেন না। আমার ঘরে আপনাদের হাতের অস্ত্র রেখে আমাকে অস্ত্রসহ ধরে নিয়ে যাবেন না, প্লি¬জ।
এরপর আমার শিশুপুত্র ফিমানকে তার মায়ের কোলে দেই। আমি বেলকুনীর গ্রিলের দরজা খুলি। দরজা খোলামাত্র র্যাব সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে দরজার বাইরে নেন। তারা আমার দু’ হাতে হ্যান্ডকাপ পরান। আমার দু’ চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে দেন। আমার মাথা থেকে গলা পর্যন্ত কালো কাপড়ের টুপি পরিয়ে দেয়া হয়। আমার শিশুপুত্র, স্ত্রী ও বাড়িওয়ালার সম্মুখে র্যাব সদস্যরা আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ী কিল-ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন। তারা আমাকে একটি মাইক্রোবাসে করে র্যাব-৫ রাজশাহীর সদর দপ্তরে নিয়ে যান। পথিমধ্যে গাড়ির ভেতরে আমাকে মারধোর করা হয়। আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন তারা। ‘তারা আমাকে অস্ত্র মামলায় চালান দেয়া ও ‘ক্রসফায়ার’ করার হুমকি দেন।
র্যাব কার্যালয়ে নেয়ার পর আমার দু’হাত বেঁধে আমাকে উপরে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়। চোখ বাঁধা ও কালো টুপি পরিয়ে এবং আমাকে ঝুলিয়ে রাখা হয় সারারাত। রাতে আমার আশপাশে বুটের খট খট শব্দ করে ৪/৫ জন আসতো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার একই শব্দ করে হেঁটে চলে যেতেন। এভাবে সারারাতই আমার ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। সকাল আনুমানিক আটটার দিকে আমার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে আমাকে একটি ছোট রুটি পাতলা ডাল দিয়ে খেতে দেন তারা। এরপর আমাকে আবারও উপরে লটকানো হয়। রুটি খাওয়ানোর পর অনেকে আমার কাছে এসে আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ ‘চাঁদাবাজ’ ‘সাংঘাতিক’ ইত্যাদি বলে গালমন্দ করেন। সকাল অনুমান ১০ টার দিকে দুইজন এসে আমার নাম জানতে চান। যাদের কন্ঠস্বর আমার পূর্ব পরিচিত। গ্রেফতারের আগে পেশাগত কারণে এই দু’জনের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং উনাদের সঙ্গে আমার একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। এরা হলেন র্যাব-৫ এর উপ অধিনায়ক মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ ও ডিএডি হুমায়ুন কবির।
নির্যাতনের সুচনাতেই মেজর রাশীদ আমাকে বলেন, ‘এই ফকিরনির বাচ্চা, তোর এতো প্রেসটিজ কিসের? শালা চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী। তোর পাছার ভেতর ঢুকিয়ে দেবো সাংবাদিকতা। এই শুয়োরের বাচ্চা তুই আর রিপোর্ট করবি না সিএসবি নিউজ-এ। লিচু বাগানের রিপোর্ট, বেনজিরের বউয়ের কথা, খায়রুজ্জামান লিটন সাহেবের (জনাব লিটন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলার বাদি জনাব লোটনের ভাইপো) পারিবারিক ওয়াকফ্ এস্টেট নিয়ে রিপোর্ট করবি না ? হারামজাদা তুই র্যাব দেখেছিস, কিন্তু র্যাবের কাম দেখিসনি।’ এক পর্যায়ে তিনি আমার বাম গালে থাপ্পড় মারলে আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার বাম হিপে ইলেকট্রিক শক দেন। এতে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে অনুমান সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আমার হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। আমাকে বসানো হয় ইলেকট্রিক চেয়ারে। প্রায় আধাঘন্টা পর ফ্লোরে শুইয়ে আমার শরীরে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন মেজর রাশীদ ও হুমায়ুন কবির। একই সঙ্গে বুটের লাথি ও কিল-ঘুসি চলে সমানতালে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার জ্ঞান ফিরলে আমি বুঝতে পারি যে একটি পরিত্যক্ত রান্না ঘরে আমি খড়ের ওপর পড়ে আছি। যেখানে পোকা-মাকড় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। দুপুর অনুমান দেড়টার দিকে আমাকে উঠে দাঁড়াতে বলেন র্যাবের দুই সদস্য। কিন্তু নির্যাতনের ফলে আমি উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এসময় ‘অভিনয় করছে শালা’ এই মন্তব্য করে মেজর রাশীদ আমার দু’পায়ের উপরে তার পায়ের বুট দিয়ে খিচতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটার মার হয়নি। শালা অভিনয় করছে। কুত্তার বাচ্চা উঠে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে হাঁট। নইলে আরও মারবো। শালা তোকে ক্রসফায়ার দিলে ঠিক হবি।’
মেজর রাশীদ আমার পায়ে খিচতে খিচতে আমাকে একটি রুমে নিয়ে যান। বেলা অনুমান দু’টায় আমার মাথা থেকে কালো কাপড়ের টুপি সরিয়ে চোখ থেকে গামছা খুলে দেয়া হয়। এসময় একটি ফরমে নেয়া হয় আমার দুই হাত ও দুই হাতের সব আঙুলের ছাপ। আমার বুকে আমার নাম লিখে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়। এরপর পুনরায় গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে আমার মাথায় কালো কাপড়ের টুপি পরিয়ে দিয়ে আমাকে উঠানো হয় একটি মাইক্রোতে। বেলা আনুমানিক তিনটায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বোয়ালিয়া মডেল থানায়। থানা থেকে র্যাব কার্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নেয়ার সময় র্যাব সদস্যরা আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে সোজা হয়ে হাঁটবি। নইলে তোকে আবার ফিরিয়ে আনবো এবং ক্রসফায়ার-এ মারবো। পুলিশ জিজ্ঞাসা করলে বলবি আমাকে মারধোর করা হয়নি।’ বিকেল অনুমান পাঁচটার দিকে র্যাব আমাকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় ৫৪ ধারায় হস্তান্তর করে। এরপর আমার মাথার টুপি সরিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হয়।
পুলিশ সন্ধ্যায় আমাকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার ১৬ (২) ধারায় রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চালান দেয়। তখন আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন না। আমাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালের ইমার্জেন্সী ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড-৪ এ ভর্তি করেন। কারা হাসপাতালে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আমি চিকিৎসা গ্রহণ করি। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে সুস্থ্য হয়ে ওঠার আগেই আমাকে সিভিল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৮ নভেম্বর আমি জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার ১৬ (২) ধারা হতে অব্যাহতি পাই। আমাকে গ্রেফতারের মাত্র চার ঘন্টা আগে দায়ের করা দ্বিতীয় চাঁদাবাজি মামলায় আমি রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পাই। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর, ২০০৭ থেকে ১৯ নভেম্বর, ২০০৭ পর্যন্ত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকার পর গত ১৯ নভেম্বর, ২০০৭ রাত আটটায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করি। ২০ নভেম্বর আমি আমার মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে আসি। আমাকে গ্রেফতারের সময় আমার ভাড়া বাড়ির মালিকের ছেলে লিখন র্যাব সদস্যদের হাতে প্রহৃত হন। এরই প্রেক্ষিতে আমি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় আমার পতœীকে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিতে হয়।
বোয়ালিয়া মডেল থানায় করা চাঁদাবাজি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয় গত ৩০ অক্টোবর, ২০০৭। এই মামলায় আমি গত ১৬ অক্টোবর, ২০০৭ হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ এর বিচারক এ এফ এম আবদুর রহমান এর বেঞ্চ থেকে আমি আগাম অন্তবর্তীকালীন জামিন পাই। কিন্তু এই মামলাটিকে গত ২৫ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে বিবেচনা করে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে। আমার বিরুদ্ধে সাজানো ষড়যন্ত্রমূলক তিনটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হয়েছে ৫৩ দিনের মধ্যে।
জনাব লিটনের চাচা জনাব লোটনের করা চাঁদাবাজি মামলার কারণে র্যাব-৫ রাজশাহীর কতিপয় কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। রাজশাহী মহানগরীর ছোট বনগ্রামে কথিত অপহরণের অভিযোগে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা মজনু শেখকে পিটিয়ে হত্যাসহ মানবাধিকার লংঘন সংশি¬ষ্ট র্যাব-৫ রাজশাহীর কয়েকটি বিতর্কিত অপারেশন গণরোষের সৃষ্টি করে। যেগুলো নিয়ে সিএসবি নিউজ এ আমার পরিবেশিত একাধিক রিপোর্ট প্রচারিত হয়। বিশেষ করে গত ২ মে রাজশাহীর টপ সন্ত্রাসী বেনজিরের বাসার শয়ন কক্ষে শিশু কন্যা ও স্ত্রীর সম্মুখে বেনজির গুলিবিদ্ধ হন। অবশ্য র্যাবের দাবি, বেনজিরের বাসায় র্যাবের একটি দল গেলে র্যাবের ওপর আক্রমণ করে পালানোর চেষ্টাকালে বেনজির ‘এনকাউন্টার’ এ আহত হয়। এ ঘটনাটি সিএসবি নিউজ এ প্রচারিত হলে ৩ মে রাত ৯টা ৩৩ মিনেটে মেজর রাশীদ আমাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হুমকি দেন। এই হুমকিদানের বিষয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে সরকার বিষয়টির তদন্ত করে। সরকারের নির্দেশে বোয়ালিয়া মডেল থানার এএসপি সাইফুল ইসলামের কাছে গত ৩ জুলাই, ২০০৭ লিখিতভাবে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করি। মূলত: এ কারণেই র্যাব কর্মকর্তা আমার ওপর নাখোশ হন।
আমার বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলার বাদী বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। আমার নামে দায়েরকারী চাঁদাবাজির প্রথম মামলার বাদী মাহফুজুল আলম লোটন রাজপাড়া থানার একটি জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার চার নম্বর আসামি। মামলা নম্বর-১০, তারিখ-৭/১০/২০০৭ ধারা-৪৬৬/৪৬৮/৪৭১/৪০৬ দ.বি.। জনাব লোটন গত ২ অক্টোবর আমার বিরুদ্ধে আএমপির বোয়ালিয়া থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। আমি রাজশাহীর দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেট পরিচালনায় দুর্নীতির বিষয়ে ‘সংবাদ’ ও সিএসবি নিউজ এ খবর পরিবেশন করি। দুর্নীতির দায়ে অপসারিত এই এস্টেটের মোতাওয়াল্লী আবদুস সামাদের পুত্র জনাব লোটন।
পুঠিয়া উপজেলার কান্দ্রা গ্রামের বিএনপি সমর্থক প্রভাবশালী জোতদার আবদুল জলিল একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার বাদী আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল হালিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানার মামলা নম্বর-৭, তারিখ-৯/৫/২০০৫ (জিআর নং-৯৯/২০০৫), অভিযোগপত্র নম্বর-১৩৬, তারিখ-১২/৮/২০০৫, ধারা-৩০২/৩৪ দ.বি.। চাঞ্চল্যকর এই মামলার প্রধান আসামি হলেন আবদুল জলিল। আমি আবদুল হালিমের কিশোরি কন্যাকে ২০০২ সালের ১৯ এপ্রিল ধর্ষণের ঘটনা এবং আবদুল হালিম হত্যাকান্ড নিয়ে ‘সংবাদ’ এ বহু খবর পরিবেশন করেছি। আমার বিরুদ্ধে গত ২৩ অক্টোবর, ২০০৭ রাত আনুমানিক ৯টায় পুঠিয়া থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দ্বিতীয় মামলাটি করেন জনাব জলিল। আমার নামে পুঠিয়া থানায় গত ২৫ নভেম্বর, ২০০৭ তৃতীয় চাঁদাবাজির মামলা করেন পুঠিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ও পুঠিয়া পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আবদুল লতিফ বিশ্বাস। তিনি নিজে একই থানায় দায়ের করা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা প্রচেষ্টা, ভাংচুর ও চাঁদাবাজি মামলার অন্যতম প্রধান আসামি। জনাব লতিফের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানার মামলা নম্বর-৩, তারিখ- ২/৭/২০০৭ (জিআর-১৫২/২০০৭) ধারা-১৪৭/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮৫/৪২৭/১১৪ দ.বি.।
আমার নামে দায়ের করা প্রথম চাঁদাবাজি মামলাটিকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার আওতায় নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন (রিট নং ১০৯০৫/২০০৭) করি। যা হাইকোর্টের বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি আবদুল আউয়াল সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ গত ২ জানুয়ারি, ২০০৮ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। হাইকোর্টের এই বেঞ্চ জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার আওতায় মামলাটির কার্যক্রম আগামি তিনমাসের জন্য স্থগিত এবং জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা প্রয়োগের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তার জন্য সরকারের প্রতি রুলনিশি জারি করেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি আইনজীবীর সনদপত্র দাখিল করা হয় রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। কিন্তু তারপরও গত ৭ জানুয়ারি রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ জনাব এ আর মাছউদ আমার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তী ধার্য তারিখ গত ১৪ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে হাইকোর্টের আদেশের জাবেদা নকল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজ এ আর মাছউদ মামলাটির কার্যক্রম ৮ জানুয়ারি, ২০০৮ থেকে আগামি ১২ এপ্রিল, ২০০৮ পর্যন্ত স্থগিত করেন। কিন্তু গ্রেফতারী পরোয়ানা রিকল করার আবেদন না-মঞ্জুর করে গ্রেফতারী পরোয়ানা বহাল রাখেন।
পরিশেষে এটা বলতে চাই যে, শুধুমাত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে আর মানবাধিকার লংঘনের বিষয়গুলো নিয়ে রিপোর্ট পরিবেশনের জন্যই আমার বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগ এনে একাধিক মামলা হয়েছে। ফলশ্র“তিতে আমি ও আমার সঙ্গে সংশ্লি¬ষ্ট তিনটি পরিবার মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমি ও আমার পরিবার চরম এক অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করে যাচ্ছি। এই হয়রানি ও নির্যাতন এর হাত থেকে আমি বাঁচতে চাই।’ আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা, পেশায় এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে যেতে চাই আমি।
উল্লখ্যে, সেই মেজর রাশীদকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আইভরি কোষ্ট পাঠানো হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বুঝুন নির্যাতক আর নির্যাতনকারীর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৩:০৩