somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তিম [ গল্প ]

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক -
বাম বুকে গুলিটা লাগলো । রিসাত তার দুই হাত দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরলো । তার সারা শরীর কুঁকড়ে আসছিল । আস্তে আস্তে বসে পড়লেন তিনি । হঠাৎ করে তার ঠোঁটের এক পাশে কিঞ্চিত হাসি দেখা গেলো । তা উক্ত জায়গায় উপস্থিত কারোরই চোখ ফাঁকি দিলো না । যেন সবাইকে দেখানোর জন্যই । রশিদ সাহেবের বুকের উপরে চাপানো পাথরটা সরে গেলো যেন আর মাথার উপরে থাকা পাহাড়টা যেন হঠাৎ করেই গলে পড়ে গেলো । শুধু তার নয় উক্ত এলাকার সবার মনে যেন আজ একটি শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো ।
দুই -
পুরো নাম মোহাম্মাদ রিসাত উদ্দিন । গনিতের উপর পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন । একা থাকেন কাটাসুরের একটি বাড়ির এক তলায় এক রুমের বাসায় ।
স্কুলের ক্লাস শুরু হয় সকাল আঁটটায় । রিসাত বের হয় সাড়ে সাতটায় । হেঁটে হেঁটে যান । স্কুল লালমাটিয়ায় ।
নতুন নিয়োগ হওয়ায় এখন শুধু সিক্স , সেভেন আর ক্লাস এইটের গণিত ক্লাস নেন । পরবর্তীতে নাইন টেনের ক্লাস নিতে পারবেন বলে তাকে বলা হয়েছে ।
স্কুলে প্রত্যেক স্যারের একটা নাম দেয় ছাত্ররা । তারও একটা নাম আছে । তাকে ছাত্ররা ' সিদে ' নামে ডাকে । তার চরিত্র ' সাদাসিধে ' এই জন্য প্রথম অক্ষর আর শেষের অক্ষর নিয়ে শর্টকার্টে তাকে ' সিধে ' ডাকে । বিষয়টা রিসাত জানে । তবুও না জানার ভান করে থাকে । কারণ নামটা তার ভালো লেগেছে । অন্যান্য স্যারদের নাম বড়ই ভয়াবহ ।
তিন -
একদিন ছুটির দিন বাসায় বসে পেপার পড়ছিলেন । পাশের বাসার দুলাল সাহেব রুমে আসলো ।
'' রিসাত সাহেব কি ব্যস্ত নাকি ? ''
'' না । পেপার পড়ছিলাম আর কি । ''
'' তা একটু সাহায্য করতে পারবেন ? ''
'' কেমন সাহায্য বলেন ? পারলে করে দেই । ''
'' তেমন কিছু না । কিছু মুরগি কিনে এনেছি । বুয়াটা আজকে আসে নি এখনও তো দুপুরে রাঁধবে । এখন একটা একটু জবাই করতে হবে । গিন্নি আবার রক্ত ভয় পায় । না হলে আপনাকে বিরক্ত করতে আসতাম না । ''
'' বাজার থেকে কেটে আনলেই পারতেন । ''
'' ওরা কীভাবে না কীভাবে কাটে । মনের ভিতর খুত খুত থেকেই যায় । এই জন্য বাসায় করি । কি পারবেন ? ''
'' চলেন । ''
'' ধন্যবাদ । ''
মুরগি ধরার দায়িত্ব পড়লো রিসাত সাহেবের উপর । দুলাল সাহেব যখন ছুরি মুরগির গলার উপর দিয়ে চালিয়ে দিলেন । তখন মুরগির গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো । সাথে ছিল একটি ঘ্রাণ ।
রিসাত সাহেব রক্তের প্রবাহ দেখতে থাকলেন । আর এমন একটা ঘ্রাণ তিনি নাকে পেলেন যেটি এর আগে কোনদিন তিনি পান নি ।
ঐ ঘটনার পর তিনি প্রায়ই টাওন হলের বাজারে যেতেন যেখানে মুরগি , হাঁস জবাই করা হয় । ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া দেখতেন । আর সেই ঘ্রাণ নিতেন ।
এক পর্যায়ে এটি নেশা হয়ে গেলো । এই রকম দৃশ্য না দেখলে আর ঐ ঘ্রাণ না নিলে তিনি স্বাভাবিক থাকতে পারতেন না ।
আর একটা জিনিসের নেশা এক পর্যায়ে তার তেজ হারায় ।
রিসাত সাহেবের আর ঐ দৃশ্য আর ঐ ঘ্রাণে এক পর্যায়ে পুষালো না ।
তিনি এরপর থেকে রাতে বের হয়ে কারওয়ান বাজারে যেতেন । যেখানে শত শত গরু জবাই করা হয় । এতে তিনি শান্তি পেলেন । রক্তের পরিমাণ ঢের বেশি । আর আরেক ধরনের ঘ্রাণ তিনি পেতে লাগলেন । এ যেন আলাদা অনুভূতি ।
এই কারণে তার ক্লাস নেয়ার উপর কোন প্রভাব পড়তে লাগলো না । তিনি স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করতে লাগলেন ।
তবে এই নেশাও একদিন উবে গেলো । আরও নতুন কিছুর সন্ধানে মন ও শরীর উভয়ই আনচান হয়ে উঠলো ।
চার -
খবরের কাগজ সকাল সাতটার দিকে দিয়ে যায় । চা খেতে খেতে খবরের কাগজের উপর চোখ বুলাতে থাকেন ।
সেদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় একটি লাশের ছবি দেখলেন । ছবিটা দেখে একটি চিন্তা তার মাথায় খেলো গেলো । চিন্তাটা আসতেই তিনি ঘাবড়ে গেলেন । চা পুরো না খেয়ে পেপার না গুছিয়ে কোন রকম দরজা তালা দিয়ে তিনি বের হয়ে গেলেন স্কুলের জন্য ।
এই দিন তিনি ঠিক মতো ক্লাস নিতে পারলেন না । স্কুলের হেডমাষ্টার রতন সাহেব তাকে বললেন ,'' ছুটি তো নেন না একদিনও । টানা ক্লাস করাতে করাতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন । এইবার একেবারে সাতদিনের ছুটি নেন । ''
রিসাত সাহেবও সাই দিলেন । এরপর ছুটি চেয়েএকটি দরখাস্ত লিখে দিলেন । আর সাথে সাথেই অনুমদিত হয়ে গেলো ।
বাসায় এসে গোসল আর খাওয়া দাওয়া সেরে তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন । কিন্তু সকালের সেই চিন্তাটা তার মাথায় এসে ঘোরা ঘুরি করতে লাগলো । ভয় আর সেই কাজ করার প্রতি এক দ্বিমুখী আকর্ষণ অনুভব করলেন । প্রতিটাই প্রচুর প্রবল ।
এই অবস্থা আর সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না । তিনি আবার গোসল করার জন্য বাথরুমে গেলেন । অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলেন । এই চিন্তা থেকে কিন্তু তিনি মুক্তি পান নি ।
ক্লান্ত হয়ে এক পর্যায়ে ভেজা শরীর নিয়েই বিছানায় তিনি শুয়ে পড়লেন । ঘুম ভাঙল রাত এগারোটার দিকে । আবার সেই চিন্তা ।
'' এখন মানুষের গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়ার দৃশ্য দেখার পালা । সেই রক্তের ঘ্রাণ দেয়ার পালা । ''
এই চিন্তা থেকে একটুর জন্য হলেও মুক্তির জন্য তিনি ব্লেড দিয়ে নিজের আঙ্গুলের উপর কেটে ফেললেন , সেই ঘ্রাণ নিয়ে মাথাকে ঠান্ডা করার জন্য । অল্প সময়ের রসদ জোগাল সেটি । কারণ পরিমাণ কম ।
শরীর আর মানতে চাইল না । পশুর মতো আচরণ শুরু করলো । একটি ছুরি পাঞ্জাবির পকেটে গুঁজে দরজা বন্ধ করে রওনা হলেন ।
রাস্তায় রাস্তায় হাটতে লাগলেন । তার খোঁজ একজন মানুষ শুধু আর আশে পাশে কিছুই থাকবে না । কিন্তু যে জায়গায় কোন গাড়ি নেই সেই জায়গায় কোন মানুষই নেই আবার যে জায়গায় আছে দুটোই আছে । মিলছে না ।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন রাত একটা বাজে । দূরে একজনকে দেখতে পেলেন তখন তিনি । শরীর যেন অনেকদিন ধরে খুদার্ত । এমন আচরণ করে উঠলো ।
আশে পাশে তেমন কিছুই নেই । এই রকম সুযোগ আর হয়তো পাওয়া যাবে না ।
মানুষটা কাছে আসার পড়ে বুঝা গেলো লোকটা বেশ বয়স্কই । এতো রাতে রাস্তায় কি করছে ?
এরপর রিসাত সাহেব চিন্তা করলেন তাতে তার কি ? তাকে আগে তার শরীর ঠাণ্ডা করতে হবে ।
রিসাত সাহেব দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে ফেলে দিলেন । শক্ত করে বাম হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরলেন আর ডান হাত দিয়ে ডান পকেটের ছুরিটা বের করে গলার উপর চালিয়ে দিলেন । ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো । তিনি রক্ত দেখতে থাকলেন । কি সুন্দর রক্ত । কি তার ঘ্রাণ ।
অপূর্ব । অপূর্ব । এর থেকে সুন্দর আর কি হতে পারে ?
তার শরীর ঠাণ্ডা হল । নিজের শরীরের নিয়ন্ত্রণ যেন বুঝে পেলেন । এরপর তিনি দেখতে পেলেন সেই লোকটি আর কেউ নন তার স্কুলের হেডমাস্টার রতন সাহেব । .................................................
[ ইংশাল্লাহ বাকিটুকু পরবর্তীতে দেয়া হবে ]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×