somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডানা [ গল্প ]

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১-
দরজার ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ আসছিল । চিন্তিত মুখে তন্দ্রার মা দরজায় নক করলো । সাথে সাথে কান্না বন্ধ , আর দরজা খুলতে কারো দৌড়ে আসার শব্দ পাওয়া গেলো । তন্দ্রা দরজা খুললো ।
মেয়ের চোখ লাল দেখে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করলেন ,
“ কি হয়েছে , মা ? কাঁদছিস কেন ?”
“ আরে মা , আমি কাঁদছিলাম না তো ওভাবে । মুভি দেখছিলাম । মুভির নায়িকা নায়কের জন্য কষ্টে কাঁদছিল ।”
“তাহলে তোর চোখা লাল কেন ?”
“ নায়িকার কষ্ট দেখে আমারো চোখে পানি এসে গেছে ।”
উত্তরে মা সন্তুষ্ট হয়েছেন বোঝা গেলো । তিনি তার মেয়েকে চিনেন ছোট থাকতেও কষ্টের দৃশ্য দেখলে কেঁদে ভাসিয়ে ফেলতো । আগে একসাথেই মুভি দেখা হতো এখন আর হয়ে ওঠে না ।
মা চলে গেলে তন্দ্রা আবার নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে রাখে । ও কোন মুভি দেখছিল না , কান্নার শব্দটা ওরই ছিল । কষ্টগুলো যতোই চেপে রাখার চেষ্টা করে না কেন এক সময় সব বাধা ঠেলে চোখের সরুপথ খুঁজে ঠিকই বাহিরে চলে আসে । তাতে একটু হলেও কষ্ট কমে । কিছুদিনে সুখ মেলে । এই সুখটা কষ্ট কমার সুখ , আনন্দের কারণে আসা সুখ নয় । তবু সুখ তো , তাতেই দু’দন্ড শান্তি ।
২-
আগে মা-বাবার সাথেই রাতে ঘুমতো । মাকে জড়িয়ে না ধরলে তন্দ্রার ঘুম আসতো না । বাব-মা এর এক মেয়ে তন্দ্রা সুতরাং মায়ের নৈকট্যের জন্য কারো সাথে যুদ্ধে নামতে হয় নি । কিন্তু হঠাৎ করে কি যেন হলো – ওর বয়স তখন ১০ বছরের মতো হবে । নিজের জন্য আলাদা রুম দাবী করে বসলো সাথে শর্ত জুড়ে দিলো – ও রুমে কেউ ঢুকতে পারবে না । ও নিজের রুম নিজের মতো করে রাখবে , ঐ রুমে প্রবেশের অধিকার ও কাউকে দিতে রাজী নয় । ১০ বছরের মেয়ের জিদ করেছে সত্য কিন্তু সব চাওয়া তো আর পূরণ করা সম্ভব না । এজন্য নয় যে তন্দ্রার বাসা ছোট । তার বাবা বড় ব্যবসায়ী । বড় বাসায় তারা থাকে বেশিরভাগ রুমই ফাঁকা পড়ে থাকে । কিন্তু সমস্যাটা হলো মেয়েকে একা থাকতে দেয়া সাথে অদ্ভূত শর্তটি যা মেনে নেয়া বেশিরভাগ বাবা-মায়ের পক্ষেই সম্ভব না । কিন্তু তন্দ্রার জিদ আর সব মেয়ের জিদ যে এক নয় । টয়লেটের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে আছে যতক্ষণ পর্যন্ত না ওকে ওর চাওয়া অনুযায়ী রুম দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ও বের হবে না ।
দরজা ভেঙ্গে ওকে বের করে আনা হলেও ওর মুখে কিছু দেয়া সম্ভব হয় নি , পানিটি পর্যন্ত না । পরে এক রকম বাধ্য হয়েই মেয়ের জিদের কাছে হার মানতে হয় বাব-মা’র ।
৩ –
বাস্তবতার চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ নয় । বাস্তবতা শিখতে সাহায্য করে সবচেয়ে কঠিন সত্যগুলো । তন্দ্রার পরিবর্তনের পিছনেও বাস্তবতা দায়ী । একই সাথে কতগুলো চরিত্রে যে অভিনয় করে বলা মুশকিল ।
একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছে এখন । ওর পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য – “আমাকে জানতে হবে” । যার জন্য ও অনেক জানলেও ওর গ্রেড শীটে তার প্রতিফলন পাওয়া যায় না । ওর জ্ঞান দিয়ে শিক্ষককে খুশি করে নাম্বার নেয়ার ক্ষেত্রে ও নারাজ ।
বাসায় একরকম তন্দ্রাকে দেখতে পাওয়া যায় , বন্ধুদের সাথে আরেকরকম । অনেকটাই বিপরীত । যার জন্য দু জায়গার মানুষের মধ্যেও ও দূরত্ব রেখেছে । ওর বাসার কেউ ওর কোন বন্ধু-বান্ধবকে চিনে না ওর বন্ধু-বান্ধবও ওর বাসায় কখনো আসে নি , ওর পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেও না ।
৪-
বেশ সকালেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস তন্দ্রার । সকালে উঠে ওর প্রথম কাজ বারান্দায় মায়ের লাগানো ফুল গাছগুলো উঁকি মেরে দেখা । ফুলের সৌন্দ্যর্য্য ওকে আকর্ষণ করে না না করে ফুলের ঘ্রাণ তবুও উঁকি মারার পিছনে মূল কারণ কোন ফুল ফুটলে মাকে ঘুম থেকে জাগিইয়ে তোলে সেই ফুল দেখানো । ফুল ফোটার খবর শোনার পর মায়ের অভিব্যক্তির পরিবর্তন ওকে খুশি করে । কারো খুশির জন্য এতটুকু অভিনয়ই না হয় করলো ও ।
আজ সকালে উঠেও একই কাজ করলো । আজ ফুল ফুটেছে , অপরাজিতা ফুল । এই একটা ফুলের প্রতিই ও একটু দূর্বল । অপরাজিতার ক্ষণস্থায়ী জীবনই হয়তো এর কারণ । দৌড়ে মাকে ঘুম থেকে তুলতে যাওয়ার সময় ওর বাবার সাথে দেখা । সাধারনত মেয়েদের সাথে বাবাদের সম্পর্ক ভালো থাকে কিন্তু ওর ক্ষেত্রে ভিন্ন । ওর বাবা ওর সান্নিধ্য চাইলেও তন্দ্রার কাছ থেকে আর সাড়া পায় না পরে নিজেই সরে যায় ।
বাবাকে দেখেই চুপসে গেলো একেবারে । বাবা এতো সকালে সাধারণত ঘুম থেকে উঠে না । নিজের অফিস সুতরাং দেরি করে গেলেও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার লোক নেই ।
তন্দ্রার বাবা গোলাম রাব্বানী তন্রাকে জিজ্ঞেস করলেন –
“ এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে ?”
“ মা’র কাছে । ”
“ কোন সমস্যা ?”
“ নাহ ।” চোখ মাটিতে রেখেই বাবার সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল ।
গোলাম রাব্বানী সাহেবও আর বেশি ঘাটলেন না । মেয়ের সাথে এভাবে কথা চালিয়ে যাওয়ার মানে হয় না । মেয়েকে “তুই” করে না ডাকলে নৈকট্য কিভাবে আসবে ? মেয়েও সম্বোধন করে “আপনি” বলে । অর্থের কষ্ট না থাকলেও এই ব্যাপারটা খুব পীড়া দেয় তাকে । একটা মাত্র মেয়ে , এক সময় বিয়ে হয়ে দূরে সরে যাবে । যতদিন আছে ততটূকুও যদি আপন করে না পাই । এসব কথা চিন্তা করতে করতে দীর্ঘ এক নি;শ্বাস ছাড়লেন ।
মা’কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে টেনে বারান্দায় নিয়ে এলো তন্দ্রা । ফুল দেখিয়ে মায়ের হাসি মুখ দেখে তবেই মাকে ছাড়লো ।
৯ টায় ভার্সিটিতে ক্লাস । ৮ টার দিকেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো । আরেক বান্ধবীর সাথে একসাথে রিক্সায় যায় । বাবার গাড়ি থাকলেও সে গাড়িতে চলাচলে সাচ্ছন্দবোধ করে না । এটাও জিদ করে আদায় করা অধিকার ওর ।
এক মেয়ে তাকে এভাবে ছাড়তে রাজী নয় কিছুতেই তার বাবা-মা । তাই ও বাহিরে গেলে ওকে চোখে চোখে রাখার জন্য একজন লোক ঠিক করা আছে । যার দায়িত্ব হলো ওর চোখে ধরা না পড়ে ওকে সবসময় খেয়াল করা । ও কি করলো সেটার দিকে খেয়াল না দিয়ে বরং ওর সাথে কে কি করলো সেই দিকে বেশি খেয়াল রাখা ।

৫ –
স্নেহা বাসার সামনে তন্দ্রার জন্য অপেক্ষা করছিল । তন্দ্রা আসতেই রিক্সায় উঠে গেলো ।
অকস্মাৎ স্নেহা ওকে জিজ্ঞেস করে বসলো -
“ কিরে আজকের কুইজের প্রিপারেশন কেমন ?”
“কিসের কুইজ ?”
“ আরে জানিস না ? ইংরেজি কোর্সের কুইজ আছে আজকে ।”
“ শৈল কালকে বলেছিল আমি মনে করেছি ফাজলামো করছে । এর আগেও দু’বার আমাকে বোকা বানিয়েছে ।”
“ তো আমাকে জিজ্ঞেস করতি । এখন কি করবি? যদিও তোর ইংলিশের অবস্থা ভালো তোর ওতো চিন্তা নেই । আমার প্রিপারেশন নিয়েও খুব লাভ হয় না।”
“ তবুও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার একটা ব্যাপার আছে না ।”
“ যাক গে । নতুন কিছু এঁকেছিস ?”
“ নাহ । ফিল পাচ্ছি না রে ।”
“ তা ফিলের জন্য কি করতে হবে ?”
“ প্রেম করতে হবে বুঝলি । প্রেম না করা পর্যন্ত মনে হয় না আর কোন ছবি আঁকতে পারবো ।”
এরপর স্নেহা তার মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো । কাজ ছাড়া মোবাইল ফোন গুঁতোগুঁতি করা তন্দ্রার পছন্দ না । ও রাস্তার মানুষ দেখে , রিক্সাওয়ালাদের মুখের ভাব দেখে , ট্রাফিক পুলিশের ঘামে সিক্ত বিরক্তিতে ভরা মুখ দেখে ।
কিছুক্ষণ আগে যে মিথ্যে কথা বললো সেই কথা মনে আসলো । ওর শখের মধ্যে মানুষের সাথে অভিনয়ের পরপর আছে ছবি আঁকা । তুলির আঁচড়ে মনের কথা বলা , সাদা-কালো জীবনে একটু রঙের ছোঁয়া আর কি । ও প্রতিদিন ছবি আঁকে । একদিন বাদ দেয় না । ওর ছবি আঁকার সাথে প্রেমের কোন সম্পর্ক নেই । “প্রেম” হাস্যকর শব্দ । কোন ছেলের জন্যও কখনো ওর সেই অনুভূতি কাজ করে নি । প্রত্যেকজটা মেয়ের সাথে ও যেভাবে কথা বলে প্রত্যেকটা ছেলের সাথেও একইভাবে কথা বলে । আমরা প্রত্যেকেই তো মানুষ । মানুষের মতো আচরণ করাই আমাদের দায়িত্ব । বিয়ে – প্রেম কোনটা নিয়েই ওর চিন্তে নেই । ওর কল্পনার দুনিয়ায় এর দু’টোর কোন অস্তিত্ব নেই ।
এসব চিন্তে করতে করতেই ভার্সিটি পৌঁছে গেলো ওরা । রিক্সার ভাড়া চুকিয়ে ক্যাফেতে গিয়ে বসলো ওরা , হাতে আরো ২০ মিনিট আছে । স্নেহা আগের মতোই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত । তন্দ্রা এমন সময়গুলোতে চারপাশে খেয়াল করে – কে কি করছে , কি নিয়ে আলোচনা করছে । মানুষের কাজকর্ম খেয়াল করায় সে অন্য মাত্রার আনন্দ পায় । ভিত্তিহীন বিষয়বস্তু নিয়ে তর্ক , ছেলেদের আলোচনার মূল বিষয় সেই আদিম যুগের মানুষের মতোই । ছেলেদের চোখের চাহনি , মেয়দের চুলে হাত বুলানোর ভাব – এসবই খেয়াল করে ও । শিল্পী মানুষ –তুলির আঁচড় দিতে এগুলো বোধ হয় লাগে ।
ক্লাসের সময় হতেই ক্লাসে গেলো । দুটো ক্লাস শেষে , কুইজ দিলো । আঁধারে ঢিল মেরে আর কতদিন চলা যায় । আজ পরীক্ষাটা মন মতোন হলো না । মন খারাপ করে আবার ক্যাফেতে এসে বসে রইলো । এবার মাথা টেবিলে মাথা নামিয়ে বসে ছিল ।
তখন ওর ভার্সিটির বেশ কিছু বন্ধুর উদয় ঘটলো । কেক বেলুন নিয়ে এসে হুলুস্থূল অবস্থা । আজকে তন্দ্রার জন্মদিন ।
তন্দ্রা এইরকম কিছু আশা করেছিল তাই অবাক হয় নি । কিন্তু অবাক হওয়ার অভিনয় করে গেলো , বন্ধুদের খুশি করতে । কেক কাটা হলো , ক্রিম মাখামাখি , গান গাওয়া কিছুই বাদ যায় নি । অনেক ছবিও তোলা হলো , যদিও তন্দ্রা ছবি তোলা থেকে দূরত্ব বজায় রাখে । আজকে ওর না কেউ শুনলো না আর ও-ও বারণ করলো না ।
৬ –
বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো । বাসা থেকে দু’বার ফোন এসেছে ধরতে পারে নি । তাই অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই বাড়ি ফেরা হলো ।
বাড়িতেই ওর জন্য চমক অপেক্ষা করছিল সেটাও ওর জানার বাহিরে ছিল না । স্বাভাবিকভাবে বাসায় ঢুকার সময় কান খাড়া করে রেখেছিল বেলুনের শব্দ শুনলে চিৎকার করে উঠে অবাক হওয়ার অভিনয় করতে হবে আবার তবে এবার একটু ভিন্নভাবে । বেলুন ফাটার শব্দ শোনা গেলো । প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলো , সবাই জন্মদিন শুভেচ্ছে জানাচ্ছে গানের সুরে । সকল আত্মীয়-স্বজন এসেছে , বাড়ি লোকে লোকারণ্য । আংকেল – আন্টিদের হাসির শব্দে পুরো বাড়ি সরগরম ।
তন্দ্রার বয়সী তেমন কেউ নেই সেই পরিচিত মুখগুলোর ভীড়ে । ওর আম্মু –আন্টিদের আলোচনার বিষয় শুনে ভিতরে প্রুচণ্ড হাসছিল আবার কষ্টও হচ্ছিল । ফিজিক্সের অনার্স করা একজন মহিলা কিভাবে নিজের সব স্বপ্ন , অর্জিত জ্ঞান বিসর্জন দিয়ে এই ধরনের নিম্নশ্রেণীর আলোচনা করার রুচি পান । সময় , পারিপার্শিক পরিবেশ মানুষকে কতটা পরিবর্তন করে ফেলে ।
এক আপুর সাথে দেখা হতেই হাত টেনে এক রুমে নিয়ে ঢূকলেন ।
“ তা তোর খবর কি ?”
“ ভালোই আপু । তা তোমার কি অবস্থা ? বরের সাথে দিনকাল কেমন যাচ্ছে ?”
“ আমারো ভালোই যাচ্ছে । তুই কি আমার মুরুব্বি যে আমার বরের সাথে আমার সম্পর্কে কেমন যাচ্ছে জানতে চাচ্ছিস ।“
“ তা না কিন্তু কানে তো কথা আসে , আপু ।” বলেই হাতে আলতো করে টিপ দিলো ।
চোখ পাকিয়ে তাকালো ওর দিকে
“ ঐ বেশি পেঁকে গেছিস । তা যার জন্য ডাকলাম তোর কেউ হয়েছে নাকি রে ?”
“ হবে না আবার আমি কি সেই ছোট্ট নাকি । কত বন্ধু আমার ।”
“ তা আসল বন্ধু পেয়েছিস নাকি ।” বলার সাথে সাথে চোখ টিপ দিলো ।
“ হুম পেয়েছি বটে ।”
“ তা সে কি করে?”
“ আরে তুমি আমার বন্ধু নাকি যে আমি তোমাকে সব গোপন কথা বলে দেবো ? বাহ ।”
“ তা তুই ভালো কতাহ শিখেছিস রে? আমার কথা দিয়েই আমাকে ঘায়েল করিস ।”
“ তা বড়দের কাছ থেকে কিছু শিখতে তো হবে নাকি”
সেই আপু আর কথা চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা পেলো না । কেটকেটে রঙের শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
আগে এই আপু অর্থাৎ তামান্ন আপুর সাথে ভালোই খাতির ছিল । প্রেম অতঃপর বিয়ে সব খেলো । ডাক্তারি পড়েও সে লাইনে না গিয়ে এখন জামাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতেই তার আগ্রহ বেশি । মানুষ কত সহজেই না পরিবর্তিত হয় ।
৭ –
রাতের খাবার পর্ব শেষ হতেই একে একে সবাই বিদায় নিলো ।
ভার্সিটি থেকে এসে নিজের রুমে আর ঢোকা হয় নি । সব সেরে নিজের রুমে ঢুকে হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলো ও । আর অভিনয় করতে হবে না আজকের মতো । রুমের একপাশের দেয়ালের দিকে তাকালো । যে বছর থেকে ও এই রুম পেয়েছে সেই বছরের জন্মদিন থেকে ও দেয়ালে একটা করে ছবি আঁকে কালো মমের রঙ দিয়ে । একটা বাক্স , বাক্সে একটা মেয়ে । প্রতি জন্মদিনে বাক্সের আকার একই থাকছে কিন্তু মেয়েটা বড় হচ্ছে । যেন ওর জীবনের কথা বলে প্রত্যেকটি ছবি ।
হঠাৎ করে কানে একটা শব্দ এসে বাঁধলো । ডানা ঝাপটানোর শব্দ । পাশের বিল্ডিং এর ছাদে কবুতর পালে । কবুতর ডানা ঝাপ্টাচ্ছে খাঁচায় । কবুতরগুলোকে তো সকালে ছেড়ে দেয় তখন ওরা উড়ে যায় না কেন ? আবার কেন খাঁচায় বন্দী হবে জেনেও ফিরে আসে বিকেল বেলা ? রাতে খাঁচায় পাখা ঝাপটানো , কেন ?
পরের উপর নির্ভরশীলতাই এর মূল কারণ । খাবারের , বাসস্থানের নিশ্চয়তার টানেই ওরা বারবার ফিরে আসে ঠিক আমাদের মতোন । তন্দ্রা ভাবে , আমরা না মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তবে আমাদের আর কবুতরের বেঁচে থাকার ধরন একই হবে কেন ?
এসব ভাবতে ভাবতে মনটা উদাস হয়ে যায় । ছবি আঁকাটাও পিছিয়ে যায় । কিন্তু আজকে ছবিতে নতুন কিছু যোগ হবার অপেক্ষায় । আজও বাক্স আঁকলো , বাক্সের ভিতরে ওর বয়সী একটি মেয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে । কিন্তু আজকের পার্থক্যটা হলো মেয়েটার পিঠ থেকে ডানা বের হচ্ছে । ছবিতেই কি সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছে ডানাটা বড় হচ্ছে- হবে এবং সেই বাক্সের প্রাচীর ভেদ করে বের হয়ে আসবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×