কথায় বলে মান্ধাতার আমল,মানে অনেক আগের কথা।সূর্য বংশের রাজা মান্ধাতা,এরপরে মান্ধাতার ছেলে হল মুচুকুন্দ,তারপরে পৃথু,ইক্ষাকু,আর্য্যাবর্ত,তার ছেলে ভরত।এই রাজার সময় রাজ্য অনেকদূর প্রসারিত হয়েছিল,তাই মনে করা হয় ভরত রাজার নামেই হয়েছে ভারত।ভরতের ছেলে ভূধর,তার ছেলে খাণ্ড,এই খাণ্ডর ছেলে দণ্ড খুব রসিক। রাজপুত্র হয়েই এক সাধারণ প্রজার মেয়েকে বলাৎকার করে রাজার আদেশে বনবাস লাভ করে।আগে অবশ্য তার বিয়ে দেওয়া হয়,কিন্তু বনে গিয়ে তিনি দণ্ডারণ্য নামে নগর বসালন।সেখানে শুক্রকে আনলন শিক্ষাগুরু করে।এই শুক্রের বাড়িতে দণ্ড রোজ পড়তে যেত।একদিন পড়তে গেছে,গুরু নাই,তার মেয়ে অব্জা একা বাড়িতে।ব্যাস,যায় কই! দণ্ড তাকেই গিয়ে প্রেম প্রস্তাব দিল।অব্জা বলে বিয়ে করতে কিন্তু কে কার কথা শোনে,ফুলের বনেই অব্জার ধর্মনাশ করে দিল দণ্ড।রক্তপাত হল অব্জার,সমস্ত শরীরে নখের আঘাতের চিহ্ন।মুণি মানে অব্জার বাবা এসে অব্জার কাছে খেতে চাইল,কিন্তু অব্জাকে দেখেই তিনি সব বুঝে জানতে চাইলেন,অব্জার
মুখে দণ্ডের সব কুকীর্তির কথা শুনে তিনি শিষ্যকে ডেকে এনে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিলেন,রাগের চোটে।সূর্য বংশ শেষ হয়ে গেল প্রায়।সকল মুণিরা তখন চিন্তায় পড়ে গেল,কী হবে সূর্য বংশের খুব দরকার।আর কেউ কেই তাদের-তখন দেখা গেল অব্জা সন্তান সম্ভবা।অব্জাকে তখন অযোধ্যায় পাঠানো হল।অযোধ্যার রাজাও মেনে নিলেন (ব্রাহ্মনের তেজ না মানলে উপায় ছিল না)।অব্জার ছেলে হল হারীত।বাপে হরণ করে জন্ম হয়েছে বলেই এমন নাম,হারীতের ছেলে হরবীর্য,তার ছেলেরাজা হরিশ্চন্দ্র!হরিশ্চন্দ্রের বিয়ে হল শৈব্যা নামে সুন্দরীর সঙ্গে।সে মোটামুটি সুখেই ছিল।একটা ছেলেও হল,তার নাম হল রুহিদাস!ভদ্রলোকের মত এরা ভালোই ছিল প্রথমে।তারপরে হরিশ্চন্দ্রের গল্প শুরু হল।
ইন্দ্রের সভায় নাচার সময় তাল কেটে এক নর্তকী অভিশাপ পেয়ে এলেন মর্ত্যে।মর্সেত্যে এসেই সে কথা নাই বার্তা নাই বিশ্বামিত্রের তপোবনে রোজ ডাল ভাঙে,স্ব্রর্গে এমন সুন্দর বাগান কই?তাই দেখে মুণি ফাঁদ পেতে রাখলেন।যথারীতি পরের দিন এসে সেই নাচুনী ধরা পড়ল ফাঁদে।সেদিনই আবার হরিশ্চন্দ্র এসেছে সেই বনে শিকার করতে।মেয়েগুলো আটকে আছে দেখে সে ছেড়ে দিল।,মুক্ত করল তাদের।সকালে বিশ্বামিত্র আইস্যা দেখে হ্যাঁ,কেউ তো বাঁধা পড়েছিল তার ফাঁদে,কিন্তু কে মুক্ত করল?খবর নিয়ে তিনি হরিশ্চন্দ্রকে ডেকে পাঠালেন।(ব্রাহ্মন -ক্ষত্রিয় গুরুত্ব লক্ষ্যনীয়)।হরিশ্চন্দ্র এসে জানালেন যে দেখুন মুণি,আমি তো রাজা,সবার ভালো করাই আমার কাজ-তাই ওই মেয়েটা মুক্তি চেয়েছে বলে আমি তাকে মুক্তি দিয়েছি।আমি ত জানতাম না,সে যে আপনার শিকার।আমার তেমন দোষ নেই।মুণি বলল,তোমার কাছে মুক্তি চাইল আর তুমি দিলে? আমি তোমার কাছে যা চাইব তুমি দিবা? হরিশ্চন্দ্র কয় হ্যাঁ,দেব। মুণি বলে আগে তাহলে তোমার রাজ্য দিয়ে দাও।রাজা বলেন,আচ্ছা-দিলাম।তখন মুণি বলে এই দান নেব কিন্তু দান শুধু নেয় না,আমি তার জন্য সাত কোটি সোনা দক্ষিনা চাই।রাজা সোনা আনতে হুকুম করতেই মুণি বলে,তোমার অযোধ্যা রাজ্য কিন্তু দিয়ে দিয়েছ-।তাহলেনিজেরই আর থাকার জায়গা নাই উপায়? রাজার তো থাকারও জায়গা নাই।তখন,বউ বাচ্চা নিয়ে রাজা চললেন কাশী,সেটা তার রাজ্যের বাইরে,সেখানে গিয়ে নিজের বউকে বিক্রি করলেন(নারী!)কিন্তু দাম উঠল মোটে চার কোটি।তার উপরে রাজার ছেলেটাও তার নিজের মায়ের সঙ্গে মালিকের ঘরে যেতে চায়।খোরাকি কম পাবে এই শর্তে ছেলে সহ মাকে এক ব্রাহ্মণ কিনল ,আর সেই চার কোটি সোনা নিয়েই হরিশ্চন্দ্র মুনিকে দিয়ে বলল একটু কম-টম করে নেন,কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।তখন রাজা নিজেকে বিক্রি করল কালু ডোমের কাছে তিন কোটি সোনায়।কালু ডোম কিনে নিল হরিশ্চন্দ্রকে ।
মুনি পুরোপুরি সাতকোটি সোনা গুনে নিয়ে অযোধ্যায় চলে গেলেন আর কালু ডোম এইবার তার নতুন কেনা দাসের সঙ্গে আলাপ করতে বসলেন।নাম কি ,পরিচয় কি জানা দরকার কাজ দেওয়ার আগে।হরিশ্চন্দ্র ,শুনে তো কালুর চক্ষুস্থির! মালিকের নাম যেখানে কালু আর তার চাকরের নাম হবে হরিশ্চন্দ্র!এক্কেবারে বাদ।কালু সাফ জানিয়ে দিল আজ থেকে চাকরের নাম হবে হরে।হরিশ্চন্দ্র বিক্রি হয়ে গেছেন আগেই,তার কিছুই বলার নেই,শুধু বললেন প্রভু আমাকে তোমার এঁটো খাবার দিও না,আর যা বলো করব।বেশ,মুখ দেখবার জন্য তো নগদ তিন কোটি দিয়া কিনিনি,আমার বারাণসীর শ্মশানঘাটের দেখাশুনা আজ থেকে তুমি করবে।ওখানে অনেক শুওর আছে,তাদের রাখবে আর ঘাটে যত মরা আসবে একএকটা পোড়ানোর জন্য সাত কাহন করে নেবে।কাজ বুঝিয়ে দিয়ে কালু ডোম চলে গেল আর শ্মশানে যথারীতি হরে চুলটুল ঝুঁটি বেঁধে কাজে লেগে গেল।
ওদিকে হরিশ্চন্দ্রের বউ রাণী তো ব্রাহ্মণের ঘরে আছে ,বরাদ্দ সারাদিনে মোট এক তন্ডুল চাল।চার পোয়া।ছোট্ট ছেলে রুই দাস ,মা নিজে না খেয়ে চিরকালই সন্তানকে খাওয়াবে।বাপে গেলেন দান দেখাইতে,বাচ্চার কথা ভাববে কেডা,সেই মা।তিন পোয়া খায় ছেলে,আর এক পোয়া খায় মা।একদিন মালিক বলল দেখ শৈব্যা,যদি তোমার ছেলে বন থেকে রোজ ভালো ফুল তুলে আনতে পারে,তো এক পোয়া চাল বেশী দেব।কিছু তো করার নেই ,কেনা দাসী,ছোট্ট ছেলেটা পরেরদিন থেকে চলল ফুল তুলতে ।যাবি তো যা,সেই পাজি বিশ্বামিত্রের বনে গিয়াই ডাল ভাঙ্গসে,সে কি আর অত বোঝে! মায়ে দুইট্যা খেতে পাবে ,ফুল চাই।মুনির তো আরগুণ নাই ছাড়গুণ আছে ।দেখেই ব্যাবস্থা পাকা করে রাখল,কাল যদি ওই হরিশের পোলায় ফুল পাড়তি আসে,তো সাপের কামড় খাবে।গুচ্ছের সাপ ছেড়ে চলে এল গাছের নীচে। পরদিন সকালে রুইদাস ফুল তুলতে বেরোবে,শৈব্যা তাকে বারণ করে,আজ থাক বাছা,আমার ভয় করছে খুব,বনের মধ্যে সাপ-খোপ আছে ।ছেলে হেসে বলে সে তো রোজই থাকবে মা,তোমারে তাইলে শয়তান ব্রাহ্মণ খাইতে দেবে না।আমি যদি বাপের ব্যাটা হই তো তোমার অন্ন জোগারের চেষ্টা করাই আমার কাজ।বলে সে রওনা দিল।বনে গিয়ে ফুলও তুলল অনেক।তারপর যেই বেলপাতা তুলতে গেছে আঁকশি দিয়ে,সেই গাছটাতেই সাপ রাখা ছিল,বিষধর।ছেলেটাকে কামড়ে দিল ।বিষে নীল হয়ে গাছেরতলায় ছেলেটা পড়ে রইল। ওদিকে বিলম্ব দেখে ব্রাহ্মন রেগে যাচ্ছে,তার পুজা হয় না ফুল ছাড়া,পুজা না হইলে খাওয়া হয় না।শৈব্যা তখন ব্রাহ্মনকে অনুরোধ করল যে একবার তাকে ছেড়ে দিতে,সে নিজে গিয়ে ছেলেকে খুঁজে আনতে চায়। ব্রাহ্মনের অনুমতি নিয়ে বনে গিয়ে শৈব্যা মৃত ছেলেকে আবিষ্কার করল গাছের নীচে।কাঁদতে কাঁদতে সে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়ে থাকল।ব্রাহ্মণরা একটু বাদে সন্দেহ করে কয়জন এলো,জ্ঞান ফিরলে শৈব্যা ছেলের প্রাণ ফিরে চায়,কিন্তু ব্রাহ্মন কোত্থেকে প্রাণ দেবে,নিতে পারা সোজা,দেওয়া যে কঠিন!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৬:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



