আমার মৃত্যুতেই সব শেষ
আল্লাহের রহমতে আজ পৃথিবিতে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানীদের জয় জয়াকার। যেখানেই তাকাই শুধু বিজ্ঞানের অবদান আর কল্যান। এমন এক অবস্থা যে, পুরা মানব জাতি একটি দিনও কল্পনা করতে পারবে না বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া। বলা যায় বর্তমানে বিজ্ঞনীদের সংখা আর মেধাই বিচার করে, কোন দেশ হবে প্রভূ আর কোন দেশ হবে তার দাস। গোটা মানব জাতির ইতিহাস থেকে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানীদের বাদ দিলে, আমরা এখন, পাথরের যুগে বা তারও কিছু কাল আগে বসবাস করছি।
আবার এই বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে মানব জাতির যত অকল্যান। বিজ্ঞানই তৈরি করেছে আস্তিকতা নাস্তিকতার পার্থক্য, মানুষে মানুষে মারামারি হানাহানির নুতন নুতন কৌশল। এমন কি বিজ্ঞানের অবদানেই প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে cyber ঝগড়া ঝাটি, গালাগালি, cyber যৌনতা, প্রেম, cyber বিয়ে আর ছাড়াছাড়ি………ইত্যাদি। cyber ধর্ম প্রচারও কিন্তু কম হচ্ছেনা।
আবার মানুষের তৈরি বিজ্ঞানের আশ্রয়ে কেউ কেউ প্রমান করতে চান আল্লাহের অস্তিত্ত। মানুষের তৈরি বিজ্ঞানের আশ্রয়ে কেউ কেউ প্রমান করতে চান কুরআনের বানী। হায়! কি ভ্রান্ত যুগে আমার বসবাস। আবার গভীর ভাবে বিজ্ঞানেরই প্রেমে পড়ে, কেউ কেউ হয়ে যান নাস্তিক। এই আস্তিকেরা আর নাস্তিকেরা সবাই যেহেতু সামাজিক জীব, এবং সবাই যেহেতু সমজের নিয়ম কম বেশি মেনে চলেন, তাই পৃথিবির জিবনে তাদের তেমন একটা পার্থক্য দেখি না। পার্থক্য শুধু একটাই, আর তা হল, নাস্তিকেরা যুক্তি সংগত ভাবেই, মনে করেন যে, তাদের মৃত্যুর পরই সব শেষ হয়ে যায়, আর আস্তিকেরা অযৌক্তিক ভাবেই বিশ্বাস করেন যে মৃত্যুর পর তাদের আর এক জীবন শুরু। আর এই পরকালের চিন্তা ও আস্তিকতা পরস্পর পরিপুরক, পরকালের চিন্তাই আল্লাহের ভীতির সৃষ্টি করে। মুলত সমাজে শৃংখলা রক্ষার জন্য “কর্ম ফল” আর “আল্লাহ ভীতি” হল মহান দুইটি প্রাচীন অস্ত্র।
আল্লাহ এক দল মানুষকে দেখাদেন নাই, মানুষও কবরের জীবন আর পরকাল প্রমান করতে পারে নাই। আবার পৃথিবীর সৃষ্টির যে উপাদন আর পৃথিবীর বুকে থাকে সমস্ত সৃষ্টির যে উপাদান এর যে মিল তাতে, আস্তিকেরা যতই অভিমান করুক না কেন, নাস্তিকেরা যুক্তি সংগত ভাবেই দাবি করেন যে স্বতস্ফুর্ত ভাবেই বা সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সব কিছুর সৃষ্টি।
কিন্তু মানব জাতির শুরু থেকেই, যে ধার্মিকেরা আছেন, আস্তিকেরা আছেন, তারা কি পরকালের পক্ষে তাদের বিশ্বাস ছাড়া আর কোন যুক্তিই উপস্থাপন করতে পারবেন না? তা কি করে হয়? আস্তিকেরা কি তাহলে মানব জাতির বোকা অংশ ?
গত কয়েক দশকে জীব বিজ্ঞান আর পদার্থ বিজ্ঞানের মিলিত সফলতায় চিকিৎসা বিজ্ঞন আজ অনেক বিকশিত, বিশেষ করে মাতৃ গর্ভে থাকাকালে ঘটে যাওয়া, অদ্ভুদ সব পরিবর্তন গুলো যা আমরা আগে অনেক কিছুই জানতাম না, আজ তা জানি।
প্রথম কথা,
বাবার শুক্রানু ও মায়ের ডিম্বানুর মিলনে, আমাদের জিবনের শুরু, আজকাল সবাই তা জানে। দুইটি কোষ মিলিত হয়ে একটি কোষের সৃষ্টি, অতঃপর কোষ বিভাজন, অতঃপর বহু কোষি আমারা। বিজ্ঞান এই প্রক্রিয়ার সুন্দর বর্ননা দেয়। কিন্তু এখনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার কারন জানেনা বা ব্যাক্ষা করতে পারে না। যেমনঃ
১) কি ভাবে বা কেন দুইটা কোষের মিলন হয় ? শরিরে অন্য কোথাও এই রুপ দুই বা ততোধিক কোষের মিলন হয় না কেন?
২) কেন একটা ডিম্বানুর জন্য ৪০-৫০ লক্ষ শুক্রানু প্রয়োজন? একটা হলেই কি হতো না ?
৩) কেন একটা ডিম্বানু একটি বিশেষ শুক্রানু নেবার পর আর কোন শুক্রানু কে ভি্তরে প্রবেশ করতে দেয় না ? ইত্যাদি।
দ্বিতীয় কথা,
শুক্রানু আর ডিম্বানুর মিলনের পর যে নুতন কোষটি(জাইগোট) অস্তিত্তে আসে, তা মায়ের শরিরের অন্য যে কোন কোষের চেয়ে ভিন্ন। স্বাভাবিক ভাবেই একটি ভিন্ন ধরনের কোন জৈব উপাদান, আমাদের শরিরে প্রবেশ করলে আমাদের immune system stimulated হয়, এবং ঐ জৈব উপাদানের বিরুদ্দে immune reaction করে, তা শরির থেকে বের করে দেয় অথবা শরিরের ভিতরেই মেরে ফেলে এবং হজম করে ফেলে। মার শরির জাইগোটের সাথে এই রুপ আচোরন করে না। এখানেও বিজ্ঞান অনেক কিছু ব্যাক্ষা করতে পারে না । যেমনঃ
১) এই ক্ষেত্রে মায়ের immune system এত নিরব থাকে কেন ?
২) যদিও কোন কোন মায়ের immune system নড়ে চড়ে বসে, তবুয় নুতন এই ভিন্ন প্রকৃতির কোষটাকে kill & digest করে না কেন ?
তৃতীয় কথা,
জাইগোট ১ টি কোষ, তা থেকে বিভাজিত হয়ে হয় ২ টি, এর পর ২ টি থেকে ৪ টি, তারপর এই ৪টি থেকে ৮ টি। এই ৮ কোষের ধাপ পর্যন্ত, কোষ গুলোর কোন পার্থক্যই থাকেনা। এগুলো কে totipotential cell বলা হয় এবং প্রতিটি totipotential cell এক একটি মানুষ তৈরি করতে সক্ষম। এই ধাপের পর আর কোষ গুলোর ক্ষমতা এই রুপ থাকেনা, ১৬ কোষের ধাপ থেকেই কোষ গুলোর বিভিন্নতা তৈরি হয়। এখানেও বিজ্ঞান অনেক কিছু ব্যাক্ষা করেনা। যেমনঃ
১) কি ভাবে নির্ধারিত হয় যে ১ জন মানুষের তৈরি হবে, নাকি ২ জন, নাকি ৩ জন, নাকি ৮জনই তৈরি হবে ?
২) কিভাবে একি ধরনের কোষ, একি পরিবেশে বিভাজিত হয়ে, একি সংক্ষক ক্রমজম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কোষ হয়, অতঃপর তা থেকে আবার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গর তৈরি হয় ?
মানব সৃষ্টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের না জানার সাগর থেকে আপনাদের তিন বালতি দিলাম। নাস্তিকতার ভাবনা এলে, এই তিন বালতি পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিবেন। আর বলবেন,
“হুয়াল আউয়ালু ওয়াল আখিরু ওয়াযযাহিরু ওয়াল বাতিনু ওয়াহুয়া বিকুল্লি সাইইন আলিম”
এখন আসি আসল কথায়, finally পৃথিবীতে land করার আগে আপনি আপনার মায়ের পেটে(in the uterus) প্রায় ৯মাস ৯দিন বা এর চেয়ে কিছু বেশি বা কম দিন ছিলেন, কিছু মনে আছে কি আপনার ? কিছু কি মনে করতে পারেন না ? বিজ্ঞান তো বলে আপনি এই সময়, শুনতেন, খেলা-ধুলা করতেন, রাগ করতেন, খুশি হইতেন, হাসতেন-কাদতেন, খাইতেন, হাগু-মুতু করতেন, এমন কি জমজ হয়ে থাকলে মারা-মারিও করতেন, মায়ের পেটের ভিতরে ওই সময়টা miss করেন কি আপনি? কখন কি ফিরে যেতে ইচ্ছা করে আপনার ঐ খানে ?
যদি miss না করেন ঐ সময়টা, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে মৃত্যুর পর দুনিয়া কখনই miss করবেন না।
যদি বলি, হা মায়ের পেটে থাকা কালিন সময়ের অনেক কিছুই মনে আছে আপনার, I mean যদি বিজ্ঞান তাই বলে। আপনি মনে করতে পারেন, আর নাই পারেন, আপনি ঐ সময়ে অনেক কিছু শিখেছেন যা আপনার জন্মের পর কাজে লেগেছে। তবে কেন আপনারা, আস্তিকদের রুহের জগৎ এর ধারনা নিয়া হাসাহাসি করেন ?
বিজ্ঞান বলে আপনি মায়ের পেটে থাকতে খেতেন এবং পান করতেন। কি খেতেন আর কি পান করতেন মনে আছে কি ? আমি বলে দেই, আপনি আপনার হাগু খেতেন, আর মুতু পান করতেন। কারন তা করা আপনার intestine এর development এর জন্য essential ছিল, খাদ্য হিসাবে না কিন্তু। আমি জানি আপনি এখন আর তা miss করেন না। খাবার হিসাবেও না ঔষধ হিসেবেও না। এখন আপনি খিদা পাইলে মিস করেন, আল্লাহর দেয়া পৃথিবির নেয়ামত গুলো যা মায়ের পেটে থাকতে আপনার কল্পনাতেও আসে নাই, খাওয়া তো দূরে থাক। তবে কেন ইমান দাররা বেহেস্তের নিয়ামতের কথা বললে আপনাদের বিশ্বাস হয় না? কেন ইমানদাররা যে সব অকল্পনিও নেয়ামতের কথা বলে, তা আপনারা, দুনিয়ার জিনিসকে প্রমান(standared) ধইরা তার সাথে মিলায়া জগাখিচুরি পাকান ?
জানেন মায়ের পেটে থাকতে আপনি কোন ঘটনায় সবচেয়ে খুশি হইতেন? আপনি এটাও মনে করতে পারবেন না, আমি জানি। আপনার বাবা-মা যখন ফিশ ফিশ কইরা, একে অপরের সাথে কথা বলত, অথবা আপনার মা যখন আপনার সাথে একান্তে কথা বলত, তখন আপনি সবচেয়ে খুশি হইতেন। ভূমিষ্ট হবার পরে দুনিয়ার জিবনে এটাই কি আপনার সবচেয়ে খুশির ব্যাপার থাকে? তবে কেন দুনিয়ার খুশির সাথে, বেহেস্তের খুশি কে তুলনা করেন ?
শেষ প্রশ্ন, আপনার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়, আপনার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গটার নাম বলেনতো, যার সাহায্য ছাড়া আপনি এক মুহুর্তও বাচতে পারতেন না, যা আপনাকে অক্সিজেন, খাদ্দ্য, রোগ প্রতিরধ ক্ষমতা সহ আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় সব কিছুর যোগান দিত, এমন কি ঐ জিনিশটা ছিল আপনাদের অনেকের, একটা প্রিয় খেলনা ? এই অতি প্রয়োজনিয় অঙ্গটা আপনার জন্মানোর সময় আপনার দাই অথবা ডাঃ খুবই উচ্ছিষ্টের মত বেশির ভাগটাই ফেলে দিয়েছে, বাকি অংশটা, পোচে যাবার পর, আপনার মা নিজ হাতে ফেলে দিয়েছেন। হা ঠিক ধরসেন এইটা আপনার নাভি, যা এই দুনিয়ার জিবনে, আপনার কোন কাজে আসে নাই, আর আসবেও না। একদিন আপনার মুখ, আপনার যৌনাঙ্গ যা এই পৃথিবির জিবনে অত্যন্ত প্রয়োজন, তাও হয়ত কোন কাজে আসবেনা। তবে কেন হুরের কথা শুনলে শুধু যৌনতাটাই মাথায় আসে ? কেন উপহাস করে বলেন, মুসলমানরা হুর ছহবতের আশায় ইবাদত করেন। কেন মুসলমান নারীদের বোঝানর চেষ্টা করেন যে, তাদের সাথে বেহেস্তেও injustice করা হইসে? কেন বুঝতে চাননা যে দুনিয়ার চাহিদা গুলো বেহেস্তি মানুষদের চাহিদার সাথে তুলনা করা সম্ভব না ?
নাস্তিকতার ভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসুন, বলুন, “লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” আর প্রতিনিয়ত হাউযে কাউসারের পানির গ্রহনের আশা করুন। আর মনে রাখবেন, বেহেস্তের যত নেয়েমত আছে তার মধ্য সবচেয়ে কাঙ্কখিত নেয়ামত হল, আল্লাহের সাথে সাক্ষাত, আর ইমানদার বান্দারা শুধু এই কারনেই আল্লাহের ইবাদত করেন।
আল্লাহ হাফেয, ইনশাল্লাহ ,আবার কথা হবে, আসসালামুয়ালাইকুম।
আল্লাহের দেয়া নেয়ামতে সন্তুষ্ট থাকুন, বলতে থাকুন, “ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদি, সুবহানাল্লহিল আযিম”
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৪১