মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। তাই পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাবার জন্য একটা চাকুরী খুবই দরকার। কিছুটা মানসম্মত চাকুরী হলে নিজের কাছে ভালো লাগে। তাই মান সম্মত চাকুরী খোঁজ করছিলাম জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ সহ অন্যান্য পত্রিকায় এবং বিডি জবসে।
ঘটনা- ১, বাংলাদেশ প্রতিদিনে হিউম্যান রাইটসে নিয়োগ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পেলামঃ ঠিকানা অনুযায়ী রামপুরায় গেলাম। অফিসে যাওয়ার পর রিসিপশনে আমাকে একটা ফরম ধরিয়ে দেওয়া হল। বলা হল- এই ফরম পূরণ করেন এবং সাথে ২০০ টাকা এটাচ করে দেন। যদি আপনি ইন্টারভিউয়ে টিকেন তাহলে আপনাকে এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে না, আপনার জব স্থায়ী করা হবে এবং বেতন ভাতা সব নিয়ম অনুযায়ী পাবেন। আর যদি সিলেক্ট না হন, তাহলে আপনাকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তাদের কথা মত ফরম ফিলাপ করলাম এবং টাকা এটাচ করলাম।
ইন্টারভিউয়ের জন্য আমাকে ভেতরে ডাকা হল। কোন ইন্টারভিউ হলো না। কিছু কথা বার্তা বলে আমাকে চলে যেতে বললেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কবে নাগাদ আমাকে জানানো হবে যে, আমি যোগ্য না অযোগ্য? বললেন- ২০ দিনের মাথায় জানিয়ে দেওয়া হবে। ২০ দিন অপেক্ষা করলাম। কোন কল আসল না। একমাস পর আমি তাদের নম্বরে ফোন দিলাম। আমি সিলেক্ট হয়েছি কি না জানতে চাইলাম। আমাকে জানানো হল- আমি ডিস কুয়ালিফাইড। আমি বললাম- আমার টাকা তো ফেরত দিবেন বলেছিলেন? তিনি লাইনটা কেটে দিলেন। আবার ফোন দিলাম ধরলেন না। পরে তাদের অফিসে গিয়ে রিসিপশনে বললাম, আমি তো সিলেক্ট হয়নি। আমার টাকা ফেরত নিতে এসেছি। রিসিপশনে আমাকে বলা হল- জান বাঁচাতে চাইলে জলদি চলে যান।
ঘটনা-২, ২/৩ দিন আগে বিডি জবসে সার্চ করে পেলাম। টি এল সি গ্রুপ কল সেন্টার। পার্ট টাইম চাকুরী। সপ্তাহে তিন দিন চাকুরী করতে হবে। ভাবলাম- কল সেন্টার যেহেতু ভালোই হবে। সিভি পাঠালাম। আমাকে কল করা হল। ১৪৮ সেনপাড়ায় যেতে বলা হল। গেলাম ১৪৮ সেনপাড়ায়। গিয়ে দেখলাম সেখানে একটা স মিলের দোকান। আর কিছু নেই। তাদের নম্বরে ফোন দিলাম। তাঁরা আমাকে আল হেলাল হাসপাতালের বিপরীতে আই এফ আই সি ব্যাংকের বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় যেতে বললেন। ৫ম তলায় গিয়ে দেখি একটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাইনবোর্ড লাগানো। পাশে একটা রুমে কিছু ছেলে মেয়ে বসে আছে। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন? বললাম- হ্যাঁ। আমাকে ভেতরে নিয়ে বসালেন। আমাকে বললেন- আপনার সিভি দেন এবং সিভির সাথে ৫২০ টাকা জমা দেন। যদি আপনি ইন্টারভিউয়ে সিলেক্ট হন, তাহলে চাকুরী স্থায়ী হবে এবং টাকা ফেরত পাবেন না। আর সিলেক্ট না হলে টাকা ফেরত পাবেন। যেহেতু আগে সেম অবস্থার শিকার হয়েছিলাম, তাই এবার আর টাকা দেইনি। বললাম ভাই, আমার কাছে টাকা নেই। চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটা বলল, তাহলে তো চাকুরী হবে না। আমি উঠে এলাম। নিচে নেমে এসে কিছু ছেলে মেয়ের সাথে কথা হল। তাঁরা বললেন- আমরা ৫২০ টাকা জমা দিয়েছি। আমাদেরকে সিলেক্ট ও করেনি, আবার টাকাও ফেরত দেয়নি।
( দ্রঃ এই গ্রুপের বিজ্ঞাপনটা এখনও বিডি জবসে পার্ট টাইম জবসে গেলে কল সেন্টার অপশনে পাওয়া যাবে।)
এভাবে ফার্মগেট মোড়ে ইসলামী ব্যাংক এর ব্রাঞ্চ যে বিল্ডিংয়ে রয়েছে, সে বিল্ডিংয়ের ৫ তলায় এরকম এক চক্র আছে। যারা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাইন বোর্ড ব্যবহার করে প্রতারণা করছে। মালিবাগেও একটি গ্রুপ আছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ও কালেরকণ্ঠ সহ ছোট ছোট পত্রিকাগুলোতে ছোট আকারে যত জব বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, তাঁর ৯৯ ভাগই হচ্ছে প্রতারণা।
জব দেওয়ার নামে যারা মধ্যবিত্ত ও গরীব পরিবারের সন্তানদের সাথে এভাবে দিনের পর দিন প্রতারণা করে যাচ্ছেন। বেহিসিবি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অনেক পত্রিকায় প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি লেখেছি। কেউ আমার লেখা ছাপায় নি। পুলিশের কাছে যাওয়া তো ভয়ংকর বিষয়। তাই আজ এই ব্লগে শেয়ার করলাম।
সবাই যেন সচেতন থাকেন এদের ব্যাপারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬