somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা ভালো আছি

০৫ ই মে, ২০০৭ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখানে উন্নত স্বপ্ন বিক্রী হয়
সাইনবোর্ডটা ছিলো ঝলমলে। ইদানিং দুঃস্বপ্নে রাত কাটাচ্ছি। চোখ বন্ধ করলেই দেখি বুলডেজার উঠে যাচ্ছে বুকের উপর। গাঢ় সবুজ মানুষেরা হাতছানি দেয়- নির্বাসনে যাবি?
আমি দিগবিদিকজ্ঞানশুন্য ছুটতে থাকি- চিৎকার করতে চাই- ওরা আমার হাত বাঁধে- পা বাঁধে- আমার জিহ্বা কেটে ফেলে- আমাকে ছুড়ে ফেলে রাস্তায়।

আতঙ্কে চিৎকার করে উঠি- কোনও আওয়াজ বের হয় না।
জলপাই রংয়ের ট্রাক ছুটে যায়। সমস্ত দেশের সবকটা রাজপথের পাশ ঘেঁষে চন্দ্রমল্লিকার ঝোপ হবে। ফুটপাতে সুবেশী নাগরিক হাঁটবে সুগন্ধে বুঁদ হয়ে। তাদের শিশুরা খেলবে, নানাবিধ পসরা সাজিয়ে নাগরিক হাট- আমাদের দরিদ্র কার্ণিভালের শীর্ণ মানুষের কাছ থেকে তারা বাতাসা মুড়ির মোয়া কিনে নিয়ে যাবে।
অতএব প্রতিটা শহর পরিচ্ছন্ন করা হবে এ মর্মে নির্দেশনা জারী হয়- আমরা কিছুই বুঝি না- গ্রাম থেকে উৎখাত হয়ে পড়ে আছি শহরতলীতে- কোথাও পালাতে পারবো না জানি- সীমান্তে কাঁটাতার, উদ্যত রাইফেল, এই সীমিত ভূখন্ডেই আমাকে নিজের ঠাঁই খুঁজে নিতে হবে।
২০০৭ জানুয়ারী মাস এসেছিলো- শহরে বাবুরা নবান্ন উৎসব করলেন- চারুকলার সামনের রাস্তায় পিঠা উৎসব হলো- ভাপা পুলি চিতই- নানাবিধ পিঠা চিনলো শিশুরা।
মাম্মি পিঠা ইংরেজি কি?
কেক মামনি-
এটা কি কেক হলো কোনো?
হুমম মামনি এটা রাইস কেক- সবগুলোই রাইস কেক- প্যাটিসেরীতে দেখো নি কত রকম প্যাস্ট্রী আছে।
আমি একটা খাই মাম্মি-

না ভীষণ আনহাইজেনিক, তুমি বরং বাসায় গিয়ে খেয়ো- আমরা যাওয়ার পথে কিনে নিয়ে যাবো।

নবান্ন জোতদারের উৎসব, আমাদের খোরাকির চালজুটে না। পিঠা বানানোর উৎসবে আমাদের ডাক পড়ে- শহরের আনাচে কানাচে সুরম্য পিঠাঘর উঠে গেলো- ঐতিহ্য সচেতন বাঙ্গালীিরা হাইজেনিক পিঠা খাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে।

আমাদের গ্রামবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে গাণিতিক হারে আর আমরা এর সাথেই আরও বেশী ঐতিহ্য সচেতন হয়ে উঠছি। চট্রাগ্রামের শেফালী ঘোষ প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করলে আমাদের ঐতিহ্য গা ঝাড়া দিয়ে উঠে- আহা মানুষটা এত অবদান- তার জন্যে কিছু করা প্রয়োজন।
আব্দুর রহমান বয়াতি আর শাহ আব্দুল করিম অনাহারে মৃতবৎ হয়ে গেলে আমাদের সচেতন গনিকারা পত্রিকার পাতায় মর্মন্তুদ কলাম লিখে আবেগে সুরসুরি দেয়- আমাদের সচেতন করে তোলার জন্যও হলেও ঐতিহ্যলগ্নদের মৃতবৎ হতে হয়- আমরা হারানোর পূর্বমুহূর্তে ঐতিহ্যে ফিরে তাকাই।
জলপাই বাগাের কর্টা বলেছেন আমরা মহান ত্রাতা হয়ে এসেছি। বন্ধু হয়ে আছি পাশে- তাদের নিয়মিত খাওয়া জোটে, নিয়মিত সালাম ও সালামিও জুটে- তারা রেশনের চর্ব চোষ্য লেহ্য পেয় সমেত তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ডিসকাউন্টের সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করেন।
কোন বাঞ্চোত মিলিটারি বাজারের ফর্দ হাতে সকাল বেলা বাজারে যায়? কোনো খানকির ছেলেই তেলের দাম জানে না। জানে না বাজারের মূল্য তালিকা- পেট্রল কিংবা ডিজেলের দাম বাড়লে বা কমলে তাদের কিছুই আসে যায় না- তাদের রিকুইজিশন করাই আছে- মেজরদের জীপে যাতায়তকারী সন্তানেরা সাধারন সিডানে বসতে পারে না- তারা দরজায় হেলান দিয়ে বসে- বসবে নাই বা কেনো- সারাজীবন যেসব গাড়ীতে বসেছে সেখানে আড়াআড়ি বসাই নিয়ম- এভাবেই আড়াআড়ি চলছে আমাদের সাথে জলপাই মামাদের।

বাজারে জিনিষের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে- বিডিআর দিয়ে ন্যায্যা মুল্যের দোকান খুলে কাজের কাজ হয় নি কিছুই- এর ভেতরেও সকাল বেলাই উন্নয়নের আর উন্নত স্বপ্নে বিক্রীর দোকানের সামনে দাড়িয়ে বড় ভালো লাগে- আশাবাদী হয়ে উঠি আমরা।

আমাদের উন্নয়ন কারিগর চমৎকার- তিনি উন্নয়ন নির্মান করছেন- আমাদের উন্নত স্বপ্নের নেশায় বুঁদ করে ফেলেছেন প্রায়- আমরা আজকাল চোখ বন্ধ করে রাস্তায় হাঁটি- আশে পাশে তাকাই না নিয়মিত- প্রেসনোট এসেছে সবাই আনন্দিত- সুতরাং আনন্দ দেখবার রীতি প্রচলিত- আমি জ্যামে আটকা পড়লেও চোখ বন্ধ করে রাখি- না আশে পাশের কোনো দৃশ্য দেখে আমার উন্নত উন্নয়নের স্বপ্নে কালিমা লাগুক আমি চাই না-

আমাদের প্রধান সমস্যা না কি দুর্নীতি ছিলো- আমরা সবাই অপরাধ করেছিলাম- তাই আমাদের উন্নয়নের নদীর উৎসে ছিলো বাঁধ- আজ সে বাঁধ ভেঙে গেছে- উন্নয়নের +রোতে তলিয়ে যাবো আমরা- আমরা আর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারবো না- আমরা উন্নয়নের চাপে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো-

ভয়টা তবুও যায় না- প্রায় রাতেই ঘুমাতে পারি না- যেখানে মাথা গুঁজে পড়ে থাকতাম- সেটাও নাকি দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছে- হুমম প্রভাবশালী মহল খাস জমি দখল করে বস্তি তুলেছিলো- আমরাও সেখানে ভাড়া দিয়েই থাকতাম- এই যে এত দিন ভাড়া দিয়েছি এটা আসলে আমাদের দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা- আমরা বিশ্বাস করি- আমাদের ভুইশ্বর বলেছেন আমরা অপরাধী- আমাদের অপরাধ বোধ আমাদের মলিন মুখে পরিস্কার ফুটে থাকে-

অবশ্য থাকা কিংবা রাত্রিযাপন তেমন কঠিন কি- কোথাও চাদর বিছিয়ে পড়ে থাকলেই হবে- গত কয়েক দিন ছিলাম কমলাপুর স্টেশনে- এখন সেখানেও থাকতে পারি না- আমাদের দরিদ্র চেহারায় নাকি কোনো ভাবে জঙ্গী গ্রহন হয়েছে- আমরাই নাকি পটকা ব্যাগে ভরে রেখে এসেছিলাম- অপরাধী ধরা না পড়লে অকুস্থলে উপস্থিত সবাই সাম্ভাব্য অপরাধী এ মর্মে ফতোয়া জারি হয়েছে-

সেদিন সকালে আমরাও ছিলাম সেখানে উপস্থিত- ঘুম থেকে উঠে যখন বাইরে বের হবো তখনই ফাটলো বোমাটা- বোমা না পটকা আসলে- বিজ্ঞজনেরা বলেছেন তাই জানি-

মনটা বিষন্ন ছিলো আজ-
দেখলাম " এখানে উন্নত স্বপ্ন বিক্রী হয়-" এই সাইনবোর্ড কে যেনো উঠিয়ে নিয়েছে- স্বপ্নের কারখানা বন্ধ করে কারিগর কোথায় নিরুদ্দেশ কেউ জানে না-


আমরা এখন থেকে নিয়মিত প্রেসনোট পড়ে জীবনযাপন করবো- আমাদের প্রতিদিন সকালে উঠে বলে দেওয়া হবে-

মাননীয় নাগরিকেরা আজ আমাদেরশাসী দিবস-- আমরা সারাদিন হাসি মুখে ঘুরবো
মাননীয় নাগরিকেরা আজ আমরা মোগলাই খেয়েছি-
আমরা কারণে অকারণে সাবানে হাত ধুবো- খাঁটি ঘিয়ে রান্না করা মোগলাই খেয়ে আমাদের এ গরমে পেট ছুটে যাবে- আমরা ঘন ঘন ছোটো ঘরে দৌড়াবো-

আমাদের ইন্দ্রিয় আরও সচেতন হয়ে উঠেছে- যদিও এখনও জানি না যদি আমাদের বলা হয় আজ আমাদের দুঃখের দিন- আজ সারাদিন কাঁদতে হবে- তবে আমরা কি করবো-

নিয়মিত দুঃখের সাথে সহবাস করি তাই চোখে খরা- কান্না আসে না কোনো মতে-- সেদিন রাজাজ্ঞা অবজ্ঞার দায়ে আমরা সবাই বোধ হয় কারাগারে যাবো।
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×