somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোহেমিয়ান জীবনের একটা রাত।

২৪ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসেছিলাম গ্লাসগোর একটা পুরনো বারে। রাত বেশী হয়নি। একটু পড়েই আমার বাস ছাড়বে লন্ডনের পথে। লম্বা জার্নি। তাই একটু গলা ভেজানো। অবশ্য স্কটল্যান্ডে এসে স্কটিশ হুইস্কি না টেস্ট করলে কি আর চলে? ট্যাক্সি ড্রাইভার অ্যালান বারবার করে বলে দিয়েছে বেশী ড্রিংক না করতে। স্কটিশ ইংরেজিটা অনেকটাই আলাদা। তারপরেও এটুকু বোঝা গেল যে ওর ডিউটি না থাকলে আমাকে সঙ্গ দিত। নিঃসঙ্গ মানুষগুলোর সাথে অচেনা মানুষের মাঝে মাঝেই জমে যায়। এই ব্যাটা কি তাইলে নিঃসঙ্গ? বারের এক কোনে বিগ স্ক্রিনে প্রিমিয়ার লিগ চলছে। আমি শেষ হুইস্কিটাতে চুমুক দিতে দিতে স্কোরটা দেখার চেষ্টা করছিলাম। আমার পকেটে আর আছে সর্বসাকুল্যে পাঁচ পাউন্ড। দিল্লী থেকে আসার সময় বেঁচে যাওয়া একটা ডলারও আছে। কয়েকটা কয়েন হাতড়ে আরেক পাইন্ট বিয়ার নিলাম। এইটা শেষ করেই উঠতে হবে। নইলে আসার সময়কার মতো আবার বাস মিস করলে সমস্যা হয়ে যাবে। ভাবছিলাম, এই ভ্যাগাবন্ড জীবনটার অর্থ কি? উদ্দেশ্য কি? এই যে বিদেশ বিঁভূই এ একা পড়ে থাকা, পরিবারের সাথে যোগাযোগ না থাকা, এই সবের আদৌ কি কোন মানে আছে? ধুর...

বাস চলতে শুরু করেছে। রাতের বাসের জানালায় দেখছিলাম স্তব্ধ আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়গুলো। কোথাও আবার আদিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। উইন্ডমিল গুলো ঘুরছে। অদ্ভূত সুন্দর সেই দৃশ্য। ইয়ারফোনে চলছে জন ডেনভারের পয়েমস,প্রেয়ারস এন্ড প্রমিসেস। পাশের সিটের ভদ্রলোক খুবই ফিসফিস করে ফোনে কথা বলছে। মায়া হচ্ছে অপরপ্রান্তের মানুষটার কথা ভেবে। আহা,বেচারী কি কিছু শুনতে পাচ্ছে?

বাস থামল নিউক্যাসল আন্ডার লাইমের একটা গ্রামে। হাইওয়ে ব্রেকগুলো আমার খুবই পছন্দের। মনে পড়ছে নুরজাহান হোটেলের পরোটা আর গরুর মাংশ। নেমে একটা সিগারেট ধরালাম। এরপর বাসে এসে বসার পর দেখি পাশের ভদ্রলোক ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। উনাকে দেখে আমারও কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু আমি কাকে ফোন করবো? যাকে ফোন করবো সেতো আমার ফোনের জন্যে বসে নেই। সেকি জানে যে আজ প্রায় পাঁচটা বছর আমি তার নাম্বারটা প্রেস করে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি? আমার আর ডায়াল করা হয়না। ইয়ারফোনে বেজে উঠলো, মৌসুমী ভৌমিকের,'এখন নাকি শব্দগুলো এক মূহুর্তে সাগর পেড়োয়, এখন নাকি যন্ত্রগুলো এপার থেকে আমার কথা তোমার পারে পৌছিয়ে দেয়...!! দারুন কোইন্সিডেন্টতো!

সেদিন দেখেছিলাম স্কটল্যান্ডের ভোর। অচেনা এবং অপূর্ব। আজ আবার সেই চেনা ভোর। লন্ডন। সেই চেনা শহর। সেই চেনা ভিক্টোরিয়া স্টেশন। হঠাৎ কোন এক মানবীকে ভালোবেসে ফেলা সেই চেনা রাস্তা। শুধু সেই খুব চেনা কাছের মানুষটা আর নেই। কি করছে ও? ধুলো আর তীব্র গরমের প্রিয় শহরটাতে কি করছে মানুষটা? মুখে হাসি নিয়ে কার কাছে লুকাচ্ছে ওর একান্ত মন খারাপের বিকালগুলো। ধানমন্ডি লেকের আধো অন্ধকার ভোরে আজো কি মর্নিং ওয়াক করছে? আমার পাশে না থাকা কি একটুও ওকে ভাবায়?

আসলে এসবে এখন কিছুই যায় আসেনা। গত দুইদিনে একবারের জন্যেও বেজে ওঠেনি আমার মোবাইলটা। মনেহয় ছা-পোষা এই কেরানিটাকে আজ আর কারো প্রয়োজন নেই। আসলে আমারো হয়তো আর কাউকে প্রয়োজন নেই। যাক তাইলে কাটাকাটি। অপ্রয়োজন ব্যাপারটাই আসলে দিন দিন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:১৯
৪১টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×