somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইলটা আপাতত ওখানেই থাক

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন পা ব্যথা শুরু হয়েছে ঠিক তখনই রুবি আবিষ্কার করল মাত্র তিন জনের পেছনে আছে সে। অর্থাৎ তিন জন পরেই সে ইলেক্ট্রিসিটি বিলটা নির্ধারিত কাউন্টারে দিতে পারবে। হঠাৎ হাতে রাখা মোবাইল ফোনের বিপ শব্দটি শোনা গেল। এই মোবাইল ফোন আর ফেসবুক আছে বলেই তো আজ এ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ৪০ মিনিট সময় বিরক্তি ছাড়াই কাটিযে দিতে পেরেছে সে। মার্ক জুকারবার্গকে মনে মনে আর একবার ধন্যবাদ দিয়ে মোবাইল স্ক্রিনে তাকাল সে। ফ্র্যান্ড রিকোয়েস্ট। হাসিব খান নামের একটা ছেলে ফ্র্যান্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। পাশেই ছেলেটার ছবি দেখা যাচ্ছে। চোখে কাল গ্লাস, ফেড জিনস আর হালকা নীল রঙের টি শার্ট পরা ছেলেটাকে খুব পরিচিত পরিচিত লাগছে তার। কোন এক স্কুল ফ্র্যান্ড হবে হয়তোবা- এই ভেবে সে ছেলেটার রিকোয়েস্টটা কনফার্ম করল। এই হচ্ছে ফেসবুকের আরেকটা ভাল দিক। হারিয়ে যাওয়া স্কুল বন্ধুদের খুব সহজেই খুঁজে বের করা যাচ্ছে এই ফেসবুকের মাধ্যমে। থ্যাংকস টু মার্ক জুকারবার্গ এগেইন। হোয়াট অ্যা গ্রেটম্যান হি ইজ! আবার হালকা একটা বিপ শব্দ! হেলেনা একটা পেজ শেয়ার করেছে। পেজটার নাম সারিনা’স আলনা। চমৎকার নাম। আজকাল ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন কেনাকাটা বাংলাদেশে বেশ বেড়েছে। ফেসবুক আমাদের ব্যবসা-বণিজ্যেও যথেষ্ট সাহায্য করছে। সারিনা নিশ্চয়ই কোন মেয়ের নাম। তার আলনায় সে বিভিন্ন রকমের সালোয়র কামিজ সাজিয়ে রেখেছে বিক্রি করার জন্য। পেজটার আইডিয়াটা যেমন চমৎকার, ড্রেস কালেকশনটাও বেশ।

পেজটাতে লাইক দিয়ে সে হাটাতে হাটতে লাইন থেকে বেরিয়ে এসে পাশের সোফায় বসে জামার কালেকশনগুলো দেখতে থাকল। কি চমৎকার সব পোষাকের কালেকশন পেজটাতে! সে তার নিজের জন্য জামা পছন্দ করা শুরু করল। উফ! জুকারবার্গকে কী করে যে ধন্যবাদ দেয়া যায়! ফেসবুক থাকার কারনেই না আজ এই সময়ে এই ব্যাংকে বসেও নিজের জন্য সুন্দর সুন্দর জামা পছন্দ করতে পারছে। হঠাৎ পাশে থেকে ক্যাচ ক্যাচ শব্দে সম্বিত ফিরে পেয়ে রুবি দেখল ব্যাংকের কলাপসিবল গেট লাগানো হয়েছে। ক্যাশ কাউন্টারে তাকিয়ে দেখল আগের সেই লম্বা লাইনটাও উধাও। এটাই সুযোগ- ভেবে সে দৌড়ে ইলেক্ট্রিসিটি বিল লেখা কাউন্টারের দিকে এগুলো। কাউন্টারের ক্যাশ অফিসার তখন টাকা গুছাতে ব্যস্ত।

-এই যে ভাইয়া, আমার বিলটা?
রুবির ডাক শুনে কাউন্টারের বয়স্ক লোকটা কটমট করে তাকিয়ে কর্কশ স্বরে বলল- চারটে বেজে গেছে। ক্যাশ ক্লোজড।

রুবি মোবাইলে স্ক্রীনে চট কওর চোখ নামিয়ে বুঝল, লোকটা মিথ্যে বলে নাই। কখন যে সময় চলে গেল টেরই পেল না রুবি। সব দোষ ঐ আলনাটার। সুন্দর সুন্দর জামাগুলা দেখেই না চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল।

-আরে! রুবি না? যে ক্যাশ কাউন্টারে রুবি দাঁড়িয়ে আছে তার পাশের কাউন্টারের চশমাওলা কম বয়েসি ছেলেটা রুবির দিকে তাকিয়ে আছে।
-জ্বি। আমি রুবি।
-আমি তৌহিদ। আমরা স্কুলে এক সাথে পড়তাম।
-ও।
আর কথা না বড়িয়ে রুবি ক্যাশ কাউন্টার থেকে বের হয়ে গেল। অনেক দেরী হয়ে গেছে এখনও লাঞ্চ করা হয় নি।

ব্যাংকের বাইরে এসে একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে বসল রুবি। হাতে মোবাইলটা এখনও আছে। সারিনাস আলনা! ইশ! কি সুন্দর সুন্দর সব জামা। দামও যথেষ্ট কম। দুইটা জামা সে ইতোমধ্যেই চুজ করে ফেলেছে। বাসায় গিয়ে মা কে দেখিয়ে অর্ডার দিয়ে দিবে। এইসব ভাবতে ভাবতেই রাস্তার বাম পাশের সারিনা’স আলনা নামক দোকানটা পাশ কাটিয়ে চলে গেল রুবি।

বাসায় ফিরেই টেবিলে সাজিয়ে রাখা খাবার খেতে বসল। সত্যি সত্যি খুব ক্ষিদে পেয়েছে তার! খেতে খেতেই প্লেটের বাম পাশে রাখা মোবাইল স্ক্রিনের নিউজ ফিডে চোখ বুলাতে শুরু করল সে। তখনই একটা শব্দ। অতি পরিচিত ছোট্ট সেই বিপ্ শব্দ। একটা মেসেজ। সে দেখল আজ দুপুরে যাকে বন্ধু হিসেবে নিশ্চিত করেছিল, সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা মেসেজ দিয়েছে।
-তোমাকে ধন্যবাদ।
-কেন?
-আমার আ্যাড রিকোয়েস্ট কনফার্ম করার জন্য।
-ও।
-কি করছ এখন?
-এইতো লাঞ্চ করছি। তোমাকে পরে নক করব। এখন, বাই।
-ওকে, বাই।

রুবি নিশ্চিত হল, হাসিব নির্ঘাত তার স্কুল লাইফের কোন বন্ধু। নয়তো এতো পরিচিত মনে হতো না তাকে।

-কি রে, তুই কি রাক্ষস হয়ে গেছিস নাকি? এক ঘন্টা ধরে খাচ্ছিস!
পেছন থেকে বড় ভাইয়ের কথায় আবার ফেসবুক থেকে খাবার টেবিলে আসল রুবি।
-ভাইয়া, সেদিন দেখলাম তুমি কক্সবাজারের ছবি পোস্ট করেছ। কবে গেলে সেখানে?
-কেন? তুই জানিস না? কই থাকিস তুই? গত সপ্তাহেই না আমি আর সফিক কক্সবাজার ঘুরে আসলাম। আশ্চর্য!
-ও। তাই নাকি। খেয়াল করিনি।

খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুক নিউজ ফিড দেখা শুরু করল আবার।
-কি করছ? হাসিবের মেসেজ।
-কিছু না। শুয়ে আছি।
-তুমি না অনেক সুন্দর।
খুব মেজাজ খারাপ হল রুবির। সামনাসামনি কেউ এ কথা বললে খারাপ একটা গালি দিয়ে দিত নির্ঘাত। কিন্তু রুবি খুব ভাল করে জানে এটা ফেসবুক এটিকেটির পর্যায়ে পড়ে না। পরে এক সময় ব্লক করে দিলেই হবে। তবে এটাও ঠিক ছেলেটা দেখতে বেশ ভাল। এমন হ্যান্ডসাম ছেলেদের কেবল ফেসবুকেই পাওয়া যায়। আশেপাশের ছেলেরা দেখতে চরম বদখত হয়। রুবির হঠাৎ চড়ে যাওয়া মেজাজ বেশ ঠান্ডা হয়ে গেল। ছেলেটার প্রোফাইল দেখতে হবে বলে ঠিক করল মনে মনে আর উত্তরে লিখল,
-ধন্যবাদ।
-চল না, আজ সন্ধ্যায় কোথাও চা খেয়ে আসি?
হাসিবের এমন একটি প্রস্তাব রুবিকে অবাক করে দিল। তবে হাসিব আসলে কে? তার কোন স্কুল বন্ধতো বটেই। হাসিব কি তবে এ এলাকাতেই থাকে?
তাড়াতাড়ি হাসিবের প্রোফাইলে আঙুল ছোয়াল রুবি।

হাসিব খান
অ্যসিসট্যান্ট ম্যনেজার অ্যাট দার্দ গ্রুপ।

রুবি স্ত্রীনটা উপরের দিকে তুলতে থাকল।

কারেন্ট সিটি- তেজকুনি পাড়া, ঢাকা।

অ্যা.. এ যে দেখি রুবিদের পাড়াতেই থাকে! রুবি বেশ অবাক হল।

কিছুক্ষণ পর কলিং বেলের শব্দ শুনে রুবি দরজা খুলে দেখে ফেসবুকের সেই ভার্চুয়াল হাসিব তার হাসিমুখ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
-তু..তু..তুমি?
-হ্যা, আমি। অবাক হলে?
-তুমি আমাদের পাড়াতেই থাকো?
-হ্যা। কেবল তোমাদের পাড়াতেই না. তোমাদের বাসাতেই থাকি!
-কিইইইই? আমাদের বাসায়? এটা কিভাবে সম্ভব!
-তোমাদের দোতলায় আমরা এক বছর ধরে ভাড়া থাকি।
-এক বছর! অথচ একদিনও তোমাকে দেখিনি।
-দেখবে কী করে? সারাক্ষণ তো মোবাইল স্ক্রিনেই চোখ থাকে তোমার। কতোদিন যে তোমার পাশ দিয়ে গেছি, তুমি ফিরেও তাকাওনি। অবশেষে অনেক কষ্টে তোমাকে মোবাইলের মাধ্যমেই খুঁজে পেলাম!
রুবি কিছুটা লজ্জা পেল। ফেসবুকে মনে হয় সে অতিরিক্ত সময় কাটাচ্ছে।
-আসো, ভেতরে আসো।
হাসিব ভেতরে ঢুকলো।
পাশের সোফা দেখিয়ে রুবি হাসিবকে বসতে বলে, হাতের মোবাইলটা ভেতরে রাখতে গেল। ওটা ওখানেই থাক। অ্যাট লিস্ট হাসিব যতক্ষণ ঘরে আছে...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×