কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম,
ব্যাপারটা নিয়ে লিখব কি লিখব না, লিখলে কিছুটা হলেও লাভ হবে কি হবে না, এসব চিন্তা করে লিখা হয়ে উঠছিল না। হঠাৎ করে এক ফ্রেন্ডের কথায় আর কিছু ব্যাপার দেখে যেমনঃ
*সাভার রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি... *সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের বিরুদ্ধে, দেশের স্বার্থে সব মতাদর্শের উর্ধে সবাইকে একই সুরে প্রতিবাদ করতে দেখে আবার ভরশা পেলাম লিখার জন্য।।
ব্যাপারগুলা আমরা সবাইই ভালভাবে জানি, প্রতিদিনই কাগজের পাতায়, সংবাদে দেখছি, ভৌগলিক দিক দিয়ে ভারতের প্রায় ৪ পাশ দিয়েই আমাদেরদেশ ভারত বেষ্টিত থাকার ফলে এবং আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফলে ভারত সর্বদাই নানা ভাবে আমাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে চলেছে, দিনের পর দিন এ নির্যাতনের মাত্রা কমছে না, বরং বেড়েই চলছে।
তারা "কখনো আমাদের মারছে হাতে, আবার কখনো মারছে ভাতে"।
অবশ্য, এজন্য আমরা নির্লজ্জরাও ভারত থেকে কোনও অংশে কম দায়ী নয় !!
কিভাব?
সেইটা পরে বলছি, তার আগে কিছু কথা স্মরণ করিয়ে দেই !!
কথাগুলো কারোই অজানা নয়, তবুও বলি...
প্রথমতঃ যেই ব্যাপারটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী অবাক লাগছে যেটা,
কতো দ্রুত আমরা ভুলে গেছি, এই তো কিছুদিন আগেই নামমাত্র লাভে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করে আমাদের দেশের অন্যতম এক মহা মূল্যবান সম্পদ "সুন্দরবন"কে ধ্বংস করার পায়তারা করেছে ভারত।। সেই চক্রান্ত এখনো চলছে।
বড়ই অদ্ভুত কান্ড !!
আমরা বারেবারেই ভুলে যাই, টিপাইমুখি বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশকে পানিশূন্য করে, পানির জন্য বাংলাদেশকে সর্বদা ভারত মুখাপেক্ষী করে রাখার জন্য প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছে ভারত।
খুবই আফসুসের কথা !!
এও আমরা ভুলে গিয়েছি যে, ""২০০৭ সালে ভারত জাতিসংঘের 'বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা'র (ডবিল্গউআইপিও) কাছে জামদানিকে নিজেদের পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। The Geographical Indications of Goods (Registration & Protection) Act, 1999 (GI Act), Geographical Indications of Goods (Registration and Protection) Rules, 2002 (GIRules এর মাধ্যমে ভারত এপ্রিল ২০০৪ থেকে এপ্রিল ২০০৯ পর্যন্ত যে ১১৭টি পণ্যকে নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য দরখাস্ত করেছে তার ভেতর বাংলাদেশের জামদানি শাড়িও একটি।"" -দৈনিক সমকাল (২৬ মে ২০১২)
এবং
একই ভাবে ফজলি আম, নকশি কাথার প্যাটেন্ট(সত্ত্ব) কেড়ে নিয়ে আমাদের সবার প্রিয় ইলিশ মাছের প্যাটেন্টের দাবী তুলেছে ভারত।।
সবশেষে মজার কথা, হাসতে হাসতে বলতে হয়...
আমরা সবাই বোধহয় কাঁটাতারে ফেলানির রক্তমাখা ঝুলন্ত লাশের কথাও ভুলে গেছি। ভুলে গেছি যে...
সেদিন সীমান্তে কাটাতারের বেড়ায় ফেলানির রক্তমাখা ফেলানির লাশ ঝুলছিল না, ঝুলছিল আমাদের স্বাধীন দেশ। সংবাদের পাতায় নিত্যদিনই সীমান্তে আমার দেশের ভাই/বোনদের লাশ ঝুলতে দেখে নিরবে সয়ে যেতে যেতে আমাদের অনভুতি গুলা ভোঁতা করে ফেলেছি। আর নিজেদের কোনও ভাই/বোনদের ঝুলতে দেখার অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে আছি।
এইতো, অল্প কিছুদিন আগে সীমান্তে বিএসএফরা ছেলের সম্মুখে এক মা'কে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে(ধর্ষণ করেছে বলে শোনা যায়)। তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের ঘুমের একটুখানি ব্যাঘাত ঘটতে দেইনি !!
নিজ দেশের ও দেশের মানুষদের উপরে এতোসব নির্যাতন-নিপীড়ন হচ্ছে, সেটা জানা সত্ত্বেও আমরা নির্লজ্জ-বেহায়ারা দেদারসে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করে, আমাদের দেশের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন করার জন্য ভারতকে ইন-ডাইরেক্টলি উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি।। চিন্তা করে দেখুন একবার !! ভারত থেকে যে আমরা প্রতিনিয়ত বাঁশ খাচ্ছি, সেজন্য আমরা নিজেরা কতোটা অংশে দায়ী???
~~~~~~~~
বলি দেশপ্রেমিকগণ,
এভাবে আর কতোদিন চুপ করে থাকবেন?? এতোসব ঘটনা দেখে আপনাদের এখনো বুঝে আসে না যে, আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভারত কি করতে চাচ্ছে?
আমরা কি পারি না? এসব নির্যাতন বন্ধের জন্য আমাদের সরকারের আশায় না বসে থেকে, আমাদের 'আমজনতার' পক্ষ থেকে ভারতের পণ্য বয়কট করা শুরু করে ভারতকে অল্প হলেও 'রেড সিগন্যাল' দিয়ে সতর্ক করে দিতে...যে,
""আমরা আমজনতারা তোমাদের এ অন্যায়গুলাকে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, এবং আমরা এটাকে ভালভাবে নিচ্ছি না, আমাদের উপর এসব অন্যায়-অত্যাচার তোমরা বন্ধ করো!!""
আমরা পারি না দেশের জন্য এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে?? পারি না, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি... সুন্দরবন ইস্যুর মতো সবাই একসাথে হয়ে শক্ত প্রতিবাদ করতে??
আমি একেবারে হুট করেই ভারতের সব পণ্য বয়কট করার কথা বলছি না।
জানি, হুট করে একসাথে সব পণ্য বয়কট করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার !!
কিন্তু, আমি এটা বিশ্বাস করি যে, যেসব সেক্টরের পন্য বর্জন করলে আমাদের 'আমজনতার ওয়ার্নিং'টা দ্রুত ভারতের কাছে যাবে, যেগুলার বিকল্প আমাদের দেশী পণ্য রয়েছে, সেই সেই সেক্টরগুলার পণ্য টোটালি বর্জন করা শুরু করে দিলে আমাদের 'আওয়াজ' কিছুটা হলেও ভারত সরকারের নিকট পৌঁছাবে।
সে লক্ষ্যে বলি,
প্রতিবারের ন্যায় এবারের ঈদেও ভারতের এক বিশাল পন্য সামগ্রীর সমাহার বাংলাদেশের মার্কেটে এসে ঢুকেছে, সেই পণ্য সামগ্রীর মধ্যে চাল, ডাল থেকে শুরু করে পোশাক আশাক... প্রসাধনী সামগ্রী পর্যন্ত সব কিছু রয়েছে। যা থেকে প্রতিবছরই তারা আমাদের পকেট থেকে কামিয়ে নেয় কোটি কোটি ডলার !! আর সে টাকাই গুলি হয়ে ফিরে এসে বিদ্ধ হয় আমাদের বুকে।
আর তাই,
যারা ঈদে আগে ৫ সেট ইন্ডিয়ান ড্রেস কিনতেন, তারা এবার ২ সেট ইন্ডিয়ান ড্রেস কিনুন, আর ৩ সেট দেশীয় ড্রেস কিনুন।
যারা প্রতিবারে ১০ কেজি ইন্ডিয়ান মসলা কিনতেন, তারা এবার ৩ কেজি ইন্ডিয়ান মশলা কিনুন, বাকি ৭ কেজি দেশীয় মশলা কিনুন।
এমনিভাবে, যে যেদিক দিয়ে পারুন, যেভাবে পারুন ভারতীয় পন্যের ব্যাবহার কমিয়ে আনুন !! দেশীয় পণ্য ব্যাবহারের দিকে ঝুকুন সবাই।।
কি পারবেন না??
পারবেন না, ফেলানির রক্ত মাখা ঝুলন্ত দেহর কথা কল্পনা করে !! পানি শুন্য বাংলাদেশের কথা কল্পনা করে !! দেশের অন্যতম এক বিশাল সম্পদ সুন্দরবনের কথা কল্পনা করে !! আরও নানানভাবে প্রতিনয়ত দেশের মানুষের নির্যাতনের কথা কল্পনা করে দেশের স্বার্থে ভারতের ব্যাপারে নিজে যতটুকু সম্ভব সচেতন হতে ও ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে !! এবং অন্যকে ভারতীয় পণ্য বর্জনে যতটুকু সম্ভব উৎসাহী করে তুলতে??
তবে চলুন!!
আজ থেকেই শুরু করে দিই আমাদের প্রতিবাদ !!
NT: একটা হিসাব পরিষ্কার করে দিই। আমাদের প্রতিবাদ ভারতীয় কোনও নাগরিকদের বিরুদ্ধে না, আমাদের প্রতিবাদ কেবল ভারত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে, শ্যুট টু কিল নীতির বিরুদ্ধে !!
আজকে এই পর্যন্তই !!
ধন্যবাদ সবাইকে !!
*******
সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে চলমান ভারতীয় পন্য বিরোধী প্রচারনাকে উৎসাহ দিতে কয়েকজন ভাই উদ্যোগ নিয়ে এই পেজটা খুলেছে। সবাইকে বলবো পেজের সাথেই থাকার জন্য।
https://www.facebook.com/boycott.indian.product