somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

ফ্যামেলি ট্যুর (গল্প)

০৯ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
আজ অফিস থেকে বের হয়ে বেশ কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হলো আফজাল সাহেবের। শীতের বিকেলে পশ্চিম আকাশে সূর্য কখন ডুম মারে বোঝার উপায় নেই। দেখলেন সন্ধ্যা অনেক আগেই হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ এজন্য অফিসে অনেক খাটুনি যাচ্ছে আফজাল সাহেবের। তবে সকালে অফিসে আসার সময় একদম নরমাল ওয়েদার ছিল। এজন্য অনেক দাম দিয়ে কেনা সু জুতাটি আজ পরা হয়নি তার। একান্ত বাধ্য না হলে বিয়ের সময় শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া কোট-টাই পরেন না তিনি। কোটের বয়স গুনে গুনে একত্রিশ বছর হয়ে গেছে তারপরও যত্নের কোন হেরফের হয় না।

প্রতিদিন তিনি নিয়ম করে পুরাতন সার্ট-প্যান্টের সাথে হাঁত কাটা একটি সুয়েটার আর চামড়ার একজোড়া সেন্ডেল অফিসে আসতে ব্যবহার করেন। বিশেষ কোন উপলক্ষ, অফিস পার্টি আর ভিজিটিংয়ের দিনগুলো ছাড়া আয়রণ করা হয় না ড্রেসগুলো। এজন্য অফিসের জুনিয়র-সিনিয়র সব কলিগ তাকে "হাড়কিপ্টা" বলে ডাকে। এমন কথা যে তার কানে আসে না তা কিন্তু নয়। তবে লোকজন তাকে কিপ্টে বলে অপবাদ দিলেও তিনি নিজেকে মিতব্যয়ী ভাবেন।

নিজেকে প্রশ্ন করলেন, "ইদানিং দেশের ওয়েদার কী ইউরোপ-আমেরিকার মতো সকাল-বিকাল বদলানো শুরু করলো? নিজে থেকে আবার উত্তরও খুঁজে নিলেন, দেশের মানুষ যেভাবে পশ্চিমা হওয়ার জন্য লাফাচ্ছে, তাদের সবকিছু কার্বণ কপি করে নিজের বলে চালিয়ে দিচ্ছে তাতে বরং না হওয়াটাই বেমানান!!

বাসাটি আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে হলেও অফিস শেষে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে বাড়ি যান আফজাল সাহেব। বয়স বাড়ছে ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকায় মূলতঃ অফিসে আসা-যাওয়ার পথে হাঁটেন তিনি; এতে অর্থের সাথে স্বাস্থ্যগত উপকার হয়। শুনেছেন যারা নিয়মিত হাঁটাচলা করে তাদের নাকি হার্ট সুস্থ থাকে; এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম থাকে।

হঠাৎ মনে পড়লো অফিসে আসার সময় গিন্নি তাজা সবজি, গরুর মাংস আর দেশী সুটকি নিয়ে যেতে বলেছে। ভাগ্য ভাল বাজারের কাছাকাছি থাকতে মনে হয়েছে, না হলে বাসায় পৌছে নির্ঘাৎ গিন্নির তিরস্কার পেতেন। আর নিশ্চিতভাবে দরজা থেকে ফিরে এসে পইপই করে কড়ায়গণ্ডায় বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরতে হতো তাকে।

যেই ভাবনা সেই কাজ; দ্রুত ইউ-টার্ণ করে বাজারের পথে দিলেন ছুট। গিন্নির পছন্দের সুটকি আর গরুর মাংস কিনে সবজির বাজারে ঢুকলেন আফজাল সাহেব -
-- বেগুনের কেজি কত?
একটু ভদ্র গোছের এক বিক্রেতাকে জিজ্ঞেেস করলেন; দেখতে বদরাগী আর চালাক টাইপের বিক্রেতাকে সব সময় এড়িয়ে চলেন তিনি।
-- চৌদ্দ টেহা, স্যার।
-- এই ভরা সিজনেও এতো দাম!
-- কি যে কন স্যার!! লকাল বেগুন; একদম টাটকা।
বড় একটি চিকচিকে টাটকা বেগুন ভাঙতে ভাঙতে আফজাল সাহেবকে দেখাচ্ছিল আর কথা বলছিল দোকানি।
-- দুই কেজি নিলে আন্নের জন্য পঁচিশ টাকা, স্যার।
-- দশ টাকা করে হলে দুই কেজি দাও।
উত্তর দিলেন আফজাল সাহেব।
-- স্যার, এক কেজি বেগুন বেঁচে মাত্র এক টাকা বাঁচে!! আপনি চাইলে আরো কয়েকটি দোকান দেখে আসতে পারেন। তবে চার কেজি নিলে আটচল্লিশ টাকা দিলেই চলবে।
-- না পয়তাল্লিশ দেব।
আফজাল সাহেবের ঝটপট উত্তর।
-- স্যার, আপনি প্রায় প্রতিদিন আমার কাছ থেকে বাজার নেন; আপনাকে ফেরাই কেমনে কন? ঠিক আছে দেন। একদিন না হয় স্যারের কথা রাখতে লস করলাম!!
দু'টি পলিথিন ব্যাগ এক সাথে করে বেগুন ভরে বিক্রেতা আফজাল সাহেবকে সালাম দিয়ে বললো-
-- স্যার, একদম টাটকা বেগুন; ভাঁজি করে খেলে অনেক টেস্ট পাবেন। ম্যাডাম চাইলে তরকারিও রাধতে পারেন। হেব্বি মজা লাগবে!!

যাক আজ পাক্কা এগারো টাকা সেভ, বিষয়টি ভাবতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন আফজাল সাহেব। অল্প দামে এমন টাটকা বেগুন দেখে গিন্নি নিশ্চয় খুশি হবে, মনে মনে ভাবলেন আফজাল সাহেব। বাজারের ব্যাগটি অনেক ভারী হওয়ায় বাসায় যেতে যেতে হাফিয়ে উঠলেন তিনি। তিন তলার সিড়ি ভাঙ্গিয়ে উপরে উঠে কলিংবেল দিতেই গৃহকর্মী রাহেলা দরজা খুলে দিল। রাহেলার হাতে ব্যাগটি দিয়ে হাতমুখ ধোয়ে ফ্রেশ হতে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলেন আফজাল সাহেব।

ঘরে ঢুকেই কোথায় হাওয়া হয়ে গেলে? আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন। কি এনেছো এগুলো? আর কবে আক্কেল হবে তোমার শুনি? উনি এই ভরা মৌসুমেও বাজারে আনাজ-তরকারি খোঁজে পান নাই আপনি! লাউ, সীম, ফুলকপি, বাঁধাকপি কত রকমের টাটকা সবজিতে সয়লাব বাজার কিন্তু উনার চোখে এগুলো পড়বে না। অকর্মাটি আমার জন্য নিয়ে এসেছে বেগুন। ছেলে-মেয়ে ভুলেও বেগুন-টেগুন মুখে তুলবে না। আর আমার যে এলার্জি তাও তোর খেয়াল নেই!! এই ভুলোমনা অপদার্থকে নিয়ে আর পারছি না। হে আল্লহ, আমাকে মুক্তি দাও; এই কিপ্টার সংসাসারে আর থাকতে পারছি না। এই বলদা স্বামীর চেহারা আর দেখতে চাই না আমি।

আফজাল সাহেব অবস্থা বেগতিক দেখে সিটকানি ভালভাবে আটকিয়ে চুপচাপ ওয়াশরুমে অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন গিন্নির রাগ পড়ে। এটা আফজাল সাহেবের জন্য নতুন কোন অভিজ্ঞতা নয়; বিয়ের কিছুদিন পর যখন যৌথ পরিবার থেকে স্বামীকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা সংসারে নিয়ে আসে তখন থেকেই বউয়ের এই কুকুর মেজাজ। তবে এখন তা দিনকে দিন বেড়েই চলছে; বিশেষ করে ছেলে মেয়েরা বড় হওয়ার পর থেকে।

সাতটা বাজতে বেশি দেরী নেই; টিভিতে জি বাংলার "অবুজ স্বামী ত্যাজি গিন্নি" সিরিয়াল শুরু হলেই শান্তি। তখন চুপিচুপি বের হওয়া যাবে; একটু ধৈর্য্য না ধরলে বিপদ আরো বাড়বে। বিষয়টি ভাবছেন আর গিন্নির গলার ভলিউম কমার অপেক্ষা করছেন আফজাল সাহেব।

ঘরের মেঘলা ভাব কেটে যেতেই আস্তে আস্তে সিটকানি খুলে বাইরে বেরিয়ে আসলেন আফজাল সাহেব। গিন্নি ততোক্ষণে ফুল ভলিয়মে সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত। সিরিয়ালের বদরাগী বউয়ের নিরীহ স্বামীকে তিরষ্কারের আওয়াজ টাস টাস করে কানে লাগছে। হঠাৎ চোখে পড়লো পুরো ঘরটি বেগুনময়!! দেখলেন কাজের মেয়েটি ঝাড়ু দিয়ে জঞ্জাল পরিস্কার করছে আর আফজাল সাহেবের বিধস্ত চেহারার দিকে আড়চোখে থাকিয়ে মুচকি হাসছে। বিষয়টি আফজাল সাহেবের চোখ ফাঁকি না দিলেও এড়িয়ে গেলেন। ভাবলেন, যাক রাগটি শেষমেষ বেচারা বেগুনের উপর দিয়ে গেছে। নিজে আপাতত নিরাপদ!!


২.
বাসায় সর্ব সাকুল্যে সিটিং আর ডাইনিং বাদে তিনটি রুম। এছাড়া আছে একটি ছোট্ট গেস্ট রুম। মালিক হয়তো গৃহকর্মীদের কথা মাথায় রেখে এ রুমটি তৈরী করেছে, কে জানে!! ফ্ল্যাটের একটি রুমে থাকে আফজাল সাহেবের ব্যবসায়ী বড় ছেলে, যে এখনো বিয়ে করেনি। আরেকটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে। আর অপরটিতে গিন্নি। আফজাল সাহেবের জন্য বরাদ্দ এই গেস্ট রুম কাম সার্ভেন্ট রুম; আছে একটি পুরাতন সিঙেল খাট, একটি পুরাতন আলনা, একটি খোঁড়া চেয়ার আর ঝং ধরা একটি আয়না। তবে বাসায় অতিরিক্ত কোন মেহমান বেড়াতে আসলে আফজাল সাহেবকে সিটিং রুমের সোফায় ঘুমাতে হয়। তবে মেহমান অতিরিক্তের অতিরিক্ত হলে সিটিং রুমের ফ্লোরই ভরসা।
-- খালু চা করে দেই?
ছোট্ট রুমটার দরজা ফাঁক করে জানতে চাইলো কাজের মেয়ে রাহেলা।
-- হুম। একটু আদা চা করে দিসরে মা।
-- সাথে কোন নাস্তা দেব?
কোন উত্তর না পেলেও রাহেলা জানে মাথা ধরলে বা বেশি টেনশন করলে খালু আদা চা দিতে বলেন; আর সাথে প্রিয় টোস্ট বিস্কুট। কছুক্ষণ পর রাহলা চা নিয়ে হাজির-
-- খালু আপনার চা।
-- মামুম আর তানজিকা ফিরেছে?
-- ভাইজান এখনো ফিরেনি। তবে আপা বিকাল থেকে বাসায়, আফাকে ডাকবো?
-- না লাগবে না, তুই নিজের কাজে যা।

আফজাল সাহেবের ছোট ছেলেটি জাপানে থাকে। রোবটের উপর উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে গত বছর ওসাকা ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। গত এক বছরে মাত্র দুইবার ছেলেটির সাথে কথা হয়েছে তার। ছেলেটি হয়তো অনেক ব্যস্ত থাকে এজন্য নিয়মিত খোঁজ নিতে পারে না। তবে জানেন মায়ের সাথে তার নিয়মিত কথা হয়; ভাই-বোনের সাথেও যোগাযোগ হয়।

রাত এগারোটা বাজার চৌদ্দ মিনিট আগে ডিনার করতে আফজাল সাহেবকে তাড়া দিয়ে গেল রাহেলা। শরীরটা আজকাল তেমন ভাল যাচ্ছে না তার। উপরি হিসাবে গিন্নির এমন আচরণে আজ মনটাও খারাপ তাই শুয়ে পড়েছিলেন; কখন ঘুম চলে এসেছে খেয়াল নেই।
-- কি হলো, সুলতান সুলেমানের আসতে এতো সময় লাগছে কেন?
ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে খেতে খেতে চিৎকার করছেন গিন্নি। লোকটি আস্ত একটা বলদ কিন্তু ভাব ধরে বাদশাহী!! যেন তিনি একখান অটোম্যান সম্রাট!!!
-- থামোতো মা; সারা দিনে খেতে বসেছি। তুমি খাও; বাবা এমনিতেই আসবে।
চরম বিরক্ত ভাব নিয়ে মাকে বললো মামুন।
-- জানিস, আজ বাজার থেকে কী নিয়ে এসেছে? মানুষটি একটা অকর্মার ঢেঁকি।
-- কিচ্ছু শুনতে ইচ্ছে করছে না মা; প্রতিদিন একই রেকর্ড শুনতে আর ভাল্লাগে না।

বাবাকে আসতে দেখে তার পাশের চেয়ারে বসতে ইশারা করলো মেয়ে তানজিকা।
-- বাবা, জানুয়ারিতে চাচ্ছিলাম সবাইকে নিয়ে তিন-চারদিনের জন্য রাঙামাটি বেড়াতে যাব। তুমি কী বলো?
মামুন বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো।
-- আমি কী বলবো? সময় থাকলে সবাইকে নিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে গেলে ভালই লাগবে। অনেক দিন হলো ফ্যামেলি ট্যুর হয়নি, কি বলিস তানজিকা?
-- তুমি কী বলবে মানে? পরে তো কাহিনী বানাবে তুমি কিছুই জান না; তোমাকে বলা হয়নি।
ঝাঁঝালো কণ্ঠে প্রতিক্রিয়া দিলেন গিন্নি। সাথে যোগ করলেন, আগামী পহেলা জানুয়ারিতে আমরা ঢাকা থেকে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেব। মাঝে তিনদিন থেকে পাঁচ তারিখে ফিরবো।


৩.
পরের দিন সকালে ফুরফুরে মেজাজে অফিসে গিয়ে পুরোনো দিনের একটি সিনেমার গান গাইতে গাইতে চেয়ারে বসতেই কলিগ সবুর সাহেব হাক দিলেন-
-- কি ব্যাপার আফজাল সাহেব, মনে নতুন রঙ লাগলো নাকি?
-- কি যে বলেন ভাই; সেই বয়স কী এখন আর আছে? আপনি এতো রসিকতা পারেনও বটে!!
-- অনেক দিন পর এমন তরুণ মেজাজে দেখলাম আপনাকে; তাই ভাবলাম ভাল কোন মুডে আছেন হয়তো।
-- পহেলা জানুয়ারিতে সবাই মিলে ফ্যামেলি ট্যুরে রাঙামাটি যাব। ভাবছি স্যারকে বলে পাঁচ দিনের ছুটি নেব। জানেন, একটা সময় ছিল তখন প্রচুর ঘোরাঘুরি করতাম। গত কয়েক বছরে কোথাও যাওয়া হয়নি। সময়-সুযোগও তেমন আসে না। বড় ছেলেটা চায় সবাই মিলে ঘুরে আসতে।
-- এখন বুজতে পারছি এতো খুশি হওয়ার হেতু।
-- দেখি স্যারকে বলে ম্যানেজ করতে পারি কি না।
-- পাবেন, পাবেন। অবশ্যই ছুটি পাবেন। আপনি তো সারা বছরই ছুটি নেন না। তার উপর ফ্যামেলি ট্যুর শুনলে স্যার আপনাকে নিরাশ করবে না।

হ্যা, স্যার আসলেই আফজাল সাহেবকে নিরাশ করেন নাই। পাঁচ দিনের সাথে শুক্র ও শনিবার মিলে মোট সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর হলো। স্যার বাড়তি কোন টাকা পয়সা লাগলেও দিতে চেয়েছিলেন। তবে প্রয়োজন নেই বলে আফজাল সাহেব স্যারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

বাসায় ফিরে হলিডের জন্য কিছু সার্ট-প্যান্ট ও সুয়েটার আলাদা করলেন পরদিন দোকানে নিয়ে আয়রন করার জন্য। কোটটিও ওয়াশ করাতে হবে। সাথে সু জুতাটিতে কালার দেওয়া প্রয়োজন। শুনেছেন এ বছর পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর শীত পড়েছে। প্রয়োজনীয় গরম কাপড় অবশ্যই নিতে হবে। সাথে সাত বছর আগে কেনা কালো চশমাটিও নেবেন বলে মনস্থির করলেন আফজাল সাহেব।

একত্রিশে ডিসেম্বর রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে গলির মোড়ের পরিমল বাবুর সেলুনে চুলদাড়ি ছাটাই করে বাসায় ফিরেছেন আফজাল সাহেব; সাথে পাক্কা দশ টাকা অতিরিক্ত বকশিশ। পরিমল অবাক হয়ে ভাবলো নিশ্চয় বাবুর মন আজ খুব ভাল এজন্য এমন উদার হস্ত। এতদিন এক কাপ চায়ের কথা বলেও পাঁচ টাকা বাড়তি নিতে পারেনি সে। এজন্য আজ নিজেকে অনেক ভাগ্যবান ভাবলো পরিমল।

বাসায় এসে আয়রণ করা কাপড় চোপড় যখন আফজাল সাহেব ব্যাগে ভরছিলেন তখন দরজা ঠেলে গিন্নি ভেতরে ঢোকলেন। গিন্নির এমন আগমনে একটু অবাক হলেন আফজাল সাহেব। একান্ত গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ না থাকলে গিন্নি এদিকটায় পা মাড়েন না।
-- মনে আছে কাল ভোরে আমরা রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেব।
-- মনে থাকবে না কেন? শুনেছিলাম ছেলেটি নাকি চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা করেছে; বাকি পথের জন্য নাকি মাইক্রো ভাড়া করবে?
-- ঠিকই শুনেছ। যে তিনদিন আমরা থাকবো সে তিনদিন গাড়িটিও আমাদের সাথে থাকবে।
-- ভালই হলো সবাই মিলে ঘোরাঘুরি করা যাবে। আমার সাত দিনের ছুটি আছে। অনেকদিন পর একটা জম্পেশ হলিডে হবে।
-- বুঝলাম না!! তুমি ছুটি নিয়েছো কেন?
-- মানে?
-- এতো মানে মানে করছো কেন? তুমি কিভাবে ভাবলে বাসাটি খালি রেখে সবাই বেড়াতে যাব? খোঁজ খবর কিছু রাখো? ইদানিং ঢাকা শহরে প্রতিদিন ডাকাতি হচ্ছে। তুমিও আমাদের সাথে গেলে বাসাটি পাহারা দেবে কে? শোন, কাল সকালে আমরা ভোর ঠিক পাঁচটায় রওয়ানা দেব। অফিস থেকে যেহেতু ছুটি নিয়েছো একদিকে ভালই হয়েছে; সারাদিন বাসায় থাকতে পারবে। আর সব সময় দরজা ভালভাবে সিটকানি দিয়ে রাখবে। রাতে শোয়ার আগে আবার দরজা-জানালা চেক করে ঘুমাবে। একান্ত কোন সমস্যা হলে আমাদের ফোন দেবে; তবে অযথা বিরক্ত করবে না।

আরেকটি কথা রাহেলাকে ছুটি দিয়েছি, আমরা না আসা পর্যন্ত সে তার বাড়িতে থাকবে। পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করার মতো বোকা মেয়ে আমি নই!! ফ্রিজে মাছ, মাংস ও ডাল রান্না করা আছে; শুধু খাওয়ার আগে ভাত রাধতে হবে। আমরা না ফেরা পর্যন্ত তোমার চলবে; প্রয়োজনে রান্না করে খাবে। তবে হোটেলে খাওয়ার অজুহাতে খালি বাসা ফেলে বাইরে যাবে না কিন্তু। কথাটি মনে থাকে যেন।

অনেক দিন পর বউয়ের বস সূলভ চেহারা দিকে একপলক থাকিয়ে চুপচাপ ট্রেভেল ব্যাগ থেকে কাপড়গুলো বের করতে লাগলেন। প্রিয়তমা বউ ততক্ষণে হাওয়া!!!



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত, লাইক ও কমেন্ট প্রাপ্ত পোস্ট।
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৪
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×