somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দি গিফট অফ দ্যা ম্যাজাই (The Gift of the Magi); ও' হেনরির (O. Henry) B-) B-) B-) বিখ্যাত এ গল্পের বাংলা অনুবাদ B-) B-) B-)

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ ডলার ৮৭ সেন্ট। সর্বসাকুল্যে। এর মধ্যে ষাট সেন্ট-ই ছিল খুচরো পয়সা। এক-দুই পয়সা করে মোদি দোকানী, সব্জী বিক্রেতা আর কসাইদের সাথে রীতিমত দর কষাকষির যুদ্ধে জয়ী হয়েই পয়সাগুলো সেভ করেছি; দোকানির সাথে দামাদামির ব্যাপারে আমি কখনো এক চুলও ছাড় দিতাম না, শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতাম।

ডেলা পরপর তিনবার পয়সাগুলো গুনে নিল। হুম, মাত্র ১ ডলার ৮৭ সেন্ট!

অথচ, কালকেই ক্রিসমাস!!

ফলশ্রুতিতে পুরনো ময়লা আর ছোট্ট সোফার মধ্যে বসে বিলাপ করা ছাড়া ডেলার আর কিছুই করার ছিল না, ডেলা তাই করল।

'আসলে জীবন হচ্ছে প্রতিনিয়ত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা, আর মাঝে মাঝে হাসার অভিনয় করার একটি মিশ্রণ, অর্থাৎ হাসি-কান্নার যোগফল', উপলব্ধি করলো ডেলা।

যদিও পরিচর্যার অভাবে বাড়িটি ধীরে ধীরে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে, তবুও দেখে নেয়া যাক ডেলাদের বাড়িটির এখনকার অবস্থা কেমন। একটি সজ্জিত ফ্ল্যাট(তবে সুসজ্জিত নয়), যার ভাড়া প্রতি সপ্তাহে ৮ ডলার। বাড়িটি দেখতে পুরোপুরি ভিক্ষুকদের আবাসস্থল না হলেও আদতে অনেকটা তা-ই।

বাড়ির সদর দরজায় একটি 'চিটির বাক্স' থাকলেও এটি এতো জরাজীর্ণ ছিল যে, কোন চিটিই বাক্সটির মুখ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতো না; পাশাপাশি একটি বৈদ্যুতিক সুইচও আছে, যেটিতে আঙুলের সর্বশক্তি খরছ করে কলিংবেল বাজাতে চেষ্টা করলেও কাজ হয় না।

এছাড়া বাড়ির সদর দরজায় একটি ঝোলানো কার্ডে লেখা ছিল, 'মিস্টার জেমস্ ডেলিংহাম ইয়ং।'

একটি সময় যখন 'ডেলিংহামের' ইনকাম তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল তখন সে সপ্তাহে ৩০ ডলার বেতন পেত, কিন্তু সপ্তাহে এখন আয় কমে ২০ ডলার হওয়ায় সদর দরজায় লটকানো 'ডিলিংহাম' লেখাটি কেমন যেন বর্ণহীন লাগল। জিম ও ডেলা এজন্য সিরিয়াসলি আরো সাধারন মানের সাদামাটা একটি বাড়ি খুঁজতে মনস্থির করল।

কিন্তু যখনও জেমস ডেলিংহাম ইয়াং বাড়িতে আসেন এবং তার ফ্ল্যাটে পৌঁছান তখন মিসেস জিম তাকে শুধু 'জিম' নামে ডাকেন এবং তার প্রিয়তমা বউ মিসেস জেমস ডেলিংহাম নিয়ম করে তাকে প্রতিদিন ভালবাসার চাদরে জড়িয়ে ধরে সারাদিনের অপেক্ষার প্রহর ঘুচান।

আর মিসেস ডেলিংহাম হলেন 'ডেলা' যাকে ইতিমধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ডেলা কান্না থামিয়ে দুই গালে পাউডারের প্রলেপ লাগিয়ে বিষন্ন নয়নে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলো একটি ধূসর বিড়াল ধূসর একটি বেড়ার উপর দিয়ে একটি ধূসর রঙের বাড়ির পেছনের দিকের উঠানে হাঁটছে।

'-আ-গা-মী- -কা-ল-কে-ই- ক্রিসমাস ডে'

কিন্তু তার কাছে আছে মাত্র ১.৮৭ ডলার! তা দিয়েই জিমের জন্য ক্রিসমাস গিফট কিনতে হবে। সর্বমোট এই পয়সা সে জমিয়েছে সারা মাসের প্রচেষ্টায়। আসলে সপ্তাহে ২০ ডলার রোজগার ডেলার পরিবারের জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়; এছাড়া ডেলা মাসের খরছের যে খসড়া হিসাব কষেছিল বাস্তবে খরছ হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি।

'মাত্র ১.৮৭ ডলার তার জিমের ক্রিসমাস গিফটের জন্য'!!!

কতশত ঘন্টা ডেলা ব্যয় করেছে জিমের জন্য একটি চমৎকার গিফটের কল্পনা করে তা বলা মুশকিল; কত প্লান ছিল তার। ডেলার ইচ্ছা ছিল গিফটি হবে দামী তবে অপ্রতুল এবং আকর্ষণীয়; তার দেওয়া গিফট-টি হবে জিমের খুব পছন্দের এবং নিত্য ব্যবহার্য।

ডেলার ফ্লাটের রুমটির দেয়ালের সাথে লম্বালম্বিভাবে আটকানো একটি আয়না ছিল; অনেকেই হয়তো ৮ ডলার মূল্যের ভাড়া করা ফ্লাট বাড়িতে এমন আয়না দেখেছেন। একজন চটপটে হালকা পাতলা ব্যক্তি যে তার প্রতিবিম্ব সতর্ক দৃষ্টিতে লম্বালম্বিভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিজের সম্বন্ধে একটি ধারণা পায়; আর ডেলা হলো এই টাইপের মানুষের একটি সার্থক উদাহরণ।

হঠাৎ ডেলা দ্রুতবেগে জানালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে লম্বা আয়নাটির সামনে দাঁড়ালো। তার চোখ দু'টি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কিন্তু মাত্র ২০ সেকেন্ডের ব্যবধানে তার সুন্দর মুখটি ফ্যাকাসে হয়ে গেল। অন্যকোন ভাবনা না করে ডেলা খোঁপা বাঁধা সুন্দর চুলগুলো দ্রুত বেগে বাঁধন হারা করে দিল।


জিম ও ডেলার অভাবের সংসার হলেও তাদের কাছে দু'টি দামী সম্পত্তি ছিল; একটি হলো জিমের সোনার ঘড়ি, যেটি এক সময় তার দাদার ছিল। পরে তার বাবার হাত ঘুরে এখন জিমের কাছে আছে। আর অপরটি হলো ডেলার মাথার লম্বা চুল। এটা অনেকটা 'কুইন অফ সিবা'র খনির মধ্যে রাখা মণিমাণিক্যের মত। ডেলা মাঝে মাঝে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তার লম্বা চুলগুলো জানালার বাইরে শুকাতে দেয়।

রাজা সলোমন যেমন তার সম্পত্তিগুলো ঘরের মেঝেতে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রেখেছিলেন; জিমও তার সখের গোল্ডেন ওয়াচটি লুকিয়ে রাখে এবং প্রতি মুহূর্তে টাইম দেখার ছলে ঘড়ি দেখে।

ডেলার রেশমি লম্বা চুলগুলো চকচকে উজ্জ্বল ঢেউ তোলা পাহাড়ি ঝর্ণার বাদামী জলের মতো মনে হল। চুলগুলো একদম হাঁটুর নীচ অবধি লম্বা হয়ে অনেকটা জামার মত লাগছে। ডেলা চুলগুলো এবার যত্ন করে তুলে খোঁপা বাঁধলো। যখন ডেলা আহত মনে কিছু একটা ভাবছিল তখন দুই-এক ফোঁটা চোখের পানি গরম লাল কার্পেটে পড়ল।

ডেলা এবার পুরাতন বাদামি জ্যাকেট গায়ে দিল, সাথে পুরাতন বাদামি হ্যাট; সাথে তার উজ্জ্বল চকচকে চোখের মত একটি গোলাকৃতির জামা পরলো। ডেলা দ্রুত বেগে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের বড় রাস্তায় গিয়ে উঠল।

হঠাৎ একটি সাইনবোর্ড দেখে ডেলা থমকে দাঁড়ালো, তাতে লেখা 'Mme Sofronie' ডেলা দৌড়ে দোকানে ভেতরে ঢুঁকে পড়লো।

'তুমি কি আমার চুল কিনবে?' ডেলা জিজ্ঞেস করলো।

'আমি চুল কিনি', উত্তর দিল ম্যাডামে। 'তোমার মাথায় ক্যাপটি খোল, আগে তোমার চুল দেখতে হবে।'

'টুয়েন্টি ডলার'

ঠিক আছে টাকাটি দেন জলদি, প্লীজ।

ওহ! পরের দুই ঘন্টা ডেলার চমৎকার একটি ঘোরের মধ্যে কাটলো, অনেকটা ডোরাকাটা পরীর মত; সকাল থেকে মনের কোণে জমে থাকা সব দুশ্চিন্তা একদম উবে গেল। ডেলা জিমের জন্য তন্ন তন্ন করে পছন্দের গিফট খুঁজতে লাগল।

'অবশেষে পাওয়া গেল'

ডেলা ভাবলো, এটি সত্যিকার অর্থে শুধু জিমের জন্য তৈরী করা হয়েছে, আর কারো জন্য নয়। এমন সুন্দর জিনিস আর কোন দোকানে ছিল না, ডেলা এটি বের করে নিয়ে আসলো। এটি একটি প্লাটিনাম চেন; খুব সুন্দর ও খাঁটি ধাতু দিয়ে তৈরী। এমনকি এটি ঘড়ির চেয়েও দামী হতে পারে। এজন্য চেনটি দেখার সাথে সাথে তার পছন্দ হয়েছে এবং মনে মনে ধরেই নিয়েছে এটি অবশ্যই জিমের ঘড়ির জন্য উপযুক্ত ম্যাচ হবে।

দোকানি ২১ ডলার দাম নিল; বাকি ৮৭ সেন্ট নিয়ে ডেলা বাড়ির পানে ছুটলো।

'জিম নিশ্চয়ই এটি ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এবং অনেক খুশি হবে। সুইট হার্টকে আর লেদারের পুরাতন বেল্ট পরতে হবে না।' ফেরার পথে কল্পনা করলো ডেলা।

ডেলা যখন বাড়ি ফিরলো তখন তার যাবতীয় দুশ্চিন্তা উবে গেল। সে গ্যাসের চুলায় (বাঁকানো লোহার দন্ড) আগুন জ্বালালো। এটা অনেকটা ভালবাসার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মতো একটি মহৎ কর্ম যা ভালবাসাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। এটি সব সময় ভীষণ কঠিন কাজ - সত্যি বলছি বন্ধুরা একটি বিরাট কাজ।

চল্লিশ মিনিটের মাথায় তার মাথাটি ছোট ছোট চুলে ঢেকে গেলে; দেখে অনেকটা স্কুল পালানো বালকের মতো লাগলো। ডেলা গভীর পর্যবেক্ষণে সতর্ক দৃষ্টিতে ঘরের লম্বা আয়নাটির দিকে তাকালো।

'জিম যদি দ্বিতীয়বার আমার দিকে তাকানোর আগেই আমাকে মেরে না ফেলে তাহলে সে নির্ঘাত বলবে, আমাকে কনি আইল্যান্ডের কোরাস গার্ল লাগছে।'

অহ! 'কিন্তু এছাড়া আমার আর কি-ই বা করার ছিল মাত্র ১ ডলার ৮৭ সেন্ট দিয়ে?'

ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় ডেলা জিমের জন্য কফি তৈরী করল এবং চপ রান্নার জন্য গ্যাস স্টোভের উপরে ফ্রাই পেন বসালো।


জিম কখনো দেরী করে বাড়ি ফিরে না; ডেলা ধাতব চেইনটি ডাবল করে হাতে রাখলো এবং টেবিলের একদম কোনায় গিয়ে বসলো, যেখান ঘরের সদর দরজা আছে। হঠাৎ ডেলা সিঁড়িতে জিমের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল; মুহুর্তের জন্য তার মুখটি ফ্যাকাশে হয়ে উঠলো। দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ডেলার নীরবে প্রার্থনার অভ্যাস আছে, আজো ফিসফিস করে প্রার্থনা করলো,

'হে ঈশ্বর, সে যেন ভাবে আমি এখনো সুন্দরী আছি।'

বাইরে থেকে জিম দরজা খোলে ভেতরে ঢুঁকে আবার দরজাটি বন্ধ করে দিল। তাকে খুব রোগা দেখাচ্ছিলো। মাত্র ২২ বছর বয়সে দারিদ্র্যতা তাকে পুড়িয়ে মারছে। তার একটি নতুন ওভারকোট দরকার; এমনকি এই ঠান্ডায় তার হাতে কোন গ্লাভস পর্যন্ত নেই।

জিম ঘরের মধ্যে পা বাড়ালো, ভেতরে ঢুঁকেই স্থির হয়ে অনুসন্ধানী চোখে অবিচল থাকিয়ে রইলো। তার চোখ জোড়া কেবল ডেলার উপরে স্থির রইলো; তাদের এ চোখা চোখি এতো তীক্ষ্ণ ছিল যা ডেলার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভবপর নয়।

'এই চাহনীতে নেই কোন রাগ, নেই কোন সারপ্রাইজ, নেই কোন অসমর্থন, নেই কোন ভয়; এমনকি নেই কোন আতঙ্কিত হওয়ার মত লক্ষণ যার জন্য ডেলা ভীত ছিল।'

ডেলা কেবল জিমের মুখের অদ্ভুত অভিব্যক্তির দিকে অপলক থাকিয়ে রইলো।

ডেলা এবার টেবিল থেকে উঠে জিমের মুখোমুখি হল।

ডেলা চিৎকার করে বলে উঠলো, প্রিয়তম 'আমাকে ভুল বুঝ না, প্লীজ', আমি সাধের চুলগুলো কেটে বিক্রি করেছি, কারণ আমি তোমাকে ক্রিসমাসে কোন গিফট না দিয়ে থাকতে পারবো না। দেখো, 'আমার চুলগুলো খুব তাড়াতাড়ি আবার গজিয়ে উঠবে' - 'মাইন্ড করো না, তুমি কি মাইন্ড করেছো?' আমার কাছে আর কোন বিকল্প ছিল না। জানো, আমার চুল অসম্ভব দ্রুতগতিতে বাড়ে।

বলো জিম, 'মেরি ক্রিসমাস!'

জিম চলো দিনটি আমরা উদযাপন করি। তুমিতো জানো না 'আমি কত সুন্দর একটি গিফট তোমার জন্য কিনে এনেছি।'

'তুমি চুলগুলো কেটে ফেললে?' জিম জানতে চাইলো।

'আমি চুলগুলো কেটে বিক্রি করে দিয়েছি' উত্তর দিল ডেলা। আবার যোগ করলো, 'তুমি কি আমাকে পছন্দ করছো না, যেমনটি আগে করতে? দেখো আমি তো আমিই আছি, চুল না থাকলেও, তাই না?'

জিম ঘরের চতুর্দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে থাকালো।

'তুমি বলছো, তোমার চুলগুলো বিক্রি করে দিয়েছ?' একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জিম আবার জানতে চাইলো।

ঘরের মধ্যে খুঁজে লাভ হবে না, 'চুলগুলো ইতিমধ্যেই বিক্রি করে দিয়েছি' উত্তর দিল ডেলা।

'চুল বিক্রি হয়ে গেছে - শেষ। আজ ক্রিসমাস ইভ, আসো আনন্দ করি। হতে পারে আমার কয়েগুচ্ছ চুল গচ্ছা গেছে, তাতে কি?'

ডেলা হঠাৎ করে অতি আদুরে গলায় জিমের মুখোমুখি হয়ে বললো, 'পৃথিবীর কেউ তোমার প্রতি আমার ভালবাসার গভীরতা কখনো পরিমাপ করতে পারবে না।'

'আমি কি তোমার জন্য চপ নিয়ে আসবো?' কথাটি ঘোরাতে জানতে চাইলো ডেলা।

ঘোরটা কেঁটে যেতেই জিম স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। সে ডেলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। চলো ডেলা দশ সেকেন্ডের জন্য আমরা কিছু বুদ্ধিমান পরীক্ষার সাথে বিবেচনা করি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যাওয়া বিষয়টিকে অন্য প্রেক্ষাপট থেকে।

সপ্তাহে আট ডলার কিংবা বছরে মিলিয়ন ডলার - পার্থক্য কী? একজন গণিতবিদ অথবা একজন বুদ্ধিমান মানুষ তোমাকে যে উত্তরটি দেবে তা ভুলও হতে পারে। ম্যাজাইরা অনেক দামী গিফট কিনেন, কিন্তু এগুলো তাদের নিজেদের জন্য নয়; এই গাঢ় সত্যটি পরে উদ্ভাসিত হয়।

জিম ওভারকোটের ভেতর থেকে একটি প্যাকেট বের করে টেবিলের উপর ছুড়ে দিল।

'আমাকে ভুল বুঝ না, ডেল', জিম বললো। আমি মনে করি না চুল কাটার বাহারী ডিজাইন, মুখটি সুন্দর করে শেভ করা কিংবা একটি পছন্দের শ্যাম্পু কখনো আমার প্রিয়তমাকে কোন পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু তুমি যদি প্যাকেট-টা খোল তাহলে বুঝতে পারবে কেন আমি কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়েছিলাম।


সাদা আঙ্গুল এবং ফাঁপা স্ট্রিং এর ছবিযুক্ত কাগজে মোড়ানো প্যাকেট। তারপর ডেলার আনন্দে অতি উৎসাহী চিৎকার; তারপর, হায়!! মেয়েলি কণ্ঠটি তাৎক্ষণিক পরিবর্তিত হয়ে আর্তচিৎকারে রূপ নিল।

চিরুনি চারদিকে ছড়িয়ে আছে - সব ক'টি চিরুনি। এমন চিরুনির জন্য ডেলা দিনের পর দিন জানালার পানে চেয়ে চেয়ে উপাসনা করেছে। 'চমৎকার সুন্দর চিরুনি, খাঁটি জুয়েল রিম; এগুলো সুন্দর পরিপাটি চুলের জন্য আদর্শ। এগুলো নিশ্চিত খুব দামি চিরুনি।' ভাবলো ডেলা।

কিন্তু ডেলা চিরুনিগুলোকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখলো; আর নিভু নিভু দৃষ্টিতে জিমের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,

'আমার চুল দ্রুত বড় হয়ে যাবে!' জিম।

তারপর ডেলা একটি ঝলসে যাওয়া বিড়ালের মত লাফ দিয়ে উঠে কাঁদতে শুরু করলো,

ওহ! উহ!!

জিম তখনো তার সুন্দর গিফট-টা দেখেনি। ডেলা খুশি মনে জিমের জন্য কেনা গিফট বের করে হাতের তালুতে রাখলো। মূল্যবান ধাতুর তৈরি ঘড়ির চেইনটি চতুর্দিকের ফ্লাশ লাইটের মতো ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে লাগলো।

জিম নতুন কোন ভাবনায় না গিয়ে সোফার উপর বসে হাসিমুখে পেছনের দিকে হাতটি বাড়িয়ে দিল।

'ডেলা, চল আমরা দু'জনে আমাদের ক্রিসমাস উপহারগুলো দূরে সরিয়ে রাখি এবং এগুলো এতটাই সুন্দর যে, শুধু ক্রিসমাসের গিফট হিসাবে এগুলোকে মানায় না!!'

'আমি ঘড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি তোমার চুলের জন্য সুন্দর চিরুনি কেনার টাকা জোগাড় করতে।'

'এখন চপের ব্যবস্থা করতে পার' সাথে যোগ করল জিম।

ডেলা তুমি কী জানো, 'ম্যাজাইরা হলো খুব জ্ঞানী; আশচর্যজনক জ্ঞানী মানুষ। যারা ক্রিসমাস ডে-তে গিফট নিয়ে এসেছিলেন। তারাই সর্ব প্রথম ক্রিসমাস ডে-তে গিফট দেওয়ার প্রথা শুরু করেছিলেন। নির্দিধায় বলা যায় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।' কি বলো তুমি?

আর আজ আমি শিখলাম দু'টি বোকা শিশুর মত দু'জন মানুষের গতানুগতিক কাহিনী; যারা একই ফ্লাটে বসবাস করে অথচ বোকার মতো তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি একে অন্যের জন্য বিসর্জন দিল; কিন্তু কারো কোন উপকারে আসলো না।

তবে সব শেষে বলা যায়, আজকের দিনে যারা গিফট দেবে তাদের মধ্যে এই গিফটগুলোই সর্বোৎকৃষ্ট, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা আজকের দিনে গিফট দেয় এবং অন্যের কাছ থেকে গিফট পায় এরা সবাই জ্ঞানী; সর্বত্রই তারা মহাজ্ঞানী। তারা ম্যাজাই।।



লেখক পরিচিতি -

William Sydney Porter যাকে আমরা সবাই O. Henry নামে চিনি; ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় (North Carolina) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পৃথিবীর একজন নামকরা ছোট গল্পকার হিসাবে সর্বত্র পরিচিত। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত গল্পগুলো হলো- "The Ransom of Red Chief", "The Cop and the Anthem", "A Retrieved Reformation", "The Duplicity of Hargraves", "The Caballero's Way" ইত্যাদি।
১৯১০ সালের ৫ জুন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে নিউইয়র্কে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগুলোর মধ্যে আছে -

 A Cosmopolite in a Café
 Between Rounds
 The Skylight Room
 A Service of Love
 The Coming-Out of Maggie
 Memoirs of a Yellow Dog
 The Love-philtre of Ikey Shoenstein
 The Furnished Room
 The Last Leaf
 The Poet and the Peasant
 A Ramble in Aphasia
 A Municipal Report
 Proof of the Pudding
 The Green Door


ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত, লাইক ও কমেন্ট প্রাপ্ত পোস্ট।
গল্প লেখার সহজ পাঠ
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
আধুনিক কবিতার পাঠ (সমালোচনা)
আলোচিত ফিচার 'দি লাঞ্চিয়ন'।
ব্রিটেনের প্রবাস জীবন- স্মৃতিকথা।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৯
৭০টি মন্তব্য ৭০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×